মজিদ-উল-হক

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

মেজর জেনারেল (অবঃ) এম মজিদ-উল-হক (১৯২৬ - ২৫ মার্চ ২০১৩) একজন বাংলাদেশী সেনা কর্মকর্তা ছিলেন এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন সাবেক সংসদ সদস্যমন্ত্রী[১][২][৩]

মেজর জেনারেল (অবঃ)

এম মজিদ-উল-হক
জন্ম১৯২৬
মৃত্যু২৫ মার্চ ২০১৩(2013-03-25) (বয়স ৮৬–৮৭)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারত বর্তমান বাংলাদেশ
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশাসামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

মজিদ উল হক ১৯২৬ সালে মাগুরায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একজন কর্মচারী ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে তিনি দিল্লীর রায়সিংহ বাংলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানকার হিন্দু কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ইংরেজি সাহিত্যে সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তিতে তিনি শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

লেখাপড়া শেষে ১৯৪৬ সালে তিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগদান করেন। পরের বছর ১৯৪৭ সালের ১৪ অক্টোবর দেরাদুন থেকে পাকিস্থানে স্থানান্তরিত হন এবং ২০ অক্টোবর তারিখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসাবে কমিশন প্রাপ্ত হন। এখানে ইঞ্জিনিয়ারস কোরের একজন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এ সময় তিনি পূর্বপশ্চিম পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ারস- এর প্রথম বাঙ্গালী কমান্ডিং অফিসার হিসাবে যোগ দেন। এখানে তিনি কুমিল্লা ও যশোরে নতুন সেনানিবাস স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে তাকে গিলগিট কারাকোরাম মাউনটেইন হাইওয়ে প্রজেক্টের প্রকল্প প্রকৌশলী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আর্মি'র ডেপুটি মারশাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে পশ্চিম পাকিস্তানের এক সহকর্মীর সাথে মতদ্বৈততার কারণে তাকে রাওয়ালপিন্ডি জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে ফেরত পাঠানো হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মজিদ উল হক এবং তার পরিবারের সদস্যদের কোহাতমান্ডি বাহাউদ্দিন ডিটেনশন ক্যাম্পে নেয়া হয়। এখানে তাদেরকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়। বন্দীশালায় বাঙ্গালী অফিসার ও জওয়ানদের উপর চলমান নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বিবিসিকে গোপনে একটা চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেন। [৫]

বাংলাদেশে জীবন সম্পাদনা

১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর স্টীল কর্পোরেশনের পরে স্টীলসহ রসায়ন ও তেজস করর্পোরেশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এবং একই সাথে স্টীল, সার, রসায়ন ও ভজস করর্পোরেশনের বিশেষ সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিষদে রেলওয়ে, সড়ক, জনপদ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং ৭৮ সালে সংস্থাপন বিভাগের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। জিয়াউর রহমান তাকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। পরবর্তিতে ১৯৭৯ সালে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর তাকে শিল্প, রেল ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন, তখন মজিদ-উল হকই এরশাদের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। পরে ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি এবং সেই থেকে খালেদা জিয়াকে ‘আপসহীন’ অভিহিত করে আসছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। [৬] ১৯৯১ সনের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে একাধারে তিনি কৃষি, সেচ, পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

সমালোচনা সম্পাদনা

তিনি পারিবারিক দূর্নীতি এবং দলীয় কোন্দলের কারণে ব্যাপক সমালোচিত হন। ৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রফেসর ডা. সিরাজুল আকবরের কাছে পরাজিত হন। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৯৮ সালে তিনি স্বেচ্ছায় দলের স্থায়ী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০১ সালে দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। তারপর থেকেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। মজিদ-উল-হক একজন ভালো লেখক ছিলেন। কয়েকটি বই রচনা করেন।[৭][৮]

মৃত্যু সম্পাদনা

২৫ মার্চ ২০১৩ তারিখে মেজর জেনারেল (অবঃ) মজিদ উল হক মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রী মুমতাজ জাহান জেবুন্নেসা তার মৃত্যুর ১০ দিন আগে মারা যান।[৯] মৃত্যুকালে তিনি ২ পুত্র, ১ কন্যা এবং অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। [২][১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Correspondent, Staff; bdnews24.com। "Majid ul Haque dies at 87"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  2. প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "সাবেক মন্ত্রী মজিদ উল হক আর নেই"bangla.bdnews24.com। ২০১৯-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  3. "মাগুরা জেলা"www.magura.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  4. "Qulkhwani of Majid-ul Haque Friday"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৩-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  5. "new age" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  6. ডটকম, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "'গণতন্ত্রের অগ্রসৈনিক ছিলেন মজিদ-উল হক'"bangla.bdnews24.com। ২০১৯-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  7. "Former minister Majid Ul Haque passes away"Click Ittefaq (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৩-২৫। ২০১৯-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  8. "Majid Ul Haque gets bail in graft case"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-০৮-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  9. "এম মজিদ উল হক ও বেগম মমতাজ জাহান জেব উন নিসা মজিদ :: দৈনিক ইত্তেফাক"archive.ittefaq.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  10. "Former minister Majid-ul-Haq passes away" (ইংরেজি ভাষায়)। Thefinancialexpress-bd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-১৬