মালাওয়াত পূর্ণা

ভারতীয় পর্বতারোহী (জন্ম ২০০০ সন)

মালাওয়াত পূর্ণা (জন্ম: ১০ জুন ২০০০) একজন ভারতীয় মহিলা পর্বতারোহী, যিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সে মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতমালার সর্বোচ্চ চূড়া জয় করেন (২৪ মে ২০১৪)। পূর্ণা একমাত্র নারী যিনি সমগ্র বিশ্বে মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতমালা বিজয়নী মহিলাদের মধ্যে কনিষ্ঠ মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতমালা বিজয়নী হিসাবে নাম লেখাতে সফল হন।[১][২][৩][৪][৫][৬]

মালাওয়াত পূর্ণা
মালাওয়াত পূর্ণা এবং আনন্দ কুমার, কিশোর পর্বতারোহী যারা মাউন্ট এভারেস্টে উঠেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ৬ জুন, ২০১৪। তাদের কোচ শেখর বাবুকেও দেখা যাচ্ছে।
জন্ম১০ জুন, ২০০০, বয়স ১৬ বছর
পাকালা গ্রাম, সিরকোন্ডা মন্ডল,নিজামাবাদ,তেলেঙ্গানা
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাদ্বাদশ শ্রেণী(পাশ)
মাতৃশিক্ষায়তনঅন্ধ্রপ্রদেশ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার রেসিডেন্ট স্কুল,হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট(পর্বতারহন শিক্ষাকেন্দ্র)
পেশাশিক্ষার্থী
পরিচিতির কারণসমগ্র বিশ্বের নারীর জাতির মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে মাউন্ট এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া জয়ী
পিতা-মাতা
  • দেবীদাস (পিতা)
  • লক্ষ্মী (মাতা)
পরিবারনরেশ (বড় ভাই)

জন্ম ও পরিবার সম্পাদনা

পূর্ণা তেলেঙ্গানা রাজ্যের, নিজামবাদ জেলার, সিরকোন্ডা মন্ডলের অন্তর্গত পাকালা গ্রামে ২০০০ সালের ১০ই জুন এক গরিব কৃষিমজুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- দেবীদাস, মাতা- লক্ষ্মী। তারা পেশায় কৃষিমজুর। তার বড় ভাই নরেশ।

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

অন্ধ্রপ্রদেশের সোশ্যাল ওয়েলফিয়ার রেসিডেন্টিয়াল স্কুলে পূর্না নবম শ্রেণীতে পড়া কালীন তিনি পর্বতারোহনের শিক্ষা নিতে থাকেন। বর্তমানে তিনি এখান থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করেছেন। মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের জন্য দার্জিলিং শহরের এর হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে পর্বতারোহনের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন।

সফলতার পথে সম্পাদনা

সোশ্যাল ওয়েলফিয়ার রেসিডেন্টিয়াল স্কুল এর সেক্রটারী ডঃ আর এস প্রবীন কুমার এর সহযোগীতায় পূর্ণা পর্বতারোহনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন তাকে বিদ্যালয় থেকে ভঙ্গির পর্বতারোহনের জন্য নির্বাচন করা হয়। এখান থেকেই পূর্ণার পর্বতারোহনের সূচনা শুরু হয়।

ভঙ্গির পর্বতারোহন সম্পাদনা

ভঙ্গির পাহাড় তেলেঙ্গানাতে অবস্থিত। এটির উচ্চতা প্রায় ৭৫০ ফুট। ভঙ্গির পর্বতমালা আরোহণের জন্য ৫ দিনের যে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়, পূর্ণা সফলভাবে জীবনে প্রথম তা অতিক্রম করেন। ভঙ্গির পর্বতারোহন এ ১১০ জনকে নির্বাচন করা হয়েছিল। তার মধ্যে ২০জন পর্বতারোহীকে পরবর্তী প্রশিক্ষণ(হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট,দার্জিলিং) এর জন্য নির্বাচন করা হয়। তিনি ভঙ্গির পর্বতারোহনে এ গ্রেড অর্জন করেন এবং পরবর্তী প্রশিক্ষণ এর জন্য হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে যাবার সুযোগ করে নেন।

হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সম্পাদনা

এখান থেকে তিনি পর্বতারোহনের বেসিক ট্রেনিং এবং অ্যাডভান্স ট্রেনিং করার সুযোগ পান। প্রশিক্ষন এর সময়সীমা ছিল ২০দিন। এখান থেকে তিনি বরফ এর উপর হাঁটার কৌশল, বরফের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে চড়া ইত্যাদি বিষয় গুলি সম্পর্কে জানতে পারেন। এই সময় তিনি দার্জিলিং এর রেনাক পাহাড়ে অরোহন করেন। এটির উচ্চতা ছিল প্রায় ১৭০০০ফুট।

লাদাখ সম্পাদনা

হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এ ২০ জন এর মধ্যে ৯ জনকে পরবর্তী প্রশিক্ষণ লাদাখ এর জন্য নির্বাচন করা হয়। পূর্ণা এই প্রশিক্ষণ এর নির্বাচিত হন এবং লদাখ এ যান। লাদাখ এ তীব্র শীতের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাপমাত্রা ছিল -৩০(মাইনাস) থেকে -৩৫(মাইনাস) ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই সময় স্থানীয় বসিন্দারা তীব্র শীতের কারণে অন্য গ্রামে বাস করে থাকেন। এখানে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় – কীভাবে তীব্র শীতের সাথে মোকাবিলা করতে হয়, তীব্র শীতের মধ্যে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়, কি কি পোশাক পড়া এবং সাথে কি কি থাকা একান্ত জরুরি। ৯ জন পর্বতারোহীর মধ্যে ২ জনকে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণের জন্য নির্বাচন করা হয় – মালাওয়াত পূর্ণা এবং আনন্দ কুমার।

মাউন্ট এভারেস্ট সম্পাদনা

লাদাখে নির্বাচিত হওয়ার পর মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের জন্য তিন মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণে মানসিক দৃঢ়তা, শারীরিক দৃঢ়তা ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পূর্না এই তিন মাসে প্রতিদিন সকালে ২৫ থেকে ৩০ কিমি জগিং, ধ্যান, ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম এর মধ্য দিয়ে নিজের মানসিক ও শারীরিক দৃঢ়তা বাড়িয়ে তোলেন। এছাড়া তিনি ডায়েটিং চার্ট মেনে চলতেন। তিনি এসমস্তের মধ্য দিয়েও তিনি পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছিলেন। নবম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করার পর তার কোচ বি. শেখর তার অভিভাবিকে ডেকে পাঠান এবং মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের অনুমতি নেন। তিনি তাদের পূর্ণার প্রশিক্ষনের বিভিন্ন মুহুর্তের ছবি দেখান এবং বোঝাতে সফল হন পূর্ণা মেয়ে হওয়া শর্তেও সে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ জন্য কতখানি সঠিক। তার মা-বাবা মেয়ের জীবনের অনিশ্চয়তা জানা সত্বেও আনন্দের সাথে রাজি হন এবং তাকে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণের জন্য উৎসাহিত করেন, সাহস দেন। পূর্ণা ১৪ ই এপ্রিল ২০১৪ তে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে ১ গিয়ে পৌঁছান। তিনি এবং তার সঙ্গীরা পাঁচ দিন সেখানে থাকেন। এর মধ্যে একদিন নেপাল থেকে খবর আসে ১৭ জন শেরপা মাউন্ট এভারেস্টে বরফ ধসের কারণে মারা গেছেন। এরপর তার কাছে সোশ্যাল ওয়েলফিয়ার রেসিডেন্টিয়াল স্কুল এর সেক্রটারী ডঃ আর এস প্রবীন কুমার এর ফোন আসে এবং তিনি তাকে এভারেস্টের পরিস্থিতি এবং এই অবস্থায় এভারেস্ট আরোহণের পরিণতির কথা বলেন এবং তাকে ফিরে আসতে বলেন। কিন্তু পূর্ণা তাতে রাজি হন না। সমস্ত কিছু জানা সত্বেও তিনি এবং আনন্দ কুমার এভারেস্ট এর দিকে এগিয়ে চলেন। এরপর তারা ক্যাম্প ২ তে গিয়ে পৌঁছান এবং সেখান থেকে ৩ নং ক্যাম্পের দিকে রওনা হন। সেখানে ২৪ শে মে ২০১৪ তে গিয়ে পৌঁছান। মাউন্ট এভারেস্টের এই স্থানকে বলা হয় ডেথ জোন। এখানে অধিক উচ্চতার কারণে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয় - শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি। বেস ক্যাম্প ৩ এর এই স্থানে আরোহীদের মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে অধিক। ওখানে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর আর এক দিনের পথ বাকি থাকে। তারা সেদিন রাত ৯ টা ৩০ নাগাদ বেস ক্যাম্প ৩ থেকে বেরিয়ে এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ার দিকে এগিয়ে চলেন। অবশেষে ২৫ শে মে ২০১৪ তে সকাল ৬ টা নাগাদ মালাওয়াত পূর্ণা এবং আনন্দ কুমার মাউন্ট এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে পৌঁছান।

সম্মান সম্পাদনা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(২৬শে মে ২০১৪-বর্তমান) ২০১৬ সালে মালাওয়াত পূর্ণা-র হাতে Amazing Indians Awards (2016) তুলে দেন। মালাওয়াত পূর্ণা এবং তার সঙ্গী আনন্দ কুমার এবং তাদের কোচ বি. শেখর - তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চন্দ্রশেখর রাও প্রত্যেককে ২৫ লাখ টাকা পুরস্কার দেন।

সিনেমা সম্পাদনা

পূর্ণা-র জীবন এর উপর নির্ভর করে ২০১৭ সালে রাহুল বসুর পরিচালনায় Poona: Courage Has No Limit নামে একটি হিন্দী সিনেমা প্রকাশিত হয়েছে। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন রাহুল বসু এবং অমিত পাটনী(Amit Patni)। মালাওয়াত পূর্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অদিতি ইনামদার(Aditi Inamdar)। রাহুল বসু নিজেও ডঃ আর এস প্রবীন কুমার এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Meet The Youngest Woman To Climb Everest - You'll Never Guess Her Age"HuffPost UK। ২৭ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২১ 
  2. "13-year-old Malavath Purna becomes youngest female climber to scale Mount Everest"The Financial Express। ২৫ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২১ 
  3. "13-year-old Indian schoolgirl, Malavath Poorna, becomes the youngest female to summit Mount Everest"www.news18.com। ২৭ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২১ 
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৪ 
  5. ডেস্ক, >> নিউজ। "সবচেয়ে কম বয়সী নারী এভারেস্ট বিজয়ী ভারতীয় পূর্ণা"bangla.bdnews24.com। ১৮ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২১ 
  6. "TEDx - POORNA MALAVATH"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২১ – www.youtube.com-এর মাধ্যমে।