মিল এন্ডস উদ্যান

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট উদ্যান

মিল এন্ডস উদ্যান (ইংরেজি: Mill Ends Park, অনুবাদ'কারখানার শেষ প্রান্তের উদ্যান') একটিমাত্র রোপিত বৃক্ষের স্থানসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির শহুরে উদ্যান।[১] উদ্যানটি যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ডের শহরতলীতে উইল্যামেট নদীর তীরবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম টেলর স্ট্রিটের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম নাইটো পার্কওয়ের সংযোগস্থলে সড়ক দ্বীপের উপর অবস্থিত। উদ্যানটি ২ ফুট ব্যসের (০.৬১ মিটার) বৃত্তের মাঝে অবস্থিত। এর মোট আয়তন ৪৫২ বর্গ ইঞ্চি (০.২৯২ বর্গ মিটার)। ১৯৭১ সালে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র উদ্যান-এর স্বীকৃতি দেয়।[২]

মিল এন্ড উদ্যান
Mill Ends Park
২০০৭ সালে উদ্যান
মানচিত্র
ধরনশহুরে উদ্যান
অবস্থানপোর্টল্যান্ড, অরেগন
স্থানাঙ্ক৪৫°৩০′৫৮″ উত্তর ১২২°৪০′২৪″ পশ্চিম / ৪৫.৫১৬১৯৪° উত্তর ১২২.৬৭৩২২৬° পশ্চিম / 45.516194; -122.673226
আয়তন৪৫২ বর্গ ইঞ্চি (০.২৯২ বর্গ মিটার)
নির্মিত১৯৪৮
পরিচালিতপোর্টল্যান্ড পার্কস এন্ড রিক্রিয়েশন

ইতিহাস সম্পাদনা

 
২০০৪ সালের গ্রীষ্মে (পুনর্নির্মাণের আগে)

১৯৪৮ সালে মিল এন্ডস উদ্যানের বর্তমান স্থানটি দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রন্ট অ্যাভিনিউ নামে পরিচিত ছিল। যা অরেগন জার্নাল-এর ভবন হতে দেখা যেত। এস্থানে একটি সড়কবাতির খুঁটি স্থাপনের জন্য গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ঐ গর্তে খুঁটি বসানো হয়নি। পরে থাকা গর্তটি আগাছায় ছেয়ে গিয়েছিল। অরেগন জার্নালের কলাম লেখক ডিক ফাগান গর্তটি অব্যবহৃত থাকার বিষয়টি খেয়াল করেছিলেন। তিনি এই গর্তে একটি ফুল গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। এসময় তিনি অরেগন জার্নালে 'মিল এন্ডস' শিরোনামের একটি নিয়মিত কলাম লিখতেন। তার কলামের নাম অনুসারে তিনি এই জায়গার নাম দেন 'মিল এন্ডস পার্ক'। তিনি এ স্থানটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট উদ্যান বলে প্রচার করতেন।[৩]

ডিক ফাগান আইরিশ বংশোদ্ভূত ছিলেন। তার ভাষ্য অনুসারে উদ্যানটি "আয়ারল্যান্ডের পশ্চিমে একমাত্র লেপ্রিকন (আইরিশ লোককাহিনীর জনপ্রিয় চরিত্র) উপনিবেশ"। ১৯৭৬ সালে উদ্যানটি আইরিশ সাধু প্যাট্রিকের স্মরণে উদযাপিত 'সাধু প্যাট্রিক দিবস'-উপলক্ষে উৎসর্গ করা হয়েছিল।[৪]

কিংবদন্তি সম্পাদনা

 
নভেম্বর, ২০১১ তে উদ্যানের চিত্র

ফাগান এই উদ্যানটিকে জনপ্রিয় করার জন্য এর উৎস সম্পর্কে আইরিশ লোককাহিনী নির্ভর একটি গল্প বলেছিলেন: তিনি অরেগন জার্নালের ভবনে তার জানালার দিয়ে বাইরে তাকালে মিল এন্ডস উদ্যানের স্থানটি দেখতে পেতেন। একবার বাইরে তাকিয়ে দেখেন একটি লেপ্রিকন গর্ত খুঁড়ছে। তিনি দৌড়ে এসে লেপ্রিকনকে ধরছিলেন। লেপ্রিকনকে ধরার জন্য তিনি একটি ইচ্ছা অর্জন করেছিলেন। ফাগান লেপ্রিকনকে তার নিজের একটি উদ্যান থাকার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন, তবে যেহেতু তিনি তার ইচ্ছায় এই পার্কটির আকার নির্দিষ্ট করে বলেননি, তাই লেপ্রিকন তাকে গর্তটি দিয়েছিলেন।[৫] পরের দুই দশক, ফাগান তার কাল্পনিক নিবন্ধগুলিতে এই উদ্যান এবং এই উদ্যানে বাস করা লেপ্রিকনদের নেতার কথা প্রায়ই লিখতেন। ফাগান দাবি করেছিলেন যে, তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি লেপ্রিকনদের নেতা প্যাট্রিক ও'টুলকে দেখতে পেতেন।[৪]

পোর্টল্যান্ড শহরের সকল পার্কে রাত ১১টার পর কারফিউ জারি হতো। ফাগান তার এক নিবন্ধে উদ্যানসমূহে কারফিউ করায় ও'টুলের হয়ে পোর্টল্যান্ডের মেয়রকে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, মেয়র লেপ্রিকন ও তাদের অনুসারীদের মিল এন্ডস হতে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন। কারফিউ উঠিয়ে না নিলে লেপ্রিকনরা মেয়রকে অভিশাপ দিবে। পরবর্তীকালে, তার এধরনের দাবির বিরুদ্ধে মেয়র কোন আইনানুগ পদক্ষেপ নেননি, তবে লেপ্রিকনদের ১১টার পরেও উদ্যানে থাকতে দেয়া হয়েছিল।[৬]

বিবর্তন সম্পাদনা

 
'অকুপাই পোর্টল্যান্ড' আন্দোলনের সময়, ডিসেম্বর ২০১১

ফাগান ১৯৬৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার অবর্তমানে অন্য লোকেরা উদ্যানটির যত্ন নেন। ১৯৭৬ সালে পোর্টল্যান্ড পার্কস এন্ড রিক্রিয়েশন কর্তৃপক্ষ উদ্যানটিকে সরকারি শহর উদ্যানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।[২]

শুরু হওয়ার পর উদ্যানটি বেশকিছু জিনিস দিয়ে সাজানো হয়েছে। সাজানোর জিনিসের মধ্যে প্রজাপতির জন্য ডাইভিং বোর্ড সহ ক্ষুদ্র সাঁতারপুল, ঘোড়ার জুতো, অরেগন জার্নাল ভবনের একটি টুকরা এবং একটি ক্ষুদ্র ফেরিচাকা উল্লেখযোগ্য।[২] উল্লেখ্য, ফেরিচাকাটি একটি পূর্ণ আকারের ক্রেন দিয়ে স্থাপন করা হয়েছিল।[৭] ১৯৭৬ সাল হতে উদ্যানটি 'সাধু প্যাট্রিক দিবসের উৎসব করার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া এই ক্ষুদ্রাকৃতির উদ্যানের পাশে ক্লান ম্যাকলে পাইপ ব্যান্ডের সংগীতানুষ্ঠান, পিকনিক এবং গোলাপ গাছ লাগানোর উৎসব হয়েছে।[৪]

২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রাস্তা সংস্কার করার জন্য উদ্যানটি সাময়িকভাবে স্থায়ী অবস্থান থেকে প্রায় ৮০ ফুট (২৪ মি) দূরে পোর্টল্যান্ড ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনের বাইরে একটি টবে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ, 'সাধু প্যাট্রিক দিবসে'র রীতিতে অনুষ্ঠান করে উদ্যানটিকে মূল স্থানে ফিরিয়ে আনা হয়।[৪][৮][৯]

২০১১ সালের ডিসেম্বরে, 'অকুপাই পোর্টল্যান্ড' আন্দোলনকারীরা ফ্ল্যাশ মব-এর অংশ হিসেবে উদ্যানটিতে প্লাস্টিকের খেলনা সৈন্য,ছোট ব্যানার পোস্টার ও তাঁবু দিয়ে সাজিয়ে দেয়।[১০]

২০১৩ সালের মার্চ-এ উদ্যানটির পাইন গাছ চুরি হয়েছিল। শহর কর্তৃপক্ষ একটি নতুন পাইন গাছের চারা রোপণ করে।[১১] একদিন পরে, একজন পথচারী নতুন চারার পাশে আরেকটি পাইন গাছ পড়ে থাকার কথা জানায়। ধারণা করা হয়, এটি চুরি হয়া গাছ, যা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়।[১২]

২০১৩ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ডের বার্ন্টউড শহর কর্তৃপক্ষ গিনেসের কাছে অভিযোগ এবং দাবি করে যে 'মিল এন্ডস' উদ্যান হওয়ার মতো যথেষ্ট বড় নয়। এর বদলে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ছোট উদ্যান প্রিন্স পার্কের নাম বিশ্বরেকর্ডে থাকা উচিত যেহেতু "এর চারপাশে একটি বেষ্টনী রয়েছে"।[১৩] প্রতিক্রিয়া হিসাবে, স্বেচ্ছাসেবীরা এর চারপাশে (কয়েক ইঞ্চি লম্বা) বেষ্টনি তৈরি করেছিলেন।[১৪]

২০১৮ সালে, পোর্টল্যান্ড পার্কস এন্ড রিক্রিয়েশন কর্তৃপক্ষ উদ্যানটির পাশে একটি ছোট সাইনবোর্ড স্থাপন ও ছোট গোলাপের চারা রোপণ করে।[১৫]

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, অজানা দুষ্কৃতিকারী উদ্যানের গাছ কেটে ফেললে শীঘ্রই নতুন চারা রোপণ করা হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Oregon.com"। ২০০৮-০৩-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৩ 
  2. "One step and you've left Mill Ends Park"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসএসোসিয়েটেড প্রেস। ২০০১-০৫-০৬। ২০১৭-০৩-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-১৫ 
  3. "Whose Bright Idea Was It to Claim Portland Has the World's Smallest Park?"Willamette Week (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৮ 
  4. City of Portland। "Portland Parks and Recreation: Mill Ends Park"। ২০২০-০৩-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৮ 
  5. Kimmel, Eric A.। "Mill Ends Park"The Oregon Encyclopedia। Portland State University। ২০২০-০৬-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১১ 
  6. Jen West (২০০৮-০৮-২৮), "Mill Ends Park: The Smallest Park in the World – Portland, Oregon …", BootsnAll, BootsnAll Travel Network, LLC. Travel Network, LLC., ২০১১-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১১ 
  7. "11 Fun Facts About Mill Ends Park, Portland's Leprechaun Colony"www.mentalfloss.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-১৬। ২০২০-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৭ 
  8. Hayes, Chatten (মার্চ ১৫, ২০০৭)। "It's a big occasion for tiniest park on planet"। inPortland magazineThe Oregonian 
  9. "Stumptown Stumper"Portland Tribune। ২০০৬-০৮-২৪। ২০২০-০৬-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২৪ 
  10. Ronning, Gina (২০১১-১২-১৬)। "The Biggest Occupation Ever"Portland Occupier। ২০১৩-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-২৩ 
  11. Hottman, Sara (২০১৩-০৩-০৭)। "Tree Stolen from Mill Ends Park Replaced – For the Good of Leprechauns, Officials Say"The Oregonian। ২০১৮-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৯ 
  12. Hottman, Sara (২০১৩-০৩-০৮)। "Tree Stolen from Portland's Mill Ends Park Returned – Maybe Leprechaun Magic, Maybe Remorse, Officials Say"The Oregonian। ২০১৮-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৯ 
  13. Hawkes, Ross (২০১৪-০৪-০৮)। "World's smallest park record challenged as Burntwood landmark bids to win title"। Lichfield Live। ২০২০-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-২৭ 
  14. Bell, Ifanyi (২০১৩-০৪-১০)। "Take That Lichfield: Tiny Fence Now At Tiny Park"। Oregon Public Broadcasting। ২০১৪-১২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-২৭ 
  15. Barr, Max (২০১৮-০৫-২৪)। "Portland's tiny Mill Ends Park now has its own tiny sign"। KREM। ২০২০-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-২৪ 
  16. "Tree cut down at World's Smallest Park in Portland"KOIN.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১২-২৭। ২০২০-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা