শনিবার বিকেল

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত চলচ্চিত্র

শনিবার বিকেল হল মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত একটি বাংলাদেশী নাট্যধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়। এটি বাংলাদেশ, ভারত ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ছবিয়াল এবং ভারতের শ্যাম সুন্দর দে।[১] এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও ইয়াদ হুরানি। ২০১৯ সালে ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। তবে চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে এখনো মুক্তি পায়নি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে "আপিল বোর্ড" চলচ্চিত্রটির মুক্তিতে আর বাধা নেই জানালেও চলচ্চিত্রটি এখনো বাংলাদেশে মুক্তির জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পায়নি।[২][৩]

শনিবার বিকেল
পরিচালকমোস্তফা সরয়ার ফারুকী
প্রযোজক
রচয়িতামোস্তফা সরয়ার ফারুকী
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারপাভেল আরিন
চিত্রগ্রাহকআজিজ জাম্বাকিয়েভ
প্রযোজনা
কোম্পানি
মুক্তি
  • এপ্রিল ২০১৯ (2019-04) (এমআইএফএফ)
  • ২৪ নভেম্বর ২০২৩ (2023-11-24) (ভারত)
স্থিতিকাল৮৩ মিনিট
দেশ
  • বাংলাদেশ
  • ভারত
  • জার্মানি
ভাষাবাংলা

কাহিনি সম্পাদনা

সময়টি রোজার, এক সুন্দর শনিবারের বিকেলে ঢাকা শহরের লোকজন তাদের সময় উপভোগ করছে। হঠাৎ করে একদল সন্ত্রাসী শহরের একটি রেস্তোরাঁ দখল করে নেয় এবং কর্মচারী ও ক্রেতাদের জিম্মি করে। পুলিশ দ্রুত ভবনটি ঘিরে ফেলে এবং সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। সন্ত্রাসীরা রেস্তোরাঁর চারপাশে গ্যাস সিলিন্ডার স্থাপন করতে রাখে। সন্ত্রাসীরা তাদের হামলাকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের চেষ্টা করতে থাকে, রেস্তোরাঁয় আটকা পড়া মুসলিমরা ধর্ম ও মানবতার যুক্তি দেখিয়ে তাদের সাথে তর্ক করে। রেস্তোরাঁয় থাকা বিদেশী, প্রতিবন্ধী, নারী, ব্যবসায়ী, শিল্পী, অমুসলিম ও এমনকি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মুসলমানরাও সন্ত্রাসীদের নিষ্ঠুর বৈরিতার শিকার হয়। এইদিকে জিম্মিদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে, আরও বেশি দর্শককে আকৃষ্ট করার জন্য কিছু সংবাদ গণমাধ্যম এই ঘটনাটির সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে। অন্যদিকে রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীরা এক এক করে জিম্মিদের হত্যা করতে শুরু করে।

কুশীলব সম্পাদনা

নির্মাণ সম্পাদনা

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ছবিটি হলি আর্টিজানের ঘটনা অবলম্বনে কিনা সে সম্পর্কে জানান, "এটা হোলি আর্টিজান ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত, কিন্তু সেই ঘটনার হুবহু পুননির্মাণ না। চরিত্রেরাও আলাদা।"[৪] মাত্র সাত দিনে ছবিটির শুটিং শেষ হয়। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় ছবিটি ডাবিং করা হয়।[৫]

বিতর্ক ও সেন্সরশিপ সম্পাদনা

এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পর বাংলাদেশে মুক্তি পাবে কিনা তা নিয়ে ধুম্রজাল তৈরী হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড চলচ্চিত্রটিকে প্রাথমিকভাবে সবুজ সংকেত দেয়। তবে দ্বিতীয় দফায় পর্যবেক্ষণের পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এই অভিযোগে এর ছাড়পত্র স্থগিত করা হয়।[৬] সেন্সর বোর্ডের একজন সদস্য জানান চলচ্চিত্রটি একপ্রকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সম্পুর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে নেওয়া হবে বলে জানান। দ্বিতীয় দফায় নিষিদ্ধকরণের পক্ষে তথ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মত প্রদান করে। সেন্সর বোর্ডের মতে "ভুলে যাওয়া বিয়োগান্তক ঘটনা নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।" ফারুকি চলচ্চিত্রটির ট্রেইলার নির্মাণের প্রস্তুতিকালে প্রথম দফায় ছাড়পত্র দেওয়ার পর গিয়ে নিষিদ্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে।[৭]

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফারুকীর নেতৃত্বে একদল শিল্পী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রতিবাদ জানায়। ২০২২ সালের আগস্টে, বাংলাদেশের নেটিজেনরা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রতিবাদ জানায়। ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং শিল্পীদের একটি দল চলচ্চিত্রটিকে কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করে। ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট ডিরেক্টরস গিল্ড নামে টেলিভিশন নাটক পরিচালকদের একটি সংগঠন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং চলচ্চিত্রটিকে সেন্সর ছাড়পত্র দিতে দাবি করে।[৮]

২০২২ সালের ২৯ আগস্ট, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, "হলি আর্টিজানে যে হামলা হয়েছিল, সেই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে এই সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে দুজন পুলিশ অফিসার মারা গেছেন এবং আমাদের পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে জঙ্গিদের দমন করেছিল। সেন্সর বোর্ডের অভিমত, সেই বিষয়গুলো সিনেমাটিতে আসেনি। সেজন্য এই দৃশ্যগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে। সেটি তারা কিছুটা করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু, সেটিও যথেষ্ট নয়।"[৯] ২০২২ সালের অক্টোবরে ফারুকী জানান, সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেতে চলচ্চিত্রটির সমাপ্তিতে কিছু সংলাপ যুক্ত করা হতে পারে।[১০] ১৫ নভেম্বর ১২৯ জন সাংস্কৃতিক কর্মী চলচ্চিত্রটি আটকে রাখা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।[১১]

২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি চলচ্চিত্রটি নিয়ে শুনানি হয়।[২] শুনানিতে চলচ্চিত্রটির মুক্তিতে আর বাধা নেই জানানো হয়।

মুক্তি ও প্রদর্শনী সম্পাদনা

চলচ্চিত্রটি এখনো বাংলাদেশে মুক্তি পায়নি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে "আপিল বোর্ড" চলচ্চিত্রটির মুক্তিতে আর বাধা নেই জানালেও চলচ্চিত্রটি এখনো বাংলাদেশে মুক্তির জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পায়নি।

এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার হয়। তারপর এটি জুনে অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।[১২] একই বছরের জুলাইয়ে, এটি ফিল্মফেস্ট মুনচেন এবং লন্ডন ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে। সেখানে এটি সিনেকো প্রো পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। ২০১৯ সালের অক্টোবরে চলচ্চিত্রটি বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অফিসিয়াল নির্বাচন হিসাবে প্রদর্শিত হয়।[১৩] এটি ২০১৯ হংকং এশীয় চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়।

২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর, ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সনি লিভে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।[১৪][১৫]

পুরস্কার সম্পাদনা

সংস্থা বছর বিভাগ ফলাফল সূত্র
মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯ কমেরসান্ত পুরস্কার বিজয়ী [১৬][১৭]
রাশান ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস জুরি পুরস্কার বিজয়ী
ভেসুল এশিয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০ নেটপ্যাক পুরস্কার বিজয়ী [১৮]
হাই স্কুল জুরি পুরস্কার বিজয়ী
ফুকুওকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কুমামোতো সিটি পুরস্কার বিজয়ী [১৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সেন্সরে ফারুকীর 'শনিবার বিকেল'"দৈনিক মানবজমিন। ৩ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  2. "চার বছর সেন্সরে আটকে 'শনিবার বিকেল' ফারুকী বললেন, 'অনেক হয়েছে'"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  3. "'শনিবার বিকেল' মুক্তিতে আর বাধা নেই"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২০২৩-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২১ 
  4. "হোলি আর্টিজান থেকে অনুপ্রাণিত 'শনিবার বিকেল'"একুশে টেলিভিশন। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  5. মোস্তাফিজ (১২ জানুয়ারি ২০১৯)। "মার্চে আসছে 'শনিবার বিকেল'"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  6. "নিষিদ্ধ ফারুকীর 'শনিবার বিকেল'"Sarabangla.net। ১৬ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২০ 
  7. "প্রদশের্নর উপযোগী নয় 'শনিবার বিকেল'!"www.jaijaidinbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২০ 
  8. "'শনিবার বিকেল' মুক্তির দাবিতে সোচ্চার ডিরেক্টরস গিল্ড"দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  9. দত্ত, বিনয় (১ সেপ্টেম্বর ২০২২)। "শনিবার বিকেল: আটকে থাকা অনন্ত বিকেল"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০২২ 
  10. "ফারুকীর সিনেমা নিয়ে সুখবর"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১২ অক্টোবর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  11. "'শনিবার বিকেল' আটকে রাখা নিয়ে ১২৯ সংস্কৃতিকর্মীর উদ্বেগ"দ্য ডেইলি স্টার বাংলা। ১৫ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  12. "'শনিবার বিকেল' নিয়ে সিডনি আসছেন ফারুকী ও তিশা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  13. "বুসানে প্রশংসিত 'শনিবার বিকেল'"দেশ রূপান্তর। ৭ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  14. "প্রেক্ষাগৃহে নয়, ওটিটিতে মুক্তি পাচ্ছে 'শনিবার বিকেল"দেশরূপান্তর। ২২ নভেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০২৩ 
  15. "শুক্রবার ওটিটিতে আসছে 'শনিবার বিকেল'"চ্যানেল আই অনলাইন। ২০২৩-১১-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২২ 
  16. "মস্কোতে পুরস্কার জিতেছে ফারুকীর 'শনিবার বিকেল'"দৈনিক প্রথম আলো। ২৫ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৯ 
  17. "মস্কোতে পুরস্কৃত ফারুকীর 'শনিবার বিকেল'"বাংলা নিউজ ২৪। ২৫ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৯ 
  18. "ভেসোল উৎসবে পুরস্কৃত 'শনিবার বিকেল'"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  19. "জাপানে ফারুকীর 'শনিবার বিকেল'-এর পুরস্কার জয়"দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা