স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা

স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা (যা পোস্ট গ্রাজুয়েট নামেও পরিচিত) হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি লাভের পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর সনদ লাভের একটি ডিপ্লোমা। যে সকল দেশ স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে তাদের মধ্য রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, বার্বাডোস, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, চিলি, কলম্বিয়া, জার্মানি, হংকং, জ্যামাইকা, স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, পর্তুগাল, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ইত্যাদি।

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সম্পাদনা

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে।[১] স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমাকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমমানের কোর্স ধরা হয়। সাধারণভাবে এটিকে দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রির প্রথম বছরের সমমান হিসাবে ধরা হয়। ডিপ্লোমাটি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। তবে কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীও স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করার যোগ্যতা লাভ করতে পারে।

কানাডা সম্পাদনা

কানাডাতে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স দুই কিংবা তিন সেমিস্টার মেয়াদে হতে পারে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি এক বছরের কম সময়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে। এধরনের প্রোগ্রামের জন্য মনোনীত হতে হলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি বা মাস্টার্স ডিগ্রির প্রয়োজন পড়ে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণাপত্র না লিখেও এটি ভর্তি হবার সুযোগ করে দেয়। শ্রমবাজারে প্রবেশের লক্ষ্যে বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে অধিক মনোনিবেশ করে এটি শিক্ষার্থীদের পেশাদারী দক্ষতা বৃদ্ধিতে এটি সহায়তা করে। প্রদেশের উপর ভিত্তি করে, টাইটেল-এর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়: পোস্ট-গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা, পোস্ট-গ্রাজুয়েট সার্টিফিকেশন, পোস্ট-ব্যাচেলরেট বা ডি.ই.এস.এস. (কুইবেক প্রদেশে)।

ভারত সম্পাদনা

ভারতে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদানকারী বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।[২] এই স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমাগুলো মূলত এক বছর মেয়াদের হয়ে থাকে এবং ট্রেনিং, ফিল্ড ওয়ার্ক ও ক্রেডিট সিস্টেমের উপর নির্ভর করে দুই থেকে চার সেমিস্টারে বিভক্ত হয়ে থাকে। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সকল স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদান করা হয়ে থাকে, সেগুলোর মধ্য অন্যতম হচ্ছে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ম্যানেজমেন্ট,[৩] পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন রিমোট সেন্সিং এন্ড জিআইএস,[৪] পোস্ট গ্রাজুয়েট ইন রোবোটিকস, পোস্ট গ্রাজুয়েট ইন ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি ইত্যাদি।[৫]

আয়ারল্যান্ড সম্পাদনা

আয়ারল্যান্ডে সাধারণভাবে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমাকে পিজিডি নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। দেশটিতে ২০০৫ সল হতে এ ডিপ্লোমাটি হায়ার এজুকেইশান এন্ড ট্রেইনিং অ্যওয়ার্ডস কাউন্সিল এর মাধ্যমে স্বীকৃত বা অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করে আসা হচ্ছে।[৬] স্নাতকোত্তর ডিগ্রিটি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় ও মানবিক কিংবা প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ে প্রদান করা হয়ে থাকে। ভর্তির যোগ্যতা হিসাবে প্রয়োজন হয় অনার্স ডিগ্রি এর ৬ষ্ঠ স্তর এবং ব্যাচেলর ডিগ্রি অথবা ভোকেশনাল ডিগ্রি।[৫] যদি প্রার্থীর গতানুগতিক শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকে, তবে প্রার্থীর কাজের অভিজ্ঞতা বা অন্যান্য অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তাকে কোর্সটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ প্রদান করা হয়।

পর্তুগাল সম্পাদনা

পর্তুগালে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা (পর্তুগিজে Pós-graduação) দুই রকমের হতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে একটি আলাদা বিষয়ের অংশ হিসাবে প্রদানকৃত কোর্স এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে কোনও মাস্টার্স ডিগ্রি এর প্রথম বছর শেষ করার পর প্রদানকৃত ডিপ্লোমা কোর্স।[৭][৮]

সিঙ্গাপুর সম্পাদনা

সিঙ্গাপুরে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা হচ্ছে ব্যাচেলর ডিগ্রি সমাপ্ত করার পর অর্জিত স্নাতকোত্তর যোগ্যতার সনদপত্র। সাধারণভাবে এ ডিপ্লোমাটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা গ্রাজুয়েট স্কুল কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে। সাধারণত এটা সম্পন্ন করতে দুই বা ততোধিক শিক্ষাকাল লাগে, যাতে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়সমূহ শিখানো হয়। স্নাতক ডিপ্লোমাধারীদের জন্যও মাস্টার্স ডিগ্রিতে উন্নীত হওয়া সম্ভবপর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় (সিঙ্গাপুর) এর সাথে নিবন্ধিত স্নাতকোত্তরডিপ্লোমারা শুধুমাত্র ইন্ডাস্ট্রি দ্বারা স্বীকৃত।

স্পেন সম্পাদনা

স্পেন এর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে এবং এক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ক্রেডিট ট্রান্সফার এন্ড অ্যাকিউমিলেশন সিস্টেম(ইসিটিএস) নামক গ্রেডিং সিস্টেমটির নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে থাকে। দেশটিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ধরনের স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে।

শ্রীলঙ্কা সম্পাদনা

সিঙ্গাপুরের মতনই শ্রীলঙ্কাতেও ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়।

যুক্তরাজ্য সম্পাদনা

ইংল্যান্ড এবং ওয়ালসের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ডিপ্লোমাটি একটি অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি অর্জনের পর একটি ভোকেশনাল কোর্স হতে পারে। এ ধরনের কোর্সের মধ্য রয়েছে লিগাল প্রাকটিস কোর্স অথবা বার ভোকেশনাল কোর্স। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকে ১২০ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Postgraduate study in Australia and New Zealand" (ইংরেজি ভাষায়)। gradireland.com। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৭ 
  2. "স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা" (ইংরেজি ভাষায়)। itm.edu। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৭ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৭ 
  4. Training Calendar http://www.iirs.gov.in/iirs/sites/default/files/pdf/Course_Calender_2016.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৫ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৭ 
  6. "NFQ"www.nfq-qqi.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০২ 
  7. See Article 10, Decree-Law no. 216/92 https://dre.pt/pdf1sdip/1992/10/236A00/47804785.pdf
  8. See Article 39, Decree-Law no. 115/2013 http://dre.pt/pdf1sdip/2013/08/15100/0474904772.pdf