সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বাংলাদেশী লেখিকা

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (জন্ম: ১৫ জানুয়ারি, ১৯৬৮), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের "পরিবেশ পুরস্কার" এবং প্রথম বাংলাদেশী[১] হিসেবে "গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ"[২] প্রাপ্ত, এবং ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে টাইম সাময়িকীর "হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট" খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশী আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী।[৩][৪][৫] এছাড়া তিনি ২০১২ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান।[৬]

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
জন্ম (1968-01-15) ১৫ জানুয়ারি ১৯৬৮ (বয়স ৫৬)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাআইনজীবী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাএল.এল.এম.
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কাররামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার
গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ
পরিবেশ পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীআবু বকর সিদ্দিক
সন্তানতিন (মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে - যাবির ও জিদান)

২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান।[৭]

ব্যক্তিজীবন সম্পাদনা

রিজওয়ানা হাসানের পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ, যদিও জন্মেছেন ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি[৮] বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসান, মা সুরাইয়া হাসান। বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা তিনি এবং পরিবারে সবার ছোট।[৮] পরবর্তীতে সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন সন্তানের জননী: মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান।[৩]

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

রিজওয়ানা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রথমে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থেকে পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন।[৮] এবং সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।[৯] ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-তে। বেলা-ও তখন মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। এরপর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বেলা'র সংগঠক ও প্রধান জনাব মহিউদ্দিন ফারুক মৃত্যুবরণ করলে রিজওয়ানা 'কমনওয়েলথ বৃত্তি'র সুযোগ হাতছাড়া করে বেলা'র প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। বেলা'র হাত ধরেই লড়ে চলেন পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।[৩] ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা পুরান ঢাকায় অন্যায়ভাবে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রচারকাজ চালাচ্ছিলেন। বেলা'র মাধ্যমে জনস্বার্থে আদালতে মামলা করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তৈরি করলেন একটি মাইলফলক। আদালত এই কাজকে জনস্বার্থের বিপরীত বলে রায় দেয়।[৩] এরপর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এজাতীয় কাজ বন্ধে উদ্যোগ নেয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এরপর তিনি জাহাজ ভাঙা শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনা ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে লড়াই শুরু করেন। তিনি বেলা'র মাধ্যমে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তাহীনতা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাহীনতা, এ শিল্প থেকে যথেচ্চ বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে। এরপর শ্রমিকদের অধিকার আদায়, বিষাক্ত পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধে করেছেন আরো তিনটি মামলা। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসেই আদালতের রায়ে 'পরিবেশগত ছাড়পত্র' ছাড়া জাহাজ ভাঙার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।[৩] এছাড়াও জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরি, পলিথিনের যথেচ্চ ব্যবহার, পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস, চিংডির ঘের, সেন্ট মার্টিন্‌স দ্বীপে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যেখানেই পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই তিনি এবং তার নেতৃত্বে বেলা, পরিবেশ রক্ষায় আইনিভাবে এগিয়ে এসেছে।[৩] তিনি বেলার প্রধান নির্বাহী ছাড়াও ফেডারেশন অফ এনজিওস ইন বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি, এনজিও এরডিআরএস-এর সভাপতি। এছাড়া তিনি "নিজেরা করি" সংগঠন ও এসোসিয়েশন অফ ল্যান্ড রিফর্মস এন্ড ডেভলপমেন্ট-এর একজন সদস্য। বেসরকারি এসব কাজ ছাড়াও তিনি সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেন্ডস অফ আর্থ ইন্টারন্যাশনাল-এর নির্বাহী সদস্য; এনভায়রনমেন্টাল ল' এলায়েন্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল' কমিশন অফ দ্যা আইইউসিএন-এর সদস্য। এছাড়া তিনি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অফ এনভায়রনমেন্টাল এক্টিভিস্ট (SAANS)-এ।[৯]

প্রকাশনা সম্পাদনা

রিজওয়ানার উদ্যোগে বেলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু পরিবেশ রক্ষা ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের ভূমিকা সংক্রান্ত প্রকাশনা। এছাড়াও তার ব্যক্তিগত প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে:[৮]

  • ল'জ রেগুলেটিং এনভায়রনমেন্ট ইন বাংলাদেশ, ও
  • জুডিশিয়াল ডিসিশনস অন এনভায়রনমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া

সম্মাননা সম্পাদনা

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরির কারণে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রথমবারের মতো আয়োজিত "পরিবেশ পুরস্কার"-এ ভূষিত হোন। তার পরিচালিত সংগঠন বেলা ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম ঘোষিত গ্লোবাল ৫০০ রোল অফ অনার্স পুরস্কারে ভূষিত হয়।[৯] এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে[১] ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পেয়েছেন 'পরিবেশের নোবেল' খ্যাত "গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ"। তার এসব নানামুখি কর্মকান্ডের কারণেই ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাকে "হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট" খেতাবে[১০][১১] ভূষিত করে।[৩] এছাড়া তিনি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে নেপালভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টেটমেন্টস এ্যান্ড সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ প্রদত্ত "সিলেব্রেটিং ওমেনহুড এওয়ার্ড"প্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাঁচজন নারীর একজন।[৯] এছাড়াও তিনি ২০১২ সালে এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচ্য ফিলিপাইনভিত্তিক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন।[১২] ২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান।[৭]

আবু বকর সিদ্দিকি অপহরণ সম্পাদনা

২০১৪ সালের ১৭ই এপ্রিল সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের দাম্পত্যসঙ্গী আবু বক্কর সিদ্দিকি অপহৃত হন।[১৩] চাঞ্চল্যকর এই অপহরণের ৩৬ ঘণ্টা পরেই আবার তাকে অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেন। যদিও অপহরণের কারণ কিংবা জড়িতদের ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।[১৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ahsanul Huq (২৬ মে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ)। "Bangladeshi Lawyer Wins Goldman Environmental Prize"। ভয়েস অফ অ্যামেরিকা (বাংলা) (ওয়েব)। ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "Syeda Rizwana Hasan" (html)The Goldman Environmental Prize (English ভাষায়)। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৮, ২০১০ 
  3. ইকবাল হোসাইন চৌধুরী (১০ অক্টোবর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ)। "সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: পরিবেশ বন্ধু"। ছুটির দিনে ৫০৯, দৈনিক প্রথম আলো (প্রিন্ট)। কারওয়ান বাজার, ঢাকা। পৃষ্ঠা ৫।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  4. ইশতিয়াক হাসান (৮ মার্চ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)। "পরিবেশ: অন্য রকম একজন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান"। জয়িতা (আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ) বিশেষ সংখ্যা, দৈনিক কালের কন্ঠ (প্রিন্ট)। পান্থপথ, ঢাকা: ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১২।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. Staff Correspondent (অক্টোবর ৪, ২০০৯)। "Time names Rizwana as environment hero" (html)The Daily Star (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৮, ২০১০ 
  6. "বিডিনিউজ ২৪ ডট কম"। ২৮ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১২ 
  7. রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২২-০৩-০৯)। "'যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহসী নারী' পুরস্কার পাচ্ছেন রিজওয়ানা হাসান"The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০৯ 
  8. বেলা'র সঙ্গে রিজওয়ানা, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২১ অক্টোবর ২০১০; পরিদর্শনের তারিখ: ১১ জুন ২০১১।
  9. Shahidul Islam Chowdhury (ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১০)। "Syeda Rizwana Hasan, defender of environment"New Age (English ভাষায়)। Tejgaon Industrial Area, Dhaka। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল (html) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৮, ২০১০ 
  10. Krista Mahr (22)। "Activists: Syeda Rizwana Hasan"Heroes of the Environment 2009 (English ভাষায়)। United States: Time magazine। আগস্ট ১২, ২০১০ তারিখে মূল (html) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ March 18, 2010  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |year= / |date= mismatch (সাহায্য)
  11. Staff Correspondent (অক্টোবর ৪, ২০০৯)। "Time names Rizwana as environment hero" (html)The Daily Star (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৮, ২০১০Syeda Rizwana Hasan, executive director of Bangladesh Environmental Lawyers Association (Bela), appeared in Time's 'Heroes of the Environment 2009' for her activism for the protection of ship-breaking workers and the environment. 
  12. "দৈনিক প্রথম আলো"। ২০১৪-০১-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  13. গোলাম মর্তুজা, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক (অক্টোবর ৪, ২০১৪)। "আবু বকর সিদ্দিক অপহরণ মামলা: সিএনজি অটোরিকশা চালকের জবানবন্দী"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৮, ২০১৮ 
  14. "আবু বকর মুক্ত"দৈনিক প্রথম আলো। নভেম্বর ৪, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৮, ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা