সোনালু

উদ্ভিদের প্রজাতি

সোনালু বা সোনারু বা বান্দর লাঠি বা বাঁদর লাঠি বা বানরনড়ী বা রাখালনড়ী বা সোদাল বা সোনাইল (বৈজ্ঞানিক নাম:ক্যাসিয়া ফিস্টুলা) (ইংরেজি নাম:Golden shower tree) হলো ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় একটি দুর্দান্ত ফুলের উদ্ভিদ।[৩] এর সংস্কৃত নামগুলো হলো আরগ্বধ, অমলতাস, আরোগ্যশিম্বী, কুণ্ডল, কৃতমালক, কর্ণিকার, কর্ণী, কলিঘাত, চতুরঙ্গুল, দীর্ঘফল, নৃপদ্রুম, প্রগ্রহ, ব্যাধিঘাত, রাজবৃক্ষ, শম্পাক, স্বর্ণাঙ্গ, হেমপুষ্প। এটি তার আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এবং একটি শোভাময় গাছ হিসাবে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, যার উজ্জ্বল হলুদ ফুল বাগান, পার্ক এবং পথগুলিকে শোভিত করে।[৪] একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এবং ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় নিহিত একটি ইতিহাসের সাথে, সোনালু গাছটি তার প্রাণবন্ত পুষ্প এবং মূল্যবান ঔষধি গুণাবলীর সাথে কল্পনাকে ধারণ করে। Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত এবং সাবফ্যামিলি Caesalpinioideae-এর অধীনে শ্রেণীবদ্ধ, এই মাঝারি আকারের পর্ণমোচী গাছটি ১০ থেকে ২০ মিটার উচ্চতায় লম্বা, একটি ছড়িয়ে থাকা ছাউনি এবং একটি গোলাকার মুকুট নিয়ে গর্ব করে।[৫],[৬] এর পিনাট পাতাগুলিতে ৩ - ৮ জোড়া উপবৃত্তাকার বা আয়তাকার পত্রক রয়েছে, যখন এর শো-স্টপিং ফুলগুলি, ঝুলন্ত রেসমে সাজানো, তাদের দীপ্তিময় বর্ণ দিয়ে দর্শকদের মোহিত করে। এই পাঁচটি পাপড়ি বিশিষ্ট ফুল একটি আনন্দদায়ক সুগন্ধ নির্গত করে, মৌমাছি, প্রজাপতি এবং পাখিদের তাদের অমৃত-বোঝাই মহিমায় অংশ নিতে ইঙ্গিত করে। সোনালু গাছের মনোমুগ্ধকর উপস্থিতিকে আলিঙ্গন করে, বিভিন্ন অঞ্চল এটির চাষকে স্বাগত জানিয়েছে, যখন এর প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ এবং এর সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা করা হয়।

সোনালু গাছ
সোনালু ফুলের গাছ (ক্যাসিয়া ফিস্টুলা)
একটি প্রস্ফুটিত সোনালু গাছ
NE (iucn3.1[১])
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Fabales
পরিবার: Fabaceae
গণ: Cassia
প্রজাতি: C. fistula
দ্বিপদী নাম
Cassia fistula
L.
প্রতিশব্দ[২]
  • Bactyrilobium fistula Willd.
  • Cassia bonplandiana DC.
  • Cassia excelsa Kunth
  • Cassia fistuloides Collad.
  • Cassia rhombifolia Roxb.
  • Cathartocarpus excelsus G.Don
  • Cathartocarpus fistula Pers.
  • Cathartocarpus fistuloides (Collad.) G.Don
  • Cathartocarpus rhombifolius G.Don

বর্ণনা সম্পাদনা

সোনালু বা বাঁদরলাঠি গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০মিটার উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী স্থান। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে গাছ থাকে পত্র শুন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখা জুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালী হলুদ রঙের ফুল ফুটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে গ্রীষ্ম কাল পুরো সময় জুড়ে। ফুলের পাঁপড়ি পাঁচটি, মাঝে পরাগ দ- অবস্থিত। পাতা হাল্কা সবুজাভ, মধ্য শিরা স্পষ্ট। গাছের শাখা-প্রশাখা কম,কা- সোজা ভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে, বাকল সবুজাব থেকে ধূসর রঙের, কাঠ মাঝারি শক্ত মানের হয়। ফুল থেকে গাছে ফল হয়, ফলের আকার দেখতে সজিনা সবজির আকৃতির, তবে সজিনার গায়ের চামড়াতে ঢেওতোলা সোনালু ফলে তা নেই চামড়া মসৃণ। ফল লম্বায় প্রায় এক ফুট, রঙ প্রথমে সবুজ ও ফল পরিপক্ব হলে কালচে খয়েরি রঙ ধারণ করে। ফলে বীজ হয়,ফলের বীজ হতে বংশ বিস্তার ঘটে। কোন কোন অঞ্চলে সোনালু এর ফলকে বানর লাঠি হিসেবে চিনে বলে সোনালু গাছকেও তারা বানর লাঠি গাছ বলে ডাকতে শুনা যায়।[৭]

উৎপত্তি সম্পাদনা

এ ফুলের আদিনিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানমায়ানমার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা মেলে। বাংলাদেশে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড-কুমিরা পাহাড়ী অঞ্চলে এ গাছটি দেখা যায়।

ব্যবহার সম্পাদনা

প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে এবং প্রকৃতি পরিবেশের শোভা বর্ধনে সোনালু গাছ সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়। অস্ট্রেলিয়ায় অনেক সড়কের দুই পাশে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সারিবদ্ধ ভাবে একই ধরনের গাছ লাগানো হয়। [৮] সোনালু বা বাঁদরলাঠি গাছ এদের অন্যতম। [৯]। গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় সোনালী আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। ভারতের এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এবং সড়ক-মহাসড়ক বিভিন্ন প্রতিষ্টনে বন জঙ্গলে গ্রামীণ রাস্তার ধারে ছোট বড় সোনালু গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

ঔষধি গুণাগুণ সম্পাদনা

সোনালু গাছের বাকল এবং পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছের বাকল এবং পাতার antibacterial, antioxidant, hepatoprotective, hypoglycemic, hepatoprotective গুণাগুণ রয়েছে।[১০] এটি ডায়রিয়ায় ও বহুমূত্র ব্যবহৃত হয়। [১১][১২]

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "IUCN Red List entry for Cassia fistula"। International Union for Conservation of Nature। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৯ 
  2. "The Plant List: A Working List of All Plant Species"। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৯, ২০১৪ 
  3. "Cassia fistula" (ইংরেজি ভাষায়)। ন্যাচারাল রিসোর্সেস কনসারভেশন সার্ভিস প্ল্যান্টস ডেটাবেস। ইউএসডিএ 
  4. "BSBI List 2007"। Botanical Society of Britain and Ireland। ২০১৫-০১-২৫ তারিখে মূল (xls) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১০-১৭ 
  5. "Cassia fistula"জার্মপ্লাজম রিসোর্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (জিআরআইএন)কৃষি গবেষণা পরিসেবা (এআরএস), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২, ২০১৯ 
  6. U. S. Department of Agriculture, William Saunders; Catalogue of Economic Plants in the Collection of the U. S. Department of Agriculture; Washington D. C.; June 5, 1891
  7. Uddin NS. Traditional Uses of Ethnomedicinal Plants of the Chittagong Hill Tracts. Bangladesh National Herbarium, Dhaka;  2006.
  8. https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%BE
  9. Pollock M. Vegetable and fruit gardening in Australia. 2012. Royal Horticulture Society of Australia. Dorling Kindersley Australia Pty Ltd.
  10. Rizv et al. Bioefficacies of Cassia fistula: An Indian labrum. African Journal of Pharmacy and Pharmacology, 2009. Vol.3(6), pp. 287-292.
  11. Ghani A. Medicinal plants of Bangladesh with chemical constituents and uses. 2003. Asiatic Society of Bangladesh
  12. Alam, M. M.; Siddiqui, M. B.; Husain, W. Treatment of diabetes through herbal drugs in rural India. Fitoterapia. 1990 Vol.61 No.3 pp.240-242

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  উইকিমিডিয়া কমন্সে সোনালু সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।

Database on state of environment, Kerala (2008): Kerala Symbols