রাজৈর উপজেলা

মাদারীপুর জেলার একটি উপজেলা

রাজৈর বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত একটি একটি উপজেলা যা ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি ঢাকা বিভাগের অধীন মাদারীপুর জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে একটি[২] এবং মাদারীপুর জেলার সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত। রাজৈর উপজেলার উত্তরে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা, দক্ষিণে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাগোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে মাদারীপুর সদর উপজেলাশিবচর উপজেলা, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলাফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা। রাজৈর উপজেলার উপর দিয়ে মাদারীপুর বিলরুট নদী, কুমার আপার নদী, কুমার লোয়ার নদী প্রবাহিত হয়েছে।

রাজৈর
উপজেলা
মানচিত্রে রাজৈর উপজেলা
মানচিত্রে রাজৈর উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৩°১২′১৩″ উত্তর ৯০°১′৪৫″ পূর্ব / ২৩.২০৩৬১° উত্তর ৯০.০২৯১৭° পূর্ব / 23.20361; 90.02917 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলামাদারীপুর জেলা
রাজৈর থানা১৯১৪
আয়তন
 • মোট২২৯.২৮ বর্গকিমি (৮৮.৫৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট২,৩৭,৪৫৮
 • জনঘনত্ব১,০০০/বর্গকিমি (২,৭০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৮.২%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৭৯১০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৫৪ ৮০
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

রাজৈরের চান্দার বিল ও বাগিয়ার বিলের ৫১৮ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে প্রাকৃতিক সম্পদ পিট কয়লা রয়েছে।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৪ সালে রাজৈর থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৩] বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালে রাজৈর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজৈর উপজেলার সংসদীয় আসন মাদারীপুর-২। রাজৈর উপজেলা ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-২ আসনটি জাতীয় সংসদে ২১৯ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।

পটভূমি সম্পাদনা

উজানির রাজাদের নিকট হতে রাজা রাম রায় ফতেজঙ্গপুর পরগনার জমিদারি লাভ করেন। রাজারাম রায়ের রাজ কর্মচারীরা ঐতি মোহনায় তাদের আস্তানা গড়ে তোলে। এখানেই এ অঞ্চলের পূর্বাপর রাজাদের বিশ্রাম এর স্থান হিসাবে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় রাজৈর।[১] ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীনকালে এ অঞ্চল কোটালীপাড়া নামে পরিচিত ছিল। একসময় এ অঞ্চলের প্রশাসনিক নাম ছিল নাব্যমন্ডল। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে কোটালীপাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। গ্রিকবীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে কোটালীপাড়া অঞ্চলে গঙ্গারিডাই জাতি স্বাধীনভাবে রাজত্ব করত। তারপর এ অঞ্চল (৩২০-৪৯৬ খ্রিঃ) গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে ছিল। ৫০৭-৮ খ্রীষ্টাব্দের কিছু আগে রাজত্ব করেছেন দ্বাদশাদিত্য - মহারাজাধিরাজ বৈন্যগুপ্ত নামক এক রাজা। ৫৪০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করছেন গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য এবং নরেন্দ্রাদিত্য সমাচারদেব।[৪] বাংলার স্বাধীন শাসক শশাঙ্কের মৃত্যুর পর খড়গ বংশ ও দেব রাজবংশ এ অঞ্চল শাসন করে। পাল রাজবংশের (৭৫০-১১৬২ খ্রিঃ) রাজা দ্বিতীয় বিগ্রহপালের রাজত্বকালে (৯৬৯–৯৯৫ খ্রিঃ) হরিকেলের (পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা) কান্তিদেব ‘মহারাজাধিরাজ’ উপাধি গ্রহণ করে একটি পৃথক রাজ্য স্থাপন করেন এবং এই অঞ্চল শাসন করে। পরবর্তীকালে চন্দ্র রাজবংশ দশম ও এগার শতকে স্বাধীনভাবে এই অঞ্চল শাসন করে।[৫] সেন রাজবংশের (১০৯৮-১২৩০ খ্রিঃ) পতনের পর চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, মাদারিপুর তথা রাজৈর উপজেলা চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অধীনে ছিল।

সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৫ খ্রিঃ) ফরিদপুর ও চন্দ্রদ্বীপের একাংশ দখল করে ফতেহাবাদ পরগনা গঠন করেন। সুলতান হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিঃ) ফতেহাবাদের জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। ১৫৩৮ হতে ১৫৬৩ সাল পর্যন্ত শেরশাহ ও তার বংশধরগণ শাসন করেন। ১৫৬৪ হতে ১৫৭৬ সালে পর্যন্ত কররানি বংশ রাজত্ব করে, তারপর ১৫৭৬ হতে ১৬১১ সাল পর্যন্ত বারোভূঁইয়ার অন্যতম বাকলার কন্দর্প রায়, রামচন্দ্র রায়ের অধীনে ছিল এ অঞ্চল। মুঘল সাম্রাজ্যনবাবী শাসন চলে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত।[৬]

ব্রিটিশ শাসনামলে এ অঞ্চল ১৭৯৭ সালে সৃষ্ট বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫৪ সালের ২রা নভেম্বর মাদারিপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে রাজৈর অঞ্চল সদর মহকুমাধীন ছিল। ১৮৫৯ সালে ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হলে মাদারিপুর মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলা থকে আলাদা করে ১৮৭৫ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৮১ সালে রাজৈরের সেনদিয়া গ্রামের অম্বিকাচরণ মজুমদার ফরিদপুর পিপলস এসোসিয়েশন নামে পূর্ববঙ্গের প্রথম রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] ১৯১৪ সালে মাদারিপুর থানার পশ্চিমাংশের কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে রাজৈর থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৩] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এলাকাটি দখল করে সেনদিয়া গ্রামের ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।[৭] ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর খালিয়া ইউনিয়নের বৌলগ্রামের যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৩৫ জন সেনা আটক হয় এবং রাজৈরকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়।[৮] বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ রাজৈর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

ভূগোল সম্পাদনা

রাজৈর উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°০৬´ থেকে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৬´ থেকে ৯০°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর মোট আয়তন ২২৯.২৮ বর্গ কিলোমিটার।[৯] রাজৈর উপজেলার কেন্দ্র থেকে দক্ষিণে গোপালগঞ্জ, পূর্বে মাদারীপুর জেলা সদর অবস্থিত। এর উত্তরে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা, দক্ষিণে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাগোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে মাদারীপুর সদর উপজেলাশিবচর উপজেলা, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলাফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা[৭]

ভৌগোলিক ভাবে রাজৈর পূর্বাঞ্চলীয় সক্রিয় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপে অবস্থিত।[১০] এ অঞ্চল গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি অর্থাৎ পদ্মা বিধৌত নিম্ম পলল ভূমি এলাকা।[১১] বাংলাদেশের কৃষি-প্রতিবেশ অঞ্চল ১৪-তে অন্তর্ভুক্ত এলাকাটি শুষ্ক মৌসুমে ভিজা থাকে এবং বর্ষা মৌসুমে গভীরভাবে প্লাবিত হয় ও প্রায় প্রত্যেক বছরেই কম-বেশি বন্যা কবলিত হয়।[১২] রাজৈরের চান্দার বিল ও বাগিয়ার বিলের ৫১৮ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে প্রাকৃতিক সম্পদ পিট কয়লা রয়েছে।[১৩] ১৯৮০ সালের দিকে রাজৈরের আলম দস্তার, টেকেরহাট, ইশিবপুর, শাখারপাড়, হৃদয়নন্দী, খালিয়া, বাজিতপুর, নয়াকান্দি, লখার বিল, লাউসার বিল, আমগ্রাম বিল, পশ্চিম খালিয়া, সেনদিয়া, পলিতা, আড়ুয়াকান্দি, লক্ষ্মীপুর, কদমবাড়ি, বিল বাঘিয়া ও পার্শ্ববর্তী ভেন্নাবাড়ি, জলিরপাড়, কলিগ্রাম, সাতপাড়, চান্দার বিল এলাকায় খানা-খন্দ, বিল-বাঁওড় থেকে মাটি কাটা ও পুকুর খনন করতে গিয়ে পিট কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়।[১৪] নিম্নমানের ভিজা পিটের ভারবহন ক্ষমতা কম এবং এগুলো শুকানো হলে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। মাক স্তরগুলো অপরিবর্তনীয়ভাবে শক্ত হয়ে কয়লা-সদৃশ পিন্ডে পরিণত হয় এবং এদেরকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব মৃত্তিকা চরম অম্লীয় এবং পটাশিয়াম, সালফার, জিঙ্ক ও কপারের অলভ্যতার কারণে কৃষিকাজে এসব মৃত্তিকা ব্যবহারের অনুপযোগী। পিট স্তরগুলোকে ভূ-জলে আর্সেনিক যুক্ত হওয়ার কারণ মনে করা হয়।[১২] এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ ৬৯%।[১৫]

রাজৈর উপজেলার উপর দিয়ে মাদারীপুর বিলরুট নদী, কুমার আপার নদী, কুমার লোয়ার নদী প্রবাহিত হয়েছে। কুমার আপার নদীটি মাদারীপুর সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে উৎপন্ন হয়ে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নে দুই ভাগ হয়ে একটি শাখা কুমার লোয়ার নদী নামে পুনরায় আড়িয়ল খাঁ নদে পতিত হয়েছে এবং অন্য শাখা মাদারিপুর বিলরুট নদী নামে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নদীতে নিপতিত হয়েছে। এছাড়া এ উপজেলায় চান্দার বিল ও বাগিয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।[৭]

প্রশাসন সম্পাদনা

১৮৫৪ সালে সৃষ্ট মাদারিপুর মহকুমার অধীনে ১৯১৪ সালে রাজৈর থানা গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং তখন রাজৈর থানা উপজেলায় রুপান্তরিত হয়। রাজৈর উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ১১টি ইউনিয়ন, ৯৫টি মৌজা ও ১৮৬টি গ্রাম রয়েছে।[১] ইউনিয়নগুলো হলো আমগ্রাম ইউনিয়ন, বদরপাশা ইউনিয়ন, বাজিতপুর ইউনিয়ন, হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়ন, হোসেনপুর ইউনিয়ন, ইশিবপুর ইউনিয়ন, কবিরাজপুর ইউনিয়ন, কদমবাড়ী ইউনিয়ন, খালিয়া ইউনিয়ন, পাইকপাড়া ইউনিয়ন, রাজৈর ইউনিয়ন[১]

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ৭ মে টেকেরহাট বন্দরসহ  রাজৈর ও খালিয়া ইউনিয়নের অংশ নিয়ে রাজৈর পৌরসভায় রূপান্তরিত করে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন।[১৬] ২০১৫ সালের ১১ই জানুয়ারি প্রথম পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শামীম নেওয়াজ মুন্সি রাজৈর পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।[১৭] বর্তমানে তিনিই পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরসভাটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক তৃতীয় শ্রেণীর (গ-শ্রেণী) পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃত।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজৈরের সংসদীয় আসন মাদারীপুর-২। রাজৈর উপজেলা ও মাদারিপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়ন, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন, কুনিয়া ইউনিয়ন, পেয়ারপুর ইউনিয়ন, ধুরাইল ইউনিয়ন, রাস্তি ইউনিয়ন, পাচখোলা ইউনিয়ন, কালিকাপুর ইউনিয়ন, ছিলারচর ইউনিয়ন, দুধখালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে ২১৯ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।[১৮] বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুষ্ঠিত ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই রাজৈরের সংসদীয় আসনটি তৈরি করা হয়। প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মৌলভী আচমত আলী খান১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কাজী মাহবুব আহমেদ মিলন, ১৯৮৬ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী শাজাহান খান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ফেব্রু ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক তবে ১৯৯১ উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাজাহান খান, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তারিখে বিএনপির কাজী মাহবুব আহমেদ মিলন, জুন ১৯৯৬ তারিখে আওয়ামী লীগের শাজাহান খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাজাহান খান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১৯] তিনি ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

অর্থনীতি সম্পাদনা

রাজৈরের জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি যা মোট আয়ের ৬০.৬৮%, এছাড়া অকৃষি শ্রমিক ২.৩৩%, শিল্প ১.০৪%, ব্যবসা ১৯.৫৫%, পরিবহন ও যোগাযোগ ১.৮২%, চাকরি ৪.০৯%, নির্মাণ ২.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৯৬% এবং অন্যান্য ৬.৬৬%। এ অঞ্চল মূলত খেজুর রস ও খেজুর গুড়ের জন্য বাংলাদেশে বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে পাট, খেজুর গুড়, তিল, সরিষার তেল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। রবি ও খরিফ ফসল হিসেবে চীনাবাদাম চাষ হয়। ২০০১ সালের ভূমি জরিপ অনুসারে রাজৈরের ৬৯.০১ শতাংশ বসবাসকারীর কৃষিভূমির মালিকানা রয়েছে। রাজৈরের প্রধান কৃষিজ ফসল ধান, পাট, আখ, গম, মিষ্টি আলু, ডাল, সরিষা, তিল ও শাকসবজি। ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, লিচু, কলা, পেঁপে, সবেদা সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। উপজেলার অনেক ইউনিয়নে গবাদি পশু পালন, মৎস খামার ও নার্সারি রয়েছে।

রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানা, কুটির ও তাঁতশিল্প অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্পকারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বরফকল, চালকল, সুতাকল, পাটকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা, ব্রোঞ্জের অলঙ্কার তৈরির কারখানা, টেকেরহাট মিল্কভিটা। কুটিরশিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প,  পিতল ও কাঁসাশিল্প, ঘানি। প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পাট, খেজুর গুড়, তিল, সরিষার তেল ও চিংড়ী।[১][৭]

সংস্কৃতি ও খেলাধুলা সম্পাদনা

রাজৈরের ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণ ধ্বনি অনেকাংশে অনুপস্থিত অর্থাৎ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা রয়েছে।[১] রাজৈরে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ রীতি-নীতি মনে চলে। বাংলাদেশের অন্য অনেক অঞ্চলের মত বিয়ের অনুষ্ঠানে ডুলি এবং পালকির প্রচলন ছিল। রাজৈরে মূলত গাজীর গান, কীর্তন, পাঁচালি, ধুয়াগান, বাউল গান, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া, ছিলকা, হেয়ালি, ধাঁধা, জারিগান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিচিত। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন: পালকি, ঘোড়ার গাড়ি।

সেনদিয়া ও কদমবাড়ী অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে চৈত্রসংক্রান্তি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এতে বাঁশ, বেত, প্লাস্টিক, মাটি ও ধাতুর তৈরি বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ও খেলনা, বিভিন্ন রকম ফল-ফলাদি ও মিষ্টি ক্রয়-বিক্রয় হয় এবং বায়োস্কোপ, সার্কাস, পুতুলনাচ, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া খালিয়ার রথের মেলা, বাজিতপুর মাঘীপূর্ণিমা মেলা ও কদমবাড়ি গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলা উল্লেখযোগ্য।[৭]

রাজৈরে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা বেশি জনপ্রিয়। এছাড়াও ব্যাডমিন্টন, এ্যাথলেটিকস্, ভলিবল, সাঁতার, কাবাডি স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই এ অঞ্চলে প্রচলিত। আঞ্চলিকভাবে হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, বউ ছি, লুকোচুরি খেলা হয়।

শিক্ষা সম্পাদনা

২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী রাজৈরের গড় সাক্ষরতার হার শতকরা ৪৮.২%; (পুরুষ ৫০.৯%, নারী ৪৫.৬%)। এ উপজেলায় ১৩৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৪ টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ০৫ টি মাদ্রাসা, ১৩ টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা, ০৬ টি কলেজ, ০২ টি কারিগরি কলেজ রয়েছে।[১]

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাজৈর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), খালিয়া রাজারাম ইনস্টিটিউশন (১৯০০), রাজকুমার এডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন (১৯০২), আমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), রাজৈর-গোপালগঞ্জ কাপালি যুবসংঘ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), ইশিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), কদমবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), আড়ুয়াকান্দি নটাখোলা বড়খোলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), হরিদাসদি-মহেন্দ্রদি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), শাঁখারপাড় উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), কাশিমপুর মেহেরআলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), রাজৈর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), টেকেরহাট পপুলার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), হাসানকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭১), চতুষ্পল্লী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), শহীদ সরদার শাহজাহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৬) প্রভৃতি।[৭] এ উপজেলার ইউনিয়নগুলোর মধ্যে, কদমবাড়ি ইউনিয়নের শিক্ষার হার প্রায় ৫৫.১% ও পাইকপাড়া ইউনিয়নের ৩৯%।

রাজৈর উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্য সব শহরের মতই। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত পাঁচটি ধাপ রয়েছে: প্রাথমিক (১ থেকে ৫), নিম্ন মাধ্যমিক (৬ থেকে ৮), মাধ্যমিক (৯ থেকে ১০), উচ্চ মাধ্যমিক (১১ থেকে ১২) এবং উচ্চ শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত ৫ বছর মেয়াদী হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়, ৩ বছর মেয়াদী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), ২ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক শিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি), ২ বছর মেয়াদী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়।

মূলত বাংলা ভাষায় পাঠদান করা হয় তবে ইংরেজি ব্যাপকভাবে পাঠদান ও ব্যবহৃত হয়। অনেক মুসলমান পরিবার তাদের সন্তানদের বিশেষায়িত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন মাদ্রাসাতে প্রেরণ করেন। মাদ্রাসাগুলোতেও প্রায় একই ধরনের ধাপ উত্তীর্ণ হতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোন শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। রাজৈরে উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজ রয়েছে যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিএ ডিগ্রি প্রদান করে।

স্বাস্থ্য সম্পাদনা

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হার তুলনামূলক কম হলেও এটি মূলত দারিদ্র্যতার সাথে সম্পর্কিত হওয়ায়, এর উন্নতির সাথে সাথে বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজৈর অঞ্চলে অপুষ্টি, পরিবেশগত স্যানিটেশন সমস্যা, ডায়াবেটিস, সংক্রামক রোগ প্রভৃতি বেশি দেখা যায়। উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতালের সাথে সাথে ৭টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। ৫টি উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়াও ৮০টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে।[১]

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক এন৮ (ঢাকা - মাওয়া ফেরীঘাট (আর৮১২) - ফেরী - ভাঙ্গা (এন৮০৪, এন৮০৫) - বরিশাল (এন৮০৯) - পটুয়াখালী) রাজৈরকে ঢাকা থেকে রাজৈর হয়ে বরিশাল-পটুয়াখালীর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এই মহাসড়ক থেকে আঞ্চলিক মহাসড়ক আর৮৫০ (টেকেরহাট- গোপালগঞ্জ (হরিদাশপুর সেতু)- মোল্লাহাট (গোনাপাড়া) সড়ক রাজৈর শহর হয়ে গোপালগঞ্জের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে।

রাজৈর থেকে ঢাকাগামী অধিকাংশ বাস সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও কদমতলী বাস টার্মিনাল এসে থামে। রাজৈর জিরো পয়েন্ট থেকে মাদারীপুর জেলা সদরের দূরুত্ব ২০ কিলোমিটার, রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ১০২ কিলোমিটার।

১৯৬৫ সালে ৩৫.২৫ মাইল ভাঙ্গা-মাদারিপুর রাস্তা সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যামে রাজৈরে সড়ক পথে প্রথম যোগাযোগ শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে টেকেরহাট-রাজৈর-মাদারিপুর রুটে প্রথম বাস সার্ভিস চালু হয়।[৪]

২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী এ উপজেলায় ১১১.৮৭ কিলোমিটার পাকারাস্তা, ৫২৭.৬৭ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা ও ৭০ নটিক্যাল মাইল নৌপথ রয়েছে। এ উপজেলায় কোন রেললাইন বা ট্রেন যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হতে মাদারীপুর লঞ্চ টার্মিনালে নৌপথ নিয়োমিত নৌযাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া এক ইউনিয়ন হতে অন্য ইউনিয়নে চলাচল বা অভ্যন্তরীন নৌযাতায়াতের এর জন্য স্থানীয় নৌযান রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা

 
রাজারাম মন্দির

উল্লেখযোগ্য স্থান সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "রাজৈর উপজেলা"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  2. "ঢাকা বিভাগ"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  3. মাদারীপুর জেলা ব্রান্ড বুক। মাদারীপুর: জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর। সেপ্টেম্বর ২০১৮। পৃষ্ঠা ১৩১। আইএসবিএন 978-984-516-072-8 
  4. মাহমুদ, লিখন (২০১৭)। মাদারিপুর ইতিবৃত্ত। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মাদারিপুর। 
  5. Sailendra Nath Sen (১৯৯৯)। Ancient Indian History and Civilization। New Age International। পৃষ্ঠা 277–287। আইএসবিএন 978-81-224-1198-0 
  6. "মাদারীপুর জেলা"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  7. "রাজৈর উপজেলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  8. "রাজৈর উপজেলা মুক্ত দিবস কাল | কালের কণ্ঠ"কালের কণ্ঠ। ২০১৯-১২-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  9. "পপুলেশন এন্ড হাউজিং সেন্সাস ২০১১" (পিডিএফ)বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  10. "বঙ্গীয় বদ্বীপ"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  11. "প্লাবনভূমি"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  12. "পিট মৃত্তিকা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  13. "পিট"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  14. "মাদারীপুরে পিট কয়লার অফুরন্ত ভাণ্ডার"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২০১৬-০৬-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  15. "আর্সেনিক"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  16. "আজ রাজৈর পৌরসভা নির্বাচন, মেয়র পদে লড়াই হবে ত্রিমুখী"নবরাজ। ২০১৫-০১-১১। ২০২০-০৮-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  17. "রাজৈর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে শামীম নেওয়াজ বিজয়ী | কালের কণ্ঠ"কালের কণ্ঠ। ২০১৫-০১-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  18. "Election Commission Bangladesh - Home page"বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৬ 
  19. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২০ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা