মাশরুম (ইংরেজি: Mushroom) এক ধরনের ছত্রাক এবং এদের অধিকাংশই ব্যাসিডিওমাইকোটা এবং কিছু অ্যাসকোমাইকোটার অন্তভুক্ত। অন্যান্য উদ্ভিদের ন্যায় মাশরুমের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য তৈরীর জন্য সূর্য থেকে আলোর প্রয়োজন পড়ে না। চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশসমূহে কয়েক ধরনের খাদ্যোপযোগী মাশরুম রান্না করার মাধ্যমে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশেও আধুনিক খাবার হিসেবে মাশরুমের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটছে। যে-সকল ব্যক্তি মাশরুম সংগ্রহ করে খায়, তারা মাইকোফেজিস্টস বা 'মাশরুম খাদক' হিসেবে পরিচিত হন।[১][২] মাশরুম খোঁজার প্রক্রিয়াকে সাধারণতঃ মাশরুমিং বা মাশরুম শিকারী নামে অভিহিত করা হয়।

এগারিকাস বিসপোরাস (Agaricus bisporus) প্রজাতির মাশরুম বিশ্বের সর্বত্র চাষাবাদ করা হয়
বাংলাদেশী মাশরুমের একটি ছবি

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ খাবার উপযোগী মাশরুম উৎপাদনকারী দেশরূপে পরিচিতি পেয়েছে।[৩] দেশটি বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক মাশরুম উৎপাদনকারীরূপে স্বীকৃত। প্রতি বছর এক বিলিয়নেরও অধিক জনগোষ্ঠীর জন্য মাথাপিছু ২.৭ কিলোগ্রাম (৬.০ পা) উৎপাদন করে।[৪]

প্রকারভেদ সম্পাদনা

  • এগারিক্স - একাধারে এ জাতীয় মাশরুম খাবার উপযোগী বা ভক্ষণযোগ্য, বিষাক্ত এবং মাদক প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  • বোলেটস/Boletes - এই গ্রুপের আধিকাংশই ভক্ষণযোগ্য এবং অনেকের কাছে সুস্বাদুকর খাদ্যরূপে বিবেচনা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে Borofutus (বড়ফুটুস) নামের একটি গণের/জেনাসের মাশরুম প্রথমবারের মতো ২০১২ সালে আবিস্কৃত হয়েছে এবং এটি Borofutus dhakanus (বড়ফুটুস ঢাকানুস) নামে প্রকাশ হয়েছে।[৫]
  • ব্র্যাকেট ফাঙ্গি
  • চান্টারেলেস - ভক্ষণযোগ্য।
  • কোরাল ফাঙ্গি - ভক্ষণযোগ্য।
  • কাপ ফাঙ্গি - সচরাচর খাবার উপযোগী।
  • জেলি ফাঙ্গি - সচরাচর খাবার উপযোগী হলেও খেতে তেমন সুস্বাদু নয়।
  • পলিপোরেস - বোলেটেসের অনুরূপ অর্থাৎ ভক্ষণযোগ্য এবং অনেক লোকের কাছে সুস্বাদুকর খাদ্যরূপে বিবেচিত।
  • সাইকেডেলিক - এটি শ্রুমস নামেও পরিচিত।
  • পাফবলস - সচরাচর খাবার উপযোগী।
  • স্টিঙ্কহর্নস - খাবার উপযোগী হলেও গন্ধ তেমন চমকপ্রদ নয়।
  • টুথ ফাঙ্গি - বিষাক্ত না হলেও, খাবার উপযোগী না।

বন-জঙ্গল থেকে সঠিক ধরনের মাশরুম সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ, অধিকাংশ প্রজাতির মাশরুমই একই ধরনের দেখতে। সেজন্যে মাশরুম সংগ্রহকারীকে রাসায়নিক উপাদান সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হয়। খাবার উপযোগী মাশরুম বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে হয়। এ ধরনের মাশরুম সাধারণতঃ খামারে চাষাবাদ করা হয়। তবে, বিশ্বের অনেক স্থানের সাধারণ জনগণ শৈশবকাল থেকেই ভক্ষণযোগ্য ও সুস্বাদু প্রকৃতির বুনো মাশরুমের সাথে পরিচিত থাকেন।

বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পাদনা

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় চৌদ্দ হাজার প্রজাতির মাশরুমের কথা জানা যায়।[৬] অনেক প্রজাতির মাশরুমই এক রাতের মধ্যেই উৎপাদিত হতে দেখা যায়। অর্থাৎ, খুব দ্রুততার সাথে এর বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটতে পারে। তবে অধিকাংশই ধীরে ধীরে বড় হয়। আবাদকৃত মাশরুম আকারে ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে থাকে। খাবার উপযোগী অংশটি অল্প কিছুদিন সতেজ থাকে। বিশ্বের অধিকাংশ মাশরুমেই একটি দণ্ড এবং ছাতার ন্যায় একটি টুপি থাকে। কখনো কখনো ছত্রাকজাতীয় অপুষ্পক উদ্ভিদের টুপির নিম্নাংশে বীজ কিংবা অঙ্কুর থাকে।

আরমিলারিয়া সোলিডিপেস (সাবেক আরমিলারিয়া ওস্টোয়ে) প্রজাতির মাশরুমের আবাসস্থল হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালহিউর ন্যাশনাল ফরেস্টে দেখা যায় যা প্রায় ২,৪০০ বছরের পুরনো ও প্রাচীনতমরূপে আখ্যায়িত। প্রায় ২,২০০ একর (৮.৯ কিমি) আয়তনে বিস্তৃত হয়ে আছে।

পুষ্টি উপাদান সম্পাদনা

Mushrooms, brown, Italian, or Crimini, raw
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি১১৩ কিজু (২৭ kcal)
৪.১ g
০.১ g
২.৫ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
থায়ামিন (বি)
৯%
০.১ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি)
৪২%
০.৫ মিগ্রা
নায়াসিন (বি)
২৫%
৩.৮ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি)
৩০%
১.৫ মিগ্রা
ভিটামিন সি
০%
০ মিগ্রা
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
২%
১৮ মিগ্রা
কপার
২৫%
০.৫ মিগ্রা
ফসফরাস
১৭%
১২০ মিগ্রা
পটাশিয়াম
১০%
৪৪৮ মিগ্রা
সোডিয়াম
০%
৬ মিগ্রা
জিংক
১২%
১.১ মিগ্রা
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল

কাঁচা অথবা রান্নাকৃত মাশরুম স্বল্প-ক্যালরীযুক্ত খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত। কাঁচা অবস্থায় এতে ভিটামিন বি খাদ্যপ্রাণ থাকে যাতে রিবোফ্লোবিন, নায়াসিন এবং প্যান্টোথেনিক এসিড থাকে। এছাড়াও, প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যথা - সেলেনিয়াম, কপার এবং পটাশিয়াম থাকে। চর্বি, শর্করা এবং ক্যালরীযুক্ত উপাদানের মাত্রা কম রয়েছে। তবে, ভিটামিন সি এবং সোডিয়ামজাতীয় উপাদানের অনুপস্থিতি রয়েছে।

অতিবেগুনী রশ্মির প্রতিফলনে মাশরুমে ভিটামিন ডি তৈরী হয়।[৭]

নিরামিষভোজী বিশ্বে মাশরুম মাংস হিসেবে পরিচিত।[৮] খাবার উপযোগী মাশরুম সাধারণতঃ চীনা, কোরিয়ান, ইউরোপীয়ান এবং জাপানি রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

সুপারমার্কেটে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম বিক্রয় করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাশরুমই খামারে উৎপাদন করা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রজাতির মাশরুমরূপে আগারিকসা বিসপোরাস পরিচিত। এটি অধিকাংশ লোকের কাছে নিরাপদ মাশরুমরূপে বিবেচ্য। কেননা, এটি নিয়ন্ত্রিত পন্থায়, উপযোগী পরিবেশে জন্মানো হয়। এ. বিসপোরাস প্রজাতির কয়েক ধরনের মাশরুম রয়েছে যা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। তন্মধ্যে - হুয়াইটস, ক্রিমিনি এবং পোর্টোবেলো অন্যতম। অন্যান্য চাষযোগ্য প্রজাতির মাশরুম হিসেবে শিটেক, মাইটেক অথবা হেন-অব-দি-উডস, অয়স্টার মাশরুম এবং ইনোকি রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আহারের বৈচিত্র্যতা ও ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে মাশরুম চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীতা অর্জন করছে।[৯]

অন্য ব্যবহার সম্পাদনা

পশমে রংকরণসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুতে মাশরুমের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মাশরুমের রঙে রাসায়নিক যৌগিক উপাদান রয়েছে যা শক্ত ও উজ্জ্বল রঙ উৎপাদনে সক্ষম। সকল ধরনের রঙের বর্ণালি মাশরুমের রঙে বিদ্যমান। কৃত্রিম রঙ আবিষ্কারের পূর্বে মাশরুম ছিল অনেক টেক্সটাইলে রঙের প্রধান উৎসস্থল।[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Texas mushrooms: a field guide"books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১০ 
  2. Metzler V, Metzler S. (১৯৯২)। Texas Mushrooms: a Field Guide। Austin, Texas: University of Texas Press। পৃষ্ঠা 37। আইএসবিএন 0-292-75125-7। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-০৪ 
  3. "China Becomes World's Biggest Edible Mushroom Producer"। Allbusiness.com। আগস্ট ২১, ২০০৩। ২০০৯-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-০৪ 
  4. Hall et al., 2003, p. 25.
  5. Hosen MI, Feng B, Zhu XT, Li YC, Yang ZL. (২০১৩)। "Borofutus, a new genus of Boletaceae from tropical Asia: phylogeny, morphology and taxonomy"। Fungal Diversity58: 215–226। ডিওআই:10.1007/s13225-012-0211-8 
  6. Miles PG, Chang S-T. (২০০৪)। Mushrooms: Cultivation, Nutritional Value, Medicinal Effect, and Environmental Impact। Boca Raton, Florida: CRC Press। আইএসবিএন 0-8493-1043-1 
  7. Koyyalamudi SR, Jeong SC, Song CH, Cho KY, Pang G. (২০০৯)। "Vitamin D2 formation and bioavailability from Agaricus bisporus button mushrooms treated with ultraviolet irradiation" (পিডিএফ)Journal of Agricultural and Food Chemistry57 (8): 3351–5। ডিওআই:10.1021/jf803908qপিএমআইডি 19281276। ২২ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১২ 
  8. Haas EM, James P. (২০০৯)। More Vegetables, Please!: Delicious Recipes for Eating Healthy Foods Each & Every Day। Oakland, California: New Harbinger Publications। পৃষ্ঠা 22। আইএসবিএন 978-1-57224-590-7 
  9. FAO, Making Money by growing Mushrooms[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. Mussak R, Bechtold T. (2009). Handbook of Natural Colorants. New York: Wiley. pp. 183–200. আইএসবিএন ০-৪৭০-৫১১৯৯-০.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

সনাক্তকরণ সম্পাদনা

Field Guides database

গবেষণা সমিতি সম্পাদনা