সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত

ইংরাজী সাহিত্যের দিকপাল শিক্ষক, শেক্সপিয়ার-বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত (২৭ জুন ১৯০৩ – ৩ ডিসেম্বর ১৯৯৮) ইংরেজি সাহিত্যের দিকপাল শিক্ষক, শেক্সপিয়ার-বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক।[১] জর্জ বার্নার্ড শ' এবং উইলিয়াম শেকসপিয়র সম্পর্কে তার মূল্যবান সমালোচনা ইংরেজি সাহিত্যের মনীষী মহলে প্রশংসিত। আচার্য আনন্দবর্ধনের "ধ্বন্যালোক" গ্রন্থের অনুবাদ ও ভূমিকা তার মনীষার উজ্জ্বল নিদর্শন।[২]

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত
জন্ম২৭ জুন ১৯০৩
মৃত্যু৩ ডিসেম্বর ১৯৯৮(1998-12-03) (বয়স ৯৫)
পেশাঅধ্যাপনা
ইংরেজি সাহিত্য
লেখক
কর্মজীবন১৯২৮–১৯৯৮
পরিচিতির কারণশেক্সপিয়ারের সাহিত্য
পিতা-মাতাহেমচন্দ্র সেনগুপ্ত (পিতা)
মৃণালিনী দেবী (মাতা)
পুরস্কার পদ্মভূষণ (১৯৮৩)

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তর জন্ম অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের ঢাকার বানারিতে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে জুন। পিতা হেমচন্দ্র সেনগুপ্ত ও মাতা মৃণালিনী সেনগুপ্ত। স্কুলের পড়াশোনা ফরিদপুরে পালং স্কুলে। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এরপর কলকাতা চলে আসেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বি.এ পাশ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পি.এইচ.ডি.ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ইংরেজি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির হিন্দু কলেজ অধ্যাপনা দিয়ে তার ব্যক্তিগত কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্সি সহ আরো অনেক কলেজে অধ্যাপনা করেন। কলেজ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- চট্টগ্রাম কলেজ (১৯৩৩-৩৫), রাজশাহী কলেজ (১৯৪২ -৪৬) ও জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৬০ -৬২) অধ্যাপনা করেছেন। তবে সব থেকে বেশি সময় ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে (১৯২৯-৩৩, ১৯৩৫-৪২ এবং ১৯৪৬-৬০)। সর্বশেষ তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রধান অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন (১৯৬২-৬৮)।

ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে অবদান সম্পাদনা

বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে তিনি শেষের দিকে ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সমালোচনা করেছেন। এমনকি সমালোচনার জগতে তার এক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য করা হত। বিশেষকরে শেক্সপিয়ারের সাহিত্য-সমালোচনার বিভিন্ন দিক তিনি উন্মোচন করেছেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের সাহিত্যের উপর তার পাঁচটি উচ্চ প্রশংসিত গ্রন্থ গুলি হল-

  • 'অ্যাসপেক্টস অফ শেক্সপিরিয়ান কমেডি' (১৯৫০)
  • 'দ্য ওরিলিগিগ অব টাইম: দ্য প্রবলেম অব ডিউরেশন ইন শেক্সপিয়ারস্ প্লেজ' (১৯৬১)
  • 'শেক্সপিয়ারস্ হিস্টোরিকাল প্লেজ' (১৯৬৪)
  • 'অ্যাসপেক্টস অফ শেক্সপিরিয়ান ট্র্যাজেডি' (১৯৭২)
  • 'শেক্সপিয়ার ম্যানুয়াল' (১৯৭৭)।

সারা পৃথিবীর শেক্সপিয়ার-বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তার অন্যতম লেখা "অ্যাসপেক্টস অফ শেক্সপিরিয়ারস্ ট্র্যাজেডি" পুস্তকটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য। জর্জ বার্নার্ড শ'র সাহিত্যকর্মের উপর তার রচিত গ্রন্থ হল " দা আর্ট অফ বার্নাড শ' " (১৯৩৬) মনীষী মহলে সমানভাবে প্রশংসিত।

বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র সম্বন্ধেও তার বাংলা গ্রন্থগুলি বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেছে।

  • 'শরৎচন্দ্র: ম্যান অ্যান্ড আর্টিস্ট' (১৯৭৫), বাংলায় "শরৎচন্দ্র (১৯৫১)
  • 'দি গ্রেট সেন্টিনাল: এ স্টাডি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর' (১৯৪৮) ' বাংলায় 'রবীন্দ্রনাথ'(১৯৩৫)
  • 'বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জি' (১৯৯৬), বাংলায় 'বঙ্কিমচন্দ্র'(১৯৩৮)

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -

  • 'কিটস: ফ্রম থিয়োরি টু পোয়েট্রি'
  • 'বিবেকানন্দ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম'
  • 'টুওয়ার্ডস এ থিয়োরি অফ ইমাজিনেশন' (১৯৫৯)
  • 'অ্যান ইনট্রোডাকশন টু অ্যারিস্টটলস্ পোয়েটিক্স'
  • 'ইন্ডিয়া রেস্টেড ফ্রিডম' (১৯৮২)

শুধু ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য বা পাশ্চাত্য দর্শন নয়, ভারতীয় দর্শন, মার্কসবাদ,প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের নন্দনতত্ত্ব সব বিষয়েই তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। অবসর জীবনেও তিনি বহু অমূল্য রচনা ও গ্রন্থ লিখেছেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে আচার্য আনন্দবর্ধনের "ধ্বন্যালোক" গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ও ভূমিকা রচনা তার মনীষার আর একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতামূলক রচনা "তে হি নো দিবসা" প্রকাশিত হয়। এছাড়া কলকাতার খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত প্রায় চার সহস্রাধিক জীবনী-সংবলিত আকর গ্রন্থ "সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান" (প্রথম প্রকাশ মে,১৯৭৬) সম্পাদনা তার অনন্যসাধারণ কীর্তি।

সম্মাননা সম্পাদনা

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দেই ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিশিষ্ট সদস্য ও ইংল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শেক্সপিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য ছিলেন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৫৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ২৩১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম