সুবিনয় রায়

ভারতীয় গায়ক

সুবিনয় রায় (৮ নভেম্বর,  ১৯২১  - ৯ জানুয়ারি, ২০০৪) কলকাতার ব্রাহ্ম পরিবারের জাত আজন্ম ব্রহ্মসঙ্গীতে লালিত  প্রখ্যাত বাঙালি রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী।[১]

সুবিনয় রায়
জন্মনামসুবিনয় রায়
জন্ম(১৯২১-১১-০৮)৮ নভেম্বর ১৯২১
কলকাতা বৃটিশ ভারত অধুনা পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু৯ জানুয়ারি ২০০৪(2004-01-09) (বয়স ৮২)
কলকাতা , পশ্চিমবঙ্গ , ভারত
ধরনরবীন্দ্রসঙ্গীত , ব্রহ্মসংগীত
পেশাসঙ্গীতশিল্পী
কার্যকাল১৯৪৫–২০০৪
লেবেলকলম্বিয়া রেকর্ডস এইচএমভি, ইএমআই

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

সুবিনয় রায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই নভেম্বর। পিতা বিমলাংশুপ্রকাশ রায় পেশায় ছিলেন একজন রসায়নবিদ ও সাহিত্যসেবী। চাকরি করতেন বার্ড কোম্পানিতে। মা সুখময়ী মেডিক্যাল কলেজের মেয়েদের হস্টেলের সুপারিনটেন্ডন্ট ছিলেন, পরে শান্তিনিকেতনে মেয়েদের হোস্টেল 'শ্রীভবন'-এর সুপার হন।[২] তিনি সুকুমার রায়ের "ননসেন্স ক্লাব" -এর সদস্য ছিলেন। মাতা সুখময়ী দেবী নিয়মিত সঙ্গীতচর্চা করতেন। কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ইন্টারমিডিয়েটে বিজ্ঞান পড়তে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। তার বিশেষ বিষয় ছিল রসায়ন। সকালে শিক্ষাভবনে পড়াশোনা আর বিকালে রসায়নের অধ্যাপক শৈলজারঞ্জন মজুমদারের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা নিতেন। সেখানে সঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন ভি.ভি.ওয়াঝেলওয়ার। ইন্দিরা দেবীচৌধুরানির কাছেও সঙ্গীত শিক্ষা নেন। "বর্ষামঙ্গল" অনুষ্ঠান উপলক্ষে   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছেও গান শিখেছেন। শৈলজারঞ্জনের সবিশেষ স্নেহলতা ও প্রশ্রয় পেলেও তার আদর্শ ছিল সমরেশ চৌধুরীর গায়নভঙ্গি। এক বিশিষ্ট ঘরানা ধ্রুপদাঙ্গের রবীন্দ্রসংগীতে তিনি পরিশীলিত। বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদ শিখেছিলেন রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। পরে তার গুরুস্থানীয় সুখেন্দু গোস্বামীর হাত ধরে খেয়াল ঠুমরি শিখতে গিয়েছিলেন গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে।[৩] তিনি গিরিজাশঙ্করের কাছে বেশ কিছুকাল তালিম নিয়েছিলেন। সুবিনয় রায় কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিটি কলেজে ভর্তি হন। বি.এসসি পাশের পর ১৯৩৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শান্তিনিকেতনে চলে যান সঙ্গীতের অদম্য আকর্ষণে।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

বি.এসসি পাশের পর কিছুদিন তিনি শান্তিনিকেতনের সঙ্গীতভবনে শিক্ষকতা করেন। কলকাতার "দক্ষিণী" সঙ্গীত শিক্ষায়তনের  প্রতিষ্ঠা পর্ব থেকে শিক্ষক ছিলেন। এর মধ্যে কিছুদিন শান্তিনিকেতন ছেড়ে লন্ডনে যান চাটার্ড লাইব্রেরিয়ানশিপে  ডিপ্লোমা নিতে। দেশ ফিরে পিতৃবন্ধু প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ স্থাপিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে  দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এর মাঝে তিনি অনাদিকুমার দস্তিদারের কাছে নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছেন এবং নিজে সঙ্গীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান "গীতবীথি" প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুদিন "গান্ধবী" প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। তার ছাত্রদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। তিনি  মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনে তার কাছে দীর্ঘদিন রবীন্দ্র সংগীত শিখেছেন এবং তাঁকে "গুরুদেব" সম্বোধন করতেন। সুবিনয় রায় চল্লিশের দশকে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করলেও মাঝখানে দশ ব্ৎসর আর সেখানে যান নি। পরে শুভ গুহঠাকুরতার প্রয়াসে রেডিয়োয় বিনা অডিশনেই উঁচু গ্রেডের শিল্পী হিসাবে গান শুরু করেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলম্বিয়া রেকর্ডস থেকে তার প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়- " এই করেছ ভালো নিঠুর হে" এবং "তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে"।[৪] সুবিনয় রায় অত্যন্ত রসিক মানুষ ছিলেন এবং আড্ডা দিতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি "বুধসন্ধ্যা" রও সভ্য ছিলেন।

এছাড়া দীর্ঘকাল তিনি কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইন্সটিটিউটে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

রবীন্দ্র সংগীতের উপর সুবিনয় রায়ের লেখা গ্রন্থ "রবীন্দ্রসংগীত সাধনা" ১৩৭৯ বঙ্গাব্দে (১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে) প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে তিনি প্রাঞ্জলভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়কি, স্বরলিপি, স্বরসাধনা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

সুবিনয় রায় শিশুসাহিত্যিক অমরেন্দ্রনাথ দত্তের কন্যা ইন্দিরাকে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র- সুরজিৎ ও সুরঞ্জন। সুরঞ্জন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী।[২]

সম্মাননা সম্পাদনা

সুবিনয় রায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশিকোত্তম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি র আলাউদ্দিন পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে “রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য” উপাধিতে ভূষিত করে।

জীবনাবসান সম্পাদনা

সুবিনয় রায় তার স্ত্রীর মৃত্যুর চার দিন পর ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই জানুয়ারি কলকাতার এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয়  খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি  ২০১৯, পৃষ্ঠা ৪৫২,৪৫৩ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "রবীন্দ্রসঙ্গীতের গভীরে যেতে হলে স্বরলিপি ভাঙতে হয় না"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১৪ 
  3. "কলকাতার কড়চা"আনন্দবাজার পত্রিকা। ৬ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-০৮ 
  4. "সুবিনয় রায়কে শ্রদ্ধাঞ্জলি"। এই সময়। ৩১ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-১৬