হাইনরিখ লুইটপোল্ট হিমলার (জার্মান উচ্চারণ: [ˈhaɪnʁɪç ˈluˑɪtˌpɔlt ˈhɪmlɐ] (শুনুন)) (জন্ম: ৭ অক্টোবর, ১৯০০ - মৃত্যু: ২৩ মে, ১৯৪৫) মিউনিখে জন্মগ্রহণকারী শাতজতাফেলের (এসএস) রাইখফুয়েরার-এসএস ছিলেন। পাশাপাশি নাৎসি জার্মানির নাৎসি পার্টির (এনএসডিএপি) শীর্ষস্থানীয় সদস্যসহ জার্মান পুলিশ প্রধান ছিলেন। নাৎসি নেতা আডলফ হিটলার তাকে তৃতীয় রাইখের নিয়ন্ত্রণাধীন সেনাবাহিনীর কমান্ডার পদে মনোনীত করেন। নাৎসি জার্মানিতে সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে হেনরিক হিমলার ছিলেন অন্যতম। হলোকস্টের জন্য সরাসরি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

হেনরিক হিমলার
রাইখসফুয়েরার
কাজের মেয়াদ
৬ জানুয়ারি, ১৯২৯ – ২৯ এপ্রিল, ১৯৪৫
নেতাআডলফ হিটলার
পূর্বসূরীআরহার্ড হেইডেন
উত্তরসূরীকার্ল হ্যাঙ্ক
জার্মান পুলিশ প্রধান
কাজের মেয়াদ
১৭ জুন, ১৯৩৬ – ২৯ এপ্রিল, ১৯৪৫
নেতাআডলফ হিটলার
পূর্বসূরীকার্যালয় প্রতিষ্ঠা
উত্তরসূরীকার্ল হ্যাঙ্ক
রাইখ কমিশনার
কাজের মেয়াদ
৭ অক্টোবর, ১৯৩৯ – ২৯ এপ্রিল, ১৯৪৫
নেতাআডলফ হিটলার
পূর্বসূরীকার্যালয় প্রতিষ্ঠা
উত্তরসূরীকার্যালয় প্রতিষ্ঠা
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
কাজের মেয়াদ
৪ জুন, ১৯৪২ – ৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৩
পূর্বসূরীরেইনহার্ড হেড্রিক
উত্তরসূরীআর্নেস্ট কাল্টেনব্রুনার
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৪ আগস্ট, ১৯৪৩ – ২৯ এপ্রিল, ১৯৪৫
চ্যান্সেলরআডলফ হিটলার
পূর্বসূরীউইলহেম ফ্রিক
উত্তরসূরীউইলহেম স্টাকার্ট
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মহাইনরিখ লুইটপোল্ট হিমলার
৭ অক্টোবর, ১৯০০[১]
মিউনিখ, বাভারিয়া, জার্মানি
মৃত্যু২৩ মে ১৯৪৫(1945-05-23) (বয়স ৪৪)
লানবার্গ, লোয়ার স্যাক্সনি, জার্মানি
রাজনৈতিক দলজাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান শ্রমিক (এনএসডিএপি)
দাম্পত্য সঙ্গীমার্গারেট বোডেন (বি. ২০২৪)
সম্পর্ক
সন্তান
  • গাডরান (জন্ম: ৮ আগস্ট, ১৯২৯, মিউনিখ)
  • হেলজ (জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২)
  • নানেত্তে ডোরোথিয়া (জন্ম: ২০ জুলাই, ১৯৪৪, বার্খতেসগাডেন)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীটেকনিশে ইউনিভার্সটাট মাঞ্চেন
জীবিকাকৃষিবদ
মন্ত্রীসভাহিটলার মন্ত্রিসভা
ধর্মনিও পগন[২][৩]
স্বাক্ষর
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্যজার্মান সাম্রাজ্য জার্মান সাম্রাজ্য
শাখাহীর
কাজের মেয়াদ১৯১৭-১৯১৮
পদফাহনেনজাঙ্কার
ইউনিট১১শ বাভারিয়ান ইনফেন্ট্রি রেজিম্যান্ট
যুদ্ধপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

রক্ষণশীল মধ্যবিত্তশ্রেণীর রোমান ক্যাথলিক পরিবারের সন্তান ছিলেন হিমলার। বাবা গেবহার্ড হিমলার শিক্ষক ও মা আনা মারিয়া হিমলার রোমান ক্যাথলিক ধর্মানুরাগী ছিলেন। গেবহার্ড লাদিগআর্নেস্ট হারমান নামে তার দুই ভাই ছিল।[৪] ল্যান্ডশাটের গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেন। নিয়মিত বিদ্যালয় কাজ সম্পন্ন করলেও তিনি খেলাধূলায় পারদর্শী ছিলেন না।[৫] দূর্বল স্বাস্থ্যের অধীকারী হিমলার আজীবন শারীরিক সমস্যার ভুগেছেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি সংরক্ষিত ব্যাটলিয়নের সদস্য ছিলেন। ফলে হিমলার সরাসরি সেবা দিতে পারেননি। নভেম্বর, ১৯১৮ সালে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ও জার্মানির পরাজয় ঘটে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ অথবা কর্মকর্তা হবার সুযোগ নিতে অস্বীকার করায় তাকে ব্যাটলিয়ন থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরফলে তিনি ল্যান্ডশাটে ফিরে আসেন।[৬] যুদ্ধ শেষ হবার পর হিমলার তার গ্রামার-স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে খামারে সংক্ষিপ্তকালের জন্য শিক্ষানবিশ হওয়াসহ মিউনিখ টেকনিশে হোচস্কুলে কৃষিবিদ্যায় অধ্যয়ন করেন।[৭][৮]

কর্মজীবন সম্পাদনা

আগস্ট, ১৯২৩ সালে নাৎসি পার্টিতে (এনএসডিএপি) যোগ দেন। তার পার্টি নম্বর ছিল ১৪,৩০৩।[৯][১০] রোমের আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে হিটলার ও তার এনএসডিএপি’র ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। এ ঘটনার মাধ্যমেই হিমলার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পুলিশের জেরার মুখে পড়লেও অপর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণে ছাড়া পান। এ ঘটনায় তিনি চাকরি হারান ও কৃষিবিদ হিসেবে কোন কাজ খুঁজে পাননি।[১১][১২] এরফলে পরিবারের সাথে মিউনিখে চলে যান। এরফলে বন্ধুবর্গ ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ধিক্কার আসায় তিনি আরও অসহিষ্ণু, আগ্রাসী ও নিজস্ব চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন।[১৩][১৪]

নাৎসিবাদে সংশ্লিষ্টতা সম্পাদনা

১৯২৩ সালে নাৎসি পার্টিতে যোগ দেন ও ১৯২৫ সালে এসএস বিভাগে যোগ দেন। হিমলারের চিন্তা-চেতনা এনএসডিএপি তাদের রাজনীতিতে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। হিটলারের লেখাগুলোর মাধ্যমে তিনি আরও জানেন এবং দলের অপরিহার্য মুখ হিসেবে বিবেচনা করেন।[১৫][১৬] ১৯২৪-এর মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রেগর স্ট্রেসারের অধীনে দলে সচিব হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। দলের প্রচারণায় বাভারিয়ার সর্বত্র ভ্রমণ করতে থাকেন। সেজন্যে তিনি বক্তৃতাসহ সাহিত্য-কর্ম বিতরণ করতে থাকেন। ১৯২৪-এর শেষার্ধ্বে লোয়ার বাভারিয়ার দলীয় কার্যালয়ে স্ট্রেসারের স্থলাভিষিক্ত হন। ফেব্রুয়ারি, ১৯২৫ সালে পার্টি পুণঃগঠিত হলে এলাকায় এনএসডিএপি’র সদস্য বিষয়ে দায়বদ্ধ ছিলেন।[১৭][১৮] ১৯২৯ সালে হিটলার তাকে রাইখফুয়েরার-এসএস হিসেবে মনোনয়ন দেন। পরবর্তী ১৬ বছর তিনি এসএসের উন্নয়নে জড়িত ছিলেন ও ২৯০ জনের ব্যাটলিয়নকে দশ লক্ষের শক্তিধর আধা-সামরিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। এছাড়াও হিটলারের নির্দেশনামা বাস্তবায়ন, নাৎসি বন্দী শিবির গঠন ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক দক্ষতাসহ রেইনহার্ড হেড্রিকের ন্যায় অধীনস্থদের মনোনীত করেছিলেন। ১৯৪৩ থেকে জার্মান পুলিশ বাহিনীর প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পুলিশ গেস্টাপোসহ নিরাপত্তা বাহিনীর তদারকীতে ছিলেন।

