রজার বিজেসুরিয়া

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার

রজার জারার্ড ক্রিস্টোফার এডিরিবীরা বিজেসুরিয়া (সিংহলি: රොජර් විජේසූරිය; জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০) মোরাতুয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক শ্রীলঙ্কান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

রজার বিজেসুরিয়া
රොජර් විජේසූරිය
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামরজার জারার্ড ক্রিস্টোফার এডিরিবীরা বিজেসুরিয়া
জন্ম (1960-02-18) ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬০ (বয়স ৬৪)
মোরাতুয়া, শ্রীলঙ্কা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনস্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স
ভূমিকাবোলার, কোচ
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৫)
২২ মার্চ ১৯৮২ বনাম পাকিস্তান
শেষ টেস্ট৭ নভেম্বর ১৯৮৫ বনাম পাকিস্তান
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ২৬)
১২ মার্চ ১৯৮২ বনাম পাকিস্তান
শেষ ওডিআই৩ নভেম্বর ১৯৮৫ বনাম পাকিস্তান
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৪২ ২২
রানের সংখ্যা ২২ ১৮ ৪৮৬ ৬৪
ব্যাটিং গড় ৪.৪০ ১৮.০০ ১৬.২০ ২১.৩৩
১০০/৫০ ০/০ ০/০ ০/১ ০/০
সর্বোচ্চ রান ১২* ৭৭* ২৪*
বল করেছে ৫৮৬ ৩১২ ৭,০১৪ ৯৩১+
উইকেট ১০৭ ৩২
বোলিং গড় ২৯৪.০০ ৩৫.৮৭ ২৫.৭৭ ২১.৩৪
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/৬৮ ২/২৫ ৬/৫১ ৫/২১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/– ২/– ২৭/– ৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কোল্টস ও মোরাতুয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন রজার বিজেসুরিয়া

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

মোরাতুয়ার সেন্ট সেবাস্তিয়ান কলেজে অধ্যয়ন করেছেন তিনি। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত রজার বিজেসুরিয়া’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পূর্বে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে দূর্দান্ত খেলা উপহার দিয়েছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৫ উইকেট লাভ করেছিলেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও লিস্ট-এ ক্রিকেটে দূর্দান্ত খেললেও পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোটেই সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি তিনি। ১৯৭৯ সালের পূর্বে পাকিস্তান সফরে যুব দলের সদস্যরূপে যান। ঐ সিরিজে ২৫ উইকেট পান তিনি।

ইংল্যান্ড গমন সম্পাদনা

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে নিজস্ব প্রথম খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেন। ল্যারি গোমসকে আউট করেন। ঐ খেলায় তার দল সাত উইকেটে জয়লাভ করেছিল। এছাড়াও ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি তিনি। ইংল্যান্ড সফরে পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩৭.৭০ গড়ে দশ উইকেট লাভ করেন। তন্মধ্যে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত তিনদিনের খেলায় ৩/১৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।

১৯৮১ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্যে পুনরায় শ্রীলঙ্কা দলে আহুত হন। এ সফরে তিনি তুলনামূলকভাবে ভালো খেলেন। তন্মধ্যে, অক্সফোর্ডকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ দলের বিপক্ষে ৫/৩৫ পান। এটিই তার খেলোয়াড়ী জীবনের প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ। এছাড়াও ঐ খেলায় অপরাজিত ৬ রান সংগ্রহ করেন। মহেশ গুণতিলকের সাথে শেষ উইকেট জুটির অনবদ্য নৈপুণ্যে দলকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ সফরে পাঁচ খেলায় অংশ নিয়ে ৩১.১৩ গড়ে ১৫টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পান।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে চারটিমাত্র টেস্ট ও আটটিমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন রজার বিজেসুরিয়া। ২২ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে লাহোরে স্বাগতিক পাকিস্তান দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে করাচীতে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

