সমতল ছবির পর্দা (ইংরেজি: Flat-panel displays) এক ধরনের ইলেকট্রনিক প্রদর্শন প্রযুক্তি যাতে একটি পাতলা ও হালকা চতুর্ভুজাকৃতির পর্দা বহু ধরনের বিনোদনধর্মী বা ভোক্তা ইলেকট্রনিক যন্ত্র, ব্যক্তিগত কম্পিউটার, মোবাইল যন্ত্র, চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক যন্ত্র, এবং পরিবহন ও শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয় যাতে দর্শকেরা এটিতে স্থিরচিত্র, চলমান চিত্র (ভিডিও), পাঠ্যবস্তু বা অন্যান্য দর্শনযোগ্য বিষয়বস্তু দেখতে পারে।

এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেস গাড়ি ফ্ল্যাট প্যানেল টিভি ডিসপ্লেইং স্টেশন
অ্যাপল আইআইসি ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে মডিউল

এই পর্দাগুলি অতীতের ঐতিহ্যবাহী ক্যাথোড রশ্মি নল (সিআরটি) প্রযুক্তিভিত্তিক টেলিভিশন বা চলমান চিত্র পর্দাগুলির চেয়ে অনেক বেশি হালকা ও পাতলা হয়ে থাকে। সাধারণত এগুলির পুরুত্ব ১০ সেন্টিমিটার (৩.৯ ইঞ্চি)-এর বেশি হয় না। সমতল ছবির পর্দাগুলিকে দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: উদ্বায়ী ও স্থিতিশীল। উদ্বায়ী ছবির পর্দাগুলিতে পিক্সেল বা চিত্রকোষগুলিকে তাদের অবস্থা ধরে রাখার জন্য এগুলিকে পর্যায়ক্রমে বারংবার ইলেকট্রনিক উপায়ে হালনাগাদ করতে হয়, যেমন তরল-স্ফটিক প্রদর্শক-পর্দা বা এলসিডি। উদ্বায়ী ছবির পর্দাগুলি কেবল তখনই চিত্র প্রদর্শন করতে পারে, যখন এটি কোনও তড়িৎকোষ বা পরিবর্তী তড়িৎপ্রবাহের মূল উৎস থেকে শক্তির সরবরাহ পায়। অন্যদিকে স্থিতিশীল সমতল ছবির পর্দাগুলি দ্বৈতস্থিতিশীল বর্ণ-অবস্থাবিশিষ্ট পদার্থের উপর নির্ভর করে এবং এগুলি শক্তি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও পর্দায় পাঠ্যবস্তু বা চিত্র ধরে রাখতে পারে। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে সমতল ছবির পর্দাগুলি পূর্বতন ক্যাথোড রশ্মি নল প্রদর্শক-পর্দাগুলিকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করেছে। বহনযোগ্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, পকেটে বহনযোগ্য ভিডিও গেম, ইত্যাদিতে প্রায় সম্পূর্ণরূপে এই পর্দাগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে, কেননা এগুলি হাল্কা ও পাতলা বলে সমগ্র যন্ত্রের বহনযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।

সমতল ছবির পর্দাগুলি ১৯৬৪ সাল থেকেই গবেষণা পরীক্ষাগারে উপস্থিত ছিল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর আগে এগুলি বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় প্রদর্শক-পর্দায় পরিণত হয়নি। তার আগে ১৯৫০-এর দশকের শুরু থেকে ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত টেলিভিশন ও মনিটর বা প্রদর্শকযন্ত্রে ভারী, বিশালাকারের ক্যাথোড রশ্মি নল প্রযুক্তির পর্দা ব্যবহার করা হত।

২০১০-এর দশকের অধিকাংশ সমতল ছবির পর্দায় তরল-স্ফটিক (এলসিডি) অথবা আলোক নিঃসারী ডায়োড (এলইডি) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ তরল-স্ফটিক পর্দায় পশ্চাদাগত আলোক-আপতন প্রযুক্তি থাকে যেগুলিকে রঙের ছাকনির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করিয়ে রঙ প্রদর্শন করা হয়। সমতল ছবির পর্দাগুলি অতীত যুগের সাধারণ ভোক্তার জন্য প্রস্তুত টেলিভিশনগুলির তুলনায় উন্নততর রৈখিকতা ও উচ্চতর রেজোলিউশন বা স্পষ্টতা প্রদান করে। সিআরটি টেলিভিশনের সর্বোচ্চ সম্ভব রেজুলিউশন বা স্পষ্টতার মাত্রা ছিল ১০৮০ আই। এর বিপরীতে অনেক সমতল ছবির পর্দা ১০৮০পি এমনকি ৪কে রেজোলিউশন নামক স্পষ্টতা-মাত্রায় চিত্র প্রদর্শনে সক্ষম।

২০১০-এর দশকে এসে সমতল ছবির পর্দাগুলিতে স্পর্শসংবেদিতাকে একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে যোগ করা হয়েছে, যা অনেক মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কম্পিউটারের পর্দায় ব্যবহার করা হচ্ছে। স্পর্শসংবেদী পর্দাগুলিতে ব্যবহারকারীরা পর্দায় কোন সংবেদী অংশকে স্পর্শ করে বিভিন্ন কাজ সমাধা করতে পারেন, যেমন টাইপিং, হাতে লেখা, পর্দার এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে কিছু সরানো, অবাস্তব বোতাম টেপা, ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা