প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমান (উর্দু: حمود الرحمن‎‎; ১ নভেম্বর ১৯১০ – ৩১ অক্টোবর ১৯৭৫) ছিলেন একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত পূর্ব পাকিস্তানি আইনবিদ । তারা পরিবার কর্মসূত্রে বিহারের পাটনায় থাকাকালীন সময়ে তিনি পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পরে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট এ আইন ব্যবসা শুরু করে। তিনি পাকিস্তানের সপ্তম প্রধান বিচারপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। এছাড়াও তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক ছিলেন। জুলফিকার আলি ভুট্টোর সরকার তাকে হামুদুর রহমান কমিশনের প্রধান নিযুক্ত করে। এর ফলে তিনি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এই কমিশন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা তদন্ত করার জন্য গঠিত হয়েছিল।[১]

হামুদুর রহমান
حمود الرحمن
জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে রহমান (বামে)
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি
কাজের মেয়াদ
১৮ নভেম্বর ১৯৬৮ – ৩১ অক্টোবর ১৯৭৫
নিয়োগদাতাআইয়ুব খান
পূর্বসূরীফজল আকবর
উত্তরসূরীমুহাম্মদ ইয়াকুব আলি
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯১০-১১-০১)১ নভেম্বর ১৯১০
পাটনা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বিহার, ভারত)
মৃত্যু৩১ অক্টোবর ১৯৭৫(1975-10-31) (বয়স ৬৪)
করাচি, পাকিস্তান
মৃত্যুর কারণস্বাভাবিক মৃত্যু
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
ইন্স অব কোর্ট স্কুল অব ল
পুরস্কারনিশান-এ-ইমতিয়াজ (১৯৭৬)
হিলাল-ই-ইমতিয়াজ (১৯৭৪)

জীবনী সম্পাদনা

হামুদুর রহমান ব্রিটিশ ভারতের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক হন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি গ্রেস ইনে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৩৭ সালে তিনি কল টু দ্য বার লাভ করেন।

১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতা উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর এবং ১৯৪৩ সালে কলকাতার ডেপুটি মেয়র হন। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা প্রদেশের জুনিয়র স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা চলে আসেন। ১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের এডভোকেট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। এরপর ঢাকা উচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

বিচারপতি হামুদুর রহমান ১৯৫৪ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ঢাকা উচ্চ আদালতের বিচারক ছিলেন। ১৯৫৮ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৬০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। ১৯৬০ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৬৮ সালে তাকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

কর্মজীবনে হামুদুর রহমান বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের সদস্য, ছাত্র সমস্যা ও উন্নয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান, আইন সংস্কার কমিশনের সদস্য, যুদ্ধ তদন্ত কমিশন, জাতিসংঘের অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য এবং ইসলামিক আদর্শ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট সম্পাদনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলি ভুট্টো একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে হামুদুর রহমানকে এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন। তাকে পাকিস্তানের ভাঙনের কারণ এবং জাতীয় রাজনীতিতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তার রিপোর্টে বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয় এবং তাদের বিচারের সুপারিশ করা হয়। তবে জুলফিকার আলি ভুট্টো এবং পরবর্তী মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক সরকার কখনো রিপোর্টটি জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি।

২০০০ সালে একটি ভারতীয় পত্রিকায় রিপোর্টের কিছু অংশ ফাঁস হয়। এরপর একটি পাকিস্তানি পত্রিকায়ও রিপোর্টের কিছু অংশ প্রকাশিত হয়। শেষপর্যন্ত পারভেজ মুশাররফ সরকার রিপোর্টটি জনসম্মুখে প্রকাশ করে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

আইন দফতর
পূর্বসূরী
ফজল আকবর
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি
১৯৬৮–১৯৭৫
উত্তরসূরী
মুহাম্মদ ইয়াকুব আলি