মার্চ, ১৯৮২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে পাকিস্তান গমন করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত ওডিআইয়ে ৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ২০ রান সংগ্রহকারী মনসুর আখতারকে আউট করেন। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২৪টি ওভার বোলিং করলেও উইকেট শূন্য অবস্থায় থাকেন। এ পর্যায়ে তিনি জহির আব্বাসের ব্যাটিংয়ে তোপে পড়েন। ঐ টেস্টে শ্রীলঙ্কা দল স্বাগতিকদের কাছে ইনিংস ও ১০২ রানে পরাভূত হয়েছিল। এরপর বিজেসুরিয়াকে দলের বাইরে রাখা হয়।

ভারতের মুখোমুখি সম্পাদনা

তিন বছর পর ১৯৮৫ সালে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্যে পুনরায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রথম ওডিআইয়ে কৃষ শ্রীকান্তমোহাম্মদ আজহারউদ্দীনকে শুরুতেই বিদেয় করলেও আট ওভারে ৫৬ রান দেন। খেলায় সফরকারী দল দুই উইকেট জয়লাভ করে। তাসত্ত্বেও তাকে দলে রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তী দুই খেলায় নয় ওভারে ৫৪ রান দিয়ে ফেলেন।

খেলায় ধারাবাহিকতা না থাকলেও ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে পাকিস্তান সফরের জন্যে বিজেসুরিয়াকে দলে রাখা হয়। প্রথম দুই টেস্টে তিনি কোন উইকেট পাননি। ৪৮ ওভার বোলিং করার পর অবশেষে করাচীর জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট উইকেটের সন্ধান পান। তার বলে আবদুল কাদির সিদাথ ওয়েতিমুনিকে ক্যাচ দেন। এরফলে খেলায় তার টেস্ট বোলিং গড় সৃষ্টি হয়। এ খেলা শেষে বোলিং গড় হয় ২৯৭.০০। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রল লুইস তার এ রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩০০-এর অধিক গড়ে নিজের অনুকূলে নিয়ে যান। কিন্তু, ২০০৮ সালে বেশ সফলতার স্বাক্ষর রেখে বোলিং গড় নিচেরদিকে নিয়ে আনেন রল লুইস।

এছাড়াও, ঐ সফরে রজার বিজেসুরিয়া ওডিআইয়ে তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। পাঁচ ওভারে ২/২৫ পান এবং মুদাসসর নজর, মহসিন কামাল ও আবদুল কাদিরের বোলিং তোপে পড়ে শীর্ষসারিতে ব্যাটিং ধ্স নামলে ১২ রান তুলেন। তাসত্ত্বেও, ঐ খেলায় শ্রীলঙ্কা দল ৮৯ রানে পরাজিত হয় এবং ওডিআইয়ে ৪-০ ও টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পরাভূত হয়। এগুলোই তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বশেষ খেলা ছিল।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম বোলিং গড়ের অধিকারী তিনি।[১] স্ট্রাইক রেট দাঁড়ায় প্রতি ৫৮৬ বলে এক উইকেট। একমাত্র উইকেট পেতে তাকে ৯৭ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছিল। অন্য কথায় যদি তিনি পাঁচ-দিনের টেস্টে একাধারে বোলিং করে যেতে তাহলে প্রতিপক্ষের মাত্র চার জন ব্যাটসম্যান আউট হতেন। ও প্রতিপক্ষীয় দল ১৩৫৫ রান তুলতে পারতেন।

জাতীয় দলে প্রত্যাখ্যান সম্পাদনা

১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে দল শ্রীলঙ্কা সফরে আসে। শ্রীলঙ্কা বি দলের সদস্যরূপে বেশ কয়েকটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ড্র হওয়া খেলায় ১০২ রান খরচায় ছয় উইকেট পান। তবে, তাকে আর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ দেয়া হয়নি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে মোরাতুয়া স্পোর্টস ক্লাবে খেলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে গালেতে কলম্বো দলের পক্ষে নিজস্ব সেরা বোলিং প্রথম-শ্রেণীর বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৬/৫২। এরপর ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কোল্টসের পরে সর্বশেষ মৌসুম অতিবাহিত করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The real deal"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৯ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা