রায়োলাইট, হল একটি ফেলসিক প্রকৃতির(সিলিকা সমৃদ্ধ) আগ্নেয় শিলা(সাধারণত> ৬৯% SiO2)৷এটি প্রধানত গ্লাসি, অ্যাফ্যানাইটিক ও পোরফিরাইটিক(পাথর বা শিলার বিভিন্ন প্রকার) প্রকৃতির হয়। শিলার খনিজ উপাদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, কোয়ার্টজ, সানিডাইন এবং প্লেজিওক্লেজ (অনুপাতে> ২: ১), বায়োটাইট এবং হর্নব্লেন্ডে৷বাহ্যিক দিক থেকে এটি গ্রানাইটের সমতুল্য।

রায়োলাইট
আগ্নেয় শিলা
মিশ্রণ
ফেলসিক প্রকৃতির(সিলিকা সমৃদ্ধ): ইগনিয়াস কোয়ার্টজ এবং ক্ষার ফেল্ডস্পার (সানিডাইন এবং সোডিক প্লেজিওক্লেজ), বায়োটাইট এবং হর্নব্লেন্ডে

ভূতাত্ত্বিক প্রকৃতি সম্পাদনা

রায়োলাইট বাহ্যিক দিক দিয়ে প্লুটোনিক গ্রানাইট শিলার সমতুল্য হিসাবে বিবেচিত হয়। রায়োলাইট গঠনগত দিক দিয়েও গ্রানাইটের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উচ্চমাত্রার সিলিকা এবং নিম্ন মাত্রার আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ গলিত রায়োলাইট অত্যন্ত ঘন ও পঙ্কিল লাভা উৎপন্ন করতে সক্ষম। ব্র্যাকসিয়াস পাথর, আগ্নেয়গিরির জমে যাওয়া ছাইভস্ম(ভলকানিক প্লাগ), এবং ডাইক (পাথরের এক বিশেষ প্রকার প্রাকৃতিক বিন্যাস)-এর মধ্যেও রায়োলাইটের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গলন্ত রায়োলাইট যখন খুব দ্রুত তাপ নিঃসরণ করে শীতল হয়ে ক্রিস্টালের আকার ধারণ করে, তখন তার সাথে সাথে প্রাকৃতিক গ্যাস ও অবসিডিয়ান পাথরও উৎপাদন করে। অপরপক্ষে ধীরগতিতে তাপ নিঃসরণ করলে রায়োলাইট লাভার মধ্যে আণুবীক্ষণিক ক্রিস্টালরূপে বিচরণ করে এবং পরবর্তীকালে ফলিয়েশন(ভাঁজ-যুক্ত) , স্ফেরুলিটিক(গোলাকার), নোডিউলার(বিম্বক আকৃতি), লিথোফিজাল, ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির শিলা গঠন করে। কিছু রায়োলাইট উচ্চ ভেসিক্যুলার (আগ্নেয় শিলার এক বিশেষ গঠন) পিউমিস (ধূলিকণা জাতীয়) প্রকৃতির হয়। ভূগর্ভ থেকে আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে রায়োলাইটের নিঃসরণ অত্যন্ত বিস্ফোরক একটি প্রক্রিয়া এবং গলন্ত পাথরের সঙ্গে কখনো কখনো জ্বলন্ত চুনাপাথর জাতীয় বিপজ্জনক বস্তুও নিঃসৃত হরে পারে।

অন্যান্য নিম্ন ফেলাসিক প্রকৃতির লাভার তুলনায় রায়োলাইটের নিঃসরণ অপেক্ষাকৃত বিরল। বিশ শতকের শুরু থেকে কেবলমাত্র তিনটি রায়োলাইট বিস্ফোরণের কথা জানা গিয়েছে; একটি পাপুয়া নিউ গিনির সেন্ট অ্যান্ড্রু স্ট্রেইট আগ্নেয়গিরি, দ্বিতীয়টি আলাস্কার নোভুপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং তৃতীয় ও শেষ বার দক্ষিণ চিলির চইতেন-এ এই বিরল ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।

রায়োলাইট সমৃদ্ধ অঞ্চল সম্পাদনা

 
আইসল্যান্ডের ল্যান্ডম্যান্লাওগার, কাল্ডাক্লোফসফজিয়ালে রাইওলাইট
 
রাইওলাইট কোয়ারি, লেবেজান, স্যাক্সনি-আনহাল্ট

অত্যন্ত বিরল ঘটনা হলেও,[১] ভূমিভাগ থেকে বহু দূরে অবস্থিত মহাসাগরীয় দ্বীপে রায়োলাইটের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ইউরোপ সম্পাদনা

  • দক্ষিণ পূর্ব আয়ারল্যান্ডের কপার কোস্ট জিওপার্ক৷
  • বল্জানো এবং তার আশেপাশের অঞ্চলের নিকটবর্তী এস্ট ভ্যালি আগ্নেয়গিরি শৃঙ্খলা ৷
  • মিক্সেরে পার্বত্যশৃঙ্খলার গ্রিক্সার রিলাইটিক কমপ্লেক্স (কাতালোনিয়া, স্পেন)৷[২]
  • আইসল্যান্ড: সমস্ত সক্রিয় এবং বিলুপ্তপ্রায় কেন্দ্রীয় আগ্নেয়গিরি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন],যেমন টোর্ফাজাকুল, লেইর্নজাকুর / ক্রাফলা, ব্রিডালুর কেন্দ্রীয় আগ্নেয়গিরি৷
  • ম্যাসিফ ডি এল এস্টেরেল, ফ্রান্স৷
  • শিটল্যান্ডে পাপা স্টুর৷
  • স্নোডোনিয়া এবং ওয়েলসের বিক্ষিপ্ত স্থান৷
  • ভগ্স৷

জার্মানি সম্পাদনা

  • ব্ল্যাক ফরেস্ট, উদাঃ কার্লসরুহের গ্র্যাটে৷
  • ওডেনওয়াল্ড৷
  • রটলিগেন্ডেস৷
  • স্যাক্সনি, বিশেষত উত্তর পশ্চিম৷
  • সর-নাহে অববাহিকা, উদাঃ ডোনার্সবার্গ পর্বতে কনিগস্টুহল (প্যফালজ)৷
  • স্যাক্সনি-আনহাল্ট, হ্যালির উত্তরে৷
  • থুরিনগিয়ান ফরেস্ট, মূলত রাইওলাইট, ল্যাটাইটস এবং পাইরোক্লাস্টিক শিলা নিয়ে গঠিত৷

আমেরিকা সম্পাদনা

  • ক্যাসকেড পর্বতমালা৷[৩]
  • ক্যাসল রক, কলোরাডো৷
  • কোবাল্ট, অন্টারিও৷[৪]
  • ক্রেটার হ্রদ, অরেগন[১]
  • জেমেজ পর্বতমালা৷
  • জ্যাস্পার শৃঙ্গ, বার্লিন, নিউ হ্যাম্পশায়ার৷
  • কিনেও শৃঙ্গ, আগ্নেয়গিরির প্লাগ(জমে কঠিন হয়ে যাওয়া ছাইভস্ম); মেইনের রকউড, মজহেড হ্রদে অবস্থিত৷
  • রাইওলাইট, নেভাদা, এই স্থানে একটি রায়োলাইট সমৃদ্ধ অঞ্চল খুঁজে পাওয়া যায় এবং তার এইরূপ নামকরণ হয়৷[৫]
  • সান জুয়ান আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্র৷[৬]
  • শীপ ক্রিক, ইদাহো৷
  • সেন্ট ফ্রাঙ্কোইস পর্বতমালা৷
  • দক্ষিণ ওকলাহোমা আউলকোজেনের মধ্যে উইচিটা পর্বতমালা৷
  • ইয়েলোস্টোন৷

ওশিয়ানিয়া সম্পাদনা

 
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের একটি রাইলোাইট আগ্নেয় পাহাড় মাউন্ট টিব্রোগারগান
  • ফ্লিন্ডার্স পর্বতশ্রেণির শৃঙ্গসমূহ এবং তেভিওট পর্বতমালার ফ্যাসিফার্ন উপত্যকা;কুইন্সল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া৷
  • গ্লাস হাউস পর্বতমালা জাতীয় উদ্যান, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া৷
  • অস্ট্রেলিয়ার গন্ডোয়ানা রেইনফরেস্ট,এটি একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা "বিশ্ব ঐহিহ্য স্থান" যেখানে গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ নামক পর্বতমালা বরাবর রায়োলাইট সমৃদ্ধ অঞ্চল বর্তমান৷
  • নিউজিল্যান্ডের টপ্পো আগ্নেয়গিরি ক্ষেত্র যেখানে বহু সংখ্যক রায়োলাইট আগ্নেয় পাহাড় বর্তমান।

এশিয়া সম্পাদনা

  • চ্যাংবাইশান, চীন[৭] যা চীনে বায়তৌশন এবং তিয়ানচি ও কোরিয়ায় বাগডু বা পাইকতু-সান (পাইকুটুসান) আগ্নেয়গিরি নামেও পরিচিত।
  • মালানি আগ্নেয় প্রস্তরক্ষেত্র, রাজস্থান, ভারত৷
  • তাম্বোরা, ইন্দোনেশিয়া[১]
  • চীনের ঝিজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজু শহরের নিকট অবস্থিত ইয়ানডাং শান পর্বতশৃঙ্গ৷[৮]

আফ্রিকা সম্পাদনা

কিলিমঞ্জারো পর্বত, কেনিয়া / তাঞ্জানিয়া [১]

নামকরণ সম্পাদনা

জার্মান ভ্রমণকারী ফার্ডিনান্ড ভন রিচথোফেন ১৮৬০ সালে প্রথমবার রায়োলাইট নামটির উদ্ভাবন করেছিলেন এবং ভূতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।[৯][১০][১১] গ্রিক শব্দ রাইয়াস্ক যার অর্থ "গলিত লাভার স্রোতধারা" [১২] এবং লাইট[১৩] অর্থাৎ হালকা ভারের শিলা -এই দুই শব্দের সমন্বয়ে তিনি রায়োলাইট শব্দটি গঠন করেছিলেন। অর্থাৎ গলিত লাভার স্রোত থেকে সৃষ্ট শিলাকে সংক্ষেপে তিনি রায়োলাইট নামে অভিহিত করেছিলেন।

প্রাচীন নেটিভ আমেরিকানদের রায়োলাইট উৎখনন সম্পাদনা

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই উত্তর আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত বর্তমান পূর্ব পেনসিলভানিয়া এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলে রায়োলাইট শিলার ব্যাপক অনুসন্ধান ও উৎখনন হত। অ্যাডামস প্রদেশের কার্বোগ রান রায়োলাইট উৎখনন স্থল আমেরিকার একটি অতি সুপ্রাচীন রায়োলাইট খনি। ১১,৪৫০ বছর আগেই এখানে রায়োলাইট উৎখনন শুরু হয়েছিল।[১৪] সমগ্র ডেলমারভা উপদ্বীপ জুড়ে রায়োলাইটের আদানপ্রদান হত।[১৪] রায়োলাইট পাথরে শান দিয়ে তা সুতীক্ষ্ণ ও ধারালো করে তোলা হত এবং তাকে নির্দিষ্ট আকার দিয়ে তীরের ফলকের আগা, বর্শার ফলক ইত্যাদি প্রস্তুত করা হত।[১৫]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

১.এক্সট্রুসিভ(আগ্নেয় শিলার গঠনের এক বিশেষ প্রণালী যেখানে, পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে গরম ম্যাগমা উপরিভাগে প্রবাহিত হয় এবং লাভা হিসাবে বায়ুমণ্ডলে সহিংসভাবে বিস্ফোরিত হয়ে চুনাপাথর(পাইরোক্লাসটিক বা টাফ) হিসাবে ভূপতিত হয়)।

২.হালকা বর্ণযুক্ত।

৩.ক্ষুদ্র স্ফটিক বা ক্রিস্টালের ন্যায় গঠন কাঠামোযুক্ত।

৪.দ্রুত শীতল হয়।

৫.ফেলসিক প্রকৃতির (ভূতত্বে ফেলসিক শব্দটি ফেল্ডস্পার (এলুমিনিয়াম পটাশিয়াম) ও কোয়ার্টজ (স্ফটিক) সমৃদ্ধ আগ্নেয় শিলাকে নির্দেশিত করতে ব্যবহার হয়)।

৬.উচ্চ মাত্রায় সিলিকা বর্তমান।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. The Illustrated Encyclopedia of Rocks of the World by John Farndon, page 54.
  2. J. Martí, G.J. Aguirre-Díaz, A. Geyer. "The Gréixer rhyolitic complex (Catalan Pyrenees): an example of Permian caldera". Workshop on Collapse Calderas – La Réunion 2010. IAVCEI – Commission on Collapse Calderas.
  3. Cascades Volcano Observatory। "Cascades Volcano Observatory"usgs.gov। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  4. ROBERT CINITS। "The Proteus Property" (পিডিএফ) 
  5. "Rhyolite Ghost Town"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১২-২২ 
  6. Lipman, P.W. (১৯৮৭)। Rare-Earth-Element Compositions of Cenozoic Volcanic Rocks in the Southern Rocky Mountains and Adjacent Areas (USGS Bulletin 1668) (পিডিএফ)। Washington D.C.: USGS। পৃষ্ঠা 4। 
  7. "Changbaishan volcano"www.volcanodiscovery.com 
  8. "Yandang Shan"। ২০১৬-০২-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-২২ 
  9. Richthofen, Ferdinand Freiherrn von (১৮৬০)। "Studien aus den ungarisch-siebenbürgischen Trachytgebirgen" [Studies of the trachyte mountains of Hungarian Transylvania]। Jahrbuch der Kaiserlich-Königlichen Geologischen Reichsanstalt (Wein) [Annals of the Imperial-Royal Geological Institute of Vienna] (German ভাষায়)। 11: 153–273। 
  10. Simpson, John A.; Weiner, Edmund S. C., সম্পাদকগণ (১৯৮৯)। Oxford English Dictionary13 (2nd সংস্করণ)। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 873। 
  11. Young, Davis A. (২০০৩)। Mind Over Magma: The Story of Igneous PetrologyPrinceton University Press। পৃষ্ঠা 117আইএসবিএন 0-691-10279-1 
  12. "Definition of RHYOLITE"www.merriam-webster.com 
  13. "Definition of LITE"www.merriam-webster.com 
  14. Fergus, Charles (২০০১)। Natural Pennsylvania: Exploring the State Forest Natural Areas। Stackpole Books। পৃষ্ঠা 30। ওসিএলসি 47018498 
  15. Bricker, Dakota। "Snaggy Ridge Indian Rhyolite Quarries"। Mercersburg Historical Society। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-২০ 

অতিরিক্ত তথ্য সম্পাদনা