ক্রিটিক্যাল মাস, ক্রান্তি ভর বা সংকট ভর হলো কোনো ফিসাইল মেটেরিয়ালের (সহজ ভাষায়, যে পদার্থে ফিসন ঘটে) সর্বনিম্ন পরিমাণ, যা (নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে) একটি স্ব-নির্ভর বিক্রিয়া নিউক্লিয়ার চেইন রিঅ্যাকশনের জন্য (চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হয়ে চলতে থাকবে) প্রয়োজন। এটি বেশ কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। যেগুলির মধ্যে রয়েছে ফিসাইল মেটেরিয়ালের প্রকৃতি, ঘনত্ব, বিশুদ্ধতা, আকৃতি, পরিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি। পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল মাস একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।[৩][৪]

১৯৪৬ সালে লুইস স্লটিনের করা পরীক্ষণের পুনরাবৃত্তি। এই পরীক্ষাটি করার সময় দুর্ঘটনাবশত ফিসাইল মেটেরিয়াল ক্রিটিক্যাল মাস অর্জন করে এবং চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হয়। এতে লুইস স্লটিন গুরুতরভাবে আহত হন এবং এর নয় দিন পরে তার মৃত্যু হয়।[১][২]

ব্যাখ্যা সম্পাদনা

 
সাবক্রিটিক্যাল, ক্রিটিক্যাল ও নিউট্রন রিফ্লেক্টর যোগের পর ক্রিটিক্যাল মাস।

যে নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় একটি পরমাণু ভেঙ্গে (জোড়পূর্বক অথবা স্বতঃস্ফূর্ত) একাধিক হালকা ভিন্ন মৌলের পরমাণু তৈরি করে তাকে নিউক্লিয় ফিশন বিক্রিয়া বলে। প্রায় সকল ফিশন বিক্রিয়ায়ই মুক্ত নিউট্রন উৎপন্ন হয়। এই নিউট্রনগুলাের আঘাতে আরও নিউক্লিয়াসে ফিশন ঘটতে থাকে এবং চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হয়।

কার্যকর নিউট্রন গুণকk, হল ফিশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গড় নিউট্রন সংখ্যা যেগুলো আরো ফিশন ঘটায়।

k < 1 হলে সিস্টেমে কোন চেইন রিঅ্যাকশন টিকতে পারে না। এক্ষেত্রে ফিসাইল ম্যাটেরিয়ালের ভরকে বলা হয় সাবক্রিটিক্যাল মাস

যখন k = 1 হয়, তখন প্রত্যেক ফিশন গড়ে একটি ফিশন ঘটিয়ে থাকে। ফলে, চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হয় এবং বিক্রিয়ার হার ধ্রুব থাকে। এক্ষেত্রে ফিসাইল ম্যাটেরিয়ালের ভরকে বলা হয় ক্রিটিক্যাল মাস

k > 1 হলে, বিক্রিয়ার হার ক্রমেই বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে ফিসাইল ম্যাটেরিয়ালের ভরকে বলা হয় সুপারক্রিটিক্যাল মাস। নিউক্লিয়ার বোমার ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে থাকে।

একটি কঠিন গোলোকের আয়তন ও পৃষ্ঠের অনুপাত হয় সবচেয়ে বেশি (অন্য কোনো আকৃতির চেয়ে)। তাই, খুব কম ইলেক্ট্রনই এর থেকে পালাতে সক্ষম হয়। ফলে, গোলোকের ক্রিটিক্যাল মাস হয় সবচেয়ে কম। এছাড়াও তাপমাত্রা, ঘনত্ব ইত্যাদির কারণেও ক্রিটিক্যাল মাস বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। নিউট্রন রিফ্লেক্টরের ব্যাবহারেও ক্রিটিক্যাল মাসের পরিমাণ কমে যায়।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রিটিক্যাল মাস সম্পর্কিত তথ্য গোপন রাখা হলেও কিছু তথ্যকে ডিক্লাসিফাইড করা হয়েছে।[৫] নীচে সাধারণ ঘনত্বে কিছু পদার্থের গোলোকের ক্রিটিক্যাল মাসের পরিমাণ দেওয়া হলো:

 
একটি সম্ভাব্য নিউক্লিয় ফিশন বিক্রিয়া
আইসোটোপ অর্ধায়ু
(বছর)
ক্রিটিক্যাল মাস
(kg)
ব্যাস
(cm)
Ref
ইউরেনিয়াম-২৩৩ ১৫৯,২০০ ১৫ ১১ [৬]
ইউরেনিয়াম-২৩৫ ৭০৩,৮০০,০০০ ৫২ ১৭ [৬]
নেপচুনিয়াম-২৩৬ ১৫৪,০০০ ৮.৭ [৭]
নেপচুনিয়াম-২৩৭ ২,১৪৪,০০০ ৬০ ১৮ [৮][৯]
প্লুটোনিয়াম-২৩৮ ৮৭.৭ ৯.০৪–১০.০৭ ৯.৫–৯.৯ [১০]
প্লুটোনিয়াম-২৩৯ ২৪,১১০ ১০ ৯.৯ [৬][১০]
প্লুটোনিয়াম-২৪০ ৬৫৬১ ৪০ ১৫ [৬]
প্লুটোনিয়াম-২৪১ ১৪.৩ ১২ ১০.৫ [১১]
প্লুটোনিয়াম-২৪২ ৩৭৫,০০০ ৭৫–১০০ ১৯–২১ [১১]
অ্যামেরিসিয়াম-২৪১ ৪৩২.২ ৫৫–৭৭ ২০–২৩ [১২]
অ্যামেরিসিয়াম-২৪২ ১৪১ ৯–১৪ ১১–১৩ [১২]
অ্যামেরিসিয়াম-২৪৩ ৭৩৭০ ১৮০–২৮০ ৩০–৩৫ [১২]
ক্যুরিয়াম-২৪৩ ২৯.১ ৭.৩৪–১০ ১০–১১ [১৩]
ক্যুরিয়াম-২৪৪ ১৮.১ ১৩.৫–৩০ ১২.৪–১৬ [১৩]
ক্যুরিয়াম-২৪৫ ৮৫০০ ৯.৪১–১২.৩ ১১–১২ [১৩]
ক্যুরিয়াম-২৪৬ ৪৭৬০ ৩৯–৭০.১ ১৮–২১ [১৩]
ক্যুরিয়াম-২৪৭ ১৫,৬০০,০০০ ৬.৯৪–৭.০৬ ৯.৯ [১৩]
বার্কেলিয়াম-২৪৭ ১৩৮০ ৭৫.৭ ১১.৮-১২.২ [১৪]
বার্কেলিয়াম-২৪৯ ০.৯ ১৯২ ১৬.১-১৬.৬ [১৪]
ক্যালিফোর্নিয়াম-২৪৯ ৩৫১ [৭]
ক্যালিফোর্নিয়াম-২৫১ ৯০০ ৫.৪৬ ৮.৫ [৭]
ক্যালিফোর্নিয়াম-২৫২ ২.৬ ২.৭৩ ৬.৯ [১৫]
আইনস্টেনিয়াম-২৫৪ ০.৭৫৫ ৯.৮৯ ৭.১ [১৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Atomic injuries fatal to scientist Louis Slotin (radiation) (1948) - on Newspapers.com"Newspapers.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৬ 
  2. Zeilig, Martin (আগস্ট–সেপ্টেম্বর ১৯৯৫)। "Louis Slotin and 'The Invisible Killer'"The Beaver75 (4): 20–27। ১৬ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০০৮ 
  3. "Principles Of Atomic (Fission) Weapons"। Britannica। ডিসে ১২, ২০১৯। 
  4. "Critical mass"। Britannica। Feb 04, 2018।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. Reevaluated Critical Specifications of Some Los Alamos Fast-Neutron Systems
  6. Nuclear Weapons Design & Materials ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ নভেম্বর ২০১০ তারিখে, The Nuclear Threat Initiative website. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে[অনির্ভরযোগ্য উৎস?]
  7. Final Report, Evaluation of nuclear criticality safety data and limits for actinides in transport, Republic of France, Institut de Radioprotection et de Sûreté Nucléaire, Département de Prévention et d'étude des Accidents.
  8. Chapter 5, Troubles tomorrow? Separated Neptunium 237 and Americium, Challenges of Fissile Material Control (1999), isis-online.org
  9. P. Weiss (২৬ অক্টোবর ২০০২)। "Neptunium Nukes? Little-studied metal goes critical"Science News162 (17): 259। ডিওআই:10.2307/4014034। ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৩ 
  10. Updated Critical Mass Estimates for Plutonium-238, U.S. Department of Energy: Office of Scientific & Technical Information
  11. Amory B. Lovins, Nuclear weapons and power-reactor plutonium, Nature, Vol. 283, No. 5750, pp. 817–823, February 28, 1980
  12. Dias, Hemanth; Tancock, Nigel; Clayton, Angela (২০০৩)। "Critical Mass Calculations for 241Am, 242mAm and 243Am" (পিডিএফ)Challenges in the Pursuit of Global Nuclear Criticality Safety। Proceedings of the Seventh International Conference on Nuclear Criticality Safety। II। Tokai, Ibaraki, Japan: Japan Atomic Energy Research Institute। পৃষ্ঠা 618–623। 
  13. Okuno, Hiroshi; Kawasaki, Hiromitsu (২০০২)। "Critical and Subcritical Mass Calculations of Curium-243 to -247 Based on JENDL-3.2 for Revision of ANSI/ANS-8.15"। Journal of Nuclear Science and Technology39 (10): 1072–1085। ডিওআই:10.1080/18811248.2002.9715296  
  14. Institut de Radioprotection et de Sûreté Nucléaire: "Evaluation of nuclear criticality safety. data and limits for actinides in transport", p. 16
  15. Carey Sublette, Nuclear Weapons Frequently Asked Questions: Section 6.0 Nuclear Materials February 20, 1999