মিহির সেন

ভারতীয় সাঁতারু

মিহির সেন (১৬ নভেম্বর, ১৯৩০ - ১১ জুন, ১৯৯৭) একজন বাঙালি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সন্তরণবিদ যিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ১৯৫৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।[১] গিনেস বিশ্ব রেকর্ড বইতে ১৯৬৯ সালে তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দূরগামী সাঁতারু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।[২][৩]

মিহির সেন
Mihir Sen
জন্ম(১৯৩০-১১-১৬)১৬ নভেম্বর ১৯৩০
মৃত্যু১১ জুন ১৯৯৭(1997-06-11) (বয়স ৬৬)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাসাঁতারু, ফৌজদারি আইনজীবী, ব্যবসা
দাম্পত্য সঙ্গীবেলা উইংগারটেন সেন
পুরস্কারপদ্মশ্রী ১৯৫৯
পদ্মভূষণ ১৯৬৭
ব্লিৎজ নেহেরু ট্রফি ১৯৬৭

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ডাক্তার রমেশ চন্দ্র সেন ও লীলাবতীর সন্তান মিহির সেন পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। মিহির কটকে চলে যান মাত্র আট বছর বয়েসে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে। তার লেখাপড়া মূলত তার মায়ের আগ্রহে পরিচালিত হয়। ভুবনেশ্বর উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন। ব্যারিস্টারি পড়ার ইচ্ছায় বিদেশ যেতে চাইলেো আর্থিক বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। ওড়িশার তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়েকের আর্থিক সহায়তায় ১৯৫০ সালে বিলেতগামী জাহাজে রওনা দেন তিনি অল্প কিছু টাকা ও তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট সম্বল করে।

সন্তরণ কৃতিত্ব সম্পাদনা

লন্ডনে গিয়ে তিনি রেলওয়ে স্টেশনে নৈশ কুলীর কাজ করতে থাকেন। ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্ডিয়া হাউসে যোগাযোগ হওয়ার পর লিংকনস ইন' এ তার ব্যারিস্টারী পড়া শুরু হয়। সারাদিন ইন্ডিয়া হাউসে কাজ কর‍তেন ও রাত্রে পড়াশোনা করতেন তিনি। স্থানীয় একটি পত্রিকায় আমেরিকান সাঁতারু ফ্লোরেন্স চ্যাডউইকের সাক্ষাৎকার পড়ার পর তিনি ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে পার করার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। যদিও তার এর আগে দীর্ঘ সাঁতারের অভিজ্ঞতা ছিলনা। কিছুদিন প্রশিক্ষণের পর তিনি ফ্রি স্টাইল সাঁতারে দক্ষ হয়ে ওঠেন। কয়েকবার চেষ্টার পরে ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৫২ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। সময়ের হিসেবে তার এই সাঁতার কৃতিত্ব ছিল বিশ্বের চতুর্থ দ্রুততম।

 
লন্ডনে ইন্ডিয়া হাউসে, লর্ড ফ্রেইবার্গের হাত থেকে শংসাপত্র গ্রহণ করছেন মিহির সেন

ভারতে প্রত্যাবর্তন সম্পাদনা

ভারতে ফিরে তিনি কলকাতা উচ্চ আদালতে ফৌজদারি আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। পরে তিনি ব্যবসাসফল একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হন। তার প্রতিষ্ঠান ভারত সরকারের অনুমোদন পায় এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেশম রপ্তানীকারক কোম্পানি হয়ে ওঠে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তাকে উচ্চ সরকারি পদের অফার করেন পরিবর্তে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) প্রচারে আসার অনুরোধ জানান,যদিও প্রামাণ্য কোনো তথ্য নেই। মিহির সেন ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর ফলে তার রেশমের রপ্তানি ব্যবসা বিরাগভাজন হয় এবং বেতন নিয়ে সমস্যার কারণে শ্রমিক ইউনিয়নের বিক্ষোভে তা বন্ধ করে দিতে হয় ।[৩]

পুরস্কার সম্পাদনা

মৃত্যু সম্পাদনা

মিহির সেন এলজাইমার্স ও পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৭ সালের জুন মাসে মারা যান।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "MIHIR SEN: FACTS,BIOGRAPHY"factsninfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 
  2. "Mihir Sen Hailed Greatest"। The Indian Express। ১ জানুয়ারি ১৯৭০। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৭ 
  3. "Begging recall"thestatesman.net। দ্য স্টেটসম্যান। ৬ জানুয়ারি ২০১৩। Archived from the original on ২৫ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৭