সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া

সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া (আরবি: صفوان بن أمية) (মৃত্যুঃ ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দ), যিনি তার কুনিয়া আবু ওয়াহাব দ্বারাও পরিচিত, তিনি হলেন ইসলামিক নবী মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সাহাবা।[১]

পরিবার সম্পাদনা

তিনি মক্কার কুরাইশ বংশের বনু জুমাহ গোত্রের সদস্য ছিলেন। তার বাবা ছিলেন উমাইয়া ইবনে খালাফ, যিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা; এবং তার মাতার নাম ছিল কারিমা বিনতে মামর ইবনে হাবিব।[২] আলী নামে তার একজন চাচাতো ভাই[৩] এবং জাবালা ইবনে হাম্বল নামে তার এক খালাতো ভাই ছিল।[৪]

সাফ্বান কমপক্ষে চারবার বিবাহ করেছিলেন।

  1. বারজা ইবনে মাসুদ, তাইফের সাকিফ গোত্রের সরদার পরিবার থেকে। সে সাফওয়ানের ফুফুর মেয়ে এবং তার সন্তান আবদুল্লাহর মা।[৫]
  2. ফাখিতা বিনতে আল-ওয়ালিদ ইবনে আল-মুগিরা, মক্কার কুরাইশ বংশের বনু মাখজুম গোত্র থেকে।[৬]
  3. উম্মে কুলসুম (অথবা মুলাইকা) বিনতে জারওয়াল, বনু খুজাআ গোত্র থেকে।[৭]
  4. উমাইনা বিনতে আবু সুফিয়ান,কুরাইশের বনু উমাইয়া গোত্র থেকে। সে তার সন্তান আব্দুর রহমানের মাতা।[৮]

সে একবার মুহাম্মাদকে ৫০০০০ দিহরাম ঋণ দিয়েছিল।[৯]

মুহাম্মাদ ও তাঁর যুদ্ধাভিযানসমূহের বিরোধিতা সম্পাদনা

সাফওয়ানের পিতা, উমাইয়া ইবনে খালাফ, মক্কায় মুহাম্মাদের বিরোধিতা করতেন।[১০] মুহাম্মাদকে গুপ্তহত্যার পরিকল্পনায় তিনি জড়িত ছিলেন, যে ঘটনার পর মুহাম্মাদ মদিনায় গোপনে হিজরত করেন।[১১] বদরের যুদ্ধের পর তিনি নিজেও মুহাম্মাদের বিরোধিতা শুরু করেন।

বদরের যুদ্ধ সম্পাদনা

সাফয়ান বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নি (মার্চ ৬২৪)। কুরাইশ বাহিনীর ছত্রভঙ্গ হবার সংবাদ যখন প্রথম মক্কায় এসে পৌঁছল, সাফয়ান বললেন যে তিনি নবীর কথা মাথায় রাখেন নি। কিন্তু যখন নবী মুহাম্মাদকে যখন প্রশ্ন করা হল, "সাফয়ান ইবনে উমাইয়ার কি অবস্থা?" তিনি উত্তর দিলেন: "ওইতো সে ওখানে, হিজরে বসে আছে, এবং আমি তাঁর বাবা এবং ভাইকে নিহত হতে দেখেছি!"[১২]

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, সাফওয়ান তার আত্মীয় উমাইর ইবনে ওয়াহাবকে সাথে নিয়ে মুহাম্মাদকে হত্যা করার চক্রান্ত করলেন। উমাইর তার ধারালো বিষমাখা তরবারি নিয়ে মদিনায় গেলে সাফয়ান উমাইরের সকল দেনা পরিশোধ করে দিলেন এবং তার পরিবারের দেখভাল করতে লাগলেন। সাফয়ান কুরাইশদের কথা দিলেন যে তারা খুব শিগ্রই মদিনা থেকে খুশির খবর শুনতে পাবে। কিন্তু তার পরিকল্পনা বিফল হল, কারণ মসজিদের দুয়ারে, মুসলিমগণ উমাইরকে চিনে ফেলল এবং তাকে মুহাম্মাদের কাছে নিয়ে আসলো, যিনি ইতোমধ্যেই এই পরিকল্পনার আদ্যোপান্ত জেনে গিয়েছিলেন। উমাইর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইসলাম প্রচার করার উদ্দেশ্যে এবং মক্কাবাসীর ধর্মে ঝামেলা সৃষ্টি করতে মক্কায় যান। সাফওয়ান শপথ করেন যে, তিনি আর কখনোই উমাইরের সাথে কথা বলবেন না। উমাইর তার ইসলাম প্রচারের বিরোধীদের কঠোর ছিলেন যেন তার মাধ্যমে অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।[১৩][১৪]

নভেম্বর বা মতান্তরে ডিসেম্বরে, সাফওয়ান এবং আবু সুফিয়ান ১০০০০০ দিহরাম সমমূল্যের রুপার ফুলদানী বহনকারী একটি বনিক-কাফেলা নিয়ে ইরাক অভিমুখে যাত্রা করেন। যায়েদ ইবনে হারিসা উক্ত কাফেলায় আক্রমণ করেন এবং যুদ্ধে জয় লাভ করেন। এর গনিমত হিসেবে সকল রৌপ্যও আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বন্টন করে নেন, কিন্তু সে যাত্রায় কুরাইশগণ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।[১৫]

উহুদের যুদ্ধ সম্পাদনা

এরপর সাফওয়ান আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাবিয়া এবং ইকরিমা ইবনে আবি জাহালের সাথে সলা-পরামর্শ করলেন। তারা তাদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করলেন যাদের পিতা, পুত্র এবং ভাই বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছে, এবং তারা আবু সুফিয়ানসহ অন্যান্য কাফেলাবাহী বনিকদের সাথে আলোচনা করলেন,, এবং বললেন,"'হে কুরাইশের লোকেরা, মুহাম্মাদ তোমাদের সাথে বেঠিক আচরণ করেছে এবং তোমাদের শ্রেষ্ঠ পুরুষদের হত্যা করেছে, তাই তাদের সাথে লড়াই করার জন্য এই অর্থ দিয়ে আমাদের সাহায্য কর, জেনো আমরা যাদেরকে হারিয়েছি তাদের জন্য প্রতিশোধ আদায়ের আশা করতে পারি।'"[১৬] সাফওয়ান বনু কিনানা গোত্রকে কুরাইশদের সাথে মিছিলে অংশ নিতে আহবান করার জন্য কবি আবু আযযাকে ভাড়া করলেন।[১৬][১৭] ৬২৫ সালে উক্ত ঘটনায় কুরাইশগণ মুহাম্মাদের বিপক্ষে লড়াই করার জন্য পরস্পর একত্রিত হলেন যা সে সময়ে উহুদের যুদ্ধের জন্ম দেয়।[১৬]

বহু কুরাইশ সেনাপ্রধান সেনাবাহিনীকে আমোদিত করার জন্য মহিলাদেরকে নিয়ে আসলেন: সাফওয়ান তার থাকাফি স্ত্রী বারযা বিনতে মাসুদকে আনলেন।[৫][১৮] যুদ্ধ চলাকালে তিনি আবু বকরের শ্বশুর আহত খারিজা ইবনে জায়িদকে হত্যা করেন এবং তারদেহ ক্ষতবিক্ষত করেন কাড়ন বদরের যুদ্ধে তিনি সাফওয়ানের পিতাকে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি আওস ইবনে আরকাম এবং ইবনে কাওয়ালকেও হত্যা করলেন।[১৯] যুদ্ধের পর, সাফওয়ান কুরাইশদেরেকে বুঝিয়ে মদিনা আক্রমণ থেকে বিরত করলেন; তিনি বললেন যে এখন তারা সকলেই কোনকিছু অর্জন করার পক্ষে অত্যন্ত ক্লান্ত,আর এর পেছনে কোন যুক্তিও নেই , কারণ তারা ইতোমধ্যেই যুদ্ধ জিতে গেছে।[২০]

৬২৫ সালের আগস্ট মাসে আদল এবং আল-কারার লোকজন তিনজন মুসলিমকে মক্কায় নিয়ে আসে যাদেরকে তারা বন্দী করেছিল। সাফওয়ান তাদের মধ্যে একজন, যায়েদ ইবনে আল-দাসিন্নাকে নিয়ে আসেন, যেন তিনি একে হত্যা করে বদর যুদ্ধে তার পিতাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারেন।[২১] তিনি একে অভয়ারণ্যের বাইরে হত্যা করার জন্য তানিমে প্রেরণ করলেন। আবু সুফিয়ান তাকে প্রশ্ন করলেন, "তুমি কি চাওনা, যায়েদ, তোমার স্থানে এর বদলে মুহাম্মাদকে হত্যা করা হতো এবং তুমি তোমার ঘরে তোমার পরিবারের সাথে অবস্থান করতে?" যায়েদ উত্তরে বললেন, "আমি এতটুকুও চাইনা যে মুহাম্মাদের শরীরে একটা কাঁটাও ফুটুক, এমনকি যদি তা আমাকে আমার বাড়িতে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যায় তবুও!" সাফওয়ানের ক্রীতদাস নিস্তাস যায়েদকে হত্যা করলে আবু সুফিয়ান মন্তব্য করেন, "আমি এতটা পরিপূর্ণভাবে কাওকে ভালোবাসতে দেখিনি যতটা মুহাম্মাদের অনুসারীরা মুহাম্মাদকে ভালোবাসে।"[২২][২৩]

খন্দকের যুদ্ধ সম্পাদনা

সাফওয়ান খন্দকের যুদ্ধে আবু সুফিয়ানকে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন।[২৪]

৬২৭ খ্রিস্থাব্দের মাঝামাঝি সাফওয়ানের অনেক দামী অর্থমূল্যের বিপুল পরিমাণ রুপা বহনকারী একটি বনিক কাফেলা সিরিয়া থেকে ফেরত আসছিল। উক্ত কাফেলাটিকে জায়েদ ইবনে হারিসা ১৭০ জন সওয়ারীকে সাথে নিয়ে আল-আস নামক স্থানে আটক করেন এবং গনিমত হিসেবে রুপাগুলো গ্রহন করে বহনকারী লোকদেরকে বন্দী করেন।[২৫]

হুদাইবিয়ার সন্ধি সম্পাদনা

৬২৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে কুরাইশরা যখন জানতে পারল যে, ১৬০০ জন মুসলিম মক্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন সাফওয়ান ছিলেন সেই তিনজন নেতাদের মধ্যে একজন যারা এই পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছিলেন। তিনি ২০০ ঘোড়ায় সওয়ার সৈন্যসহ ইকরিমা ইবনে আবি জেহেলকে প্রতিবেশী গোত্রগুলোর কাছ থেকে সাহায্য আদায়ের জন্য পাঠালেন।[২৬] যখন তাদের মিত্রবাহিনী মক্কায় পৌঁছুল, সাফওয়ানের ঘর ছিল সেই চারটি বাড়ির মধ্যে একটি যেখান থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো।[২৭] এবং যখন উসমান মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন তাকে অভিবাদন জানানো দলের মধ্যে সাফওয়ানও উপস্থিত ছিলেন।[২৮] এই ঘটনাই পরবর্তীতে হুদাইবিয়ার সন্ধির দিকে পরিচালিত করে।

তার অল্প কিছুদিন পরেই, মুহাম্মাদ মুসলিমদেরকে নির্দেশ দিলেন যে তারা যেন সেই সকল স্ত্রীকে তালাক দেয় যারা এখনো মুশরিক অর্থাৎ মূর্তিপূজারী হয়ে আছে। উক্ত নির্দেশে ওমর তার এক স্ত্রী উম্মে কুলসুম বিনতে যারওয়ালকে তালাক দিলেন। উক্ত মহিলা মক্কায় ফিরে গেলে সাফওয়ান তাকে বিয়ে করেন।[২৯]

এর পরপরই, মুহাম্মাদ খায়বার অবরোধ করেন। উক্ত যুদ্ধে কারা জিতবে তার উপরে কুরাইশের বয়োজ্যেষ্ঠগণ বাজি ধরলেন: সাফওয়ান এই বলে পাঁচটি উট বাজি ধরলেন যে মুহাম্মাদ হারবে, এবং তার বাজিতে আবু সুফিয়ানের সংশয় দেখে ক্ষেপে গেলেন।[৩০] এরপর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং সাফওয়ানকে মদিনার পথে তার সঙ্গ দিতে অনুরোধ করলেন এই কারণে যে, "আমরাই মূল আবর্জনা। মুহাম্মাদ আরব এবং অনারবদের উপর বিজয়ী।" সাফওয়ান প্রবল আপত্তির সঙ্গে উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবংবললেন, "এমনকি আমি যদি কুরাইশ বংশের শেষ জীবিত ব্যক্তিও হতাম, তবুও আমি তাকে অনুসরণ করতাম না!"[৩১] চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ৬২৯ সালের মার্চ মাসে মুহাম্মাদ উমরাহ করতে মক্কায় পৌঁছুলেন। যখন বিলাল কাবাঘরে নামাজের জন্য আযান দিচ্ছিলেন, তখন সাফওয়ান উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, "ঈশ্বরের প্রশংসা, কারণ তিনি আমার বাবাকে এসব দেখার আগেই মৃত্যু দিয়েছেন!"[৩২]

ফারওয়া ইবনে হুবায়রা আল-কুরায়শি এবং নওফাল ইবনে মুয়াবিয়া আল-দিলি নামক বেদুঈন সর্দারগণ তাদের মক্কা সফরের সময় সাফওয়ান এবং অন্যান্য কুরাইশ বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে দেখা করলেন। তারা কুরাইশদের পরামর্শ দিলেন যে, কুরাইশগণ চাইলে বেদুঈনদের সাথে নিয়ে মক্কাতেই মুহাম্মাদকে আক্রমণ করতে পারে। তারা মক্কায় মুহাম্মাদের মিত্র বনু খুঁজা'আ গোত্রকে প্রথমে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তাব জানালো। কিন্তু সাফওয়ান এবং আরও অনেকে বললেন যে তারা চুক্তি ভঙ্গ করার দুঃসাহস দেখাবেন না, তাই তারা উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন।[৩৩] ৬২৯ সালে বনু বকর গোত্রের দিল নামক উপগোত্র খুজাআ গোত্রের উপর প্রতিশোধ নেয়। সাফওয়ান এবং তার গোলামেরা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেছিলেন।[৩৪] যেহেতু বনু বকর ছিল কুরাইশের মিত্র এবং বনু খুজাআ ছিল মদিনার মুসলিমদের মিত্র,[৩৫] তাই এই ঘটনায় হুদায়বিয়ার চুক্তি ভঙ্গ হয়, যা ছিল মক্কা বিজয়ের একটি অন্যতম প্রভাবক।[৩৬]

ইসলামে ধর্মান্তর সম্পাদনা

৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে যখন মুসলিম সেনাবাহিনী মক্কা অবরোধ করে, তখন সাফওয়ান চূড়ান্তভাবে মুহাম্মাদকে প্রতিরোধ করার জন্য আল-খান্দামায় ইক্রিমা ইবনে আবি জেহেলের সাথে যোগ দেন। সেখানে তারা খালিদ বিন ওয়ালিদের মুখোমুখি হন, যিনি তাদের সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।[৩৭][৩৮]

সাফওয়ানের স্ত্রী ফাখিতা ইসলাম গ্রহণ করেন, কিন্তু সাফওয়ান ইয়েমেন সমুদ্র যাত্রা করার উদ্দেশ্যে জেদ্দায় পালিয়ে যান। তার জাহাজ ছেড়ে দেয়ার পূর্বে, উমাইর ইবনে ওয়াহাব তাকে যেতে বাধা দেন, তিনি সাফওয়ানকে মুহাম্মাদের পাগড়ি দেখান এবং বলেন, "সাফওয়ান, নিজেকে ধ্বংস করো না! আমি তোমার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হিসেবে আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে একটি প্রমাণ নিয়ে এসেছি।" প্রথমেই সাফওয়ান তাকে চলে যেতে বলেন, কিন্তু তবুও উমাইর হাল ছাড়লেন না, বললেন, "তোমার চাচাতো ভাই পুরুষদের মাঝে সবচেয়ে চমৎকার, ন্যায়পরায়ণ এবং ক্ষমাশীল। তাঁর শক্তি তোমারই শক্তি, তাঁর সম্মান তো তোমারই সম্মান, এবং তাঁর অধিপত্য তো তোমারই অধিপত্য।" সাফওয়ান উত্তরে বললেন যে তিনি ভয় করেন মুহাম্মাদ তাকে মেরে ফেলবেন, কিন্তু উমাইর পুনরায় উত্তর দিলেন যে মুহাম্মাদ তাকে মেরে ফেলার চিন্তাও করবেন না কারণ তিনি অত্যন্ত উদার এবং ক্ষমাশীল, এবং অবশেষে সাফওয়ান উমাইরের সাথে মক্কায় ফিরে যেতে সম্মত হলেন। মুহাম্মাদ নিশ্চিত করলেন যে তিনি সত্যিই সাফওয়ানের প্রতি নিরাপদ আচরণ মঞ্জুর করেছেন। সাফওয়ান তার সিদ্ধান্ত বিবেচনা করার জন্য দুই মাসের সময় চাইলে মুহাম্মাদ তাকে চার মাসের সময় দিলেন[৩৯][৪০] এবং মক্কার সকল মূর্তিপূজারীকেও তিনি একই পরিমাণ সময়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।[৪১]

কয়েক সপ্তাহ পর, সাফওয়ান মুহাম্মাদের কাছ থেকে তার অস্ত্র ও বর্ম ধার চেয়ে একটি বার্তা পেলেন, যেন তারা আগামীকালের যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন। সাফওয়ান জিজ্ঞাসা করলেন যে মুহাম্মাদ কি অস্ত্র হস্তান্তরের জন্য তার উপর চাপ প্রয়োগ করছেন কিনা; কিন্তু মুহাম্মাদ উতরে বললেন যে এটি শুধুমাত্র একটি বন্ধুসুলভ আবেদন মাত্র এবং তার সরঞ্জাম আবার পুনরায় ফেরত দেয়া হবে। সাফয়ান জানালেন যে এতে তার কোন আপত্তি নেই। তিনি হুনাইনের যুদ্ধে হাওজাইনে মুহাম্মাদের আক্রমণের জন্য একশত বর্মবাহী গাড়ি এবং অন্যান্য অস্ত্র পরিবহনের ব্যবস্থা করলেন।[৪২][৪৩][৪৪] হুনাইনের যুদ্ধে সাফওয়ান মুহাম্মাদের জন্য যুদ্ধ করেন, যেখানে তিনি তার ভাইকে বলেছিলেন, "হাওজাইনের কোন শাসকের চেয়ে কুরাইশের কোন শাসকের দ্বারা শাসিত হওয়া আমার জন্য ঢের ভাল।"[৪৫][৪৬] তাইফ অবরোধেও তিনি অংশ নেন।[৪৭]

তার অল্পদিন পরেই সাফয়ান স্বল্পসংখ্যক মর্যাদাপ্রাপ্ত লোকের অন্তর্ভুক্ত হন যাদেরকে মুহাম্মাদ শান্ত করেতে ও মন জয় করতে উপহার দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সাফওয়ান একশত উট লাভ করেছিলেন।[৪৮][৪৯] সাফওয়ান ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর, মুহাম্মাদ তার কাছে তার স্ত্রী ফাখিতাকে ফিরিয়ে দেন।[৬][৫০]

পরবর্তী জীবন সম্পাদনা

বলা হয়ে থাকে যে, সাফওয়ান সর্বদাই একজন অনুগত মুসলিম ছিলেন[৯] এবং তিনি মুহাম্মাদের অনেকগুলো হাদিস বর্ণনা করেন। উদাহরণস্বরূপ মুহাম্মাদ ইবনে আল-ফাদি ইবনে আল-আব্বাসের পরিবার কর্তৃক আয়োজিত নিমন্ত্রণের একটি ঘটনা রয়েছে। যখন খাবার পরিবেশন করা হল, তিনি বললেন, "তোমরা সম্মুখ দাঁতের মাধ্যমে মাংস খাও, এর কারণ হল, আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, 'তোমরা সমনের দাঁতের সাহায্যে মাংস খাও, কারণ এটি অধিক মুখরোচক, অধিক স্বাস্থ্যকর এবং অধিক উপভোগ্য।'"[৫১]

অধিকন্তু, তিনি কখনোই কোন মুসলিম সেনা অভিযানে অংশ নেন নি। এবং কখনো মদিনাতেও যান নি, বরং ৬৬১ সালে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মক্কাতেই বসবাস করেন।[৯]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Muhammad ibn Jarir al-Tabari. Tarikh al-Rusul wa'l-Muluk, vol. 39. Translated by Landau-Tasseron, E. (1998). Biographies of the Prophet's Companions and Their Successors, p. 81. Albany: State University of New York Press.
  2. Muhammad ibn Umar al-Waqidi. Kitab al-Maghazi. Translated by Faizer, R. (2011). The Life of Muhammad, p. 43. London & New York: Routledge.
  3. Muhammad ibn Ishaq. Sirat Rasul Allah. Translated by Guillaume, A. (1955). The Life of Muhammad, p. 307. Oxford: Oxford University Press.
  4. Ibn Ishaq/Guillaume, p. 569.
  5. Ibn Ishaq/Guillaume p. 371.
  6. Ibn Ishaq/Guillaume pp. 555-556.
  7. Muhammad ibn Jarir al-Tabari. Tarikh al-Rusul wa'l-Muluk vol. 8. Translated by Fishbein, M. (1998). The Victory of Islam, p. 92. Albany: State University of New York Press.
  8. Muhammad ibn Sa'd. Kitab al-Tabaqat al-Kabir vol. 8. Translated by Bewley, A. (1995). The Women of Madina, p. 169. London: Ta-Ha Publishers.
  9. Tabari/Landau-Tasseron vol. 39 p. 81.
  10. Ibn Ishaq/Guillaume pp. 133, 143, 149, 162, 165, 181, 191.
  11. Ibn Ishaq/Guillaume p. 221.
  12. Ibn Ishaq/Guillaume p. 309.
  13. Ibn Ishaq/Guillaume pp. 318-319.
  14. Muhammad ibn Jarir al-Tabari. Tarikh al-Rusul wa'l-Muluk, vol. 7. Translated by McDonald, M. V., & annotated by Watt, W. M. (1987). The Foundation of the Community, pp. 78-80. Albany: State University of New York Press.
  15. Tabari/McDonald/Watt vol. 7 p. 99.
  16. Ibn Ishaq/Guillaume p. 370.
  17. Tabari/McDonald/Watt vol. 7 p. 106.
  18. Tabari/McDonald/Watt vol. 7 p. 107.
  19. Waqidi/Faizer pp. 126-127.
  20. Waqidi/Faizer pp. 144, 165.
  21. Tabari/McDonald/Watt vol. 7 pp. 143-144.
  22. Ibn Ishaq/Guillaume pp. 426-428.
  23. Tabari/McDonald/Watt vol. 7 pp. 147.
  24. Waqidi/Faizer p. 217.
  25. Waqidi/Faizer p. 271.
  26. Waqidi/Faizer pp. 284-285.
  27. Waqidi/Faizer p. 286.
  28. Waqidi/Faizer p. 295.
  29. Tabari/Fishbein vol. 8 p. 92.
  30. Waqidi/Faizer p. 345.
  31. Waqidi/Faizer p. 368.
  32. Waqidi/Faizer p. 363.
  33. Waqidi/Faizer pp. 359-360.
  34. Tabari/Fishbein vol. 8 pp. 161-162.
  35. Ibn Ishaq/Guillaume p. 504
  36. Ibn Ishaq/Guillaume p. 542.
  37. Ibn Ishaq/Guillaume pp. 549-550.
  38. Tabari/Fishbein vol. 8 pp. 177-178.
  39. Ibn Ishaq/Guillaume p. 555.
  40. Tabari/Fishbein vol. 8 pp. 184-185.
  41. Quran 9:1-6.
  42. Ibn Ishaq/Guillaume p. 567.
  43. Muhammad ibn Jarir al-Tabari. Tarikh al-Rusul wa'l-Muluk vol. 9. Translated by Poonawala, I. K. (1990). The Last Years of the Prophet, p. 7. Albany: State University of New York Press.
  44. Malik ibn Anas, Al-Muwatta 28:44.
  45. Ibn Ishaq/Guillaume p. 569.
  46. Tabari/Poonawala vol. 9 p. 10.
  47. Muwatta 28:44.
  48. Ibn Ishaq/Guillaume p. 594.
  49. Tabari/Poonawala vol. 9 p. 32.
  50. Tabari/Fishbein pp. 184-185.
  51. Tabari/Landau-Tasseron vol. 39 p. 118.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা