স্যাকাজাউইয়া (ইংরেজি: Sacagawea; /ˌsækəəˈwə/ নিচে দেখুন; মে ১৭৮৮ – ২০ ডিসেম্বর, ১৮১২), যিনি স্যাকাকাউইয়া বা স্যাকাগাউইয়া নামেও পরিচিত, একজন লেমহাই শোশোনি নারী যিনি লুইজিয়ানা পারচেজ অঞ্চলে গবেষণার উদ্দেশ্যে পরিচালিত লুইস ও ক্লার্কের অভিযানের প্রতিটি লক্ষ্য সফলতার সাথে শেষ করতে সহায়তা করেছিলেন। এই অভিযানের সময়, ১৮০৪ থেকে ১৮০৬ সালের মধ্যে তিনি অভিযাত্রীদের সাথে নর্থ ডাকোটা থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত কয়েক হাজার মাইল পথ পাড়ি দেন যা আদিবাসী নেটিভ আমেরিকানদের সাথে ঔপনিবেশিক মার্কিনদের সাংষ্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি ও ঐ অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের ইতিহাসের গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্যাকাজাউইয়া
‘স্যাকাজাউইয়া’ (১৯১০), নর্থ ডাকোটা স্টেট ক্যাপিটল, লিওনার্ড ক্রানেল, ভাস্কর
জন্মমে ১৭৮৮
লেমহাই রিভার ভ্যালি,
বর্তমানে স্যামন, আইডাহো
মৃত্যু২০ ডিসেম্বর, ১৮১২ or ১৮৮৪ (বয়স ২৪ বা ৯৬)
জাতীয়তামার্কিন
অন্যান্য নামস্যাকাকাউইয়া, স্যাকাযাউইয়া, স্যাকাগাউইয়া
পরিচিতির কারণলুইস ও ক্লার্কের অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্ট
দাম্পত্য সঙ্গীতুসাঁ সার্বুন্নু
সন্তানজঁ-বাতিস্ত সার্বুন্নু
লিসেত সার্বুন্নু

নাম সম্পাদনা

এই নারীর নামের বানান, উচ্চারণ, এবং ব্যুৎপত্তি নিয়ে বহুদিন ধরে বহু বিতর্ক চলমান। যদিও ১৮৭০-এর দশক থেকে হিদাৎসা ভাষা নিয়ে কাজ করা ভাষাবিদরা সবসময়-ই এটি মেনে এসেছেন যে এই নারীর নামটির হিদাৎসা ভাষা থেকেই ব্যুৎপত্তি হওয়াটা বিতর্কের উর্দ্ধে। তাদের মতে ‘স্যাকাজাউইয়া’ শব্দটি মূলত হিদাৎসা ভাষার দুটি প্রচলিত বিশেষ্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগিক শব্দ, যার প্রথমটি “cagáàga” [tsaɡáàɡa] যার অর্থ ‘পাখি’ এবং দ্বিতীয়টি “míà” [míà] যার অর্থ ‘নারী’। আধুনিক হিদাৎসা লিখনবিধিতে এই যৌগিক শব্দটি একত্রে “Cagáàgawia” হিসেবে লেখা হয় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘পক্ষী নারী’। এছাড়াও আধুনিক হিদাৎসায় শব্দটি উচ্চারণ [tsaɡáàɡawia] যেখানে স্বরবর্ণের মধ্যকার /m/-এর উচ্চারণ হিদাৎসা ভাষায় [w]-এর মতো। নামটির বানানে জোড়া /aa/ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ একটি স্বরবর্ণ নির্দেশ করে এবং ডায়াক্রিটিকটি হচ্ছে একটি পড়ন্ত পিচ প্যাটার্ন। হিদাৎসা একটি পিচ-ঝোঁক বা পিচ অ্যাকসেন্ট সমৃদ্ধ ভাষা যেটিতে শ্বাসাঘাত দেওয়ার মতো কোনো উচ্চারণ নেই। এজন্য হিদাৎসা ভাষায় সকল অক্ষরের উচ্চরণ গড়পড়তা একই ঘাত দিয়ে উচ্চারিত হয়। তারপরেও বেশিরভাগ ইংরেজি ভাষাভাষীরা ঝোঁক বা অ্যাকসেন্ট দেওয়া অক্ষরটিকে (দীর্ঘ /aa/) শ্বাসাঘাত হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে গবেষকরা “Cagáàgawia” নামটির অন্যান্য ভাষায় উপস্থাপনার সময় ইংরেজির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শেষ অক্ষরের বদলে দ্বিতীয় দীর্ঘ অক্ষরে শ্বাসাঘাত যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।[১]

জীবনী সম্পাদনা

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

স্যাকাজাউইয়ার ওপর গ্রহণযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্যভাণ্ডার খুবই সীমিত। তার জন্ম হয়েছিলো লেমহাই শোশোনি গোত্রের ‘আগাইদিকা’ বা ‘স্যামনভূক’ একটি পরিবারে যাদের অবস্থান ছিলো স্যামনের লেমহাই কাউন্টির কেনি ক্রিক ও এজেন্সি ক্রিকের মধ্যবর্তী স্থানে। ১৮০০ সালে, যখন তার বয়স প্রায় ১২, তিনি আরও কতোগুলো মেয়েসহ হিদাৎসাদের হাতে অপহৃত হন। শোশোনি গোত্রের সাথে হিদাৎসাদের সংঘটিত একটি যুদ্ধ ছিলো এই অপহরণের কারণ যে যুদ্ধে চারজন পুরুষ, চারজন নারী, ও কয়েকজন বালকসহ বেশ কিছু শোশোনি ব্যক্তি নিহত হন। স্যাকাজাউইয়া এর পর থেকে হিদাৎসাদের গ্রামে (যা বর্তমানে ওয়াশবার্ন, নর্থ ডাকোটার নিকটবর্তী) একজন বন্দী হিসেবে বসবাস করতে থাকেন।

আনুমানিক ১৩ বছর বয়সে ঐ হিদাৎসা গ্রামে বসবাসকারী তুসাঁ সার্বুন্নু নামে কুইবেকের একজন শিকারী স্যাকাজাউইয়াকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এই একই ব্যক্তি ওটার ওম্যান নামে আরেকটি শোশোনি মেয়েকেও স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এটা জানা যায় যে, শার্বুন্নু তাদের দুইজনকেই হিদাৎসাদের কাছ থেকে ক্রয় করেছিলেন, অথবা তিনি স্যাকাজাউইয়াকে জুয়া খেলার সময় বাজিতে জিতেছিলেন।

সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সম্পাদনা

মার্কিন জনসাধারণের কাছে লুইস ও ক্লার্কের অভিযান সম্পর্কিত চিন্তাধারায় স্যাকাজাউইয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ন্যাশনাল অ্যামেরিকান ওম্যান সাফারেজ অ্যাসোসিয়েশন তাকে নারীর মূল্য ও স্বাধীনতার একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করতো। সংগঠনটি তার অবদানের গল্প ছড়িয়ে দিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় এবং তার স্মরণে বিভিন্ন স্থানে তার কয়েকটি মূর্তি ও নামফলক উন্মোচন করে।[২]

১৯৭৭ সালে স্যাকাজাউইয়া টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থের ন্যাশনাল কাউগার্ল হল অফ ফেমে মরণোত্তর হিসেবে তার নাম যুক্ত হয়।

এছাড়াও ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন তাকে সম্মানসূচক ‘অনারারি সার্জেন্ট, রেগুলার আর্মি’ পদবী প্রদান করেন।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Park, Indrek. 2012. A Grammar of Hidatsa. Ph.D. dissertation, Indiana University, Bloomington. p. 36.
  2. Fresonke, Kris & Spence, Mark David (ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০০৪)। Lewis & Clark: Legacies, Memories, and New Perspectives (ইংরেজি ভাষায়)। University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-23822-0 
  3. "Sergeant Sacagawea" (ইংরেজি ভাষায়)। Lewisandclarktrail.com। ২০০৯-০১-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা