সন্ন্যাস (জৈনধর্ম)

জৈনধর্মে সন্ন্যাস বলতে সন্ন্যাসীসন্ন্যাসিনীদের সংঘবদ্ধ সন্ন্যাসজীবন বোঝায়। অতীতে জৈন সন্ন্যাসীদের ‘নির্গ্রন্থ’ (‘বন্ধনহীন’) নামে অভিহিত করা হত। জৈনধর্মের প্রধান দুই সম্প্রদায়ে (দিগম্বরশ্বেতাম্বর) সন্ন্যাস অনুশীলনের পদ্ধতিগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে দুই সম্প্রদায়ের সন্ন্যাস সংক্রান্ত আদর্শ একই রকমের।

পরিভাষা সম্পাদনা

দিগম্বর সম্প্রদায়ে সন্ন্যাসীদের ‘মুণি’ ও সন্ন্যাসিনীদের ‘আর্যিকা’ বলা হয়। দিগম্বর সন্ন্যাসীদের ‘নির্গ্রন্থ’ও (‘বন্ধনহীন’) বলা হয়।[১] বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতে সর্বশেষ তীর্থঙ্কর মহাবীরকে ‘নিগন্থ জ্ঞাতপুত্ত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘নিগন্থ’ শব্দের অর্থ ‘বন্ধনবিহীন’; ‘জ্ঞাতপুত্ত’ (নাতসের পুত্র) শব্দটি তাঁর বংশ ‘জ্ঞাত’ বা ‘নয়ে’র (প্রাকৃত) দ্যোতক।[২] শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ে সন্ন্যাসিনীদের ‘সাধ্বী’ বলা হয়।[৩]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
বিদ্যাসাগর, একজন বিশিষ্ট জৈন সন্ন্যাসী

ইতিহাসবিদগণ মনে করেন যে, খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৭ অব্দের পূর্বে (মহাবীরের মোক্ষ লাভের ১৬০ বছর পর) একটি ঐক্যবদ্ধ জৈন সংঘ (সম্প্রদায়) বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীকালে সেই সংঘ দুটি পৃথক সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যথা: দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর।[৪]

জৈন কালচক্রের বর্তমান ‘অবসর্পিণী’ যুগের ‘দুঃশমা’ পর্যায়ের সর্বাধিক সম্মানিত আচার্য হলেন কুন্দকুন্দ[৫]

ব্রত সম্পাদনা

 
জৈন সন্ন্যাসীদের পাঁচটি মহাব্রত

মহাবীরের শিক্ষা থেকে পাঁচটি ‘মহাব্রত’ জৈন সন্ন্যাসীরা পালন করেন। গৃহস্থ জৈনদেরও এই ব্রতগুলি পালন করতে হয়। তবে সন্ন্যাসীদের ক্ষেত্রে এই ব্রত করার বাধ্যবাধ্যকতা আরও কঠোর।[৬]

দিগম্বর সন্ন্যাসীরা ২৮টি ব্রত পালন করেন। এগুলি হল: পাঁচটি ‘মহাব্রত’, পাঁচটি ‘সমিতি’ (বিধি), ‘পঞ্চেন্দ্রিয় নিরোধ’ (ইন্দ্রিয়ের পঞ্চমুখী সংযম), ছয়টি ‘ষডাবশ্যক’ (আবশ্যিক কর্তব্য) ও সাতটি ‘নিয়ম’ (নিষেধাজ্ঞা)।[৭]

শ্রেণি ব্রত অর্থ
মহাব্রত
(মহান ব্রত)[৮][৯]
১. অহিংসা কার্য ও চিন্তার দ্বারা কোনও জীবকে আঘাত না করা
২. সত্য শুধু সত্য কথা বলা ও সৎ কর্ম করা
৩. অস্তেয় অপ্রদত্ত বস্তু গ্রহণ না করা
৪. ব্রহ্মচর্য কার্য, বাক্য ও চিন্তায় ইন্দ্রিয় সংযম
৫. অপরিগ্রহ সংসার পরিত্যাগ
সমিতি
(কার্যের নিয়মাবলি)[১০][১১]
৬. ইর্যা সাবধানে সামনে চার হাত পরিমিত স্থান দেখে হাঁটা
৭. ভাষা কারও নিন্দা না করা বা অশুভ শব্দ উচ্চারণ না করা
8. এষণা শ্রবকের (গৃহস্থ) প্রদত্ত খাদ্য ৪৬টি দোষ থেকে মুক্ত হলে তা গ্রহণ করা
9. অদান-নিশেপ সন্ন্যাসীর সম্পত্তি সাবধানে ব্যবহার করা
১০. প্রতিস্থাপন শরীরের বর্জ্য পদার্থ এমন স্থানে নিক্ষেপ করা যেখানে কোনও জীব নেই
পঞ্চেন্দ্রিয়নিরোধ ১১–১৫. ইন্দ্রিয় সংযম ‘স্পর্শন’ (স্পর্শ), ‘রসনা’ (স্বাদ), ‘ঘ্রাণ’ (গন্ধ), ‘চক্ষু’ (দৃষ্টি’ ও ‘শ্রোত্র’ (শ্রবণ) – এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের প্রতি আসক্তি বর্জন করা।[১২]
আবশ্যিক কর্তব্য[১৩][১৪] ১৬. সামায়িক প্রত্যেক জীবের প্রতি শান্ত মনোভাব অর্জনের জন্য ধ্যান
১৭. স্তুতি তীর্থঙ্করদের পূজা
১৮. বন্দন সিদ্ধ, অরিহন্ত ও আচার্যদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন
১৯. প্রতিক্রমণ অনুশোচনা, পূর্ব কর্মের (ভাল বা মন্দ) থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য
২০. প্র্ত্যাখ্যান ত্যাগ
২১. কায়োৎসর্গ দেহের প্রতি আসক্তি বর্জন, আত্মধ্যান
নিয়ম
(বিধিনিষেধ)[১৫]
২২. অদন্তধাবন দাঁত পরিষ্কার করার জন্য গুঁড়ো মাজন ব্যবহার না করা
২৩. ভূশয়ন শক্ত মাটিতে শোয়া
২৪. অস্নান স্নান না করা।[১২]
২৫. স্তিথি-ভোজন দাঁড়িয়ে খাওয়া
২৬. একভুক্তি দিনে একবার মাত্র খাওয়া[১৬]
২৭. কেশ-লঞ্ছ হাত দিয়ে মাথার চুল ও দাড়ি ছেঁড়া[১২]
২৮. নগ্নতা পোশাক ত্যাগ করা।[১২]

দীক্ষা সম্পাদনা

শ্বেতাম্বর দীক্ষায় একটি শোভাযাত্রা আয়োজিত হয়। এই শোভাযাত্রায় দীক্ষার্থী প্রতীকী ভাবে তাঁর পার্থিব সম্পত্তি পরিত্যাগ করেন এবং দান করেন। এর পরে বা আগে আরেকটি অনুষ্ঠান পালিত হয়। এই অনুষ্ঠানে দীক্ষার্থী একটি ‘ওঘো’ (পশমের তৈরি একটি ছোটো ঝাড়ু) তাঁর শিক্ষকের থেকে প্রাপ্ত হন। এটি সন্ন্যাসী সংঘে তাঁকে স্বাগত অভ্যর্থনা জানানোর প্রতীক।[১৭] এরপর দীক্ষার্থী সন্ন্যাসীর পোশাক পরিধান করেন এবং হাত দিয়ে চুল ছিঁড়ে ফেলেন। পরবর্তী অনুষ্ঠানগুলির মাধ্যমে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাসী সংঘে দীক্ষিত করা হয়। শ্বেতাম্বর তেরাপন্থ সম্প্রদায়ের নিয়ম হল, দীক্ষার্থীকে সন্ন্যাস দীক্ষা লাভের আগে নিজের পিতামাতার লিখিত অনুমতি নিতে হয়।[১৮]

আচরণবিধি সম্পাদনা

 
ধ্যানরতা জৈন সন্ন্যাসিনী

জৈন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের আচারণবিধি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে সংস্কৃত আকারে বা সরাসরি গৃহীত হয়েছে। কারণ, এই ক্ষেত্রে সঠিক সহায়কের অভাব রয়েছে। প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থগুলিতে প্রায়শই দেখা যায়, সন্ন্যাসীদের সম্পূর্ণ নির্জনবাসের বিধান দেওয়া হয়েছে। সেখানে আত্মা ও অনাত্মার বিচ্ছেদকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও মহাবীরের মৃত্যুর অব্যবহিত পর থেকেই জৈন সন্ন্যাসীরা গোষ্ঠীতে নিজেদের সংগঠিত করতে শুরু করেছিলেন।[৩] দিগম্বর সম্প্রদায়ে সম্পূর্ণ নির্জনবাসী সন্ন্যাসীদের কিছু দৃষ্টান্ত লক্ষিত হয়।[১৯]

জৈন সন্ন্যাসীরা সামাজিক ও সাংসারিক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকেন। তাঁরা শুধু আত্মশুদ্ধি ও আত্মোপলব্ধির সহায়ক কাজগুলিই সম্পাদনা করেন। তাঁর দৈনিক পূজা ও তপস্যার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক নির্দেশিকা অনুসরণ করে চলেন।[১৭]

সন্ন্যাসীদের দৈনিক কার্যাবলি প্রধানত তিনটি আদর্শগত ধারণার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করা আছে। এগুলি হল: পাঁচটি ‘মহাব্রত’, আটটি ‘প্রবচন-মাত্রক’ (মূল মতবাদ) ও ছয়টি ‘আবশ্যক’ (আবশ্যিক কার্য)। প্রথম দুটি হল বিধিনিষেধের তালিকা। তৃতীয়টিতে একজন সন্ন্যাসী প্রতিদিন কী করতে উদ্বুদ্ধ হবেন, তার একটি কাঠামো স্থির করে দেওয়া হয়েছে।[২০]

সন্ন্যাসীদের বাড়ি বা সম্পত্তি থাকে না।[৩] তাঁরা তপস্যা করেন এবং টেলিফোন, বিদ্যুৎ প্রভৃতি পরিষেবা গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন।[২১] সন্ন্যাসীরা ধ্যান, আত্ম-জ্ঞান অনুসন্ধান ও আত্ম-শৃঙ্খলা অর্জনের মতো কাজে নিযুক্ত থাকেন।[২২]

শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের ‘যতি’ ও দিগম্বর তেরাপন্থ সম্প্রদায়ের ‘ভট্টারক’ সন্ন্যাসীরা পরিব্রাজকতা করেন না। তাঁরা সাধারণত মন্দিরে বাস করেন এবং দৈনিক ক্রিয়াকাণ্ড অনুষ্ঠান করেন।[৩]

সন্ন্যাসীরা সূর্যোদয়ের আগে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভোর ৫টায়) ঘুম থেকে ওঠেন। তবে কেউ কেউ রাত ২টোতেও ওঠেন। তাঁরা ‘উৎসর্গ-সমিতি’ অনুষ্ঠান করেন। অর্থাৎ, এমন স্থানে মলত্যাগ করেন, যেখান মলত্যাগ করলে কোনও জীব আহত হবে না। এছাড়া তাঁরা একটি খালি পাত্রে মুত্রত্যাগ করেন এবং শুকনো মাটির গর্তে সেই পাত্রটি খালি করেন।[২০]

পদমর্যাদা ক্রম সম্পাদনা

 
আচার্য কালক (উপরে সাদা পোশাক পরে)

দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ে সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসীদের পদমর্যাদা ক্রমটি নিম্নরূপ:[২৩]

পদমর্যাদা সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনী
আচার্য গণিনি আর্যিকা প্রমুখা
এলাচারি গণিনি আর্যিকা
উপাধ্যায় আর্যিকা
মুণি মাতাজি
ক্ষুল্লক ক্ষুল্লিকা
ব্রহ্মচারী ব্রহ্মচারিণী
শ্রবক শ্রাবিকা

দিগম্বর সম্প্রদায়ে একজন ‘ক্ষুল্লক’ (যিনি দুটি বস্ত্রখণ্ড পরিধান করেন) পরবর্তীকালে ‘আইলক’ স্তরের (যিনি একটি মাত্র বস্ত্রখণ্ড পরিধান করেন) মাধ্যমে ‘মুণি’ (সাধু) স্তরে উন্নীত হন। শাস্ত্রে বিভিন্ন সময়ে ‘গনি’, ‘পন্ন্যস’ ও ‘প্রবর্তক’ ইত্যাদি পদের উল্লেখ রয়েছে। শ্বেতাম্বর তেরাপন্থ সম্প্রদায়ে কনিষ্ঠ সন্ন্যাসীদের নতুন পদটিকে বলে ‘সমন’।[২৪]

পোশাক ও সম্পত্তি সম্পাদনা

 
অহিংসার তিনটি উপাদান: ‘পিচি’, ‘কমণ্ডলু’ ও শাস্ত্র

দিগম্বর সন্ন্যাসীরা একেবারেই পোশাক পরিধান করেননা।[২৫] আর্যিকারা পাড়বিহীন সাদা সাধারণ শাড়ি পরেন।[৪] সকল দিগম্বর সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীরা তিনটি প্রথাগত দ্রব্য বহন করেন। এগুলি হল: একটি ‘মোর-পিচ্ছি’ (ময়ূরপুচ্ছ), একটি কমণ্ডলু (জলপাত্র) ও শাস্ত্র[২৬]

শ্বেতাম্বর সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীরা সাদা পাড়বিহীন বস্ত্র পরিধান করেন।[৪]

চতুর্মাস সম্পাদনা

বর্ষাকালের চার মাস সময়কালকে চতুর্মাস বলা হয়। এই সময় সন্ন্যাসীরা একটি স্থানে বাস করেন যাতে তাঁরা বর্ষায় বের হওয়া কোনও পোকা বা ছোটো প্রাণীকে ভুলবশত আঘাত না করে ফেলেন। শ্রবকদের পক্ষে এই সময়টি ধর্ম, ধ্যান ও ব্রত (আত্মসংযমের নিয়মাবলি) সংক্রান্ত উপদেশ শুনে নিজেদের বিশ্বাস দৃঢ় করার উপযুক্ত সময়।[২৭]

চতুর্মাসের সময় প্রত্যেক গোষ্ঠীর প্রধান সাধু দৈনিক ‘প্রবচন’ বা ‘ব্যাখ্যান’ (ধর্মোপদেশ) দান করেন। প্রধানত নারী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এই উপদেশ শুনতে আসেন। তবে বিশেষ বিশেষ দিনে অধিকাংশ গৃহস্থই এই উপদেশ শুনতে আসেন। বছরের বাকি আট মাস সাধুরা বিভিন্ন জায়গায় যান। সেই সময় যেখানেই তাঁদের উপদেশ দিতে অনুরোধ করা হয় সেখানেই তাঁরা উপদেশ দেন্ন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও যাত্রাপথে কোনও গ্রাম বা শহরে নতুন এলে সেখানে তাঁরা উপদেশ দেন।[২৮]

মহাবীরের সন্ন্যাস সম্পাদনা

 
মহাবীর, রাজস্থানের শ্রীমহাবীরজি মন্দিরের বিগ্রহ।

কল্পসূত্র গ্রন্থে মহাবীরের সন্ন্যাসের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। এই বিবরণ থেকেই জৈনধর্মে সন্ন্যাসের অধিকাংশ প্রথাগুলি (বিধিনিষেধ সহ) গৃহীত হয়েছে:[২৯]

সম্মানীয় সন্ন্যাসী মহাবীর এক বছর এক মাস বস্ত্র পরিধান করেছিলেন। তারপর থেকে তিনি নগ্নই থাকতেন এবং খালি হাতে ভিক্ষা গ্রহণ করতেন। বারো বছরেরও বেশি সময় সম্মানীয় সন্ন্যাসী মহাবীর নিজের শরীরকে উপেক্ষা করেন। তিনি শরীরের যত্ন নিতেন না। তিনি শান্ত ও নির্লিপ্তভাবে দিব্য শক্তি, মানুষ ও পশুপ্রাণীদের থেকে উদ্ভূত সকল সুখকর ও কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান এবং তা সহ্য করেন।

— কল্পসূত্র ১১৭

এরপর থেকে সম্মানীয় সন্ন্যাসী মহাবীর ছিলেন গৃহহীন। তিনি হাঁটাচলায়, কথা বলায়, ভিক্ষা করায়, (কোনও কিছু) গ্রহণ করায়, তাঁর বহিরাবরণ ও পানপাত্র বহনে, মলমূত্র, নিষ্ঠীবন, শ্লেষ্মা ও শরীরের বর্জ্য পদার্থ ত্যাগে, চিন্তায়, বাক্যে ও কাজকর্মে সাবধানী থাকতেন। তিনি নিজের চিন্তা, বাক্য, কাজকর্ম, ইন্দ্রিয় ও পবিত্রতা রক্ষা করতেন। ক্রোধ, গর্ব, অহংকার ও লোভ পরিত্যাগ করেন। শান্ত, নির্লিপ্ত, আত্ম-সমাহিত, মুক্ত, প্রলোভন-মুক্ত, অহংবোধহীন, সম্পদহীন অবস্থায় তিনি সকল জাগতিক বন্ধন ছিন্ন করেন এবং কোনও জাগতিকতা দ্বারা স্পর্শিত হননি। জল যেমন তাম্রপাত্রে নির্লিপ্ত থাকে বা কাজল যেমন মুক্তামাতৃকাকে স্পর্শ করে না (তেমন পাপ্ত তাঁর চরিত্রে স্থান পায়নি)। তাঁর পথ ছিল তাঁর জীবনের মতো অবারিত। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি কোনও অবলম্বন চাইতেন না। বায়ুর মতো তিনি বাধা কাকে বলে জানতেন না। তাঁর হৃদয় ছিল শরতের (নদী বা পুষ্করিণীর) জলের ন্যায় পবিত্র। পদ্মপত্রের মতো তাঁকেও কোনও কিছু অপবিত্র করতে পারত না। তাঁর ইন্দ্রিয়গুলি ছিল কচ্ছপের ইন্দ্রিয়গুলির মতো সুরক্ষিত। গণ্ডারের শৃঙ্গের ন্যায় তিনি ছিলেন একক ও একাকী। তিনি ছিলেন পাখির মতো মুক্ত। সুন্দর পাখি ভারুন্দলের মতো তিনি হেঁটে চলতেন। তিনি ছিলেন হাতির মতো সাহসী, ষাঁড়ের মতো শক্তিশালী, সিংহের মতো অপ্রতিরোধ্য, মন্দার পর্বতের মতো দৃঢ়, মহাসমুদ্রের মতো গভীর, চাঁদের মতো স্নিগ্ধ, সূর্যের মতো দীপ্তিমান এবং নিখাদ সোনার মতো খাঁটি। পৃথিবীর মতো তিনি সবকিছু শান্তভাবে সহ্য করতেন। প্রজ্বালিত অগ্নির ন্যায় তিনি নিজ সৌন্দর্যে দীপ্ত হতেন।

— কল্পসূত্র 118

আরও দেখুন সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. B.K. Jain 2013, পৃ. 62।
  2. Zimmer 1953, পৃ. 223।
  3. Dundas 2002, পৃ. 152।
  4. Dundas 2002, পৃ. 45।
  5. Jain 2011, পৃ. vi।
  6. Pravin Shah, Five Great Vows (Maha-vratas) of Jainism Jainism Literature Center, Harvard University Archives (2009)
  7. Jain 2013, পৃ. 196-197।
  8. Jain 2011, পৃ. 93–100।
  9. Jain 1926, পৃ. 26।
  10. Jain 2012, পৃ. 144-145।
  11. Jain 1926, পৃ. 32-38।
  12. Jain 2013, পৃ. 196।
  13. Jain 2012, পৃ. 143।
  14. Jain 2013, পৃ. 190-191।
  15. Jain 1926, পৃ. 46-47।
  16. Jain 2013, পৃ. 197।
  17. "Welcome to Jainworld - Jain Monks nuns, Sadhu, Shraman, Muni, Sadhvi, Shramani, Ary�, Pranatip�taviraman Mahavrat, Mrishavadaviraman Mah�vrat, Adattad�naviraman Mahavrat , Maithunaviraman Mahavrat, Parigrahaviraman Mahavrat", Jainworld.com, ৪ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৬ 
  18. Dundas 2002, পৃ. 155।
  19. Dundas 2002, পৃ. 153।
  20. Cort 2001, পৃ. 101।
  21. Singhvi, Sushila, Jainism at a glance, ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৬ 
  22. Singh 2007, পৃ. 29।
  23. Valley, Anne (২০০২)। Guardians of the Transcedent: An Ethnography of a Jain Ascetic Community। University of Toronto Press। 
  24. Singh 2007, পৃ. 119।
  25. Zimmer 1953, পৃ. 210।
  26. Singh 2008, পৃ. 316।
  27. Mehta, Makrand (১৯৯১), Indian merchants and entrepreneurs in historical perspective: with special reference to shroffs of Gujarat, 17th to 19th centuries, Academic Foundation, পৃষ্ঠা 98, আইএসবিএন 81-7188-017-7 
  28. Cort 2001, পৃ. 104।
  29. Jacobi, Hermann (১৮৮৪)। (ed.) F. Max Müller, সম্পাদক। The Kalpa SūtraSacred Books of the East vol.22, Part 1 (English ভাষায়)। Oxford: The Clarendon Press। আইএসবিএন 0-7007-1538-X  Note: ISBN refers to the UK:Routledge (2001) reprint. URL is the scan version of the original 1884 reprint

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা