মিসরীয় ইসলামি জিহাদ

মিসরীয় ইসলামি জিহাদ (EIJ, আরবি: الجهاد الإسلامي المصري, পূর্বে শুধুমাত্র ইসলামি জিহাদ (আরবি: الجهاد الإسلامي) এবং "Liberation Army for Holy Sites" নামে ডাকা হত।[১] স্বাভাবিকভাবে আল-জিহাদ, জিহাদি দল অথবা জিহাদি সংগঠন নামে পরিচিত।[২]) হচ্ছে একটি মিসরীয় ইসলামি মুজাহিদ দল যেটি ১৯৭০ সাল থেকে সক্রিয় হয়েছিল। এটির উপর জাতিসংঘ কর্তৃক আল কায়েদার শাখা হিসেবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।[৩] এটির উপর বিশ্বের আরো বিভিন্ন দেশ কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।[৪] এই দলটি যুক্তরাজ্য কর্তৃক সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০ অনুসারে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।[৫]

মিসরীয় ইসলামি জিহাদ
الجهاد الإسلامي المصري
একীভূত১৯৯৮
উত্তরসূরীআল কায়েদা
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৮২
প্রতিষ্ঠাতাআব্দুস সালাম ফারাজ
এর একত্রীকরণআল কায়েদার সাথে
সদরদপ্তর
যে অঞ্চলে
মিশর মিশর
দলটি ১৯৯৮ সালে আল কায়েদার সাথে একীভূত হয়ে যায়।

এই দলটির প্রথমদিকে মূল লক্ষ্য ছিল, মিসরীয় সরকারকে উৎখাত করে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু পরে এর উদ্দেশ্যে মিসরে এবং মিসরের বাহিরে মার্কিন এবং ইসরায়েলি স্থাপনাগুলোতে হামলা করাও যুক্ত হয়।

ইআইজে সারাবিশ্বেই অনেক গ্রেফতারির মুখোমুখি হয়েছে, উদাহরণতঃ ২০০৬-২০০৭ এ লেবানন ও ইয়েমেনের গ্রেফতারি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০০১ সালের জুনে আল কায়েদার সাথে মিসরীয় ইসলামি জিহাদ (যা অনেক বছর যাবত একে অপরের সহযোগী হিসেবে ছিল) "কায়েদাতুল জিহাদ" নামধারণ করে একীভূত হয়ে যায়।[৬] যাইহোক, জাতিসংঘ এই সংগঠনটি একীভূত হবার ঘোষণা দেবার পর ভিতরে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছিল।[৩]

২০১১ সালের মিসরীয় বিপ্লবের পর এই দলটির সাবেক নেতৃবৃন্দ ইসলামিক পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করে। এই দলটি ২০১৩ সালের সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানের সময় সরকারবিরোধী জোটে যোগদান করে।[৭]

ইতিহাস সম্পাদনা

"ফারাজ শুক্রবারে একটি গোপন মসজিদে নৈতিক বক্তৃতা দিতেন, যেই মসজিদ তার শ্বশুরালয়ের লোকেরা তৈরি করেছিলো। তিনি তার শ্রোতাদের থেকে একটি অংশকে সহিংস জিহাদ শুরু করতে একটি গোপন দলে যোগ দিতে রাজী করেন। কায়রো জঙ্গী গোষ্ঠী স্বায়ত্তশাসিত ছিল, কিন্তু তারা তবুও একটি সাধারণ কাজের কৌশল হিসেবে সাপ্তাহিক সাক্ষাত করতেন......।"[৮]

আল-জিহাদ অথবা "তানযিম আল-জিহাদ" (প্রচলিত বাংলায়: তানযিমুল জিহাদ) হচ্ছে ১৯৮০ সালে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দুটি পৃথক ইসলামি দলের নাম। একটি দল আব্দুস সালাম ফারাজের নেতৃত্বের কায়রো দল অপরটি কারাম জুহদির নেতৃত্বের সাইদি (উত্তর মিসরের অংশ) অঞ্চলের দল। [৮] ফারাজ ১৯৮০ সালে আল-ফারিদ্বাহ আল-গাইবাহ (অবহেলিত ফরজ বা দায়িত্ব) নামে আল-জিহাদ দলের নীতিনির্ধারণী বই লিখেন। বইটির ৫০০ কপি ছাপানো হয়।[৯]

মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত হত্যাকান্ডের পর মিসর সরকার তানযিমুল জিহাদের সদস্যদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু আদালতের বিচার চলাকালে জেলে কায়রো এবং সাইদির লোকেরা দুই ভাগ হয়ে যায়। কায়রোর জঙ্গি গোষ্ঠী পরে মিসরীয় ইসলামি জিহাদে পরিণত হয়। এবং সাইদির লোকেরা আল-জামাআতুল ইসলামিয়্যাহ অথবা অন্যান্য ইসলামি দলে যোগদান করেন। আয়মান আল-জাওয়াহিরি বলেন, ‘‘ইআইজে তাকফির ওয়াল হিজরা দল হতে পৃথক একটি দল। আমরা মানুষকে তাদের পাপের কারণে তাকফির করিনা। এবং আমরা মুসলিম ব্রাদারহুড থেকেও আলাদা। কারণ, তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিসর সরকারের বিরোধিতা করে না।’’[১০]

কায়রো জঙ্গী গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন আব্বুদ আল-যুমার, "মিসরের সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের একজন এককালীন অফিসার তাকে সাদাতহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই ঘটনা ইসলামি জিহাদকে খুব কম সময়ে শক্তভাবে দমন করে ফেলে।[১১]

মধ্যম শ্রেণীর সদস্যদের অধিকাংশই তিনবছরের মধ্যে জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। এরপর তারা মুজাহিদদের সহায়তা করতে নিজ ঘর থেকে পালিয়ে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে গমন করেন।[১২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Global Briefings, Issue 27, September 1998, “Osama Bin Laden tied to other fundamentalists”.
  2. Wright, Lawrence, Looming Tower, Knopf, 2006, p. 123
  3. The Al-Qaida Sanctions Committee, United Nations Security Council Committee 1267
  4. "'Terror' list out; Russia tags two Kuwaiti groups"Arab Times। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। 
  5. "Terrorism Act 2000"। 2000-এর Schedule 2, আইন নং. 11 
  6. "The Man Behind Bin Laden"The New Yorker। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৪ 
  7. "Pro-Morsy alliance considers presidential elections boycott"। Egypt Independent। ৩১ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৪ 
  8. Sageman, Marc, Understanding Terror Networks, University of Pennsylvania Press, 2004, p.134
  9. Benjamin, Daniel & Steven Simon. "The Age of Sacred Terror", 2002
  10. al-Zayat, Montasser, "The Road to al-Qaeda", 2002
  11. Murphy, Caryle, Passion for Islam: Shaping the Modern Middle East: the Egyptian Experience, Simon and Schuster, 2002, p.67
  12. Sageman, Marc, Understanding Terror Networks, University of Pennsylvania Press, 2004, p.147