কাঠামোগত (স্ট্রাকচারাল) ভূতত্ত্ববিদ্যা অনুসারে, যখন এক বা একাধিক আদি সমতল বা সমতল পৃষ্ঠতল পাললিক স্তরের মতো স্থায়ী বিকৃতির ফলে নিচু বা বাঁকা হয় তখন ভাঁজ সৃষ্টি হয়। পাললিক স্তর শিলাতে পরিণত হওয়ার পূর্বে অবনমিত হওয়ার কারণে সিনসেডিমেন্টারি ভাঁজের সৃষ্টি হয়। শিলার মধ্যে আণুবীক্ষণিক কুঞ্চন থেকে শুরু করে পর্বত আকারের ভাজঁ হতে পারে। বিচ্ছিন্ন ভাবে একক হিসেবে আবার বিভিন্ন আকার ও আকৃতিতে সারিবদ্ধভাবে ভাজঁ সৃষ্টি হতে পারে।

প্যালিওপ্রোটেরোজোয়িক যুগের মার্বেল পাথরে ভাজ, নুনাবাউট, কানাডা (আকৃতি তুলণা করার জন্য সাথে হাতুড়ি দেওয়া)
চুনাপাথর এবং চুনের ভিতর পরিবর্তনশীল স্তরের ভিতরে ভাজঁ, ক্রীট, গ্রীস।
ক্যালিফোর্নিয়ার বেয়ারস্টাে’র নিকটে বেয়ারস্টো গঠনের ভিতরে প্রস্তরময় রঙধনু অববাহিকা
ইউক্রেনীয় কার্পেথিয়ানের ডোরাতে একটি সামঞ্জস্যহীন কৌনিক ভাঁজ (জিরিমজের কাছে, ইভানা-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চল, পশ্চিম ইউক্রেন)

নরম পললে তাদের উপস্থিতি, আগ্নেয় শিলার বর্ণালী এবং এমনকি আগ্নেয়শিলার প্রাথমিক গঠন থেকে প্রমাণীত হয় বিভিন্ন ধরনের চাপ, হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপ, ছিদ্রের চাপ এবং তাপমাত্রার নতির কারণে ভাঁজ গঠিত হতে পারে। অরোজেনিক (orogenic) অঞ্চলের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট হলো একগুচ্ছ ভাঁজ একটি আঞ্চলিক ভাঁজ বলয়ে ছড়িয়ে থাকে। ভাঁজগুলি সাধারণত বিদ্যমান স্তরগুলির সংকোচেনের ফলে তৈরি হয়, তবে বৈশিষ্টমূলকভাবে দৃঢ়তা লাভের ফলে বা উচ্চ স্তরে আগ্নেয় শিলার অনুপ্রবেশের (যেমন পাললিক শিলা ভেদ করে শক্তিশালী আগ্নেয়শীলার উত্থান) কারণে একটি প্রসারিত ফল্ট (ফল্ট প্রসারণকরণ ভাঁজ) এর উপরিভাগে একটি অসমতল ফল্টের বিচ্যুতির (বক্রতাজনিত চ্যুতি ভাঁজ) ফলেও এটি গঠিত হতে পারে।

ভূ-ভাজঁসমূহের বর্ণনা সম্পাদনা

 
ভাঁজ পরিভাষা। আরও সাধারণ ভাঁজ আকারের জন্য, একটি কব্জা বক্ররেখার কব্জা রেখা প্রতিস্থাপন করে এবং একটি অ-সমতল অক্ষীয় পৃষ্ঠ অক্ষীয় সমতলকে প্রতিস্থাপন করে।
 
অক্ষীয় পৃষ্ঠের সাথে নলাকার ভাঁজ সমতল নয়।[১]

আয়তন,ভাঁজের আকৃতি, ভাঁজের টান এবং অক্ষীয় সমতলের গভীরতার উপর ভিত্তি করে ভাঁজ এর শ্রেণিবিভাগ করা হয়।[২]

দ্বিমাত্রিক ভাঁজ সম্পর্কিত পরিভাষা সম্পাদনা

পরিলেখতে ভাঁজের পৃষ্ঠকে কব্জা (hinge) এবং বাহু (limb) অংশে বিভক্ত করা যেতে পারে। ভাঁজের দুইপার্শ্বদেশের নত স্তরদ্বয়কে বাহু বলে আর কব্জা হলো পার্শ্বদেশ পরস্পর যেখানে মিলিত হয়েছে। কব্জা বিন্দু হলো ভাঁজের বাঁকা অবস্থানের নুন্যতম ব্যসার্ধ (সর্বোচ্চ বক্রতা)। ভাজঁ-এর শীর্ষবিন্দু (Crest) হলো ভাঁজ পৃষ্ঠের সর্বোচ্চ বিন্দু এবং অধঃভূমি (Through) হলো সর্বনিম্ন বিন্দু। ভাঁজের আনত বিন্দুটি হলো বাহুর উপর এমন একটি অবস্থান যেটি অবতল অংশ থেকে উল্টো পথে ফিরে আসে; একটি নিয়মিত ভূ-ভাঁজে এটি বাহুর মধ্যবিন্দু হয়ে থাকে।

ত্রিমাত্রিক ভাঁজ সম্পর্কিত পরিভাষা সম্পাদনা

সমস্ত ভাঁজ পৃষ্ঠসহ কব্জা বিন্দুগুলো মিলে একটি কব্জা লাইন গঠন করে, যা শীর্ষ রেখা বা নিম্ন রেখা যে কোনটি হতে পারে। একটি কব্জা রেখার উত্থান বা পতন থেকে ভাঁজটির স্থিতাবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একটি ভাঁজের স্থিতাবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করার জন্য অবশ্যই অক্ষীয় পৃষ্ঠের বর্ণনা করতে হবে। অক্ষীয় পৃষ্ঠ হলো এমন পৃষ্ঠ যা স্তুপীকৃত ভাঁজের পৃষ্ঠের কব্জা লাইনগুলো একত্রিত করে বর্ণনা করা হয়। যদি অক্ষীয় পৃষ্ঠ একটি সমতল পৃষ্ঠ হয় তবে একে অক্ষীয় সমতল বলা হয় এবং এটিকে সমতলের উত্থান ও পতন দ্বারা বর্ণনা করা যায়। একটি অক্ষীয় পথ হলো অন্যান্য পৃষ্ঠের সাথে অক্ষীয় পৃষ্ঠের প্রস্থচ্ছেদ লাইন (ভূমি, পর্বতের পার্শ্ব, ভূতাত্ত্বিক প্রস্থচ্ছেদ)।

সবশেষে বলা যায়, ভাঁজের অক্ষ থাকতে পারে তবে এটি থাকাটা অপরিহার্য নয়। একটি ভাজঁ অক্ষ “একটি সোজা লাইনের নিকটতম আসন্নমান যখন নিজের সমান্তরালে চলে, তখন ভাঁজের তৈরি করে।” (ডোনাথ এবং পার্কার, ১৯৬৪; রামসে ১৯৬৭ এর পরে ডেভিস এবং রেনল্ডস, ১৯৯৬)। একটি ভাঁজ অক্ষ দ্বারা সৃষ্ট ভাঁজকে নলাকার ভাঁজ (cylindrical fold) বলে। এই রাশি নলাকার ভাঁজের কাছাকাছি পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। প্রায়শই ভাঁজের অক্ষ কব্জা লাইনের মতো হয়ে থাকে।[৩][৪]

ভূ-ভাঁজের আকৃতি সম্পাদনা

একটি ভাঁজ সমতল বাহুগুলোর তীর্যক অক্ষ বরাবর মিলিত হয়ে V-আকৃতির হতে পারে, বাঁকা বাহুগুলোর সহযোগে খাঁজ বিশিষ্ট হতে পারে, বাঁকা অক্ষসহ বৃত্তাকার অথবা অসম মধ্যবর্তী ব্যবধান সহযোগে উপবৃত্তাকার হতে পারে।

ভূ-ভাঁজের দৃঢ়তা সম্পাদনা

ভাজেঁর দৃঢ়তা সংজ্ঞায়িত করা হয় ভাঁজে বাহুগুলোর (limbs) মধ্যে কোনের আকার দ্বারা (প্রতিটি বাহুর আনত রেখার সাথে ভাঁজের পৃষ্ঠে স্পর্শক পরিমাপের ন্যায়), একে আন্তঃবাহু কোন বলা হয়। মৃদু ভাঁজগুলোর আন্ত:বাহু কোনের পরিমান 120° থেকে 180°, খোলা ভাঁজ (open folds) ১২০° থেকে ৭০°, নিবিড় ভাঁজ (close folds) ৭০° থেকে ৩০° এবং আঁটসাঁট ভাঁজগুলোর (tight folds) ৩০° থেকে ০° হয়ে থাকে।[৫] আইসোক্লিন (Isoclines) বা আইসোক্লিনাল ভাঁজগুলোর (isoclinal folds) আন্ত:বাহু কোন ১০° থেকে ০° এর মধ্যে এবং বাহুগুলো অত্যাবশ্যকীয়ভাবে সমান্তরাল হয়ে থাকে।

ভূ-ভাঁজের প্রতিসাম্যতা সম্পাদনা

ভাঁজ অক্ষের উভয় পাশের ভাঁজ সমান নয়। যাদের বাহুগুলো অপেক্ষাকৃত সমান দৈর্ঘে্যর তাদের বলা হয় প্রতিসম, এবং যাদের বাহুগুলো অত্যন্ত অসম তাদের বলা হয় অপ্রতিসম।

গঠনের শ্রেণিবিভাগ সম্পাদনা

সমকেন্দ্রিক ভাঁজের ন্যায় শ্রেণীবদ্ধ হয়ে ভাঁজ সমসত্ত্ব স্তর বজায় রাখে। তাদেরকে সদৃশ ভাঁজ বলা হয় না। সদৃশ ভাঁজগুলোর বাহু এবং কব্জা অঞ্চলের পাতলাকরণ প্রবণতা আছে। স্তরগুলোর সক্রিয়ভাবে মিলিত দোমড়ানোর ফলে সমকেন্দ্রিক বাঁজের উৎপত্তি হয়, যেখানে অনুরূপ ভাঁজগুলো সাধারণত গঠিত হয় কিছু বিভক্ত প্রবাহ গঠনের মাধ্যমে, যেখানে স্তরগুলো যান্ত্রিকভাবে সক্রিয় হয় না। রামসে (Ramsay) একটি শ্রেণিবিভাগ পদ্ধতি প্রস্তাব করেন যেটি প্রায়শই ভাঁজের ভিতরের ও বাইরের লাইনের বক্রতা অনুসারে পরিলেখ ভিত্তিক ভাঁজ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।[৬]

 
আইসোগন গর্তের (লাল রেখা) অভিসরণ দ্বারা ভাজঁ-এর জন্য রামসে শ্রেণীবিণ্যাস।[৭]
ভূ-ভাজঁ-এর জন্য রামসে শ্রেণীবিণ্যাস পদ্ধতি
শ্রেণী বক্রতা C মন্তব্য
 1 Cinner > Couter আইসোগন গর্তের অভিসরণ
    1A কব্জায় সমকোণীয় পুরুত্ব বাহুর চেয়ে সংকীর্ণ
    1B সমান্তরাল ভাঁজ
    1C বাহুতে সমকোণীয় পুরুত্ব কব্জার চেয়ে সংকীর্ণ
 2 Cinner = Couter সমকোণ সম্পন্ন বহুভুজীয় খাদ সমান্তরাল: সদৃশ ভাঁজ
 3 Cinner < Couter সমকোণ সম্পন্ন বহুভুজীয় খাদ বিভাজন

প্রকারভেদ সম্পাদনা

 
একটি ঊর্ধ্বভঙ্গ ভাঁজ, নিউ জার্সি
 
কলোরাডো জাতীয় স্মৃতিসৌধে একটি মনোক্লিন
 
হেলানো ভাঁজ, কিং অস্কার ফোর্ড
  • ঊর্ধ্বভাঁজ : রৈখিক, স্তর অক্ষকেন্দ্র থেকে সাধারণত দূরে নত, প্রাচীনতম স্তর দিশা কেন্দ্র নিরপেক্ষ।
  • নিম্ন বা অধঃভাঁজ : রৈখিক, স্তর অক্ষকেন্দ্রমুখী নত, নবীন স্তরের দিশা কেন্দ্র নিরপেক্ষ।
  • বিপরীত গঠন ভাঁজ : রৈখিক, স্তর অক্ষকেন্দ্র থেকে দূরে নত, বয়স অজানা বা বিপর্যস্ত।
  • যুক্ত গঠন ভাঁজ : রৈখিক, স্তর অক্ষকেন্দ্রমুখী নত, বয়স অজানা বা বিপর্যস্ত।
  • গম্বুজাকৃতি ভাঁজ : রৈখিক, স্তর সকল দিক থেকে কেন্দ্রাভিমুখী নত, প্রাচীনতম স্তর কেন্দ্রে অবস্থিত।
  • অববাহিকা ভাঁজ : অরৈখিক, স্তর সকল দিক থেকে কেন্দ্রমুখী নত, নবীন স্তর কেন্দ্রে অবস্থিত।
  • মনোক্লিন ভাঁজ : রৈখিক, স্তর সকল দিকে অনুভূমিক স্তরের মধ্যে একমুখীভাবে নত।
  • তীক্ষ্ণ বা সেভরন ভাঁজ : সোজা বাহু এবং ছোট কব্জা বিশিষ্ট কৌনিক ভাজঁ।
  • হেলানো ভাঁজ : রৈখিক, ভাজ নিম্নকোন ভিত্তিক অক্ষীয় সমতল ফলে ভাজেঁ এক বাহুতে স্তর উল্টানো থাকে।
  • ক্ষীণ ভাঁজ : সাধারণ মনোক্লিনাল, পার্থক্যমূলক বিন্যাসের কারণে অথবা পাললিক ও কঠিন শিলা গঠনের সময় বিচ্ছেদের ফলে।
  • টিগমেটিক (Ptygmatic) : বিশৃঙ্খল, এলোমেলো এবং অসংযুক্ত ভাঁজ। সাধারণ পাললিক মন্দা ভাঁজ, মিগম্যাটাইটস এবং ডিকেকালমেন্ট বিচ্ছিন্ন অঞ্চল।
  • পরাশ্রয়ী ভাঁজ : একটি বড় তরঙ্গ (ঢেউ) বিশিষ্ট ভাঁজের মধ্যে ছোট তরঙ্গ বিশিষ্ট গঠন - সাধারণত ভিন্ন বেধের স্তর যুক্ত হয়ে গঠিত।[৮]
  • অসামঞ্জস্য ভাঁজ : ভিন্ন তরঙ্গের এবং আকৃতির পাশাপাশি স্তরের মধ্যে ভাঁজ।[৮]
    (একটি হোমোক্লিন স্তরের একই দিকে নত হওয়ার সাথে জড়িত, যদিও কোন ভাঁজ অপরিহার্য নয়।)

ভূ-ভাঁজের কারণ সম্পাদনা

ভাঁজ সকল মানদন্ডে, সকল ধরনের শিলার মধ্যে, ভূ-ত্বকের সকল স্তরে প্রতীয়মান হয়। এগুলো বিভিন্ন কারণে উদ্ভূত হয়।

সমান্তরাল স্তরের সংকোচণ সম্পাদনা

 
বাক্স ভাঁজ, লা হেরাডুরা ফর্মেশন, মোরো সোলার, পেরু

যখন একটি স্তরপূর্ণ শিলায় এর স্তরের সমান্তরালে সংকোচন ঘটে তখন এই বিকৃতি একাধিক ভাবে ঘটতে পারে যেমন, সমস্তরের সংকোচন, পশ্চাৎমুখী চ্যুতি অথবা ভাঁজ। এই প্রক্রিয়া যান্ত্রিক স্তরের পুরুত্ব এবং স্তরের মধ্যে বৈসাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে। স্তর যদি ভাঁজে পরিনত হতে শুরু করে তবে ভাঁজের ধরন স্তরের বৈশিষ্টের উপর নির্ভর করে। ক্ষুদ্র কমপিটেন্ট মেট্রিক্স-এর ভিতরে কম পুরুত্বের কমপিটেন্ট স্তর ভাঁজ নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত মিট্রিক্সের বিকৃতির দ্বারা নিখুত বৃত্তাকার ভাঁজগুলো আবৃত হয়। বিসদৃশ বৈশিষ্টের স্তরের নিয়মিত পরিক্রমনের কারণে বেলেপাথর-শ্লেট জাতীয় নরম শিলা, শিকল-শৃঙ্খল, বাক্স-ভাঁজ এবং V-আকৃতির (শেভরন) ভাঁজ স্বভাবত উৎপন্ন হয়।[৯]

 
ঊর্ধ্বভঙ্গ রোলওভার
 
ঊর্ধ্বভঙ্গ র‌্যাম্প
 
চ্যুতির প্রসারণজনিত ভাজঁ

বিচ্যুতি-সম্পর্কিত ভাঁজ সম্পাদনা

অনেক ভাঁজ ভূ-চ্যুতি, প্রসারণের সাথে সম্পৃক্ত, স্থানচ্যুতি, পাশাপাশি দুটি ভূ-চ্যুতির মধ্যে উপযোজন টান-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।

বক্রচ্যুতি ভাঁজ সম্পাদনা

অসম ভূ-চ্যুতি বরাবর স্থানচ্যুতির কারণে বক্রচ্যুতি ভাঁজ উৎপন্ন হয়। অ-উল্লম্ব ভু-চ্যুতির মধ্যে স্থানচ্যুতি অগ্রগমনের ন্যায় সামমঞ্জস্যহীন আড়াআড়ি উপযোজনে হ্যাঙ্গিং ওয়াল বিকৃতি ঘটে। প্রসারণজনিত কারণে এবং ভূ-চ্যুতির ধাক্কা উভয় কারণে বক্রচ্যুতি ভাঁজ ঘটে। সম্প্রাসারণের ফলে লিস্ট্রিক চ্যুতি হ্যাঙ্গিং ওয়ালে রোল-ওভার এন্টিক্লিন গঠন করে।[১০] ধাক্কাজনিত কারণে যখন কোন থ্রাস্ট ফল্ট এক বিচ্ছিন্ন অংশ হতে অন্য অংশে নেয় তখন র‌্যাম্প এন্টিক্লিনগুলো গঠিত হয়। স্থানচ্যুত এই উচ্চ কোন বিশিষ্ট এই র‌্যাম্পগুলো ভাঁজ উৎপন্ন করে।[১১]

চ্যুতির প্রসারণজনিত ভাঁজ সম্পাদনা

পরবর্তী প্রসারণ ছাড়া কোন বিদ্যমান ফল্টে স্থানচ্যুতির কারণে ভূ-চ্যুতি প্রসারণ ভাঁজ বা টিপলাইন ভাঁজ সৃষ্টি হয়। বিপরীত এবং স্বাভাবিক উভয় ধরনের ভূ-চ্যুতির ফলে উপরিতলে ভাঁজের সৃষ্টি হয়, অনেক সময় মনোক্লিন গঠিত হয়।[১২]

বিচ্ছিন্ন ভাঁজ সম্পাদনা

 
কুন্তন অঞ্চলের মধ্যে মাইলোনাইটে দক্ষিণাবর্ত কুন্তন ভাঁজ, ক্যাপ ডি ক্রিয়াস

যখন কোন সমতল বিচ্যুতির উপরে চাপের ফলে ভূ-চ্যুতি ক্রমাগত স্থানচ্যুত হতে থাকে তখন সাধারণত বাক্স-ভাঁজ আকারে বিচ্যুতি ভাঁজ গঠিত হয়। এগুলো সাধারণত ভাল চ্যুতির উপর ঘটে যেমন, জুরা পর্বতমালা, যেখানরে মধ্য টায়াসিক এবাপোরাইটস-এ বিচ্যুতি ঘটে।[১৩]

কুন্তন ভাঁজ সম্পাদনা

অনুমান করা হয় কুন্তন অঞ্চলগুলোর সরল বিভিক্তি সাধারণ ছোট এসিমেট্রিক ভাঁজ ধারণ করে সামগ্রিক বোধ মাত্রার সাথে ধারাবাহিক উল্টে যাওয়ার দিকে। এর মধ্যে কিছু ভাঁজের উচ্চতর অসরল কব্জা-রেখা আছে এবং তা খোপ ভাঁজ নির্দেশ করে। ফাঁটল অঞ্চলগুলিতে ভাঁজ পরম্পরা হতে পারে, প্রাক-ফাঁটল স্তরের দিশার কারণে গঠিত হতে পারে বা বিভক্ত প্রবাহের মধ্যে অস্থিরতার কারণে গঠিত হতে পারে।[১৪]

পাললিক শিলার ভাঁজ সম্পাদনা

সাম্প্রতিক জমা হওয়া পললগুলি সাধারণত যান্ত্রিকভাবে দুর্বল এবং শিলায় পরিণত হওয়ার আগে এটি পুনঃনির্মান প্রবণ হয়, ফলে ভাঁজ সৃষ্টি হতে থাকে। টেকটোনিক উত্সের ভাঁজগুলি থেকে তাদের পার্থক্য করার জন্য, এই ধরনের কাঠামোগুলিকে সিনসেডিমেন্টারি (থিতানোর সময় গঠিত) বলা হয়।

ক্ষীণ ভাঁজ: যখন পলল দুর্বলভাবে একীভূত হয়ে  ক্ষীণ হতে থাকে, তাদের স্থাপনের সময় বিশেষকরে তাদের শীর্ষ প্রান্তে সাধারণত ভাঁজ পড়ে। ক্ষীণ ভাঁজের অপ্রতিসাম্যতা পলল শিলার পরম্পরার প্যালিওস্লোপের দিক নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।[১৫]

জলাবদ্ধতা: সম্ভবত ভূমিকম্পের ফলে উদ্ভূত বালুকাময় তলানি যুক্ত জলাবদ্ধতা সংবর্ত তলবিন্যাসের কারণ হতে পারে।[১৬]

সংযোগ: চ্যুতি রেখাগ্রস্থ এবং ডুবো পাহাড়ের মতো পুরানো কাঠামোর উপর পার্থক্যমুলক সংযোগ দ্বারা আরও ছোট ক্রমে ভাঁজ তৈরি করা যেতে পারে।[১৭]

আগ্নেয়শিলার অনুপ্রবেশ সম্পাদনা

আগ্নেয়শিলার অনুপ্রবেশের ফলে পার্শ্ববর্তী স্থানীয় শিলার বিকৃত হওয়ার প্রবণতা থাকে। উচ্চ স্তরের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে, ভূ-পৃষ্ঠের নিকটে এই বিকৃতিটি অনুপ্রবেশের উপরে কেন্দ্রীভূত হয় এবং ল্যাকোলিথের উপরের পৃষ্ঠের মতো প্রায়শই ভাঁজ হয়ে যায়।[১৮]

প্রবাহ ভাