শুক্র সরণ (ইংরেজি: Transit of Venus) মহাজাগতিক বিরল ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। যখন শুক্র গ্রহ, সূর্যপৃথিবীর মাঝে একই তলে এবং সরলরেখায় পরিভ্রমণ করে তখন শুক্র সরণ ঘটে থাকে। শুক্র সরণের সময় গ্রহটিকে দেখতে একটি ছোট্ট চাকতির মত মনে হয় যা সূর্যেকে প্রদক্ষিণ করছে। শুক্র সরণের সময়সীমা কিছু ঘণ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, যেমন: ২০০৪ সালের জুন মাসে যে শুক্র সরণ হয়েছিল তার সময়সীমা ছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা। শুক্র সরণ অনেকটা সূর্য গ্রহণের মত যা চন্দ্রের কারণে ঘটে। যদিও শুক্র গ্রহের ব্যাস চন্দ্রের ব্যাস অপেক্ষা প্রায় চারগুন তাও এ সময় শুক্র গ্রহকে খুবই ছোট মনে হয় এবং চন্দ্র থেকে ধীরে চলে বলে মনে হয় কেননা পৃথিবী থেকে চন্দ্রের দূরত্ব থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্ব বহুগুণ বেশি।
ভবিষ্যত বাণী করা যায় এমন মহাজাগতিক বিরল ঘটনাগুলোর মাঝে শুক্র সরণ অন্যতম।[১] শুক্র সরণ একটি নির্দিষ্ট ক্রমে নির্দিষ্ট সময় পর পর ঘটে থাকে। এ ক্রমটিকে এভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যে, একটি শুক্র সরণের ঠিক ১০৫.৫ বছর পর একটি শুক্র সরণ হয় যার ঠিক আট বছর পর আরেকটি শুক্র সরণ হয় আবার এই শুক্র সরণটির ১২১.৫ বছর পর একটি শুক্র সরণ হয় এবং এর আট বছর পর আবার একটি শুক্র সরণ ঘটে।[২] এভাবে প্রতি ২৪৩ বছরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
সর্বশেষ ৬ জুন, ২০১২ সালে শুক্র সরণ হয়েছিল যা এই শতকের সর্বশেষ শুক্র সরণ। এর আগে ১৬৩৯, ১৭৬১, ১৭৬৯, ১৮৭৪, ১৮৮২, ২০০৪ সালেও শুক্র সরণ দেখা গিয়েছিল। ২০১২ সালের পর আবার ২১১৭ ও ২১২৫ সালে শুক্র সরণ দেখা যাবে।[৩][৪]

২০১২ সালের শুক্র সরণ । এ দৃশ্যটি উত্তর গোলার্ধ থেকে দেখাগিয়েছে।

প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস সম্পাদনা

প্রাচীন কালের ভারতীয়, গ্রীক, মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, মায়া এবং চীনা পর্যবেক্ষকরা শুক্র গ্রহ সম্পর্কে জানত এবং এর গতিবিধি সম্পর্কে টুকে রাখত। শুরুর দিকে গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা শুক্র গ্রহকে Hesperus বা সন্ধ্যা তারা এবং Phosphorus বা শুকতারা - এ দুটি নামে ডাকতো।[৫] প্রাচীন আমেরিকান সভ্যতায় শুক্র গ্রহ ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত মায়াদের জন্য, যারা একে Noh Ek(বৃহৎ তারা) অথবা Xux Ek(বোলতা তারকা) নামে ডাকতো।[৬] তারা মনে করতো শুক্র গ্রহ তাদের দেবতা Kukulkán(মেক্সিকোর অন্যান্য অঞ্চলে GukumatzQuetzalcoatl নামেও পরিচিত) এর প্রতিরূপ। ড্রেসডেন কোডেক্স (Dresden Codex) এ মায়ারা গ্রহটির কালচক্রের ব্যাখ্যা করেছিল, গ্রহটির গতিপথ সম্পর্কে তাদের কিছু নিখুঁত ধারণা থাকলেও সেখানে শুক্র সরণ সম্পর্কে কিছু উল্লেখ ছিল না।[৭] ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ জেরেমিয়া হোরকস সর্বপ্রথম ১৬৩৯ সালে শুক্র সরণ পর্যবেক্ষণ করেন, তার বন্ধু উইলিয়াম ক্র্যাবট্রি-ও শুক্র সরণটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন ম‍্যানচেস্টারের নিকটবর্তী ব্রটন নামক অঞ্চলে থেকে।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. McClure, Bruce (২৯ মে ২০১২)। "Everything you need to know: Venus transit on June 5–6"EarthSky। Earthsky communications inc। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১২ 
  2. Haq, Shamsul (২০১২-০৬-০৪)। "এমন দৃশ্য আবার আসবে ২১১৭ সালে"Bangladesh Pratidin (Bengali (Bangladesh) ভাষায়)। পৃষ্ঠা 12,11। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-০৪ 
  3. John E. Westfall (2003-11)। "June 8, 2004:The Transit of Venus"। ৮ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 25 September 2006  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  4. Westfall, John E.। "June 8, 2004:The Transit of Venus"। alpo-astronomy.org। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৮, ২০০৯ 
  5. Rincon, Paul (২০০৫-১১-০৭)। "Planet Venus: Earth's 'evil twin'"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ 
  6. Morley, Sylvanus G. (১৯৯৪)। The Ancient Maya (5th সংস্করণ)। Stanford University Press। আইএসবিএন 978-0-8047-2310-7 
  7. Böhm, Bohumil; Böhm, Vladimir। "The Dresden Codex—the Book of Mayan Astronomy"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ 
  8. Kollerstrom, Nicholas (২০০৪)। "William Crabtree's Venus transit observation" (পিডিএফ)Proceedings IAU Colloquium No. 196, 2004। International Astronomical Union। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

সাধারণ
জুন ২০১২ সালের শুক্র সরণ