মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত সরকারের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি

মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত সরকারের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি মঙ্গোলিয়ার উর্গা শহরে স্বাক্ষরিত হয়।[১] তিব্বতী স্বাক্ষরকারীদের এই চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আদৌ তিব্বতী সদস্যদের ওপর সরকারীভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিনা এবং এই চুক্তি আদোয় সরকারীভাবে স্বীকৃত নথি কিনা, তা এখনো বিতর্কিত বিষয়। মাঝে মাঝে এই চুক্তির অস্তিত্ব সম্বন্ধেই সন্দেহ প্রকাশ করা গয়েছে, কিন্তু মঙ্গোল বিজ্ঞান অ্যাকাডেমী ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোল ভাষায়[১] এবং ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতী ভাষায় এই চুক্তির মূল পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশ করে।[২]

মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত সরকারের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে চিং সাম্রাজ্যের পতনের পরে তিব্বতমঙ্গোলিয়া ধর্মীয় রাষ্ট্রপ্রধানের শাসনাধীনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে, কিন্তু উভয় দেশই নবগঠিত চীন সরকারের নিকট হতে স্বীকৃতি পেতে ব্যর্থ হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি একটি চুক্তির মাধ্যমে তিব্বতমঙ্গোলিয়া পরস্পরকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই চুক্তির ফলে উভয় দেশ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সত্রুর বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করা এবং পরস্পরের মধ্যে মুক্ত ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।[৩] মঙ্গোলিয়ার পক্ষ থেকে বৈদেশিক মন্ত্রী দা লামা রাব্দান এবং সেনাবাহিনীর প্রধান মনলইবাটর ডামডিনসূরেন এবং তিব্বতের পক্ষ থেকে আগভান দোর্জিয়েভ, ঙ্গাগ-দ্বাং-ছোস-দ্ব্যিংস (ওয়াইলি: ngag dbang chos dbings), য়ে-শেস-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: ye shes rgya mtsho) এবং দ্গে'-দুন-স্কাল-ব্জাং (ওয়াইলি: dge' dun skal bzang) এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

বৈধতা সম্পাদনা

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ামঙ্গোলিয়ার মধ্যে একটি চুক্তিতে মঙ্গোলিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে দোর্জিয়েভ উর্গা শহরে উপস্থিত রুশ প্রতিনিধি ই. ইয়া. কোরোস্তোভেৎসের সঙ্গে সাক্ষাত করে জানান যে, তিব্বত সরকার মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার সাথে চুক্তি সম্পাদনায় আগ্রহী। কোরোস্তোভেৎস তাকে জানান, সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে তিব্বতের চুক্তির ব্যাপারে রাশিয়ার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে তার আপত্তি রয়েছে।[৪]

আগভান দোর্জিয়েভকে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষরের ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ত্রয়োদশ দলাই লামা অস্বীকার করলে এই চুক্তির বৈধতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়,[৫] যদিও পরবর্তীকালে চতুর্দশ দলাই লামা এই চুক্তি সম্বন্ধে তার বইয়ে উল্লেখ করেন যে, চুক্তিটি ত্রয়োদশ দলাই লামার স্বীকৃতিতেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল।[৬] একজন রুশ নাগরিক হওয়ার সুবাদে দোর্জিয়েভ তিব্বতের প্রতিনিধি হিসেবে এই ধরনের চুক্তি করতে পারেন না বলে রুশ সরকার নিজেদের অবস্থান জানায়। যাই হোক, এই চুক্তির পরেও তিব্বত ও মঙ্গোলিয়ার স্বাধীনতা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করতে অসমর্থ হয়। এই চুক্তির সংবাদ ছড়িয়ে পড়তে সিমলার সভায় উপস্থিত ব্রিটিশদের প্রতিনিধিদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে যে, রাশিয়া এই চুক্তির সুযোগ নিয়ে তিব্বতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করবে।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Udo B. Barkmann, Geschichte der Mongolei, Bonn 1999, p.119-122, 380f (জার্মান)
  2. Phurbu Thinley (২০০৮-১১-১২)। "Tibet - Mongolia Treaty of 1913, a proof of Tibet's independence: Interview with Prof. Elliot Sperling"। Phayul.com। ২০১৮-১২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১৩ 
  3. Kuzmin, S.L. The Treaty of 1913 between Mongolia and Tibet: new data. - Oriens (Moscow, Russian Academy of Sciences), no 4, 2011, pp. 122—128
  4. Korostovets, I.Ya. Девять месяцев в Монголии. Дневник русского уполномоченного в Монголии. Август 1912 — май 1913 гг. (Nine months in Mongolia. A diary of Russian plenipotentiary in Mongolia. August 1912 - May 1913.) Ulaanbaatar, Admon publisher, 2011, p. 198 (রুশ)
  5. Bell, Charles, Tibet Past and Present, 1924, pp 150f, 228f, 304f.
  6. Dalai Lama, My Land and My People, New York, 1962

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

আরো পড়ুন সম্পাদনা