শিশিরকুমার ভাদুড়ী

ভারতীয় অভিনেতা

শিশির কুমার ভাদুড়ী (২ অক্টোবর,১৮৮৯ – ৩০ জুন,১৯৫৯ ) ছিলেন আধুনিক বাংলা নাট্যজগতের পথিকৃৎ, খ্যাতনামা অভিনেতা এবং নাট্যকার। গিরিশচন্দ্র ঘোষের পর তিনি বাংলা রঙ্গমঞ্চের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব। তিনিই বাংলা নাটকের স্বর্ণযুগে প্রথম নাটকের সেট তথা মঞ্চসজ্জা ও আলোর ব্যবহার প্রবর্তন করে নাট্যশিল্পীদের কর্মকুশলতাকে এক বাস্তবতার ও প্রকৃতির আঙ্গিকে উত্তরণের পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি উপাধি নাট্যাচার্য পান । [১]

শিশিরকুমার ভাদুড়ী
সীতা চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য, ১৯৩৩
জন্ম(১৮৮৯-১০-০২)২ অক্টোবর ১৮৮৯
মৃত্যু৩০ জুন ১৯৫৯(1959-06-30) (বয়স ৬৯)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনস্কটিশ চার্চ কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅভিনেতা, মঞ্চ পরিচালক, নাট্যশালা প্রতিষ্ঠাতা

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ীর জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার রামরাজাতলায়। পিতার নাম হরিপদ ভাদুড়ী। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী স্কুল থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন। সারা জীবন তিনি প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজের সুবেশ ও সুকণ্ঠ অধ্যাপক তার শিক্ষা দানের নিষ্ঠায় ছাত্রমহলে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। ছাত্রজীবনে ও অধ্যাপনাকালে শৌখিন অভিনেতা হিসাবে ইংরাজী ও বাংলা বহু নাটকে অংশগ্রহণ করেছেন। সাধারণত ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে তিনি অভিনয় করতেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "বৈকুণ্ঠের খাতা" নাটকে কেদার-এর ভূমিকায় তাঁকে দেখে বলেন - 'কেদার আমার ঈর্ষার পাত্র। একদা ওই পার্টে আমার যশ ছিল।'

কর্মজীবন সম্পাদনা

ছাত্রাবস্থা থেকেই শিশিরকুমারের অভিনয়ের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল। শৌখিন অভিনেতারূপে শেষ অভিনয় করেন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীসহ অনেকেই তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাঁদের এবং অধ্যাপনার কাজ ছেড়ে চলে আসেন পেশাদারি নাট্যমঞ্চে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই ডিসেম্বর ম্যাডান কোম্পানির রঙ্গালয়ে "আলমগীর" নাটকে নামভূমিকায় আবির্ভূত হন ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তারপরও 'চাণক্য'ও 'রঘুবীর' চরিত্রে অভিনয় করে অনন্যসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। কিন্তু মতানৈক্য ঘটায় ম্যাডান কোম্পানির মঞ্চ ছেড়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "আঁধারে আলো" ও "চন্দ্রনাথ" চিত্রায়নে অভিনেতা ও পরিচালকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি একটি নাট্যদল গঠন করেন। তার মতো শিক্ষিত সংস্কৃতিবান ব্যক্তির আগমনে বাংলার তরুণ প্রতিভার কিছু ব্যক্তিত্ব বঙ্গ রঙ্গমঞ্চে এসে তার দলের পূর্ণতা দিয়েছিলেন। ইডেন গার্ডেন একজিবিশনে তিনি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের "সীতা" মঞ্চস্থ করেন এবং তিনি রামচন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয় করে নাট্যজগতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। এটি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তারই পরিচালনায় চলচ্চিত্রায়িত হয়।

"সীতা" জনপ্রিয় হওয়ায় অ্যালফ্রেড থিয়েটার বর্তমানে গ্রেস সিনেমা ভাড়া নিয়ে অভিনয়ের আয়োজন কোন কারণে সম্ভব না হওয়ায় "বসন্তলীলা" গীতিমালা অভিনয় করেন। এতে পুরোনো গানের সঙ্গে হেমেন্দ্রকুমার রায়মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত কয়েকটি গান মণিলাল ও প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর গ্রন্থনায় কৃষ্ণচন্দ্র দের নেতৃত্বে গাওয়া হয়।

জীবনাবসান সম্পাদনা

নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে জুন কলকাতার বরাহনগরস্থিত নিজ বাসভবনে ৬৯ বয়সে পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৭১৮,৭১৯ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