ভেনেজুয়েলায় টেলিভিশন

ভেনেজুয়েলায় টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা ১৯৫২ সাল থেকে শুরু হয়। স্বৈরশাসক মার্কোস পেরেজ জিমেনেজ রাষ্ট্রীয় চ্যানেল টেলিভিসোরা ন্যাশিওনালের শুভ উদ্বোধন করেন। এরফলে ভেনেজুয়েলা বিশ্বের নবম দেশ হিসেবে টেলিভিশন দেখার সুযোগ পায়। ১৯৬৩ সালে ভেনেজুয়েলার এক-চতুর্থাংশ বাড়ীতে টেলিভিশন ছিল যা পরবর্তীতে ১৯৬৯১৯৮২ সালে যথাক্রমে ৪৫% ও ৮৫%-এ দাঁড়ায়।[১] ভেনেজুয়েলায় টেলেনোভেলা অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯২ সালে কারা সুসিয়া’র ন্যায় কিছু ভেনেজুয়েলীয় নির্মাণ সংস্থাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠান বিপণনে অগ্রসর হয়। তবে, সর্বাপেক্ষা যে টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়ে তা হলো সাপ্তাহিক আলাপচারিতামূলক অনুষ্ঠান ‘আলো প্রেসিডেন্টে’। এ অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুগো চাভেজ অংশ নিতেন। এছাড়াও, সরকার নিয়মিতভাবে সকল চ্যানেলে সরকারী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার বিষয়ে বাধ্যতামূলক আদেশ দান করে।

চ্যানেল সম্পাদনা

টেলিভিসোরা ন্যাশিওনালের পর ভেনেজুয়েলায় দ্বিতীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টেলিভিসা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৫৩ সালে রেডিও কারাকাস টেলিভিশনের পূর্বেই এটি প্রথম বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ছিল। জুলিয়া স্টেটের মারাকাইবোয় ভেনেজুয়েলার প্রথম আঞ্চলিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক অনদাস ডেল লাগো টেলেভিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও কয়েক মাস পরই এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রধান ব্যক্তিমালিকানাধীন টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে ভেনেভিসন, টেলিভেনগ্লোবোভিশন। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের মধ্যে রয়েছে ভেনেজোলানা ডে টেলিভিশন, টিভিইস, ভিভেটেলেসার। এছাড়াও, স্থানীয়ভিত্তিতে কাতিয়া টিভিই এবং আঞ্চলিক নেটওয়ার্কভিত্তিক জুলিয়ানা ডে টেলিভিশন সম্প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়াও ভেনেজুয়েলা সরকারের অর্থায়নে আভিলা টিভি, বুয়েনা টিভিআসামব্লেয়া ন্যাশিওনাল টেলিভিশন পরিচালিত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ব্যক্তিগত টেরেস্ট্রিয়ান সম্প্রচার ব্যবস্থায় দর্শকদের আগ্রহ কমতে থাকে। ২০০০ সালে যেখানে দর্শক সংখ্যা ৮০% ছিল; ২০১০ সালে সেখানে ৬০%-এ দাঁড়ায়। বাদ-বাকী দর্শকেরা ক্যাবল ও স্যাটেলাইট সম্প্রচার ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এর বিপরীতে এ সময়ে ক্যাবল ও স্যাটেলাইটে দর্শক সংখ্যা ১৭% থেকে ৩৩%-এ বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দর্শক সংখ্যাও ২% থেকে ৫%-এ বাড়ে। এতে অবশ্য ‘কাদেনাস’ অন্তর্ভুক্ত হয়নি।[২]

১৯৮০ সাল থেকে ভেনেজুয়েলায় উত্তর আমেরিকাভিত্তিক অ্যানালগ কালার ব্রডকাস্ট সিস্টেম এনটিএসসি ব্যবহার করে আসছে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে জাপানী পদ্ধতিতে ব্রাজিলীয় সহায়তায় আইএসডিবি-টি ব্যবহার করছে।

ভেনেজুয়েলায় সিএটিভি কিংবা স্যাটেলাইট টিভি ব্যবহার খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিনিময় মূল্যও খুব কম। ইন্টার ৪৩০,০০০ গ্রাহক নিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে যা ৩৯%। এরপরই রয়েছে ডাইরেকটিভি’র ৪০০,০০০ (৩৬.৫%), নেট-ইউএনও ১১০,০০০ (১০%) ও সুপারক্যাবল ১০৫,০০০ (৯.৫%)।

অনুষ্ঠানমালা সম্পাদনা

টেলেনোভেলা ভেনেজুয়েলায় অসম্ভব জনপ্রিয়। কিছু ভেনেজুয়েলীয় অনুষ্ঠান নির্মাণ সংস্থা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠান বিপণন করে থাকে। তন্মধ্যে, ১৯৯২ সালে কারা সুসিয়া অন্যতম। তবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেরা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছে রাষ্ট্রপতি হুগো চাভেজের সাপ্তাহিক আলাপচারিতামূলক অনুষ্ঠান আলো প্রেসিডেন্টে। এ অনুষ্ঠানটি ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো সম্প্রচারিত হয় ও ২০১২ সাল পর্যন্ত মাঝে-মধ্যে বিরতি দিয়ে চলমান ছিল।

অধ্যাদেশ সম্পাদনা

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুগো চাভেজের সরকার পুণঃপুণ টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিয়ম-কানুন ভঙ্গের অভিযোগ আনে। ২০০২ সালে বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুগো চাভেজ গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি বেতার কেন্দ্রের কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছেন। তন্মধ্যে, একটি টিভি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে শক্ত মনোভাব পোষণ ও আরেকটি চ্যানেলের পক্ষে সুবিধা প্রদান অন্যতম। চাভেজ একবার বলেছিলেন, ‘আশ্চর্যান্বিত হবার কোন কারণ নেই, যদি আমরা একের-পর এক টেলিভিশন কেন্দ্র বন্ধ করে দেই।’ জানুয়ারি শেষে ‘চাভেজের তথ্য সংবলিত অনুষ্ঠান না থাকলে, সমর্থক, মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের তাঁর সম্পর্কযুক্ত অনুষ্ঠান টেলিভিশনে প্রদর্শন না করলে’ তার সরকার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতো।[৩]

২০০৭ সালের আরসিটিভি সম্প্রচার অনুমোদন পুণঃনবায়ণ বিতর্ক সম্পাদনা

১৫ নভেম্বর, ১৯৫৩ তারিখে রেডিও কারাকাস টেলিভিশন (আরসিটিভি) সম্প্রচার করতে শুরু করে। এ কেন্দ্রটি তৃতীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্ক হিসেবে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করে। ভেনেজুয়েলার সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করতে এ কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ঐ নেটওয়ার্কের জন্মলগ্ন থেকে সোপ অপেরা আরসিটিভি’র অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠে। আরসিটিভি’র অনুষ্ঠানমালা প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে, ভেনেজুয়েলার সমসাময়িক সমাজের প্রতিফলন ঘটায় ও প্রথাকে তুলে ধরলে নেটওয়ার্কের ক্রমবর্ধমান রেটিং বৃদ্ধি পেতে থাকে।[৪]

আরসিটিভি চাভেজ সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করতে থাকে। পূর্বেও এ সংস্থাটি অনেক সরকারের সমালোচনা করেছিল। প্রায়শঃই প্রতিপক্ষীয় দলের আন্দোলনে অংশ নিয়ে বলিভারীয় সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।[৫] ফলশ্রুতিতে ভেনেজুয়েলীয় সরকারের ভয়-ভীতি ও আক্রমণের শিকারে পরিণত হয় এ স্টেশনটি। ২৭ মে, ২০০৭ তারিখে সম্প্রচার নিবন্ধ পুণঃনবায়ণ না করে হুগো চাভেজ এ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। এ কার্যক্রমের বিপক্ষে সাধারণ নাগরিক বিক্ষোভ মিছিল করে। জুলাই, ২০০৭ সালে ক্যাবল ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরসিটিভি অনুষ্ঠান পরিচালনায় অগ্রসর হয়। ২৩ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে আরসিটিভি ইন্টারন্যাশিওনাল রাষ্ট্রপতি চাভেজের ভাষণ সম্প্রচার করেনি। একই দিন সরকার কোম্পানি, সরকারী ক্যাবল ও স্যাটেলাইট পরিচালনাকারীদেরকে আরসিটিভি ইন্টারন্যাশনালের অনুষ্ঠান প্রচার না করতে নির্দেশ দেয়। এ প্রসঙ্গে চাভেজ বলেন, ‘অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকারী, নাগরিকদের বিপক্ষে অবস্থানকারী, দেশ, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারী কোন গণমাধ্যমকে অনুমোদন দিতে পারেন না।’[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Swanson, David and Mancini, Paolo (1996), Politics, media, and modern democracy: an international study of innovations in electoral campaigning and their consequences, Greenwood Publishing, p240
  2. Mark Weisbrot and Tara Ruttenberg, 14 December 2010, Center for Economic and Policy Research, Television in Venezuela: Who Dominates the Media?
  3. Klein, Naomi (২০০৩)। "Venezuela's Media Coup"Nation276 (8): 10। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Rory, Carroll। "Chávez silences critical TV station - and robs the people of their soaps"। The Guardian। 
  5. "The Americas: Broadcast battles; Venezuela"The Economist298। জুলাই ২১, ২০০৭। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Navasky, Victor (২০০৭)। "Mission to Caracas"Nation284 (8): 6, 23। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আরও দেখুন সম্পাদনা