শাওয়াল

ইসলামি বর্ষপঞ্জির দশম মাস

শাওয়াল (আরবী: شوّال ) ইসলামি বর্ষপঞ্জির দশম মাস। শাওয়ালের প্রথম দিনটি ঈদ-উল-ফিতর হিসেবে উদযাপিত হয়। ইসলামের প্রচলিত বিধান মতে, শাওয়াল মাসে ৬টি রোজার যথেষ্ট পূণ্য রয়েছে। তাই অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানই রমজানের রোজা পালন শেষে, শাওয়াল মাসেও ছয়টি রোজা রেখে থাকেন অতিরিক্ত পূণ্যপ্রাপ্তির আশায়। তবে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ঈদ-উল-ফিতরের দিন রোজা রাখা ইসলামে নিষিদ্ধ, তাই ঐ দিন বাদে এই রোজাগুলো রাখার নিয়ম।[১]

শাওয়াল
ইস্তানবুলের সুলেমানিয়া মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়
স্থানীয় নামشَوَّال (আরবি)
বর্ষপঞ্জিইসলামি বর্ষপঞ্জি
মাসের ক্রম১০
দিনের সংখ্যা২৯-৩০ (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল)
গুরুত্বপূর্ণ দিবসঈদুল ফিতর

ছয় রোজার ফযিলত সম্পাদনা

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা। সারা বছর রোযার ছোয়াব পাওয়ার একটি সূবর্ণ সূযোগ:  “আবু আইয়ুব আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে অতপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা পালন করবে সে যেন যুগভর রোজা রাখল।” [মুসলিম : ১১৬৪]

সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা। অপর রেওয়ায়েতে আছে: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ।” [সূরা আন‘আম-আহমদ : ৫/২৮০, দারেমি : ১৭৫৫]

হাদিস থেকে যা শিখলাম:

এক. শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত জানা গেল যে, যে ব্যক্তি পুরো রমজান সিয়াম পালনের পর এ রোজা ছয়টি করবে সে যেন সারা জীবন রোজা করল। এ এক বিরাট আমল এবং বিশাল অর্জন।

দুই. বান্দার ওপর আল্লাহর কত দয়া যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক বদলা দিবেন।

তিন. কল্যণকাজে প্রতিযোগিতা স্বরূপ এ ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব। যাতে রোজাগুলো ছুটে না যায়। কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে।

চার. এ রোজা করা যাবে মাসের শুরু-শেষ-মাঝামাঝি সব সময়। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই করা হোক না কেন রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবে যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়।

পাঁচ. যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে সে আগে তার কাজা করবে তারপর শাওয়ালের রোজায় ব্রতী হবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে রমজানের রোজা রাখবে অর্থাৎ পুরোপুরি। আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।” [মুগনি : ৪/৪৪০] তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে।

ছয়. মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরজের আগে-পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমনঃ ফরজ সালাতের আগে-পরের সুন্নতগুলো এবং রমজানের আগে শাবানের রোজা আর পরে শাওয়ালের রোজা।

সাত. এই নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে। কারণ রোজাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে পারে না যা তার রোজার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে Islam online.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা