মাওলানা (আরবি: مولانا ) একটি সম্মানসূচক উপাধি যা মুসলিম ধর্মীয় নেতার নামের শুরুতে যুক্ত করা হয়। যেমন হাসান বসরির নামের শুরুতে মাওলানা যুক্ত করা হতো।[১] মূলত মধ্য এশিয়াভারত উপমহাদেশে মাদ্রাসা বা দারুল উলুম বা কোনো ইসলামি পন্ডিতের অধীনে পড়াশোনা করা স্নাতকোত্তর পাশ ব্যক্তিকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মাওলানা শব্দের বিশ্লেষণ সম্পাদনা

শব্দটি মূলত দুটি শব্দ (তথাمولا+نا) যোগে গঠিত।মাওলা শব্দের প্রায় ৩০টিঅর্থ রয়েছে। যেমন:

পবিত্র কুরআন শরিফে প্রায় ৪টি অর্থে মাওলা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন:

১.সূরা বাকারার ২৮৬ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: ﺍﻧﺖ ﻣﻮﻻﻧﺎ ﻓﺎﻧﺼﺮﻧﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮﻳﻦ’ এখানে শব্দটি অভিভাবক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

২.সূরা হাদীদের ১৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: ﻓَﺎﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﺧَﺬُ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻓِﺪْﻳَﺔٌ ﻭَﻟَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻣَﺄْﻭَﺍﻛُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﻫِﻲَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻛُﻢْ ﻭَﺑِﺌْﺲَ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ এখানে শব্দটি আবাস্থল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

৩.সূরা মুহাম্মাদের ১১নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: ذلك بأن الله مولى الذين ..آمنوا. এখানে শব্দটি বন্ধু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

৪.সূরা তাহরীমের ৪নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: والله مولاكم... এখানে সহযোগী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

আর তাছাড়া উর্দু ভাষায় মাওলানা শব্দটি উস্তাদ ও আলেমে দ্বীন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। [৩] আমরা যেহেতু এই শব্দের ব্যবহার উর্দুভাষীদের থেকে পেয়েছি, তাই সাধারণত মাওলানা দ্বারা এই দুই অর্থই উদ্দেশ্য করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস সম্পাদনা

নবী মুহাম্মদের ﷺ-এর যুগ থেকেই 'মাওলা' শব্দের ব্যবহার ও'মাওলানা' বলে ডাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। মুহাম্মদআলী (রাঃ) এর ব্যপারে বলেছেন- 'আমি যার মাওলা, ইনিও (আলী রাঃ) তার মাওলা।' [৪] রাসূল ﷺ যায়েদ (রাঃ) কে মাওলানা বলেছেন। [৫]

সাহাবায়েকেরামের (রাঃ) একদল রাসূল ﷺ -কে মাওলানা বলেছেন। [৬]

আনসারী সাহাবীদের (রাঃ) একদল যাদের মধ্যে আবু আইয়্যূব আনসারী (রাঃ) ছিলেন আলী (রাঃ)-কে সালাম দিতে গিয়ে 'মাওলানা' বলে ডেকেছেন। [৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. (তাহযিবুত তাহযিব ২/২৬৩), আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৯/২৬৬)
  2. বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ : ৪/৯৭৮, ফাতাওয়ায়ে আশরাফিয়া, পৃষ্ঠা ৭০, উমদাতুর রিআয়াহ : ২/৩২৮, লিছানুল আরব : ৮/৪৫২, আল-মিসবাহুল মুনির, পৃষ্ঠা ৫৯১)
  3. আল-হাদিয়্যাতুল মারযিয়্যা, পৃষ্ঠা ১১৭, ফিরুজুল লুগাত, পৃষ্ঠা ৬৬৪
  4. من كنتُ مولاه فهذا مولاه ইমাম হাইছামী ও শাওকানী ও আলবানী বলেন,হাদীসের রাবীগণ ছেকাহ বা বিশ্বস্ত। মাজমাউয যাওয়ায়েদ-৯/১০৬,মুসনাদে আহমদ-২৩৬০৯,তাবারানী -৪০৫৩,দুররুস সাহাবা লিশ শাওকানী-১৪২,সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা-৪/৩৪০
  5. হাদিসের ভাষ্য-فاخونا و مولانا সহীহুল জামে-১৩৪৭,আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাসিরুদ্দীন আলবানী এটাকে সহীহ বলেছেন।
  6. জামিউল মাসানীদ ওয়াস সুনান,লি ইবনে কাসীর-১৬৯৫
  7. হাদিসের ভাষ্য- السلام عليك يا مولانا ইমাম হাইছামী ও শাওকানী ও আলবানী বলেন,হাদীসের রাবীগণ ছেকাহ বা বিশ্বস্ত। মাজমাউয যাওয়ায়েদ-৯/১০৬,মুসনাদে আহমদ-২৩৬০৯,তাবারানী -৪০৫৩,সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা-৪/৩৪০,দুররুস সাহাবা লিশ শাওকানী-১৪২

আরও দেখুন সম্পাদনা