হিটলারের পক্ষে হিমলার আইনস্যাটগ্রুপেননির্যাতন কেন্দ্র গঠন করেন। কমপক্ষে ছয় মিলিয়ন ইহুদি, দুই থেকে পাঁচ লক্ষ রোমানীয়সহ প্রায় চৌদ্দ মিলিয়ন সাধারণ নাগরিকের হত্যাকাণ্ড তারই প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। তন্মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই পোলীয়সোভিয়েত নাগরিক ছিলেন।

দেহাবসান সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করলে তিনি নির্ধারিত বিষয়ে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন। ফলশ্রুতিতে হিটলার তাকে ঐ পদ থেকে প্রত্যাহার করে নেন। যুদ্ধ শেষ হবার অল্প কিছুদিন পূর্বে পরাজয় নিশ্চিত জেনে হিটলারের অজ্ঞাতসারে পশ্চিমা মিত্রবাহিনীর সাথে শান্তি আলোচনার চেষ্টা চালান। এ ঘটনা জানতে পেরে এপ্রিল, ১৯৪৫ সালে হিটলার তাকে সব ধরনের পদ থেকে বরখাস্ত করেন ও গ্রেফতারের আদেশ দেন। হিমলার আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তার পরিচয় নিশ্চিত করে ও গ্রেফতার করে। ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ থাকা অবস্থায় ২৩ মে, ১৯৪৫ তারিখে আত্মহত্যা করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Manvell ও Fraenkel 2007, পৃ. 13।
  2. Bullock 1993, পৃ. 412।
  3. Longerich 2012, পৃ. 265।
  4. Longerich 2012, পৃ. 12–15।
  5. Longerich 2012, পৃ. 17–19।
  6. Longerich 2012, পৃ. 20–26।
  7. Breitman 2004, পৃ. 12।
  8. Longerich 2012, পৃ. 29।
  9. Manvell ও Fraenkel 2007, পৃ. 11।
  10. Biondi 2000, পৃ. 7।
  11. Longerich 2012, পৃ. 60, 64–65।
  12. Manvell ও Fraenkel 2007, পৃ. 9–11।
  13. Longerich 2012, পৃ. 72–75।
  14. Manvell ও Fraenkel 2007, পৃ. 11–12।
  15. Longerich 2012, পৃ. 77–81, 87।
  16. Manvell ও Fraenkel 2007, পৃ. 11–13।
  17. Gerwarth 2011, পৃ. 51।
  18. Longerich 2012, পৃ. 70, 81–88।

গ্রন্থপঞ্জী সম্পাদনা

অনলাইন উৎস

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

সরকারি দফতর
পূর্বসূরী
আরহার্ড হেইডেন
রাইখসফুয়েরার-এসএস
১৯২৯-১৯৪৫
উত্তরসূরী
কার্ল হ্যাঙ্ক
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
উইলহেম ফ্রিক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯৪৩-১৯৪৫
উত্তরসূরী
উইলহেম স্টাকার্ট
সামরিক দপ্তর
পূর্বসূরী
সৃষ্ট
আর্মি গ্রুপ আপার রাইন কমান্ডার
১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৪ – ২৪ জানুয়ারি, ১৯৪৫
উত্তরসূরী
নেই
পূর্বসূরী
সৃষ্ট
আর্ম গ্রুপ ভিস্তুলা কমান্ডার
২৫ জানুয়ারি, ১৯৪৫ – ১৩ মার্চ, ১৯৪৫
উত্তরসূরী
গোথার্ড হেনরিসি জেনার‌্যালোবার্স্ট
(২০ মার্চ)
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
পূর্বসূরী
ইওসিফ স্তালিন
টাইম সাময়িকীর প্রচ্ছদ
১২ ফেব্রুয়াই, ১৯৪৫
উত্তরসূরী
উইলিয়াম হুড সিম্পসন