স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যেসব নিয়ম কানুন অনুসরণ করা হয় সেগুলোকেই স্বাস্থ্যবিধি হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, ‌‌‌‌‌‍'স্বাস্থ্যবিধি বলা হয় সেসব নিয়মাবলি ও অনুশীলনকে যেগুলো সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।' [১] ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বলতে দৈহিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে বোঝানো হয়।

জীবাণু প্রতিরোধে হাত ধোওয়া
পোস্টারটি সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ পানির গুরুত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরির জন্য (এই পোস্টারটি এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যবহারের জন্য আঁকা হয়েছে) by CAWST.

অনেকে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এ দুটো বিষয়কে এক মনে করেন। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি একটি ব্যাপক বিষয়। এতে যেমনিভাবে ব্যক্তিগত বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত যেমন, গোসল করা, হাত পরিষ্কার রাখা, নখ কাটা, কাপড় ধোওয়া ও পরিবর্তন করা ইত্যাদি। তেমনি ঘর-দোর, কর্মস্থল এমনকি শৌচাগার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্তকরণ রাখাও এর অন্তর্ভুক্ত।

নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধির কতিপয় অনুশীলনকে সমাজে ভাল গুণ ও অভ্যাস হিসেবে দেখা হয়। যেগুলো বর্জন করাকে সাধারণত নিন্দনীয়, অপমানকর অথবা হুমকিস্বরূপ বিবেচনা করা হয়।

নামতত্ত্ব সম্পাদনা

স্বাস্থ্যবিধি শব্দটি মূলত ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ 'হাইজিন' এর প্রতিরূপ। ১৬৭৬ সনে প্রথম ইংরেজি ভাষায় hygiene শব্দটি নিয়ে আসা হয় ফ্রেঞ্চ ভাষার  hygiène (হাইজিয়েন) থেকে যা মূলত গ্রিক শব্দ ὑγιεινή (τέχνη) (হিউজিনে টেখনে) এর ল্যাটিন রূপ যার অর্থ "স্বাস্থ্যকলা বা স্বাস্থ্যকো"। গ্রীক ভাষায় এরকম ব্যবহার লক্ষ করা যায়, ὑγιεινός(হিউজিয়াস) যার অর্থ "স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বা স্বাস্থ্যকর"[২] এটি ὑγιής (হিউজীস) শব্দের সমার্থকরূপে ব্যবহৃত হয় যার অর্থও স্বাস্থ্যকর,উপকারী, পথ্য।[২] প্রাচীন গ্রীকপুরাণে, Ὑγίεια (হাইজিয়া) বলে স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধির মনুষ্যরূপ (ঔষুধ দেবতা আস্ক্লেপিউসের সন্তান-সন্ততি) বোঝানো হত।[২]

পটভূমি সম্পাদনা

 
হাত ধোওয়া জীবাণু প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি
 
একজন নভোচারী পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থিত স্কাইল্যাব স্পেস স্টেশনের অরবিটাল ওয়ার্কশপের ভেতরের ক্রু কোওয়ার্টারে গরম পানি দিয়ে গোসল করছে

স্বাস্থ্যবিধি হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত একটি বিষয়। দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা ও অষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

তবে স্বাস্থ্যবিধি সমাজ ও সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। এক সংস্কৃতিতে যে স্বাস্থ্যবিধি স্বীকৃত তা অন্য সংস্কৃতিতে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। খাদ্য, ঔষুধ, কসমেটিক পণ্য ও অন্যান্য দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নত স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করনের একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই দুই বিষয়ের একটিকে অপরটির স্থলে অনেক সময় ব্যবহার করা হয় বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তাই বলে রাখা ভাল, স্বাস্থ্যবিধি হল রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিস্তার রোধ করার অনুশীলন। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হল সংক্রামক জীবাণু পাশাপাশি ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি দূর করা।

এছাড়াও দৈহিক স্বাস্থ্যবিধি, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি, ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি, মানসিক স্বাস্থ্যবিধি, দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি এবং বৃত্তিগত স্বাস্থ্যবিধি জাতীয় বিষয়গুলো মূলত গণস্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। স্বাস্থ্যবিধি বিজ্ঞানের একটি শাখারও নাম যা সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

চিকিৎসাবিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

চিকিৎসাবিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মূলত চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত ঐসব অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেগুলো রোগ সংক্রমণ কমায় বা রোধ করে।

চিকিৎসাবিষয়ক স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদিঃ

  • সংক্রমিত ব্যক্তি বা বস্তুকে আলাদা করে ফেলা যাতে জীবাণু না ছড়ায়।
  • অস্ত্রপচার বা সার্জারির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবাণুশূন্য করা বা স্ট্যারিলাইজ করা।
  • মুখোশ, গাউন, টুপি, হ্যান্ডগ্লাভস প্রভৃতি জীবাণুর হাত থেকে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • ক্ষতস্থানে ভাল করে ব্যান্ডেজ ও ড্রেসিং করা।
  • চিকিৎসাবর্জ্য নিরাপদ স্থানে ফেলা।
  • পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপকরণসমূহ যেমন, পোশাক, প্যাড ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করা।
  • অপারেশন রুমে অথবা এমন স্থানে যেখানে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে সেখানে হাত ধোওয়া, জিনিসপত্র ধুয়ে রাখা।

এইসব পদ্ধতির বেশিরভাগই উনিশ শতকে প্রচলন করা হয়েছে। বিশ শতকে এগুলোর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মাত্র। কিছু পদ্ধতি পুনঃসংস্কার করা হয়েছে বিশ শতকে এইডসইবোলার মত রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে।

দৈনিক ও ঘরোয়া স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

ঘরোয়া স্বাস্থ্যবিধি বলতে ঐসব স্বাস্থ্যঅনুশীলনকে বোঝায় যেগুলো ঘর এবং দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গগুলি যেমন, সামাজিক ক্ষেত্র, গণপরিবহন, কর্মক্ষেত্র, পাবলিক প্লেস প্রভৃতিতে রোগ সংক্রমণ কমায় কিংবা প্রতিরোধ করে।

এই সকল ক্ষেত্রে সংক্রামক রোগের বিস্তার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধির ভূমিকা অপরিসীম।[৩] ঘরের বিভিন্ন বিষয়াদি যেমন হাতের স্বাস্থ্যবিধি, খাদ্য ও পানীয়ের স্বাস্থ্যবিধি, ঘরের স্বাস্থ্যবিধি (ঘরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ), গৃহপালিত পশুর লালন-পালন ও ঘরোয়া চিকিৎসাসেবা (ঘরে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসাসেবা) ইত্যাদি ঘরোয়া স্বাস্থ্যবিধির অন্তর্ভুক্ত।
রোগ বিস্তার প্রতিরোধের অর্থ হল, সংক্রমণ প্রবাহের ধারা ভঙ্গ করা। সাধারণত সংক্রমণের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে রোগ আর ছড়াতে পারে না। দৈনন্দিন জীবনে ঘর-বাড়িতে স্বাস্থ্যবিধির কার্যকর নিয়মাবলি প্রণয়নের জন্য ইন্টারন্যাশনাল সাইন্টিফিক ফোরাম অন হোম হাইজিন নামক সংস্থা হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস ক্রিটিকাল কন্ট্রোল পয়েন্ট (এইচএসিসিপি) ভিত্তিক একটি ঝুঁকি-ভিত্তিক পদ্ধতি বের করেছে। একে "টারগেটেড স্বাস্থ্যবিধি"ও বলা হয়। টারগেটেড স্বাস্থ্যবিধির ভিত্তিমূল হল, ঘর-বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোগের পথ চিহ্নিতকরণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সংক্রমণের ধারা ভেঙে স্বাস্থ্যবিধি প্রবর্তন করা।
রোগ সংক্রমণের প্রধান উৎসসমূহ[৪] হল, মানুষ (আক্রান্ত বা জীবাণুবাহী ), খাদ্য, পানি এবং গৃহপালিত পশু (যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি ঘরে পোষা প্রাণী বিদ্যমান[৫])। যেসব স্থানে পানি জমে থাকে যেমন ডোবা, পায়খানা, নষ্ট পানির পাইপ ইত্যাদি খুব সহজেই জীবাণুর বংশ বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয়। জীবাণুসমূহ পরে এইসব স্থান থেকে মিউকাল ঝিল্লি, মল, বমি ইত্যাদির মাধ্যমে খুব সহজেই ছড়িয়ে পরে। মানুষ কোন স্থানে একত্র হলে এইসব জীবাণু সরাসরি কিংবা খাদ্যের মাধ্যমে সংক্রমণের সুযোগ পায়।

ঘর-বাড়িতে জীবাণু ছড়ানোর সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল হাত, হাত ও খাবার যেসব জায়গা স্পর্শ করে সেসব স্থান, ধোওয়া-মোছার নেকড়া এবং পাত্রসমূহ। কাপড়ের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়াতে পারে। টয়লেট, বেসিন ইত্যাদি যদিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্যই তৈরি করা হয়েছে তবুও এসব থেকেও রোগ-জীবাণু ছড়ানোর আশংকা আছে। তাছাড়া অজায়গাতে বর্জ্য ফেলা, অনিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতি থেকে ডায়রিয়া রোগ ছড়াতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস এবং ছত্রাকের বীজ বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।

যেভাবে ঘরোয়া স্বাস্থ্যবিধি পালন করা যায়ঃ

  • সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা। জীবাণু দূর করতে ভাল করে পানি দিয়ে ধৌত করা।
  • জীবাণু নিরোধক অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল সামগ্রী ব্যবহার করা। যেমন, পানিবিহীন হাত পরিষ্কারক স্যানিটাইজার বা তাপ উৎপাদক যন্ত্র।
  • কম্বা‌ইন্ড প্যাথোজেন রিমুভাল ব্যবহার করা যেতে পারে।

হাত ধোওয়া সম্পাদনা

 
টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোওয়ার জন্য প্লাস্টিকের বোতল কেটে বানানো ট্যাপ

হাতের স্বাস্থ্যবিধি হল হাত, নখ সাবান-পানি দিয়ে অথবা পানিবিহীন হাত পরিষ্কারকের মাধ্যমে পরিষ্কার করা। প্রাত্যহিক জীবনে সকল জীবাণু প্রতিরোধের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হল হাত ধোওয়া।[৬]

যেখানে হাত ধোওয়া সম্ভব নয় সেখানে পানিবিহীন হাত পরিষ্কারক যেমন অ্যালকোহল হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করা যায়। এগুলোকে হাত ধোওয়ার বিকল্প হিসেবে নিতে হবে যেন জীবাণুর ঝুঁকি কমানো যায়। এধরনের পরিষ্কারক কার্যকর করতে এতে ৬০%v/v অ্যালকোহল থাকা উচিৎ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO)-র মতে, জরুরি অবস্থায় সাবান না থাকলে ছাই দিয়ে হাত ধোওয়া ভাল।[৭][৮] তাছাড়া জরুরী স্থলে পরিষ্কার বালু দিয়েও হাত ধোওয়া যাবে।[৯] পল্লী অঞ্চলে ছাইয়ের ব্যবহার একেবারেই সাধারণ ব্যাপার এবং গবেষণায়ও দেখা গেছে এটি জীবাণু দূর করতে সাবানের মতই কার্যকর।[১০]

শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

ঠাণ্ডা সময় হাঁচি বা কাশির সময় হাতের স্বাস্থ্যবিধি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।[৩]

  • টিস্যু পেপার সাথে রাখুন হাঁচি বা কাশির সময় ব্যবহারের জন্য।
  • ব্যবহৃত টিস্যু পেপার যত দ্রুত সম্ভব ফেলে দিন।
  • হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।

খাবারের স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

মূল পাতাঃ খাবারের স্বাস্থ্যবিধি

খাবারের স্বাস্থ্যবিধি বলা হয় খাদ্যে বিষক্রিয়া রোধের জন্য যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয় তাকে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে খাবারের স্বাস্থ্যবিধির পাঁচটি চাবিকাঠি হলঃ[১১]

  1. খাদ্যে রাসায়নিক ব্যবহার, মানুষ বা প্রাণী থেকে রোগ জীবাণু বিস্তারের মাধ্যমে খাদ্য দূষণ রোধ করুন।
  2. কাঁচা এবং রান্না করা খাবার আলাদা রাখুন যাতে রান্না করা খাবার দূষিত না হয়।
  3. জীবাণু মেরে ফেলতে খাবার উপযুক্ত তাপমাত্রায় প্রয়োজনীয় সময় যাবৎ রান্না করুন।
  4. খাবার উপযুক্ত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন।
  5. নিরাপদ পানি এবং কাঁচামাল ব্যবহার করুন।

রান্নঘর, গোসলখানা এবং পায়খানা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

নিয়মিত রান্নাঘর, গোসলখানা এবং পায়খানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে জীবাণুর বিস্তার কমানো যায়।[১২] পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা থেকে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। গোসল বা ধৌতকার্যের পরে গোসলখানার বা বেসিনের স্কিম বা স্কেলে জীবাণু জন্মাতে পারে। ঝরনার পাইপে ধরে রাখা পানি জীবাণুযুক্ত হয়ে যেতে পারে এতে ঝরনা চালু করলে জীবাণুগুলো বায়ুবাহিত হতে পারে। তাই কয়েকদিন ধরে কোনো ঝরনা ব্যবহার করা না হলে ব্যবহারের সময় ঝরনা চালু করে একটু উষ্ণ তাপমাত্রায় কয়েক মিনিটের জন্য ঝরনা ছেড়ে রাখা উচিৎ।

ছত্রাক সংক্রমণ রোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।[১৩] দেয়াল, মেঝে কিংবা গোসলখানার পর্দায় এরা বাসা বাঁধতে পারে। সাধারণত স্থির স্থানগুলোতে ছত্রাক বেশি জন্মায়। যেমন, কার্পেট, ফার্নিচার।[১৪] বায়ুবাহিত ছত্রাকের উপদ্রব আর্দ্র অবস্থায়,বায়ুচলাচলের অব্যবস্থাপনায় এবং বদ্ধ স্থানের কারণে হয়।

ধোওয়া মোছার স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

ধোওয়া মোছার স্বাস্থ্যবিধি বলা হয় ঐসব নিয়মাবলিকে যেগুলো মেনে চললে ময়লা পোশাক, নেকড়া, গামছা বা তোয়ালেজাতীয় মুছুনি থেকে রোগ ছাড়ানোর পথ বন্ধ করা যায়।[১৫] যেসব জিনিস দেহের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সেগুলোই দ্রুত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায় যেমন, অন্তর্বাস(পোশাকের ভেতরে পরিধেয়), ব্যক্তিগত গামছা-তোয়ালে, মুখের নেকাব বা মাস্ক, শিশুদের ল্যাঙ্গট বা ডায়পার ইত্যাদি। খাবার প্রস্তুত করার সময় বা টয়লেট পরিষ্কারের সময় ব্যবহৃত কাপড় বা মল-মূত্র কিংবা বমি পরিষ্কার করার কাপড়-চোপড় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।[১৬]

অণুজীববিজ্ঞান ও মহামারী-সংক্রান্ত বিজ্ঞান এর তথ্যমতে পোশাক, ঘর-মুছুনি ইত্যাদি প্রাত্যহিক জীবনে ঘর-বাড়িতে এমনকি প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত রোগ সংক্রমণ ও ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।  বাসা-বাড়িতে ময়লা পোশাক-আশাক থেকে কীভাবে ইনফেকশন হয় তা সম্পর্কে তেমন তথ্য জানা না থাকায় এই ঝুঁকি কমানো মুশকিল।[১৫][১৬][১৭] তবে পোশাক ও ঘর-মুছুনি থেকে ইনফেকশনের ঝুঁকি হাত, হাত বা খাবার সংলগ্ন স্থান প্রভৃতি থেকে কিছুটা কম। তবুও পোশাক-আশাকের ঝুঁকিটুকুও নিয়মিত কাপড় লন্ড্রি করার মাধ্যমে দূর করতে হবে। এজন্য প্রত্যেক ঘরে কাপর লন্ড্রি তথা ধৌত করার রুটিন করে নেয়া উচিৎ।[১৫][১৬][১৭]

ময়লা কাপড় থেকে দ্রুতই রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। যেমন, হাসপাতালে, যেই ঘরে কোনো ত্বকের ইনফেকশনে আক্রান্ত অথবা কলেরা বা ডায়রিয়ার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যেসব রোগীর রোগপ্রতিরোধক্ষমতা কম তাদের জন্য ময়লা কাপড় রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে।

স্বাস্থ্যবিধির নিয়মাবলি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুসমূহ রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।[১৮][১৯] সমাজে কোন সুস্থ মানুষও এমআরএসএ(MRSA) ব্যাক্টেরিয়া বা অ্যান্টারো ব্যাক্টেরিয়ার  বাহক হতে পারে যারা বহু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ফ্যাক্টর (NDM-1 or ESBL-producing strains) বহন  করতে পারে যা কেবল ধরা পরতে পারে হাসপাতালে যাওয়ার পরেই। কিন্তু সুস্থ সমাজে বাস করার সময় এই ব্যক্টেরিয়াসমূহ চতুর্দিকে 'নিরবে' ছড়িয়ে পরতে থাকে।[১৯]  গবেষণা বলছে, এই ধরনের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকির পেছনে পোশাক ও ঘর-মুছুনিসমূহও প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন, S. aureus(সাথে MRSAও PVLউৎপাদনকারী জীবাণুসমূহও) ব্যাক্টেরিয়া ছড়াতে পোশাক ও ঘর-মুছুনিসমূহ প্রভাবকরূপে কাজ করে। লন্ড্রি ভাল করে করা হলে সমাজে এইসব জীবাণুর বিস্তারের হার অনেকটাই কমানো সম্ভব।[১৫][২০] যুক্তরাষ্ট্রে অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এইসব জীবাণু ঘরে কিংবা ঘরের বাইরের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন, জেলখানা, স্কুল এবং খেলাধুলার জায়গায় ছড়াতে পারে। চামড়ার সাথে চামড়ার প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে  অথবা দূষিত বস্তুর(যেমন, গামছা, খেলাধুলার সামগ্রী ইত্যাদি) পরোক্ষ সংস্পর্শে ছড়াতে পারে।[১৫]

কাপড় লন্ড্রি করার সময় ডিটারজেন্ট এবং তদুদ্ভূত তাপ কাপড়ের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। ময়লা এবং জীবাণুসমূহ কাপড় থেকে বেরিয়ে পানিতে ধুয়ে চলে যায়। অতিরিক্ত ফিজিক্যাল রিমুভাল ব্যবহার করলে যেসব অণুজীব বেশি তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পায় সেসব তারা তাপশূণ্যতায় মারা পড়ে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ সক্রিয় ব্লিচিং পাউডার এবং অন্যান্য পিচ্ছিলকারক পদার্থ(Surfactants) ব্যবহারে লন্ড্রি আরো স্বাস্থ্যসম্মত হয়। হাইপোক্লোরাইট ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারে জীবাণু ভাল মরে। কাপড় ধোওয়া শেষে কাপড় শুকানো এবং ইস্ত্রি করার সময় আরো কিছু ভাল পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।

কাপড় ধোওয়ার ডিটারজেন্টে অনেক ধরনের উপাদান থাকে যেমন, পিচ্ছিলকারক পদার্থ, আলোক উজ্জ্বলতা বর্ধক, বিল্ডার ইত্যাদি। কাপড় পরিষ্কারের কাজ ভাল হয় মূলত পিচ্ছিলকারক পদার্থ এবং ময়লা দূরকারী পদার্থসমূহ দ্বারা যেগুলো ময়লাকে কাপড় থেকে সর্বাপেক্ষা বিচ্ছিন্ন করে তরল পানির সাথে মিশে যেতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অক্সিজেন সমৃদ্ধ ব্লিচিং পাউডার অথবা কিছু এনজাইম(উৎসেচক)ও আছে যেগুলো ব্যক্টেরিয়াদের ভক্ষণ করে। যদিও অক্সিজেন সমৃদ্ধ সক্রিয় ব্লিচিং পাউডারেরে উপাদান অনেক ডিটারজেন্ট পাউডারেই দেওয়া থাকে যাতে এটি ব্যক্টেরিয়া ভক্ষণ করে ফেলে, তারপরও এই ডিটারজেন্টগুলো আরে অতিরিক্ত কিছু কাজও করে যেমন, ব্যক্টেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাসসমূহকে নির্জীব ও নিষ্ক্রিয় করে দেয়। কাপড় পরিষ্কারের পাউডার বা ট্যাবলেটের মধ্যে  অক্সিজেন সমৃদ্ধ সক্রিয় ব্লিচিং পাউডারের উপাদান থাকে, লিকুইড বা তরলগুলোতে থাকে না। তবে পিচ্ছিলকারক উপাদানও কিছু প্রজাতির জীবাণুর রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়করণে কাজ করে যদিও সুনির্দিষ্টভাবে এর কাজের পরিমাণ জানা নেই আমাদের।

২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল সাইন্টিফিক ফোরাম অন হোম হাইজিন (IFH) বিভিন্ন অবস্থায় কক্ষ তাপমাত্রা থেকে ৭০ডিগ্রি সে. পর্যন্ত তাপমাত্রায় কাপড় ধোওয়ার স্বাস্থ্যসম্মত দিকগুলো নিয়ে ৩০টি গবেষণা পর্যবেক্ষণ করে।[২১] কিন্তু গবেষণাগুলোতে এত বেশি ব্যবধান ও পার্থক্য ছিল যে এগুলোর ওপর নির্দিষ্ট কোন কিছুকে মানদণ্ড ধরে স্বাস্থ্যসম্মত লন্ড্রিংয়ের ওপর তথ্যভিত্তিক নিশ্চিত কোন দিকনির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয় নি। কারণ, একেক গবেষণায় লন্ড্রি করার সময়, কাপড় ঘষা-নিংড়ানোর পরিমাণ প্রভৃতি একেক রকম ছিল। তাই স্বাস্থ্যসেবা  দানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাস্থ্যসম্মত লন্ড্রিংয়ের ব্যাপারে দিকনির্দেশনাগুলোতে অনেক পার্থক্য লক্ষ করা যায়।[২২][২৩][২৪][২৫][২৬][২৭]

আরো উদ্বেগজনক ব্যাপার হল সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যায় বাস্তবে ঘরের আধুনিক ওয়াশিং মেশিনগুলো পর্যাপ্ত তাপমাত্রা দিতে সক্ষম নয়।  

বাড়িতে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

চিকিৎসাবিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মূলত চিকিৎসাসেবা ও অষুধ গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত ঐসব অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেগুলো রোগ সংক্রমণ কমায় বা রোধ করে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিটি দেশের সরকার ব্যবস্থা চিকি‍‌ৎসাখাতে জনগণের প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেবার ক্ষেত্রে চাপের ভেতরে থাকে। তাই বাসা-বাড়িতে রোগীর সেবা-যত্ন বৃদ্ধি করা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একটি উপায় হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, বাড়িটিতে যেন অবশ্যই নিরবচ্ছিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধব্যবস্থা বজায় থাকে। পাশাপশি রোগীর সেবার জন্য নিয়োজিত মানুষকে (পরিবারের যে কোনো সদস্যই হোক) অবশ্যই স্বাস্থ্যজ্ঞান রাখতে হবে।

যেসব মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।[৩] এর মধ্যে বেশিরভাগই হল রোগীর সাথে যারা বেশি থাকে। এতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তবে নিম্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে আরো আছে, অল্প বয়স্ক, হাসপাতাল থেকে ছাড়প্রাপ্ত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসকারী ওষুধ গ্রহণকারী প্রমুখ।

তাই হাসপাতাল থেকে ছাড়প্রাপ্ত ব্যক্তিদের অথবা ঘরে চিকিৎসারত রোগীদেরকে বিশেষ ‌''চিকিৎসা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি''-র আওতার রাখতে হয়। যেমন, ক্যাথেটার বা ড্রেসিং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রোগীর ইনফেকশনের ঝুঁকি আছে।

কাটা বা জখম হওয়া স্থানে জীবাণু নাশক (অ্যান্টিসেপ্টিকস) ব্যবহার করা উচিত; যাতে ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া দেহে প্রবেশ করতে না পারে। এত ক্ষতস্থানে পুঁজ হয়ে পেকে যেতে পারে। এমনকি পচন পর্যন্ত ধরতে পারে।

দিনে দিনে ইনফেকশনের ঝুঁকিপূর্ণ রোগী আর ঝুঁকিতে না থাকা পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি আর চিকিৎসাসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির নিয়মাবলির মধ্যে পার্থক্য মিলিয়ে যাচ্ছে।[২৮] পার্থক্য শুধু এই, স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম ভাল করে না মানা হলে ইনফেকশন তথা সংক্রমণের ঝুঁকি আরো প্রবল।

ইনফেকশন-নিরোধক এবং অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়ালসমূহ সম্পাদনা

রাসায়নিক ইনফেকশন-নিরোধক বলা হয় ঐ সব পদার্থকে যেগুলো জীবাণু নাশ করে। ইনফেকশন-নিরোধক  পণ্যের গায়েই লেখা থাকে "disinfectant" অথবা "kills pathogens"। কিছু কিছু পণ্য যেমন, ব্লিচিং পাউডার কার্যত ইনফেকশন-নিরোধক হওয়া সত্ত্বেও এবং প্যাকেটের গায়ে  "kills pathogens" লেখা থাকলেও এগুলো ইনফেকশন-নিরোধক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। কারণ সব ধরনের ইনফেকশন-নিরোধক পদার্থ সব ধরনের জীবাণু মারে না। কিছু ইনফেকশন-নিরোধক পদার্থ ব্যাক্টেরিয়া মারে যেগুলোকে বলা হয় ব্যাক্টেরিয়াসাইডাল বা ব্যাক্টেরিয়াঘাতী। কিছু ইনফেকশন-নিরোধক পদার্থ ছত্রাক মারে যেগুলোকে বলা হয় ফানজাইসাইডাল বা ছত্রাকঘাতী। কিছু ইনফেকশন-নিরোধক পদার্থ আবার ব্যাক্টেরিয়ার স্পোর বা বীজ মারে যেগুলোকে বলা হয় স্পোরিসাইডাল।  কিছু ইনফেকশন-নিরোধক ব্যাক্টেরিয়ার ভাইরাস মারে যেগুলোকে বলা হয় ভাইরাসাইডাল।

অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়ালসমূহ হল ঐ সব পণ্য যেগুলো ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধ করে। কিছু কিছু পণ্যের গায়ে "অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল" লেখা থাকলেও এগুলো আসলে  ব্যাক্টেরিয়ার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে পারে ব্যাক্টেরিয়া চিরতরে ধ্বংস করতে পারে না। তাই পণ্যের গায়ে লেখা দেখে নেওয়া উচিত "kills" bacteria। আ্যান্টিব্যক্টেরিয়ালসমূহ সাধারণত ছত্রাক বা ভাইরাস ধ্বংসকারী হয় না; যদি না এর গায়ে এগুলো লেখা থকে।

স্যানিটাইজার বলা হয় ঐসব পদার্থকে যেগুলো পরিষ্কারক ও ইনফেকশন-নিরোধক হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিককালে এই শব্দটি সাধারণত অ্যালকোহলজাত পণ্যের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যেগুলো হাতের ইনফেকশন রোধে ব্যবহৃত হয় (অ্যালকোহল হ্যান্ড স্যানিটাইজার)। তবে এইসব স্যানিটাইজার মাটি মাখা হাতের জীবাণু নাশে কার্যকর নয়।

বায়োসাইড শব্দটি উল্লিখিত শব্দগুলোর তুলনায় অনেক ব্যাপক। যেসব পদার্থ অণুজীব বিনাশ করে, দুর্বল করে দেয় অথবা বংশবিস্তার রোধ করে সেগুলোকেই বায়োসাইড বলে। এর মধ্যে  ইনফেকশন-নিরোধক, অ্যান্টিস্যাপ্টিকসমূহ(যেগুলো অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়ালের তুলনায় কম সক্রিয়) এবং সারের কীটনাশকও অন্তর্ভুক্ত যেহেতু এগুলো অণুবীক্ষণিক জীবদের সাথে লড়াই করে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘরোয়া স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সংক্রামক রোগ-ব্যধি প্রতিরোধে বৈশ্বিকভাবে বিশুদ্ধ পানি ও উন্নত স্যনিট্যাশনের সহজলভ্যতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যসচেনতামূলক কার্যক্রম এ ব্যাপারে বেশি ফলপ্রসূ। মানুষ সচেতন হলে নিরাপদ পানি ও উন্নত স্যনিটেশনের ব্যবস্থা করা জটিল কিছু নয়। তাই গণসচেনতামূলক কার্যক্রমকে স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য এর ৬ নম্বর পয়েন্টে সংযুক্ত করা হয়েছে যার দ্বিতীয় লক্ষ্যে হচ্ছে, '২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পর্যাপ্ত এবং যথাযথ স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং খোলা স্থানে মল-মূত্রত্যাগ বন্ধ করা। বিশেষত প্রাপ্ত নারী ও কমবয়েসী মেয়ে এবং আশংকাজনক ব্যক্তিদের প্রয়োজনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা।'[২৯] নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির মাঝে খুবই অন্তর্নিহিত সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায়  স্বাস্থ্যসেবাদাতা(সরকারি বা বেসরকারি) প্রতিষ্ঠানগুলোতে  এগুলোকে একত্রে সংক্ষেপে 'WaSH'বলা হয় (water, sanitation, hygen)।

প্রতিবছর ডায়রিয়া রোগে প্রায় ২মিলিয়ন(২০ লাখ) মানুষ মারা যায়। এদরে মধ্যে বেশিরভাগই ৫ বছরের নিচের শিশু।[৩০] উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেশি আক্রান্ত হয় দুস্থ, মফস্বলে অবস্থিত কিংবা গ্রামীণ পরিবারগুলো। এইসব পরিবারগুলোতে রোগ-ব্যাধির নির্মূল করতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা, উন্নত স্যনিটারি পায়খানার ব্যবস্থা করে দেয়া এবং সুস্বাস্থ্যবিধির নিয়মাবলি শিক্ষা দান প্রয়োজন।

গবেষণা বলছে, সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার প্রচলন যদি ব্যাপকভাবে করা যায় তাহলে ডায়রিয়ায় মৃত্যুর হার শতকরা ৫০ভাগ[৩১][৩২][৩৩] এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগ প্রায় ২৫ ভাগ[৩৪][৩৫] কমানো সম্ভব।  সাবান দিয়ে হাত ধুলে ত্বকের ইনফেকশন[৩৬][৩৭], চোখে কৃমির সংক্রমণও প্রতিরোধ করা যায়।[৩৮]

অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির অনুশীলন যেমন, নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থানে ময়লা ফেলা, মেঝে বা দেয়াল পরিষ্কার রাখা, গৃহপালিত পশুর যত্ন নেয়া ইত্যাদি স্বল্পআয়ের পরিবারগুলোতে রোগসংক্রমণ ও পরিবারে একজন থেকে রোগ-শোক অন্যজনের শরীরে বিস্তারের ধারা প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ।[৩৯]  

টয়লেট পরিষ্কার রাখা, হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা রাখালে দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করা যায় এবং সমাজেও একে ভাল চোখে দেখে। যেসব অঞ্চলে এখনও খোলা জায়গায় পেশাব-পায়খানা করার প্রথা আছে (উন্নয়নশীল দেশগুলোর কিছু গ্রামেও এমন অবস্থা বিরাজমান) পেশাব-পায়খানার জন্য টয়লেট ব্যবহার ও ভাল করে হাত ধোওয়ার জন্য মানুষকে সামাজিকভাবে অনুপ্রাণিত করা যায়। সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা সমাজের মানুষদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। 

বাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণ এবং নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ

ঘর-বাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণ এবং নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি পান নিশ্চিত করা যায়। নিরাপদ পানি পানের নিশ্চয়তা দেয়া এখন উন্নত[৪০] ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও[৪১] বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ইউরোপেও ধারণা করা হয়, ১২০ মিলিয়নের মত মানুষ নিরাপদ পানি পান করতে পারছে না। পানির বিশুদ্ধতা ধরে রাখতে পারলেই ডাইরিয়ার মত রোগ-ব্যাধী প্রতিরোধ করা সম্ভব।[৪০][৪১][৪২][৪৩] তাছাড়া জরুরি অবস্থার জন্যও নিরাপদ পানি সংরক্ষণ করে রাখা প্রয়োজন। ঘরে ধরে রাখা বিশুদ্ধ পানিও দূষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে(যেমন, ময়লা হাতের সংস্পর্শে কিংবা পুরাতন পাত্র তথা কলস, মটকা ইত্যাদি ব্যবহারে)। বিধায় নিরাপদ পানি সংরক্ষণের পাত্র বা স্থানও গুরুত্বপূর্ণ।  

পানি বিশুদ্ধ করার পদ্ধতিসমূহঃ[১১][৪৩]

  1. পানিকে রাসায়নিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা (ক্লোরিন বা আয়োডিন ব্যবহার করে যেমন, ফিটকিরি ব্যবহার করা)।
  2. পানি ফুটানো।
  3. সিরামিকের ফিল্টার ব্যবহার করে পানি ছাঁকা।
  4. সূর্যের আলোতে রেখে জীবাণুমুক্ত করা - এটি রাসায়নিক কোনো পদার্থ না থাকলে বেশ কার্যকর একটি পদ্ধতি।[৪৪]
  5. অতি বেগুনি রশ্মির নিচে পানি রেখে দেয়া - যেমন, ঘরের বাতির নিচে পানি রাখা যেতে পারে অথবা বাতিসমূহ পানির স্রোতে আধো নিমজ্জিত করে রাখা  যেতে পারে।
  6. সমন্বিত ফ্লোকুলেশন বা জীবাণুরোধ করণ।
  7. উপরের কয়েকটি পদ্ধতি একসাথেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

দৈনন্দিন অনুশীলন

 
একটি টয়লেটারি ব্যাগ

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বলা হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঐসব নিয়মের অনুশীলন যেগুলো করলে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় থাকে।  ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির লক্ষ্য হল, ব্যক্তির অসুস্থতা কমিয়ে আনা, রোগ থেকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা, সর্বোত্তম স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ধরে রাখা, সমাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানুষে পরিণত হওয়া, সমাজে রোগ-ব্যাধীর বিস্তার রোধ করা। উপযুক্ত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক বৈশিষ্ট্যও হতে পারে এবং সময়ের  সাথে এর নিয়ম-কানুনে পরিবর্তনও আসতে পারে।

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম-কানুনের মধ্যে আছে, নিয়মিত গোসল করা, নিয়মিত হাত ধোওয়া বিশেষত খাওয়ার আগে বা পরে, মাথার চুল পরিষ্কার রাখা, চুল ছোট করা বা ন্যাড়া করে ফেলা, পরিষ্কার কাপড় পরা, দাঁত মাজা, নখ কাটা ইত্যাদি। কিছু নিয়ম আছে যেগুলো পুরুষ নারী ভেদে বিভিন্ন। যেমন, নারীদের রজস্রাবকালীন পরিচ্ছন্নতার নিয়মাবলি। যাই হোক টয়লেটারি ব্যাগ ব্যবহার করলে এসব কাজ সহজ হয়ে যায়।

পায়ুসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি হল মল ত্যাগের পায়ুপথ পরিষ্কারের নিয়মাবলি। পায়ুপথ এবং পুরুষাঙ্গ বা যোনিপ পানি দিয়ে ধোওয়া উচিত নতুবা শুকনো টয়লেট পেপার (জেল ওয়াইপ সহযোগে হলে ভাল হয়[৪৫]) বা ভেজা টয়লেট পেপার (যেগুলোকে ওয়েট টিস্যুও বলা হয়) কিংবা শক্ত বস্তু (যেমন, মাটির টুকরা, পাথরের টুকরা যেগুলোকে আমাদের দেশে ঢিলা বা কুলুফ বলা হয়) ব্যবহার করে পরিষ্কার করা উচিত যাতে এসব স্থানে ময়লা লেগে না থাকে। 

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম-কানুন ঠিকমত মেনে চলার জন্য একটি ব্যক্তিগত রুটিন থাকা চাই। এই রুটিনে ব্যক্তিবিশেষের প্রতি লক্ষ রেখে বাড়তি কিছু বিষয়ও যুক্ত করা যায়। যেমন, কাশির সময় মুখে হাত দেয়া, ব্যবহৃত টিস্যু যথাস্থানে ফেলা, টয়লেট পরিষ্কার রাখা, খাবারের স্থানগুলো পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি। কিছু সংস্কৃতিতে হাতে চুমু দেয়া বা হ্যান্ডশেক করাও নিষেধ যাতে ব্যাক্টেরিয়া না ছড়ায়- এরকম রীতিও সমাজভেদে অনুসরণ করা যেতে পারে।

ব্যক্তিগত পরিচর্যাই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির উৎকর্ষ সাধন করে। যেমন, পারফিউম, শেভিং ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহারও স্বাস্থ্যবিধির পরিবেশবান্ধব।

অতিরিক্ত দৈহিক স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ সম্পাদনা

অতিরিক্ত দৈহিক স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ অনেকটা রোগের কারণ হতে পারে। একে অত্যধিক-অমোঘ ব্যাধিজাতীয় একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অতিমাত্রায় দৈহিক স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ এবং অ্যালার্জি সম্পাদনা

স্বাস্থ্যবিধির ওপর প্রথম হাইপোথিসিস(অনুকল্প তথা প্রাথমিক গবেষণা) প্রদান করা হয় ১৯৮৯ সনে। ডেভিড স্ট্রাকান নামক বিজ্ঞানী দেখান যে, পরিবার ছোট বড় হওয়ার সাথে অ্যালার্জি রোগের বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। পরিবার যত বড় হয় অর্থাৎ পরিবারের শিশুর সংখ্যা যত বেশি হয় সেই পরিবারের শিশুদের অ্যালার্জি তত কম হয়।[৪৬] এথেকে তিনি হাইপোথিসিস দাঁড় করান, গত ৩০ থেকে ৪০ বছরে অ্যালার্জি বেড়ে যাওয়ার কারণ হল, শিশুদের দেহে গুপ্ত অ্যালার্জির জীবাণুগুলো বড় ভাইবোনদের  সাথে সংস্পর্শে আসলে দ্রুত বাড়তে থাকে। স্ট্রাকান আরো বলেন, অ্যালার্জির জীবাণুগুলো প্রকাশ না পাবার কারণ শুধু ছোট পরিবারই নয় বরং উন্নত গৃহব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা উৎকর্ষও। সুতরাং ছোট পরিবারে বেশি পয়-পরিষ্কার থাকার কারণে অ্যালার্জি আর ধরা পড়ে না। কিন্তু এই অ্যালার্জির জীবাণুগুলোই যখন শিশুর শরীর থেকে বড় ভাই বা বোনের শরীরে গোপণে প্রবেশ করে তখন অ্যালার্জি সবার হয়ে যায়।

যেহেতু স্বাস্থ্যবিধিবিষয়ক ব্যাপক গণসচেতনতা জাগানো যায়নি, তাই এখনো অনেক মানুষ ধারণা করে যে, নোংরা-অপরিষ্কার থাকাটাই স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যবিধির নিয়মকানুন অবাস্তব ও অপ্রাকৃতিক। এজন্য স্বাস্থ্যবিদগণ মোটামুটি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। প্রাত্যহিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এইসব স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা আসলেই উদ্বেগজনক। ঘর-বাড়িতে দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্যবিধির লক্ষ্য পূরণ্যে উদ্দেশ্যে, ইন্টারন্যাশনাল সাইন্টিফিক ফোরাম অন হোম হাইজিন সংস্থাটি কটি ঝুঁকি-ভিত্তিক পদ্ধতি বের করেছে। একে "টারগেটেড স্বাস্থ্যবিধি"ও বলা হয়। টারগেটেড স্বাস্থ্যবিধির ভিত্তিমূল হল, ঘর-বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোগের পথ চিহ্নিতকরণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সংক্রমণের ধারা ভেঙে স্বাস্থ্যবিধি প্রবর্তন করা।[৪]   এছাড়াও এর আরো একটি লক্ষ্য হল, যতদূর সম্ভব আমাদের পরিবেশের অণুজীবদের প্রকাশ পাবার স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অবস্থা বজায় রাখা যাতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠন করা যায়।

অতিমাত্রায় অন্তকর্ণ পরিষ্কার করা সম্পাদনা

কানের ভেতরের অংশ অতিরিক্ত পরিষ্কার করা থেকে কানের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। কানের ভেতরের অংশ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় কোমলভাবে একে পরিষ্কার করতে হবে।  বেশিরভাগ সময় কান নিজেই এর ভেতরের অংশ পরিষ্কার করে ফেলে। যেহেতু কানের পর্দা থেকে কানের বাইরের অংশ পর্যন্ত একটি নালি বিদ্যমান। কানের খইল সাধারণত কানের ভেতরের গভীর অংশ থেকে ধারবাহিকভাবে বাইরের অংশে পরিবাহিত হয় এবং বাইরে এসে শুকিয়ে যায় এবং পড়ে যায়।[৪৭] কান খোঁচানির মাধ্যমে খুঁচিয়ে ময়লা বের করতে গেলে কানের ভেতরের অংশ স্বাভাবিকের চাইতে বেশি অপরিষ্কার করে ফেলতে পারে। বাইরে আসা কানের খইলকে ভেতরে ঠেলে দিয়ে অথবা তুলা বা অন্য কোন উপাদান কানে ঢুকিয়ে কানের ভেতরের অংশ আরো অপরিচ্ছন্ন করার চাইতে স্বাভাবিকভাবে খইল বের হতে দেয়াই শ্রেয়।

তাছাড়া অতিরিক্ত সাবান, ক্রিম, মলম ইত্যাদি ব্যবহারও চামড়ার ক্ষতি করতে পারে। যেমন, সাবান এবং মলম ত্বকের স্বাভাবিক  প্রতিরক্ষামূলক তেল, চর্বি-দ্রবণীয় উপাদান যেমন, কোলেক্যালসিফেরল (cholecalciferol যা ভিটামিন ডি৩ হিসেবেও পরিচিত) নিঃশেষ করে দিতে পারে। এছাড়া সাবান বা মলম কানে ঢুকে ভেতরে চলে গিয়ে কানের স্বাভাবিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অতিরিক্ত মুখের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সম্পাদনা

প্রাপ্তবয়স্ক সকলের জন্য দৈনিক দুবার ব্রাশ করা উচিত[৪৮], কোমলভাবে[৪৯] সঠিক প্রক্রিয়ায়। কয়েক মাস(অনূর্ধ্ব তিন মাস) পর পর একদফা অসুস্থতা হবার পর টুথব্রাশ পরিবর্তন করাও উচিত।[৫০]

কিন্তু মুখ পরিষ্কার করা  নিয়ে কিছু ভুল ধারণাও আমাদের আছে। ব্রাশ করার পরে মুখে পানির ছিটা দেয়া উচিত নয়[৫১], এসিডজাতীয় কোন কিছু খাওয়ার পরেই ব্রাশ ফেলারও কোনো নিয়ম নেই। দিনে একবার দাঁত খোঁচানো ভাল[৫২], প্রতিবার আলাদা সুতা ব্যবহার করে। দাঁতের ক্রিম(Tooth Mousse) ব্যবহারের কার্যকারিতা এখনও বিতর্কিত।[৫৩] দাঁতের বছরে কমপক্ষে একবার দাঁতের ডাক্তার দেখানোও উচিত।[৫৪]

খাবারের স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

খাবারের স্বাস্থ্যবিধি হল খাদ্য দূষণ, খাদ্যে বিষক্রিয়া  এবং খাদ্য থেকে রোগ ব্যধির বিস্তার রোধের জন্য খাদ্য প্রস্তুত কিংবা রন্ধন সংক্রান্ত নিয়মাবলি।  খাবারের স্বাস্থ্যবিধিতে বিশেষত খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং ভক্ষণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

খাবারের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নিয়মাবলিঃ

  • খাবার তৈরির স্থান ও উপাদান পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা। ব্লিচিং পাউডার, ইথানল, অতিবেগুণি রশ্মি প্রভৃতি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • গোল কৃমি (trichina worms), সালমনেলা ব্যাক্টেরিয়া  (Salmonella) এবং অন্যান্য জীবাণুর আক্রমণ হতে মাংসকে নিরাপদে রাখা অথবা প্রশ্নবিদ্ধ মাংস রান্না না করা।
  • নতুন খাবারসমূহ যেমন, সুসি, সাসিমি তৈরি করার সময় যথার্থ সতর্কতা রক্ষা করা।
  • থালা-বাসন সাবান এবং পরিষ্কার পানি নিয়ে ধোওয়া।  
  • রান্না বা খাবার ছোওয়ার আগে হাত ধোওয়া।
  • অপাচিত খাবার যেমন, কাঁচা মাংস নাড়ার ক্ষেত্রে হাত ধোওয়া।
  • ভিন্ন ভিন্ন খাবার তৈরি একই রন্ধন সামগ্রী ব্যবহার না করা।
  • খাওয়ার সময় নিজের  খাবারের পাত্র, চামচ, পিরিচ ইত্যাদি অন্যকে না দেওয়া।
  • খাওয়ার সময় বা পরে আঙুল না চাটা।
  • চেটে রাখা খাবারের পাত্র, চামচ, পিরিচ ইত্যাদিতে না খাওয়া।
  • দূষণ রোধে ভাল করে খাদ্য সংরক্ষণ করা।
  • খাবার শীতলিকরণ।
  • খাবারের প্যাকেটের গায়ে প্রস্তুতকাল উল্লেখ করা।
  • না খাওয়া খাবার যথাস্থানে ফেলে দেওয়া।
    ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যবিধি

কোনো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর যত্ন ও সদ্ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়মাবলিকেই ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যবিধি বলা হয়।

ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যবিধিসমূহ

ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী যেমন, হেয়ারড্রেসার, অ্যাসথেটিশিয়ান(ত্বকের উৎকর্ষ সাধনে ব্যবহৃত) ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করা।

ট্যাটু তৈরি এবং দেহ ছিদ্র করার জন্য ব্যবহৃত উপকরণসমূহ অটোক্লেভ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা।

হাত ধোওয়া।

ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি হল ভাল ঘুম হবার জন্য যেসব অনুশীলন করা হয়, এই অনুশীলনগুলো আচরণগত বা পরিবেশগত উভয়ই হতে পারে।[৫৫]  ভাল ঘুমের জন্য যেমন ব্যক্তির আচরণও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় তেমনি ঘুমের পরিবেশও বজায় রাখতে হয়। ১৯৭০ সনে এই সকল নিয়ম ও অনুশীলনসমূহের দিকনির্দেশনা প্রণিত হয় ইনসমনিয়া(অনিদ্রারোগ)জনিত সমস্যা থেকে মানুষকে বাঁচাতে।[৫৫] চিকিৎসকগণ ইনসমনিয়া, ডিপ্রেশন (বিষণ্নতা) বা এ জাতীয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা বিচার করে তার পরই চিকিৎসা দিতে পারেন। এজন্য বলা যায়, অনিদ্রজনিত সমস্যার সহজ সমাধান এক কথায় বলে দেয়া মুশকিল। এটি রোগী থেকে রোগীতে ভিন্ন হতে পারে।

সাধারণভাবে ঘুমের স্বাস্থ্যবিধিতে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয় সেগুলো হলঃ

  1. নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস করা
  2. কাজের মাঝে মাঝে বিরতি ও সামান্য ন্যাপ নেওয়া
  3. ঘুমের সময় অন্য কোন শারীরিক বা মানসিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা
  4. দুশ্চিন্ত কমানো
  5. ঘুমের সময় আলো কমিয়ে রাখা
  6. ঘুম না আসলে বিছানা থেকে উঠে যাওয়া
  7. বিছানাকে ঘুম ব্যতীত অন্য কাজে ব্যবহার না করা
  8. অ্যালকোহল (মদ) বর্জন করা
  9. নিকোটিন (তামাক), কফি ইত্যাদি ঘুমের সময় গ্রহণ না করা
  10. ঘুমের জন্য আরামদায়ক ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরি করা

সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পাদনা

ধর্মীয় স্বাস্থ্যনীতি সম্পাদনা

অনেক ধর্মে পবিত্রতাকে আবশ্যক বা উৎসাহিত করা হয়েছে।

ইসলাম ধর্মে নামায আদায়, পবিত্র কোরআন স্পর্শ করা ইত্যাদির জন্য ওযু বা গোসল করা আবশ্যক। নামাযের জন্য শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নয় বরং কাপড় পবিত্র রাখতে হয়, নামাযের স্থান পবিত্র রাখতে হয়। এছাড়া ইসলামী শিষ্টাচারের মধ্যে মল-মূত্র ত্যাগের পরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এজন্য স্বয়ং পবিত্র কোরআনে টিস্যু ব্যবহার করার পরে পানি ব্যবহার করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়াও ইসলাম ধর্ম হাত পরিষ্কার করা (খাওয়ার আগে বা পরে, ঘুম থেকে জাগ্রত হবার পরে), দাঁত মাজা (প্রতিবার ওযুর সময় মেসওয়াক করা), গোসল করা (অন্তত সপ্তাহে একবার জুমআর দিনে উত্তম আর স্বপ্নদোষ, শুক্রস্খলন, সহবাস, নারীদের রজশ্রাব, সন্তান প্রসব প্রভৃতির মাধ্যমে গোসল ফরজ হলে সেই সময় আবশ্যক), দৈনিক পাঁচবার হাত-মুখ-পা ধোওয়া (পাঁচবার নামাযের আগে) ইত্যাদি নিয়ম-কানুনকে আত্মশুদ্ধির অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়াও ইসলামের চিকিৎসাশাস্ত্র বলে একটি স্বতন্ত্র শাখাই আছে যেখানে শরীরতত্ত্ব, নিউরোলজি, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি গূঢ় বিষয়ে ইবনে সিনা, ইবনে সিরিন, আল কিনদি প্রমুখ বিশেষজ্ঞ এর ব্যাপক অবদানের কাছে স্বাস্থ্যবিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্র আজও ঋণী হয়ে আছে।

বাহায়ী ধর্মে প্রার্থনার পূর্বে হাত-মুখ ধোওয়া আবশ্যক। তাছাড়া ইহুদীধর্মের মৌলবাদে নারীদের রজশ্রাব বন্ধ হবার পরে, সহবাসের পরে এবং শিশু জন্মদানের পরে মিকভেহ গোসল করা আবশ্যক। প্রার্থনার আগে হাত ধোওয়া আবশ্যক।

ইতিহাস সম্পাদনা

 
স্নানরত অবস্থায় তিনজন নারী ,৪৪০-৪৩০ খ্রিস্টাব্দ, প্রাচীন গ্রিস
 
সুইডেনে টয়লেট্রিজের বিজ্ঞাপন, ১৯০৬/১৯০৬

স্বাস্থ্যবিধির প্রথম বিস্তারিত লেখনী পাওয়া যায় হিন্দু গ্রন্থসমূহে। যেমন, মনুসংহিতা এবং বিষ্ণুপুরান।[৫৬] হিন্দুধর্মে গোসল করাটা হল পঞ্চ নিত্য কর্মের একটি। কিছু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এটি না করলে পাপ পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিদিন গোসল করা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য।[৫৭] শহুরে এলাকায় তখন আলাদা আলাদা গোসলখানা নির্মাণ করা হত জনগণের জন্য। বড় সুইমিং পুলের মত গোসলখানা, ছোট ঠাণ্ডা ও গরম পুল, স্পা'র মত সুযোগ সুবিধাও ছিল যেখানে চুল কাটা, তেল মালিশ, মালিশ প্রভৃতি করা হত। ধারাবাহিক প্রবাহের মাধ্যেমে পানি সবসময় পরিবর্তনের ব্যবস্থাও ছিল। শহরের বাইরের গোসলখানাগুলি এতটা সুযোগ সুবিধাপূর্ণ ছিল না অবশ্য। এছাড়া শৌচাগারের বর্জ নিষ্কাশনের জন্য ছিল বড় নালা যেমন, ক্লোয়াকা ম্যাক্সিমা (Cloaca Maxima)।

১৯ শতকের শেষ পর্যন্তও পশ্চিমা দেশগুলোতে কেবল বনেদি পরিবারগুলোর দৈহিক কার্যাবলির (পেশাব-পায়খানা-গোসল) জন্য ঘরোয়া সুযোগ সুবিধা ছিল। কিন্তু দরিদ্রদের ঘরের উঠান বা আঙ্গিনায় খনন করা পাতকূয়ার ওপরে বানানো ছোট্ট কূটির বা তদসদৃশ স্থানেই এইসব প্রয়োজন সারতে হত। কিন্তু ড. জন স্নো যখন আবিষ্কার করেন, কলেরা মূলত এইভাবে দূষিত পানি থেকেই ছড়ায় তখন কিছুটা পরিবর্তন আসল। যদিও কয়েক দশক লেগে গিয়েছিল জন স্নোয়ের কথার গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতি পেতে পেতেই। তারপরও সরকারি ও বেসরকারি স্যানিটারি কর্মকর্তারা শেষ পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে চিন্তিত হন এবং পানিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে নালা বা ড্রেনেজের মাধ্যমে মানববর্জ নিষ্কাশনের পদ্ধতি তারা বেছে নেন। এভাবেই বর্তমানের স্যানিটারি ল্যাট্রিন আবিষ্কৃত হয় এবং টয়লেটকে আরো ঘরোয়া ও ব্যক্তিগত করে গড়ে তোলা হয়।[৫৮]

মধ্যযুগে ইউরোপে স্বাস্থ্যবিধি সম্পাদনা

ইউরোপে খ্রিস্টবাদের কারণেই স্বাস্থ্যবিধির প্রতি নজর দেয়া হত।[৫৯] চার্চ মোটেও রোমানদের মিশ্র স্নানপদ্ধতি পছন্দ করত না এবং পৌত্তলিক নারীদের পুরুষের সামনে নগ্নস্নানের প্রথাও স্বীকার করত না। তাই চার্চ ইউরোপের জনগণকে বাধ্য করে পাবলিক টয়লেট ও গণগোসলখানাসমূহে ঢুকে গোসল করতে।[৬০] এজন্য স্বাস্থ্যসম্মত একটি পদ্ধতিরও প্রচলন হয়। এজন্য চার্চ মন্যাস্ট্যারি ও সন্নাসস্থলের পাশে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা গণগোসলখানাও নির্মাণ করে। মধ্যযুগের প্রথমদিকে চার্চের ব্যসিলিকাগুলোতে ও মন্যাস্টরিগুলোতেও পাদ্রীগণ অভ্যন্তরীণ টয়লেট নির্মাণ করেন।[৬১]

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরেও গোসল ও স্যানিট্যাশন ইউরোপ থেকে উঠে যায় নি।[৬২][৬৩] যদিও কিছু খ্রিস্টান নেতা যেমন, বোনিফেস ১[৬৪] গোসলকে অনাধ্যাত্মিক বলে নিন্দা করেছেন[৬৫] এবং তৎকালে ইউরোপিয়ান সমাজের জনগণ গোসলকে ভাল মনে করত না। কারণ অন্ধযুগেই প্রথম সাবান উৎপাদন একটি মজবুত বাণিজ্যিকরূপ লাভ করে। রোমানরা সুগন্ধ তেলও(বেশিরভাগই মিশর থেকে আনা) ব্যবহার করত।

উত্তর ইউরোপের জনগণ গোসলে অভ্যস্ত ছিল না। ৯ম শতকে ফ্র্যাঙ্কিশ ভিক্ষু নটকার ১ একটি কাহিনি বর্ণনা করেছিলেন (যদিও তার সত্যতা প্রমাণিত নয়) যাতে তৎকালে ইতালিয়দের সভ্যতায় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির চর্চাকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে:

ইটালিয়ানদের ঐতিহ্যের অনুসরণকারী একজন নির্দিষ্ট দেবদূত এসেছিলেন যিনি সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি স্নান করতেন, মাথা খুব ভালভাবে কামাতেন। তিনি তার ত্বককে মসৃণ রাখতেন, তিনি তার নখ পরিস্কার করতেন, যতটা সম্ভব ছোট করে চুল কাটতেন,দেখে মনে হত লেদ মেশিনের ওপর মাথাটা রেখে দিয়েছিলেন।  তিনি লিনেনের পাজামা এবং তুষার-শুভ্র জামা পড়তেন।

নিরপেক্ষভাবে মধ্যযুগের রচনাগুলো পাঠ করলে জানা যায়, মধ্যযুগে খাওয়ার আগে পরে হাত ধোওয়া হত। তবে সোন ডে নানাসেয়(১৩শ শতকে রোমান্টিক গল্পের জন্য বিখ্যাত) আবিষ্কার করেন যে, নরওয়ের অধিবাসীরা খাওয়ার পরে হাত ধুতো না।[৬৬] ১১শ ও ১২শ শতকে পশ্চিম ইউরোপের উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোতে গোসলকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ক্লনিয়াক মন্যাস্টারিগুলোতে সাধারণত গোসলখানা থাকতো। এমনকি ভিক্ষুদের জন্য বছরে দুইবার দুটি খ্রিস্টিয় উৎসবে ডুব দিয়ে গোসল করার রীতি ছিল।[৬৭]  ১৪শ শতকে নব বিবাহিত দম্পতিদের একসঙ্গে স্নানের দৃশ্য এর একটি ছবি স্যান জিমিনানোর টাউনহলের দেয়ালচিত্রে পাওয়া যায়।[৬৮]

ইউরোপিয় রেনেসাঁর আগে উত্তর ইউরোপে গোসল করাটা তাদের সংস্কৃতির তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। একই সময় জার্মানের শহরগুলোতে অবস্থিত গণগোসলখানাসমূহ ইতালির পর্যটকদের কাছে মনমুগ্ধকর ছিল। তো ইউরোপে তখন গোসলের বদলে পারফিউম বা সুগন্ধী ব্যবহার করা হত। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেলে সেটাকেই গোসলের পর্যায়ের মনে করা হত। কারণ তারা ধারণা করত গোসল করলে পানি চামড়ার ভেতরে জীবাণু নিয়ে প্রবেশ করে।  রোমান্টিক লেখকদের কারণে গোসল নিয়ে প্রেমময় পরিবেশের অবতারণা হয় উচ্চবিত্তদের মাঝে।[৬৯] মেলুসিন এর গল্পে গোসল ছিল গল্পের আখ্যানভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। "স্নান এবং সাজসজ্জা নীতিবানদের কাছে সন্দেহজনক ব্যাপার বলে বিবেচিত হত। কারণ এগুলো দেহের আকর্ষণীয়তাকে প্রস্ফুটিত করে। স্নানকে বলা হত পাপের প্রস্তাবনা। বিশপ বার্চাডের সংহিতায় নর-নারী একসঙ্গে স্নান করলে কতগুলো পাপ হয় আমরা তার একটি পূর্ণ তালিকা পাই।"[৭০] মধ্যযুগের চার্চের প্রধানগণ বিশ্বাস করতেন, গণগোসল অনৈতিকতা ও রোগের উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়। ১৩শ শতাব্দীর শেষ দিকে প্যারিসের ২৬টি পাবলিক গোসলখানা কঠোরভাবে সিভিল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল। রোমান ক্যাথোলিক চার্চের কর্তারাতো গণগোসলখানাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।[৭১]

