মার্ক টালি

ব্রিটিশ সাংবাদিক

স্যার উইলিয়াম মার্ক টালি, ওবিই, (ইংরেজি: William Mark Tully; জন্ম: ১৯৩৫)[১] ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বা বিবিসি'র নয়াদিল্লি ব্যুরোর সাবেক প্রধান। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসে প্রধান পদ থেকে ইস্তফা দেবার পূর্বে বিবিসিতে প্রায় ত্রিশ বছর কর্মরত ছিলেন।[২] দিল্লি ব্যুরোর প্রধান পদে বিশ বছর দায়িত্ব পালন করেন মার্ক টালি[৩] এছাড়াও তিনি বেশ কিছু পুস্তক রচনা করেন। তিনি লন্ডনের ওরিয়েন্টাল ক্লাবের সদস্য।

স্যার মার্ক টালি
জন্ম
উইলিয়াম মার্ক টালি

১৯৩৫ (বয়স ৮৮–৮৯)
শিক্ষামার্লবোরো কলেজ
ট্রিনিটি হল, ক্যামব্রিজ
পেশাসংবাদদাতা, লেখক
উপাধিস্যার
স্বাক্ষর

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন টালি।[১] তার পিতা ব্রিটিশ রাজের নিয়ন্ত্রণাধীন শীর্ষস্থানীয় অংশীদারী প্রতিষ্ঠানের ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ছিলেন। শৈশবের প্রথম দশকে ভারতে অবস্থান করেন। কিন্তু ভারতীয়দের সাথে সামাজিকভাবে মেলামেশার সুযোগ পেতেন না তিনি।[৪][৫] ইংল্যান্ডের বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। টাইফোর্ড স্কুল, মার্লবোরো কলেজ এবং ট্রিনিটি হলে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।[৪] এরপর তিনি ক্যাম্ব্রিজের চার্চ অব ইংল্যান্ডে পাদ্রী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লিঙ্কন থিওলোজিক্যাল কলেজে দুই মেয়াদে পড়াশোনার পর এ চিন্তাধারা স্থগিত করেন। এখানে ভর্তি হয়ে খ্রিষ্টান পাদ্রীদের আচরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন; বিশেষ করে তিনি তার যৌনজীবনের সংযমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন।[১]

সাংবাদিকতা সম্পাদনা

১৯৬৪ সালে তিনি বিবিসিতে যোগদান করেন। ভারতীয় সংবাদদাতা হিসেবে ১৯৬৫ সালে ভারতে চলে আসেন।[১][৬][৭] দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থানকালীন তার কর্মজীবনে তিনি অনেকগুলো প্রধান প্রধান ঘটনাবলীর স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছেন। তন্মধ্যে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা, অপারেশন ব্লু স্টার ও এর ফলশ্রুতিতে সংঘটিত ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ড, শিখবিরোধী দাঙ্গা, রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়মিতভাবে বিবিসিতে প্রেরণ করতেন।[৮][৯][১০]

জুলাই, ১৯৯৪ সালে মার্ক টালি বিবিসি থেকে পদত্যাগ করেন। জন বার্ট নামীয় সহকর্মীর (পরবর্তীতে মহাপরিচালক) সাথে বাদানুবাদ করাই এর মূল কারণ। তিনি বার্টকে 'ভীত হয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো' এবং 'বিবিসির নিম্নমূখীতা ও সহকর্মীদেরকে নৈতিকভাবে দূর্বল করা'র দায়ে অভিযুক্ত করেন।[২] এরপর থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা ও নতুন দিল্লিতে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন।[৬][৮] বর্তমানে তিনি নিয়মিতভাবে বিবিসি রেডিও ৪ এর সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান সামথিং আন্ডারস্টুড উপস্থাপন করছেন।[১১]

সম্মাননা সম্পাদনা

মার্ক টালি ১৯৮৫ সালে ওবিই পদবীতে ভূষিত হন। ১৯৯২ সালে পদ্মশ্রী পদক লাভ করেন।[৪] ২০০২ সালে নতুন বছরের সম্মাননাস্বরূপ নাইট উপাধি লাভ করেন।[১২] ২০০৫ সালে পদ্মভূষণ পদক লাভ করেন।[১৩]

ভারতে অবস্থান করে তিনি ১৯৮৫ সালে তার প্রথম গ্রন্থ অমৃতসর: মিসেস গান্ধী'জ লাস্ট ব্যাটেল প্রকাশ করেন। এতে তিনি তার সহকর্মী ও বিবিসি দিল্লি'র প্রতিনিধি সতীশ জ্যাকবকে নিয়ে এ গ্রন্থটি রচনা করেন। তারা বইটিতে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সংঘটিত অপারেশন ব্লু স্টারের ঘটনাবলী, ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক শিখ বিদ্রোহীদের দমন ইত্যাদি বিষয়ের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। এছাড়াও, ১৯৯২ সালে টালির অন্যতম সেরা পুস্তক নো ফুল স্টপস ইন ইন্ডিয়া প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা জন্য টালিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে 'মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা' প্রদান করা হয়।[১৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Mark Tully: The voice of India"। London: BBC। ৩১ ডিসেম্বর ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  2. Victor, Peter (১০ জুলাই ১৯৯৪)। "Tully quits BBC"। London: The Independent। ১১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  3. "Media reportage: Interview with Mark Tully"। The Hindu। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০০০। ২৯ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  4. "Meeting Mark"। The Hindu। জুন ১৮, ২০০৭। ২৬ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  5. Lakhani, Brenda (২০০৩)। "British and Indian influences in the identities and literature of Mark tully and Ruskin Bond"। University of North Texas। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  6. "Mark Tully to give annual Toleration lecture at the University of York"। The University of York। ১৮ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  7. Drogin, Bob (ডিসেম্বর ২২, ১৯৯২)। "Profile The BBC's Battered Sahib Mark Tully has been expelled by India, chased by mobs and picketed. He loves his job."। Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "It's Sir Mark Tully in UK honors list"। CNN। ডিসেম্বর ৩১, ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  9. "After Blue Star"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১০ 
  10. Tully, Mark (৫ ডিসেম্বর ২০০২)। "Tearing down the Babri Masjid"। London: BBC। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১০ 
  11. "Mark Tully"। BBC Radio 4। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  12. "An honour, says Tully"। Press Trust of India। জানুয়ারি ১, ২০০২। ২৯ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  13. "Padma Bhushan Awardees"। Indian government। ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  14. "সম্মান আরো ৬১ বিদেশি বন্ধুকে, বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ২০ অক্টোবর ২০১২"। ২৪ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা