রুটাইল এক ধরনের খনিজ পদার্থ যার প্রধান উপাদান টাইটানিয়াম অক্সাইড (TiO2)। এটি টাইটানিয়ামের সবচেয়ে পরিচিত একটি খনিজ। টাইটানিয়ামের অন্যান্য খনিজের মধ্যে অ্যানাটেজ, আকাওজিলাইট এবং ব্রুকাইট অন্যতম।

রুটাইল
সাধারণ তথ্য
শ্রেণীঅক্সাইড খনিজ
রাসায়নিক সূত্রTiO2
স্ত্রুনজ শ্রেণীবিভাগ4.DB.05
স্ফটিক ভারসাম্যP42/mnm
একক কোষa = 4.5937 Å, c = 2.9587 Å; Z = 2
সনাক্তকরণ
বর্ণবাদামী, লালচে বাদামী, রক্ত লাল, লাল, বাদামী হলদে, হলদে, কৃষ্ণ
স্ফটিক রীতিAcicular to Prismatic crystals, elongated and striated parallel to [001]
স্ফটিক পদ্ধতিTetragonal
যমজCommon on {011}, or {031}; as contact twins with two, six, or eight individuals, cyclic, polysynthetic
বিদারণ{110} good, {100} moderate, parting on {092} and {011}
ফাটলUneven to sub-conchoidal
কাঠিন্য মাত্রা6.0–6.5
ঔজ্জ্বল্যAdamantine to submetallic
ডোরা বা বর্ণচ্ছটাউজ্জ্বল লাল থেকে গাঢ় লাল
স্বচ্ছতাঅর্ধ-স্বচ্ছ, ক্ষুদ্র অণুতে স্বচ্ছ
আপেক্ষিক গুরুত্ব4.23 increasing with Nb–Ta content
আলোকিক বৈশিষ্ট্যUniaxial (+)
প্রতিসরাঙ্কnω = 2.613, nε = 2.909 (589 nm)
বায়ারফ্রিঞ্জেন্স0.296 (589 nm)
PleochroismWeak to distinct brownish red-green-yellow
বিচ্ছুরণশক্ত
FusibilityFusible in alkali carbonates
দ্রাব্যতাএসিডে অদ্রবণীয়
প্রচলিত অশুদ্ধতাFe, Nb, Ta
অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসবল এনিসোট্রোপিক
তথ্যসূত্র[১][২][৩][৪]

দৃশ্যমান তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে সব চেয়ে বেশি প্রসারণ সূচক দেখা যায় রুটাইলের খনিজে। এছাড়াও এটি বেশি পরিমাণে আলোক রশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারে। এই ধর্মের কারণে, দৃষ্টি সংক্রান্ত উপাদান তৈরিতে এই খনিজের অনেক ব্যবহার রয়েছে।

প্রাকৃতিক রুটাইলে রয়েছে ১০% লোহা এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নিওবিয়াম এবং টানটালাম। লাতিন ভাষার রুতিলিয়াস থেকে রুটাইল নামটি এসেছে। রুতিলিয়াস বলতে বোঝায় লাল রঙ কে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঞ্চারিত আলোতে রুটাইলকে দেখতে লাল দেখায়। এই কারণেই এর নাম রুতিলিয়াস থেকে রুটাইল দেয়া হয়েছে। ১৮০৩ সালে সর্বপ্রথম আবরাহাম গোটলব ওয়ের্নার রুটাইল সম্পর্কে ধারণা দেন।

প্রাপ্যতা সম্পাদনা

 
২০০৫ সালে রুটাইলের উৎপাদন

যেসকল রুপান্তরিত এবং অগ্নেয় শিলা উচ্চ তাপমাত্রায় ও উচ্চ চাপে ছিল সেসকল শিলায় রুটাইলের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

টাইটানিয়ামের সবচেয়ে স্থিতিশীল খনিজের মধ্যে রুটাইল অন্যতম। কারণ তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে রুটাইল পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু টাইটানিয়ামের অন্য দুই খনিজ যেমন অ্যানাটেজ এবং ব্রুকাইট সহজেই পরিবর্তিত হয়।[৫] আবার, পরিবর্তিত হওয়া রুটাইল অপরিবর্তিতই থেকে যায়। অর্থাৎ রুটাইল পুরনরায় অন্য কোন পদার্থে পরিবর্তিত হয় না। টাইটানিয়াম খনিজগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে কম ওজনের অণু দিয়ে গঠিত।

 
রুটাইলের একটি বড় স্ফটিক

গ্রানাইট, পেগমাটাইট, স্কার্ন শিলায় রুটাইল খুঁজে পাওয়া যায়। ২০০৫ সালে, পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওন পুরো বিশ্বের ২৩% রুটাইল উৎপাদন করেছে। ২০০৮ সালে এটি ছিল ৩০%।

স্ফটিকের গঠন সম্পাদনা

 
রুটাইলের একটি অণু, বাদামী পরমাণুগুলো টাইটানিয়াম এবং লাল পরমাণুগুলো অক্সিজেন
 
বর্ধিত করা রুটাইলের স্ফটিকের গঠন

রুটাইলের একটি অনুর গঠন চতুর্মিতিক ধরনের হয়। এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমাপ ক = খ = ৪.৫৮৪ Å, এবং খ = ২.৯৫৩ Å।[৬] টাইটানিয়াম এবং অক্সিজেন সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে আবদ্ধ থাকে। এক্ষেত্রে টাইটানিয়ামের যোজ্যতা থাকে ৬ এবং অক্সিজেনের ৩। এই চতুর্মিতিক অনুতে টাইটানিয়ামের চারপাশে ৬ টি অক্সিজেনের অণু ঘিরে থাকে।[৭]

অর্থনৈতিকভাবে এর গুরুত্ব এবং ব্যবহার সম্পাদনা

 
রুটাইলের একটি বড় আকারের স্ফটিক

সমুদ্র সৈকতের বালিতে রুটাইল অন্যান্য পদার্থের সাথে মিশে ভারী খনিজ তৈরি করে। এখান থেকে খননকারীরা মূল্যবান আকরিক বা খনিজ কে আলাদা করে নেয়। রিফ্র্যাক্টরি সিরামিক শিল্প, রং শিল্প - এই দুটো ক্ষেত্রে রুটাইল ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া টাইটানিয়াম ধাতু তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়।

পাওডার করা রুটাইল সাদা রঙ এর ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট মানের উপাদান হিসেবে কাজ করে। রঙ, প্লাস্টিক, কাগজ, খাদ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটি ভালো কাজ করে। আবার রুটাইলের পাতলা আবরণ স্বচ্ছ হয়। এই পাতলা আবরণ অতিবেগুণী রশ্মি কে শোষণ করতে পারে। এই ধর্মের জন্য সানস্ক্রীন প্রসাধনীতে রুটাইল ব্যবহার করা হয়। এতে করে অতিবেগুণী রশ্মি শোষিত হয়। এবং ত্বকের কোন ক্ষতি করতে পারেনা।

রুটাইল এস্টারিজম নামে একটি ধর্ম প্রদর্শন করে। এই ধর্ম প্রদর্শন করা স্ফটিকগুলোকে বলা হয় তারকা পাথর (স্টার জেমস)। এই পাথরগুলো প্রচুর মূল্যবান হয়।

ঝালাই এর ইলেক্ট্রোডের আবরণ হিসেবে রুটাইল ব্যবহৃত হয়। এটি জিটিআর ইনডেক্সের সূচক হিসেবে ধরা হয়। এটি দ্বারা বোঝা যায় একটি ভূগর্ভস্থ শিলা কতটুকু পরিবর্তিত হয়েছে।

সংশ্লেষিত রুটাইল সম্পাদনা

১৯৪৮ সালে প্রথম সংশ্লেষিত রুটাইল উৎপাদন করা হয়। এটি বিভিন্ন নামে বিক্রয় করা হয়। ইলমেনাইট নামক আকরিক থেকেও বেচার প্রক্রিয়ায় এটি উৎপাদন করা যায়। নকলহীন সংশ্লেষিত রুটাইল দেখতে একদম স্বচ্ছ হয়। তবে আকার একটু বড় হলে রঙ হলদে হয়। তবে রঙ মিশ্রিত করার মাধ্যমে একে বিভিন্ন রং-এর করা যায়। রুটাইল খুব একটা শক্ত হয় না। সহজেই ভেঙ্গে যায়। যাই অলংকার তৈরিতে এটির ব্যবহার অনেক কম। মস শক্তির মানদন্ডে এটির মান ছিল মাত্র ৬।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Handbook of Mineralogy.
  2. Webmineral data.
  3. Mindat.org.
  4. Klein, Cornelis and Cornelius S. Hurlbut, 1985, Manual of Mineralogy, 20th ed., John Wiley and Sons, New York, pp. 304–05, আইএসবিএন ০-৪৭১-৮০৫৮০-৭.
  5. Hanaor, D. A. H.; Assadi, M. H. N.; Li, S.; Yu, A.; Sorrell, C. C. (২০১২)। "Ab initio study of phase stability in doped TiO2"। Computational Mechanics50 (2): 185–94। arXiv:1210.7555 ডিওআই:10.1007/s00466-012-0728-4বিবকোড:2012CompM..50..185H 
  6. Diebold, Ulrike (২০০৩)। "The surface science of titanium dioxide" (পিডিএফ)Surface Science Reports48 (5–8): 53–229। ডিওআই:10.1016/S0167-5729(02)00100-0বিবকোড:2003SurSR..48...53D। ২০১০-০৬-১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "Rutile Structure" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে, Steven Dutch, Natural and Applied Sciences, University of Wisconsin – Green Bay.

বাইরের সংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Titanium minerals