১৯শ থেকে ২০শ শতাব্দী নাগাদ আধুনিক স্যানিটেশন ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়নি।[৭২] ঐতিহাসিক লিন থরনডাইক এর মতে, মধ্য ইউরোপের জনগণই হয়ত ১৯শ শতকের জনগণের চাইতে বেশি গোসল করত। লুই পাস্তর এর সময়ের কিছু পরে স্বাস্থ্যবিধির চর্চা এখনকার মত শুরু হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Hygiene" 
  2. J., J.; Robert-Scott; Liddell, Henry George; Jones, Henry Stuart (১৯৪০)। "A Greek-English Lexicon"The Classical Weekly34 (8): 86। আইএসএসএন 1940-641Xডিওআই:10.2307/4341055 
  3. "The global burden of hygiene-related diseases in relation to the home and community" 
  4. "The Chain of Infection Transmission in the Home and Everyday Life Settings, and the Role of Hygiene in Reducing the Risk of Infection"। ১০ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. U.S. pet ownership & demographics sourcebook। American Veterinary Medical Association, (2012 edition সংস্করণ)। Schaumburg, IL। আইএসবিএন 9781882691289ওসিএলসি 821208818 
  6. Bloomfield, Sally F.; Aiello, Allison E.; Cookson, Barry; O'Boyle, Carol; Larson, Elaine L. (ডিসেম্বর ২০০৭)। "The effectiveness of hand hygiene procedures in reducing the risks of infections in home and community settings including hand washing and alcohol-based hand sanitizers"। American Journal of Infection Control35 (10): S27–S64। ডিওআই:10.1016/j.ajic.2007.07.001 
  7. "Emergency treatment of drinking-water at the point of use" (পিডিএফ)। World Health Organization। ২০১১। 
  8. "Water, Sanitation and Hygiene Standards for Schools in Low-cost Settings" (পিডিএফ)। World Health Organization। ২০০৯। 
  9. "How can personal hygiene be maintained in difficult circumstances?"। World Health Organization। ২০০৫। 
  10. Baker, K.K.; Dil Farzana, F.; Ferdous, F.; Ahmed, S.; Kumar Das, S.; Faruque, A.S.G.; Nasrin, D.; Kotloff, K.L.; Nataro, J.P.; Kolappaswamy, K.; Levine, M.M. (২৮ এপ্রিল ২০১৪)। "Association between Moderate-to-Severe Diarrhea in Young Children in the Global Enteric Multi center Study (GEMS) and Types of Hand washing Materials Used by Caretakers in Mirzapur, Bangladesh"American Journal of Tropical Medicine and Hygiene91 (1): 181–89। ডিওআই:10.4269/ajtmh.13-0509পিএমসি 4080560  
  11. "The Five Keys to Safer Food Programme"। World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-১৪ 
  12. Beumer R, Bloomfield SF, Exner M, Fara GM, Nath KJ, Scott EA (২০০৮)। "Hygiene procedures in the home and their effectiveness: a review of the scientific evidence base"। International Scientific Forum on Home Hygiene। 
  13. Scott E. Microbial Risk Reduction: The Benefits of Effective Cleaning. 2010 In preparation.
  14. Cole E. Allergen control through routine cleaning of pollutant reservoirs in the home environment. Proceedings of Healthy Building 2000;4:435-6.
  15. Bloomfield SF, Exner M, Signorelli C, Nath KJ, Scott EA (২০১১)। "The infection risks associated with clothing and household linens in home and everyday life settings, and the role of laundry"। International Scientific Forum on Home Hygiene। 
  16. Bloomfield SF, Exner M, Signorelli C, Nath KJ, Scott EA (২০১২)। "The chain of infection transmission in the home and everyday life settings, and the role of hygiene in reducing the risk of infection"। International Scientific Forum on Home Hygiene। 
  17. Larson EL, Lin SX, Gomez-Pichardo C (২০০৪)। "Predictors of infectious disease symptoms in inner city households"। Nurs Res53 (3): 190–97। ডিওআই:10.1097/00006199-200405000-00006পিএমআইডি 15167507 
  18. "Recommendations for future collaboration between the U.S. and EU" (পিডিএফ)। Transatlantic Taskforce on Antimicrobial Resistance। ২০১১। ২০১২-০৭-০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  19. Bloomfield SF (২০১৩)। "Spread of Antibiotic Resistant Strains in the Home and Community"। International Scientific Forum on Home Hygiene। 
  20. Bloomfield SF, Cookson BD, Falkiner FR, Griffith C, Cleary V (২০০৬)। "Methicillin resistant Staphylococcus aureus (MRSA), Clostridium difficile and ESBL-producing Escherichia coli in the home and community: assessing the problem, controlling the spread"। International Scientific Forum on Home Hygiene। 
  21. Bloomfield SF, Exner M, Signorelli C, Scott EA (২০১৩)। "Effectiveness of laundering processes used in domestic (home) settings"। International Scientific Forum on Home Hygiene। 
  22. "Clothing, household linens, laundry and hygiene Factsheet"। International Scientific Forum on Home Hygiene। ২০১৩। 
  23. "Laundry: Washing Infected Material"। Centers for Disease Control and Prevention। ২ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  24. "Guidelines for Environmental Infection Control in Health-Care Facilities. Recommendations of CDC and the Healthcare Infection Control Practices Advisory Committee (HICPAC)"। CDC। ২০০৩। Recommendations: Laundry and Bedding। 
  25. "Health Technical Memorandum 01-04: Decontamination of linen for health and social care" (পিডিএফ)। UK Department of Health। মার্চ ২০১৬। 
  26. "Uniform and workwear: Guidance on uniform and workwear policies for NHS employers" (পিডিএফ)। UK Department of Health। মার্চ ২০১০। ২০১২-০৯-০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-২৯ 
  27. "Laundry treatments at high and low temperatures"। UK health and Safety Executive। ২০১৩। 
  28. "Home hygiene – prevention of infection at home: a training resource for carers and their trainers"। International Scientific Forum on Home Hygiene। ২০০৩। ১৫ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৯ 
  29. "Goal 6: Clean water and sanitation"UNDP। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৭ 
  30. "The global burden of disease: 2004 update"World Health Organization। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৯ 
  31. Curtis V, Cairncross S (২০০৩)। "Effect of washing hands with soap on diarrhea risk in the community: a systematic review"। Lancet Infectious Diseases3 (5): 275–81। ডিওআই:10.1016/S1473-3099(03)00606-6পিএমআইডি 12726975 
  32. Aiello, AE; Coulborn, RM; Perez, V; Larson, EL (আগস্ট ২০০৮)। "Effect of Hand Hygiene on Infectious Disease Risk in the Community Setting: A Meta-Analysis"American Journal of Public Health98 (8): 1372–81। ডিওআই:10.2105/AJPH.2007.124610পিএমসি 2446461  
  33. Fewtrell L, Kauffman RB, Kay D, Enanoria W, Haller L, Colford JM (২০০৫)। "Water, sanitation, and hygiene interventions to reduce diarrhea in less developed countries: a systematic review and meta-analysis"। Lancet Infectious Diseases5 (1): 42–52। ডিওআই:10.1016/S1473-3099(04)01253-8পিএমআইডি 15620560 
  34. Jeroen Ensink (২০০৬)। "Health impact of handwashing with soap"। WELL। ২০১০-০৬-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  35. Jefferson T, Foxlee R, Del Mar C, ও অন্যান্য (২০০৭)। "Physical interventions to interrupt or reduce the spread of respiratory viruses: systematic review"British Medical Journal336 (7635): 77–80। ডিওআই:10.1136/BMJ.39393.510347.BEপিএমআইডি 18042961পিএমসি 2190272  
  36. Luby S, Agboatalla M, Feikin DR, Painter J, Billhimmer W, Atref A, Hoekstra RM (২০০৫)। "Effect of hand-washing on child health: a randomized control trial"। Lancet366 (9481): 225–33। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(05)66912-7পিএমআইডি 16023513 
  37. Luby S, Agboatwalla M, Schnell BM, Hoekstra RM, Rahbar MH, Keswick BH (২০০২)। "The effect of antibacterial soap on impetigo incidence, Karachi, Pakistan"। American Journal of Tropical Medicine and Hygiene67 (4): 430–35। পিএমআইডি 12452499 
  38. Bloomfield SF, Nath KJ (২০০৯)। "Use of ash and mud for hand-washing in low income communities"। International Scientific Forum on Home Hygiene। 
  39. "Guidelines for the prevention of infection and cross-infection in the domestic environment: focus on home hygiene issues in developing countries"। International Scientific Forum on Home Hygiene। ২০০২। 
  40. "Combating waterborne disease at the household level" (পিডিএফ)। World Health Organization। ২০০৭। 
  41. "Household water storage, handling and point-of-use treatment"। International Scientific Forum on Home Hygiene। ২০০৬। 
  42. "Water quality interventions to prevent diarrhoea: Cost and cost-effectiveness"World Health Organization। ২০০৮। 
  43. "Household Water Treatment and Safe Storage Following Emergencies and Disasters" (পিডিএফ)World Health Organisation। ২০০৫। 
  44. "Managing water in the home"World Health Organization। ২০০২। 
  45. "Toilet Paper Gel Cleans Up No. 2 In More Ways Than One" 
  46. Strachan, DP (আগস্ট ২০০০)। "Family size, infection and atopy: the first decade of the 'hygiene hypothesis'"Thorax55 (1): S2–S10। ডিওআই:10.1136/thorax.55.suppl_1.s2পিএমআইডি 10943631পিএমসি 1765943  
  47. "Ear Wax Symptoms, Treatment, Causes – When should ear wax be removed?"medicinenet.com 
  48. "Brushing & Flossing: Technique & Choosing Dental Products"www.colgate.com। ২০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৯ 
  49. Corporation, Australian Broadcasting। "Can you brush your teeth too hard? – Health & Wellbeing"www.abc.net.au 
  50. "Brush Teeth"www.mouthhealthy.org। American Dental Association। 
  51. Choices, NHS। "Teeth cleaning guide – Live Well"www.nhs.uk 
  52. "The Medical Benefit of Daily Flossing Called Into Question"www.ada.org। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৯ 
  53. Raphael, Sarah; Blinkhorn, Anthony (২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "Is there a place for Tooth Mousse® in the prevention and treatment of early dental caries? A systematic review"BMC Oral Health15: 113। ডিওআই:10.1186/s12903-015-0095-6 – BioMed Central-এর মাধ্যমে। 
  54. Hammond, Claudia। "How often do you need to see a dentist?" 
  55. Irish, Leah A.; Kline, Christopher E; Gunn, Heather E; Buysse, Daniel J; Hall, Martica H (অক্টোবর ২০১৪)। "The role of sleep hygiene in promoting public health: A review of empirical evidence"Sleep Medicine Reviews22: 23–36। ডিওআই:10.1016/j.smrv.2014.10.001পিএমআইডি 25454674পিএমসি 4400203  
  56. "Aryan Code of Toilets (2nd Century AD)"। Sulabh International Museum of Toilets। 
  57. "Roman bath houses"Time Team। Channel Four Television Corporation। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  58. Poop Culture: How America is Shaped by its Grossest National Product, আইএসবিএন ১-৯৩২৫৯৫-২১-X.
  59. Warsh, Cheryl Krasnick (২০০৬)। Children’s Health Issues in Historical Perspective। Veronica Strong-Boag। Wilfrid Laurier Univ. Press। পৃষ্ঠা 315। আইএসবিএন 978-0-88920-912-1... From Fleming's perspective, the transition to Christianity required a good dose of personal and public hygiene ... 
  60. Warsh, Cheryl Krasnick (২০০৬)। Children’s Health Issues in Historical Perspective। Veronica Strong-Boag। Wilfrid Laurier Univ. Press। পৃষ্ঠা 315। আইএসবিএন 978-0-88920-912-1... Thus bathing also was considered a part of good health practice. For example, Tertullian attended the baths and believed them hygienic. Clement of Alexandria, while condemning excesses, had given guidelines for Christian] who wished to attend the baths ... 
  61. Thurlkill, Mary (২০১৬)। Sacred Scents in Early Christianity and Islam: Studies in Body and Religion। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 6–11। আইএসবিএন 0-7391-7453-3... Clement of Alexandria (d. c. 215 CE) allowed that bathing contributed to good health and hygiene ... Christian skeptics could not easily dissuade the baths' practical popularity, however; popes continued to build baths situated within church basilicas and monasteries throughout the early medieval period ... 
  62. "The Great Famine and the Black Death – 1315–1317, 1346–1351 – Lectures in Medieval History – Dr. Lynn H. Nelson, Emeritus Professor, Medieval History, KU"vlib.us 
  63. "Middle Ages Hygiene"middle-ages.org.uk। ৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৯ 
  64. [Dogma Evolution & Papal Fallacies (Google eBook); by Imma Penn; AuthorHouse, May 30, 2007; p. 223]
  65. "Ablutions or Bathing, Historical Perspectives + (Latin: abluere, to wash away)"Word Information। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  66. Noted in Danielle Régnier-Bohler, "Imagining the self" in Duby 1988:363f.
  67. Philippe Braunstein "Solitude: eleventh to thirteenth century", in Georges Duby, ed. A History of Private Life: II. Revelations of the Medieval World 1988:525
  68. Fresco of c. 1320 illustrated in Charles de la Roncière, "Tuscan notables on the eve of the Renaissance" in Duby 1988:232.
  69. Régnier-Bohler 1988:363ff.
  70. Braunstein 1988:525.
  71. Paige, John C; Laura Woulliere Harrison (১৯৮৭)। Out of the Vapors: A Social and Architectural History of Bathhouse Row, Hot Springs National Park (পিডিএফ)। U.S. Department of the Interior। 
  72. "Thorndike, Tales of the Middle Ages – Daily Life"Gode Cookery। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