মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (বীর প্রতীক)

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (১৯৩৫ – ২ মে ২০১৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
জন্মআনু. ১৯৩৫
মৃত্যু২ মে ২০১৯ (বয়স ৮৪)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের চৌহদ্দী গ্রামে। তার বাবার নাম আরব আলী এবং মায়ের নাম মিশ্রি বেগম। তার স্ত্রীর নাম আবেদা খাতুন । তাদের দুই মেয়ে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে তারা কয়েকজন এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে অবস্থানরত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর তারা আশুগঞ্জে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কোনো একদিন। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানাটি জেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে। ধরমপাশার পশ্চিমে নেত্রকোণা জেলার সীমানা। তারা যখন আক্রমণ করেন, তখন সেখানে পাকিস্তানি রাতের প্রথম প্রহর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি এর মধ্যেই বেরিয়ে পড়েন মো. নাজিম উদ্দিনসহ একদল দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সংখ্যায় তারা মোট ১৫ জন। তাদের দলনেতা তিনি নিজেই। সবার পরনে লুঙ্গি। তাদের অস্ত্র বলতে দু-তিনটি মাত্র রাইফেল আর বাকি সব রামদা ও লাঠি। তাই সম্বল করে তারা বৃষ্টিভেজা রাতে এগিয়ে যান। রাতের শেষ প্রহরে অতর্কিতে আক্রমণ চালান থানায়। তাদের আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়েন থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা। পাল্টা আক্রমণ বা প্রতিরোধ দূরের কথা, অস্ত্র ফেলে ওসি ও পুলিশরা সব পালিয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে ১৫টি রাইফেল ও বেশ কিছু গুলি। এরপর মো. নাজিম উদ্দিন ও তার সহযোদ্ধারা দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে চলে যান নিজেদের গোপন অবস্থানে। পাকিস্তান বিমানবাহিনী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে বেশ কয়েকবার হামলা চালায়। এই হামলায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে। তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর তিনি কয়েক দিন নিজ এলাকায় অবস্থান করে ভারতে চলে যান। এই সময় মো. নাজিম উদ্দিন ধরমপাশা থানায় গেরিলা আক্রমণ চালান। সফল এই আক্রমণ পরিচালনার পর তিনি পুনরায় ভারতের তেলঢালায় অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে তিনি কিছুদিন একটি ক্যাম্পে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বাছাই করে একটি ইয়ুথ কোম্পানি (১২০ সদস্য) গঠন করা হয়। এই কোম্পানি পরিচালনা ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পান তিনি। নাজিম উদ্দিন নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে সীমান্ত অতিক্রম করে স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহযোদ্ধাদের নিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় যান। সেখানে কমলপুরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। কয়েক দিন পর তারা সেখানে আক্রমণ করেন। তাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে। আট-নয়জন পাকিস্তানি সেনা তাদের হাতে নিহত হয়। দুজনকে তারা জীবিত অবস্থায় আটক করেন। এরপর তিনি তার দল নিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

মৃত্যু সম্পাদনা

মোহাম্মদ নাজিন উদ্দিন ২০১৯ সালের ২ মে মৃত্যুবরণ করেন।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৪-০৯-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৯০। আইএসবিএন 9789849025375 
  3. "বীর প্রতীক নাজিম উদ্দিন আর নেই"ইত্তেফাক। ৪ মে ২০১৯। ১৮ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৯ 

পাদটীকা সম্পাদনা