সূরা আছর

কুরআন শরীফের ১০৩তম সূরা

সূরা আসর মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৩ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩ টি।

আসর
শ্রেণীমাক্কী সূরা
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম১০৩
আয়াতের সংখ্যা
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা তাকাসুর
পরবর্তী সূরা →সূরা হুমাযাহ
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

সূরা আসর কুরআনের একটি সংক্ষিপ্ত সূরা, তবে এটি মুসলামানদের কাছে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা এবং অনেক মুসলিম মনে করেন যে, মানুষ এই সূরাটিকেই চিন্তা ভাবনা সহকারে পাঠ করলে তাদের ইহকাল ও পরকাল সংশোধনের জন্যে যথেষ্ট হয়ে যাবে। এ সূরার বক্তব্য অনুসারে, আল্লাহ যুগের কসম করে বলেন যে, মানবজাতি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এবং এই ক্ষতির কবল থেকে কেবল তারাই মুক্ত আছে, যারা চারটি বিষয় নিষ্ঠার সাথে পালন করে: ঈমান বা স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, সৎকর্ম, অপরকে সত্য ও ধৈর্য্য রাখার উপদেশ দান।[১]

নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান সম্পাদনা

মুজাহিদ , কাতাদাহ ও মুকাতিল একে মাদানী বলেছেন । কিন্তু মুফাসসিরগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একে মক্কী সূরা হিসেবে গণ্য করেছেন। আর এই সূরার বিষয়বস্তু সাক্ষ্য দেয় , এটি মক্কী যুগেরও প্রাথমিক পর্যায়ে নাযিল হয়ে থাকবে। সে সময় ইসলামের শিক্ষাকে সংক্ষিপ্ত ও অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী বাক্যের সাহায্যে বর্ণনা করা হতো। এভাবে শ্রোতা একবার শুনার পর ভুলে যেতে চাইলেও তা আর ভুলতে পারতো না এবং আপনা আপনি লোকদের মুখে তা উচ্চারিত হতে থাকতো।

শানে নুযূল সম্পাদনা

ওলীদ ইবনে মুগিরা, আস ইবনে ওয়াইল, আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব প্রমুখ বলতেন যে, মুহাম্মদ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে (তাদের কথার অসারতা প্রমাণ করে) আল্লাহ সূরাটি নাযিল করেন।


জাহিলিয়া যুগে আবু বকর সিদ্দিকের সাথে কালাদাহ ইবনে উসায়েদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কালাদাহ প্রায়ই তার নিকট যাতায়াত করতো।

আবু বকর ইসলাম গ্রহণের পর একদিন সে তার নিকট এসে বললো, “হে আবু বকর! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? ব্যবসা-বাণিজ্যে তো ভাটা লেগেছে। আয়-রোজগারের পথ তো প্রায় বন্ধ। তুমি কোন ধারণায় নিমজ্জিত হয়েছো ? নিজেদের ধর্মকর্মও হারিয়েছ এবং দুনিয়াও হারিয়েছ। তুমি এখন উভয় দিক দিয়ে পূর্ণরূপে লোকসানে নিপতিত।”

আবু বকর বললেন, “হে নির্বোধ! যে লোক আল্লাহ তাআলা ও তার রাসুলের গোলাম হয়ে যায়, সে কখনো লোকসানে নিপতিত হয় না। যারা পরকাল সম্পর্কে কোনই চিন্তাভাবনা করে না মূলত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত, তারাই লোকসানে নিপতিত। যারা কেবল জাগতিক উন্নতি লাভের জন্যই সদা চিন্তামগ্ন ও ব্যস্ত থাকে, তারাই একূল-ওকূল উভয় কূলই হারায়।”

আবু বকরের কথার সত্যতা প্রমাণ এবং এ ঘটনাকে উপলক্ষ করে এ সূরা অবতীর্ণ হয়।

বিষয়বস্তুর বিবরণ সম্পাদনা

তাফহীমুল কোরআনের ব্যাখ্যা অনুসারে, সময় মানে বিগত সময়-অতীত কালও হতে পারে আবার চলিত সময়ও। এই চলিত বা বর্তমান কাল আসলে কোনো দীর্ঘ সময়ের নাম নয়। বর্তমান কালে প্রতি মুহূর্তে বিগত হচ্ছে এবং অতীতে পরিণত হচ্ছে। আবার ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে প্রতিটি মুহূর্ত বের হয়ে এসে বর্তমানে পরিণত হচ্ছে এবং বর্তমান থেকে আবার তা অতীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখানে যেহেতু কোনো বিশেষত্ব ছাড়াই শুধু সময়ের কসম খাওয়া হয়েছে, তাই দুই ধরনের সময় বা কাল এর অর্ন্তভূক্ত হয়। অতীতকালের কসম খাওয়ার মানে হচ্ছেঃ মানুষের ইতিহাস এর সাক্ষ্য দিচ্ছে, যারাই এই গুনাবলী বিবর্জিত ছিল তারাই পরিনামে হ্মতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বর্তমানকালের কসম খাওয়ার অর্থ হল যে, বর্তমানে যে সময়টি অতিবাহিত হচ্ছে সেটি আসলে এমন একটি সময় যা প্রত্যেক ব্যক্তি ও জাতিকে দুনিয়ায় কাজ করার জন্য দেয়া হয়েছে।[২]

আয়াত সমূহ সম্পাদনা

وَالْعَصْرِ

১. শপথ অপরাহ্নের;

إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ
২. নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত;

إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
৩. কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সত্যের এবং উপদেশ প্রদান করে ধৈর্য্যের৷

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন (১১ খন্ডের সংহ্মিপ্ত ব্যাখ্যা)।
  2. তাফহীমুল কোরআন।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা