মাসকুলার ডিসট্রফি

জিনঘটিত রোগ যাতে প্রতিবর্তী ক্রিয়া সম্পাদনে অসুবিধা হয়

মাসক্যুলার ডিসট্রফি একটি জেনেটিক বা জিনঘটিত রোগ। এ রোগ হলে ডিস্ট্রোফিন প্রোটিনের অভাব দেখা দেয় যার ফলে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও দুর্বল হতে থাকে। কারণ, ডিস্ট্রোফিন পেশির কাজে প্রধান ভূমিকা রাখে। এ রোগের প্রভাবে হাঁটা-চলা, খাদ্য গলাধঃকরণ ও পেশির সমন্বয়ে সমস্যা হয়।

আক্রান্ত পেশীতে (ডানদিকে) টিস্যু বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে এবং ডিস্ট্রোফিন (সবুজ) এর ঘনত্ব স্বাভাবিক পেশীর (বামদিকে) তুলনায় অনেক কমে যায়।

মাসক্যুলার ডিস্ট্রোফি যেকোনো বয়সেই হতে পারে তবে শিশুদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। পুরুষরা নারীদের চেয়ে এ রোগে সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয়।

এ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ ও রোগের ধরন বিবেচনায় নেওয়া হয়। যদিও এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই কিন্তু প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা গ্রহণের ফলে কষ্ট কিছুটা কমে।

রোগের ধরণ সম্পাদনা

তিরিশের বেশি ধরনের মাসক্যুলার ডিসট্রফি বিদ্যমান। এর ভেতরে নয়টি প্রধান ও বাকিগুলো দুর্লভ। এদের মধহে ডুশেন মাসক্যুলার ডিসট্রফিতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়াও রয়েছে

বেকার মাসক্যুলার ডিসট্রফি

ফ্যাসিওস্কাপিউলোহিউমেরাল মাসক্যুলার ডিসট্রফি

লিম্ব-গার্ডল মাসক্যুলার ডিসট্রফি

ওকিউলোফ্যারিঞ্জিয়াল মাসক্যুলার ডিসট্রফি

ডিস্টাল মাসক্যুলার ডিসট্রফি

ইমেরি ড্রেইফাজ মাসক্যুলার ডিসট্রফি

কনজেনিটাল মাসক্যুলার ডিসট্রফি

মায়োটোনিক ডিসট্রফি

রোগের লক্ষণ সম্পাদনা

১. হাঁটা ও চলাফেরায় অসুবিধা।

২. প্রতিবর্তী ক্রিয়াতে অসুবিধা।

৩. বসে থাকার পরে দাঁড়ানোতে কষ্ট অনুভব হওয়া ও নিজে থেকে উঠতে না পারা।

৪. হাড় চিকন ও ভঙ্গুর হওয়া।

৫. স্কোলিওসিস রোগে আক্রান্ত হওয়া, যার প্রভাবে মেরুদন্ডে অস্বাভাবিক বক্রতা তৈরি হয়।

৬. বুদ্ধিজনিত ও মানসিক প্রতিবন্ধতা।

৭. খাদ্য গলাধঃকরণ, শ্বাস কষ্টে সমস্যা ও ফুসফুস এবং হৃৎপিণ্ডে দুর্বলতা।

৮. টিপ টিপ পায়ে হাঁটা ও বারবার হোঁচট খাওয়া।

৯. দুর্বল মোটর নিয়ন্ত্রণ।

১০. চোখে কম দেখা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া।

১১. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, এড্রেনাল গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

যেসব ব্যক্তি ডুশেন মাসক্যুলার ডিসট্রফি রোগে আক্রান্ত তাদের কিশোর বয়সের আগেই হুইল চেয়ারের দরকার হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ২০ বছরের ভেতরে সাধারণত মৃত্যুবরণ করে।

রোগ শনাক্তকরণ সম্পাদনা

ডাক্তাররা সাধারণত নিম্নোক্ত পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করেন।

১. রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পেশি থেকে কোন ধরনের এনজাইম বের হয়ে আসে সেটির উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয়।

২. রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমে মাসক্যুলার ডিসট্রফির জেনেটিক মার্কার শনাক্তকরণের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়।

৩. ইলেক্ট্রোমাইয়োগ্রাফির মাধ্যমে রোগ নির্ণয়। এ উদ্দেশ্যে পেশির ভেতরে একটি ইলেক্ট্রিক সূঁচ প্রবেশ করিয়ে পেশির বৈদ্যুতিক কার্যক্রম যাচাই করা হয়।

৪. পেশির খানিক কোষ কেটে নিয়ে সেই পেশি মাসক্যুলার ডিসট্রফিতে আক্রান্ত কিনা তা যাচাই করেও রোগ শনাক্ত করা হয়।

চিকিৎসা সম্পাদনা

মাসক্যুলার ডিসট্রফি রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসা নেই যা এই রোগকে সম্পূর্ণ নিরাময় করতে পারে। কিন্তু ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের মাত্রা কিছুটা কমানো যায়। এ রোগে শরীরের যে অঙ্গ বা তন্ত্র আক্রান্ত হয় সেখানে আলাদা করে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের ভয়াবহতা কমানো হয়।

কর্টিকস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের প্রভাবে পেশির শক্তি বৃদ্ধি পায় ও এটি পেশির অবনতি রোধ করে।

শ্বসনতন্ত্র ও হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে শ্বাস প্রশ্বাসের সুবিধার জন্য ওষুধ দেওয়া হয় এবং হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসা করা হয়।

সার্জারির মাধ্যমে স্কোলিওসিস, হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিকতা, পেশির দুর্বলতা ও চোখের ছানি সারিয়ে তোলা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

Muscular Dystrophy : Types, Symptoms and Treatments healthline.com হতে সংগৃহীত