সার্বজনীনতাবাদ বা বৈশ্বিকতাবাদ হল বৈশ্বিক বা সার্বজনীন প্রয়োগ বা প্রযোজ্যতা-যুক্ত একটি ধর্মীয়, ধর্মতাত্ত্বিক এবং দার্শনিক মতবাদ। সার্বজনীনতাবাদী বিশ্বাস-ব্যবস্থায় সকল শ্রেণীর মানুষকে তাদের গঠনতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তিতে বিবেচনায় রাখে।

ধর্মীয় পরিভাষার ক্ষেত্রে, একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সার্বজনীনতাবাদ দাবি করে যে ধর্ম হল একটি সার্বজনীন মানব গুণ বা বৈশিষ্ট্য। একে অসার্বজনীন ধর্মসমূহ হতে পৃথকভাবে দেখা যেতে পারে। এই মতবাদ অনুসারে ধর্মকে কার্যকারণ, প্রকৃতি, এবং মহাবিশ্বের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল একগুচ্ছ বিশ্বাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, বিশেষ করে যখন একে আত্মত্যাগী ভক্তিমূলক ও রীতিনীতিগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অতিমানব সৃষ্টির প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানমালা বলে মনে করা হয়, যার প্রায়শই মানবীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি নৈতিক মানদণ্ড থাকে।[১]

খ্রিষ্টধর্মের কিছু উপদলে, বৈশ্বিক একীভূতকরণ হল এমন একটি বিশ্বাসব্যবস্থা যাতে বলা হয় যে, সকল পাপী ও পথভ্রষ্ট মানবাত্মা স্বর্গীয় ভালোবাসা ও দয়ার কারণে চূড়ান্তভাবে ঈশ্বরের কাছে একীভূত হবে।[২] অদ্বৈত সার্বজনীন একেশ্বরবাদ-এ বিশ্বাস করা হয় যে, সকল ধর্মই হল একটি সার্বজনীন মানব গুণ, যাতে প্রায় সকল ধর্মের বৈশ্বিক মূলনীতিকে তুলে ধরে, অন্যান্য ধর্মকেও নিজেদের অন্তর্ভুক্তিতে গ্রহণ করে, এবং মানবতা ও স্বর্গের মাঝে বৈশ্বিক একীভূতকরণে বিশ্বাস করে। সার্বজনীনতাবাদ আধুনিক হিন্দুধর্মকে এবং এরপর পাশ্চাত্যের আধুনিক আধ্যাত্মিকতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।[৩]

A white column with ornate designs carved into it, including a Star of David
উইলমেট, ইলিনয় বাহির উপাসনা এর স্তম্ভের উপরে বহু ধর্মের প্রতীক

নিজেদেরকে সার্বজনীনতাবাদী বলে ডাকা কোন সম্প্রদায় প্রায় সকল ধর্মের বৈশ্বিক মূলনীতিকে তুলে ধরে, অন্যান্য ধর্মকেও নিজেদের অন্তর্ভুক্তিতে গ্রহণ করে, এবং মানবতা ও স্বর্গের মাঝে বৈশ্বিক একীভূতকরণে বিশ্বাস করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু আব্রাহামিক ধর্ম তাদের বিশ্বাসপদ্ধতি ও নৈতিক মূলনীতিসমূহকে সার্বজনীন মূল্যবোধ-সম্পন্ন এবং নিজেদেরকে সকল ধর্মের অন্তর্ভুক্তির অনুভূতি-সম্পন্ন বলে দাবি করেছিল।[৪] পাশাপাশি একটি সাধারণ সত্যের উপর নির্ভরশীল কোন বিশ্বাসও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে বর্তমান সত্যকে জাতীয়, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সীমারেখা থেকেও অনেক বিস্তৃত হিসেবে দেখা হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Staff (২০১২)। "religion"Dictionary.com, LLC। Dictionary.com, LLC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১২ 
  2. Otis Ainsworth Skinner (1807-1861), A Series of Sermons in Defence of the Doctrine of Universal Salvation, Page 209, It is not part of mainline Christian doctrine either Catholic or Protestant. "Repentance is a means by which all men are brought into the enjoyment of religion, and we do not expect any man will be saved while he continues in sin. However, Unitarian Universalism holds a universal salvation, because is, "we expect all men will repent."
  3. King 2002
  4. George T. Knight The Schaff-Herzog Encyclopedia of Religious Knowledge, 1953, vol. 12, p. 96; retrieved 30/04/09

উৎস সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • Ankerl, Guy (২০০০)। Global communication without universal civilization। Vol. 1: Coexisting contemporary civilizations: Arabo-Muslim, Bharati, Chinese, and Western। Geneva, Switzerland: INU Press। আইএসবিএন 9782881550041 
  • Palmquist, Stephen (২০০০), "Chapter eight: Christianity as the Universal religion", Palmquist, Stephen, Kant's critical religion, Aldershot, Hants, England Burlington, Vermont: Ashgate, আইএসবিএন 9780754613336.  Online.
  • Scott, Joan W. (২০০৫), "French Universalism in the nineties", Friedman, Marilyn, Women and citizenship, Studies in Feminist Philosophy, Oxford New York: Oxford University Press, পৃষ্ঠা 35–51, আইএসবিএন 9780195175356.