মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র একটি ঐতিহাসিক দলিল যা ৪ জুলাই ১৭৭৬ পেনসিলভানিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের সভায় গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সাথে যুদ্ধরত তেরটি মার্কিন উপনিবেশ[২] নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নামে নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি কংগ্রেসে ভোটাভুটির জন্য আগেই আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার একটি খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। "স্বাধীনতার ঘোষণা" এই শব্দটি আসল দলিলে উল্লেখ নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
১৮২৩ সালের চূড়ান্ত দলিলের প্রতিলিপির অনুলিপি
তৈরিজুন-জুলাই ১৭৭৬
অনুমোদন৪ জুলাই ১৭৭৬
অবস্থানচূড়ান্ত প্রতিলিপি: ন্যাশনাল আর্কাইভস
অমার্জিত খসড়া: লাইব্রেরি অব কংগ্রেস
স্বাক্ষরকারী২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের ৫৬ জন প্রতিনিধি
উদ্দেশ্যগ্রেট ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা ও ব্যাখ্যা[১]

জন অ্যাডামস দলিলটির মূল খসড়া প্রণয়নের জন্য থমাস জেফারসন কে নির্বাচিত করতে কমিটির কাছে তদবির করেন[৩]।যেটা কংগ্রেস সম্পাদন করে চূড়ান্ত সংস্করণ প্রস্তুত করবে। মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধ শুরুর ১ বছরেরও বেশি সময় পরে কেন ২ জুলাই কংগ্রেস গ্রেট ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ভোট দান করে তার একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এই ঘোষণা। পরবর্তী দিন জন অ্যাডামস তার স্ত্রী আবিগালিকে লিখেন,"১৭৭৬ সালের জুলাই এর দ্বিতীয় দিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় দিন হবে"[৪]। কিন্তু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় জুলাইয়ের ৪ তারিখ, যে তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়।

৪ তারিখে অনুমোদনের পর কংগ্রেস বেশ কয়েকটি ফর্মে(আকারে) স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে এটি মুদ্রিত(ডানল্যাপ ব্রডসাইড) আকারে প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণটি ব্যাপকভাবে বিতরণ ও প্রচার করা হয়। মুদ্রণে ব্যবহৃত মূল কপিটি হারিয়ে গেছে, সম্ভবত এটি জেফারসনের হাতের কপি ছিল[৫]

জন অ্যাডামসবেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কর্তৃক সাধিত পরিবর্তনসমূহ এবং কংগ্রেস কর্তক সাধিত পরিবর্তনের উপর জেফারসনের টিকা সংবলিত জেফারসনের মূল খসড়াটি লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে।

ঘোষণাপত্রের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং সাক্ষরকৃত সংস্করণ যেটি দাপ্তরিক সংস্করণ হিসেবে অধিক পরিচিত সেটি ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল আর্কাইভসে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এই নিবিষ্ট কপিটি ১৯ জুলাইয়ে কংগ্রেস কর্তৃক চাওয়া হয় এবং এটি প্রাথমিকভাবে ২ আগস্টে সাক্ষরকৃত হয়[৬][৭]

ঘোষণাটির উৎস ও ব্যাখ্যা পন্ডিতদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু। ঘোষণাটি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে অনুযোগসমূহ এবং কতিপয় সহজাত ও আইনগত অধিকার(যেমন- বিপ্লবের অধিকার) বর্ণনার মাধ্যমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার যথার্থতা প্রমাণ করে।

ঘোষণাপত্রটি স্বাধীনতা ঘোষণার মৌলিক উদ্দেশ্য পূরণ করে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এটি রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আব্রাহাম লিংকন ঘোষণাপত্রটিকে তার বিখ্যাত ভাষণ(যেমনটি গেটিসবু্র্গ ভাষণে) ও নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। তারপর থেকে ঘোষণাটি বিশেষ করে এর দ্বিতীয় বাক্যটি[৮] মানবাধিকারের উপর একটি সুপরিচিত উক্তিতে পরিনত হয়। এটিকে ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে সুপরিচিত উক্তিসমূহের মধ্যে একটি বলা হয়ে থাকে[৯] যা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অনুবর্তী শব্দসমূহ ধারণ করে[১০]। বাক্যটি একটি নৈতিক মান নির্দেশ করে বলে ধরে নেয়া হয় যা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাত্নক সংগ্রাম করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আব্রাহাম লিংকন কর্তৃক উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ করে যিনি ঘোষণাপত্রটিকে তার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেন এবং যুক্তি দেখান যে ঘোষণাটিতে বিবৃত নীতিমালার আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ব্যাখ্যা করা উচিত[১১]আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিভিন্ন দেশের আরো অনেক সমশ্রেণীর দলিল প্রণয়নে অনুপ্রেরণা যোগায় এবং এর ধারণাসমূহ পরবর্তী সময়ে ক্যারিবিয়ান, স্প্যানিশ আমেরিকা, বলকান, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য ইউরোপ সহ অন্যান্য দেশে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত অনুসৃত হয়[১২]

পটভূমি সম্পাদনা

 
থমাস জেফারসন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রধান লেখক

বিশ্বাস করুন, জনাব: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এমন কোনো লোক নেই যিনি আমার চেয়ে আন্তরিকভাবে গ্রেট ব্রিটেনের সাথে জোটকে ভালবাসে। কিন্তু, স্রষ্টার শপথ যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রস্তাবিত শর্তে এমন একটি সম্পর্ক মেনে নেওয়ার পূর্বে আমার যেন মরণ হয়; এবং এর মাধ্যমে, আমি মনে করি, আমেরিকার অনুভূতিই প্রকাশ করি।

— থমাস জেফারসন, নভেম্বর ২৯, ১৭৭৫[১৩]

১৭৭৬ সালের জুলাইতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার সময়, তেরো উপনিবেশগ্রেট ব্রিটেন এক বছরেরও বেশি সময় পরস্পরের সাথে যুদ্ধরত ছিল। ১৭৬৩ সাল থেকেই উপনিবেশসমূহ এবং মাতৃদেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করেছিল। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট উপনিবেশসমূহ থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যেমন ১৭৬৫ সালের স্ট্যাম্প অ্যাক্ট ও ১৭৬৭ সালের টাউনশেন্ড অ্যাক্টস। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মনে করেছিল এসব পদক্ষেপ উপনিবেশসমূহকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে রাখতে তাদেরকে তাদের নায্য হিস্যা প্রদানে বাধ্য করার বৈধ পন্থা[১৪]

তথাপি অনেক ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে। উপনিবেশসমূহের পার্লামেন্টে সরাসরি কোন প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ঔপনিবেশিকরা যুক্তি দেখায় যে তাদের উপর কর আরোপের কোন অধিকার পার্লামেন্টের ছিল না। কর বিতর্ক মূলত ব্রিটিশ সংবিধানের ব্যাখ্যা ও উপনিবেশসমূহের উপর পার্লামেন্টের কর্তৃত্বের সীমা নিয়ে বিরাজমান মতানৈক্যেরই অংশ ছিল[১৫]। ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপ্লব থেকে প্রচলিত সনাতন ব্রিটিশ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে পার্লামেন্ট-ই সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। সুতরাং সংঙ্গানুসারে পার্লামেন্ট যা করে তা-ই সাংবিধানিক[১৬]। তদসত্তেও উপনিবেশসমূহে এ ধারণা তৈরি হয় যে ব্রিটিশ সংবিধান কতিপয় মৌলিক অধিকার স্বীকার করে যা কোন সরকার এমনকি পার্লামেন্টও লঙ্ঘন করতে পারে না[১৭]। টাউনশেন্ড অ্যাক্টস পাসের পর কতিপয় লেখক উপনিবেশসমূহের উপর পার্লামেন্টের আদৌ কোন বৈধ কর্তৃত্ব আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন[১৮]ব্রিটিশ কমনওয়েলথের পরিকল্পনা[১৯] অনুমান করে ১৭৭৪ সালে কতিপয় মার্কিন লেখক যেমন- স্যামুয়েল অ্যাডামস, জেমস উইলসন, থমাস জেফারসন তর্ক করেন যে পার্লামেন্ট শুধুমাত্র গ্রেট ব্রিটেনের আইনসভা এবং উপনিবেশসমূহ, যাদের নিজেদের আইনসভা আছে, শুধুমাত্র রাজার প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত[২০]

কংগ্রেসীয় অধিবেশনের সূচনা সম্পাদনা

উপনিবেশসমূহে পার্লামেন্টের কর্তৃত্বের বিষয়টি একটি সংকটে পরিণত হয় যখন পার্লামেন্ট ১৭৭৩ সালের বোস্টন টি পার্টির জন্য ম্যাসাচুসেটস প্রদেশকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ১৭৭৪ সালে কোয়ার্সিভ অ্যাক্ট (উপনিবেশগুলিতে অসহিষ্ণু আইন হিসেবে পরিচিত) পাস করে। অনেক উপনিবেশিক কোয়ার্সিভ অ্যাক্টকে ব্রিটিশ সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে দেখে। সুতরাং তা সমস্ত ব্রিটিশ মার্কিনদের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি হিসেবে গণ্য করে। এর পাল্টা জবাব সমন্বয়ের জন্য ১৭৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফিলাডেলফিয়ায় ১ম কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু হয়। কংগ্রেস ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের কর্মসূচী পালন করে এবং উক্ত আইনসমূহ রদের জন্য রাজার কাছে আবেদন করে। রাজা জর্জ এবং প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ পার্লামেন্টের কর্তৃত্বের প্রশ্নে পিছুটান না হওয়ার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ থাকায় এসব কর্মসূচী ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যেমনটি রাজা ১৭৭৪ সালের নভেম্বরে নর্থকে লিখেন "নিয়তি অবশ্যই ঠিক করে দেবে তারা এ দেশের অধীন থাকতে চায় নাকি স্বাধীন হতে চায়"।[২১]

অধিকাংশ উপনিবেশিক তখনো এমনকি ১৭৭৫ সালের এপ্রিলে লেক্সিংটন ও কনকর্ডে আমেরিকার বিপ্লবী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও গ্রেট ব্রিটেনের সাথে সমঝোতার আশা করেছিল।[২২] ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের অধিবেশন ফিলাডেলফিয়ার পেনসিলভানিয়া আইন পরিষদে ১৭৭৫ সালের মে মাসে শুরু হয়। এই অধিবেশনে কিছু প্রতিনিধি চূড়ান্ত স্বাধীনতার প্রত্যাশা করেছিল কিন্তু কেউ তা ঘোষণার প্রবক্তা ছিলেন না।[২৩] তারপর অনেক উপনিবেশিক তাদের উপর পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে, যদিও তারা রাজা জর্জের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে, যাকে তারা ভরসা করেছিল তাদের পক্ষে সমঝোতা করবে। ১৭৭৫ সালের শেষের দিকে তারা হতাশ হন যখন রাজা কংগ্রেসের ২য় আবেদন(অলিভ ব্রান্চ পিটিশন/জলপাই শাখা আবেদন) প্রত্যাখান করেন, প্রক্লেমেশন অব রিবেলিয়ন(বিদ্রোহের প্রজ্ঞাপন) জারি করেন এবং ২৬ অক্টোবর পার্লামেন্টে জানান যে তিনি বিদ্রোহ দমনের জন্য "বিদেশী সাহায্যের বন্ধুসুলভ প্রস্তাব" বিবেচনা করছেন।[২৪] একটি আমেরিকা সমর্থক সংখ্যালঘু দল পার্লামেন্টে সতর্কীকরণ করে যে সরকার উপনিবেশসমূহকে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করছে।[২৫]

স্বাধীনতার পথে সম্পাদনা

টমাস পেইনের পুস্তিকা "কমন সেন্স" ১৭৭৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়, যখন এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে রাজা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে অনিচ্ছুক[২৬]। পাইন তখন সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড থেকে উপনিবেশে এসেছেন। তিনি উপনিবেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন। রাজতন্ত্র ও পুরুষানুক্রমিক শাসনের বিকল্প হিসেবে তিনি প্রজাতন্ত্রনীতি সমর্থন করেন[২৭]। "কমন সেন্স" নতুন কোন ধারণা দেয় নি[২৮] এবং কংগ্রেসের স্বাধীনতা বিষয়ে চিন্তাভাবনার উপর সম্ভবত খুব কম প্রভাব ফেলেছিল। এর গুরুত্ব ছিল এমন একটি বিষয়ে জনবিতর্ক তুঙ্গে দেয়াতে যা পূর্বে খুব কম লোকই খোলাখুলি আলোচনার সাহস করত[২৯]। পাইনের ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় পুস্তিকা প্রকাশের পর গ্রেট ব্রিটেন থেকে পৃথকীকরণের জন্য জনসমর্থন ক্রমে বৃদ্ধি পায়[৩০]

 
ফিলাডেলফিয়ার ইনডিপেনডেন্স হলের সমাবেশ কক্ষ যেখানে ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন করে

কিছু ঔপনিবেশিক তখনো সমঝোতার আশা করত কিন্তু ১৭৭৬ সালের প্রথম দিকের ঘটনাপ্রবাহ স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থনকে আরো শক্তিশালী করে। ১৭৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপনিবেশিকরা পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রহিবিটরি অ্যাক্ট(নিষেধমূলক আইন) পাসের কথা জানতে পারে যার মাধ্যমে আমেরিকার বন্দরগুলোতে অবরোধ এবং আমেরিকার জাহাজকে শত্রু নৌযান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জন অ্যাডামস যিনি স্বাধীনতার কট্টর সমর্থক ছিলেন, বিশ্বাস করতেন যে কংগ্রেসের পূর্বেই পার্লামেন্ট কার্যত আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। অ্যাডামস প্রহিবিটরি অ্যাক্টকে "ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ বিভাজন" উল্লেখ করে, "ইনডিপেনডেন্সি অ্যাক্ট(স্বাধীনতার আইন)" হিসেবে অভিহিত করেন[৩১]। স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে সমর্থন আরো বেড়ে যায় যখন এটা সুনিশ্চিত হয় যে রাজা জর্জ তার মার্কিন প্রজাদের বিরুদ্ধে জার্মানির সৈন্যদের ভাড়া করেন[৩২]

স্বাধীনতার পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থন সত্ত্বেও তা ঘোষণার জন্য কংগ্রেসের স্পষ্ট এখতিয়ারের অভাব ছিল। কংগ্রেসের প্রতিনিধিগণ তেরটি ভিন্ন সরকার কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছিলেন যার মধ্যে আইন বহির্ভূত অধিবেশন, বিশেষ কমিটি ও নির্বাচিত পরিষদ অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং তারা তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনা মানতে বাধ্য ছিল। তাদের ব্যক্তিগত অভিমত যাই হোক না কেন তারা স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ভোট দিতে পারে না যদিনা তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনা তা অনুমোদন করে[৩৩]। প্রকৃতপক্ষে কতিপয় উপনিবেশ তাদের প্রতিনিধিকে গ্রেট ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো পদক্ষেপ নিতে স্পষ্টভাবে বারণ করে, অন্যান্য উপনিবেশর প্রতিনিধির কাছে এই বিষয়ে দ্ব্যর্থক নির্দেশনা ছিল।[৩৪] গ্রেট ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে জনসমর্থন বাড়ায় স্বাধীনতার সমর্থকগোষ্ঠী কংগ্রেসীয় নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানান। কংগ্রেসে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য অধিকাংশ সদস্যেকে তাদের উপনিবেশ থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং কমপক্ষে একটি উপনিবেশকে তার প্রতিনিধিকে কংগ্রেসে স্বাধীনতার প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিতে হবে। এটি সফল করার জন্য ১৭৭৬ সালের এপ্রিল ও জুলাইয়ের মধ্যে একটি জটিল রাজনৈতিক যুদ্ধ[৩৫] ঘোষিত হয়।[৩৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Becker, Declaration of Independence, ৫।
  2. উপনিবেশ তেরটি হচ্ছে: ডেলাওয়ার, পেনসিলভানিয়া, নিউ জার্সি, জর্জিয়া, কানেক্টিকাট, ম্যাসাচুসেটস, ম্যারিল্যান্ড, সাউথ ক্যারলাইনা, নর্থ ক্যারলাইনা, ভার্জিনিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউ ইয়র্ক, রোড আইল্যান্ড
  3. "Declaring Independence", Revolutionary War, Digital History, University of Houston. From Adams' notes: "Why will you not? You ought to do it." "I will not." "Why?" "Reasons enough." "What can be your reasons?" "Reason first, you are a Virginian, and a Virginian ought to appear at the head of this business. Reason second, I am obnoxious, suspected, and unpopular. You are very much otherwise. Reason third, you can write ten times better than I can." "Well," said Jefferson, "if you are decided, I will do as well as I can." "Very well. When you have drawn it up, we will have a meeting."
  4. আবিগালি অ্যাডামসের কাছে জন অ্যাডামসের চিঠি, ৩ জুলাই ১৭৭৬
  5. Boyd (1976), The Declaration of Independence: The Mystery of the Lost Original, ৪৩৮ পৃষ্ঠা
  6. "Did You Know...Independence Day Should Actually Be July 2?" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। National Archives and Records Administration। জুন ১, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৪, ২০১২ 
  7. The Declaration of Independence: A History, The U.S. National Archives and Records Administration
  8. We hold these truths to be self-evident, that all men are created equal, that they are endowed by their Creator with certain unalienable Rights, that among these are Life, Liberty and the pursuit of Happiness.

  9. Stephen E. Lucas, "Justifying America: The Declaration of Independence as a Rhetorical ", in Thomas W. Benson, ed., American Rhetoric: Context and Criticism, Carbondale, Illinois: Southern Illinois University Press, ১৯৮৯, ৮৫ পৃষ্ঠা
  10. Ellis, American Creation, ৫৫-৫৬ পৃষ্ঠা।
  11. McPherson, Second American Revolution, ১২৬।
  12. David Armitage, The Declaration of Independence: A Global History (Harvard University Press, 2007) পৃষ্ঠা ১০৩-১০৪।
  13. Hazelton, Declaration History, ১৯।
  14. Christie and Labaree, Empire or Independence, ৩১।
  15. Bailyn, Ideological Origins, পৃ:১৬২
  16. Bailyn, Ideological Origins, পৃ:২০০-০২
  17. Bailyn, Ideological Origins, পৃ:১৮০-৮২
  18. Middlekauff, Glorious Cause, পৃ:২৪১
  19. Bailyn, Ideological Origins, পৃ: ২২৪-২৫।
  20. Middlekauff, Glorious Cause, ২৪১-৪২। The writings in question include Wilson's Considerations on the Authority of Parliament and Jefferson's A Summary View of the Rights of British America (উভয়ই ১৭৭৪), as well as Samuel Adams's ১৭৬৮ Massachusetts Circular Letter।
  21. Middlekauff, Glorious Cause, ১৬৮; Ferling, Leap in the Dark, ১২৩-২৪।
  22. Hazelton, Declaration History, ১৩; Middlekauff, Glorious Cause, ৩১৮।
  23. Middlekauff, Glorious Cause, ৩১৮।
  24. Maier, American Scripture, ২৫। ১৭৭৫ সালের রাজার ভাষণ হল online, আমেরিকান মেমোরি প্রকল্প কর্তৃক প্রকাশিত।
  25. Maier, American Scripture, ২৫।
  26. Rakove, Beginnings of National Politics, পৃ: ৮৮-৯০।
  27. Christie and Labaree, Empire or Independence, ২৭০; Maier, American Scripture, ৩১-৩২।
  28. Jensen, Founding, পৃ: ৬৬৭।
  29. Rakove, Beginnings of National Politics, পৃ: ৮৯; Maier, American Scripture, পৃ: ৩৩।
  30. Maier, American Scripture, পৃ: ৩৩-৩৪।
  31. Hazelton, Declaration History, ২০৯; Maier, American Scripture, ২৫-২৭।
  32. Friedenwald, Interpretation, ৬৭।
  33. Friedenwald, Interpretation, ৭৭।
  34. Maier, American Scripture, ৩০।
  35. Maier, American Scripture, 59.
  36. Jensen, Founding, 671; Friedenwald, Interpretation, ৭৮।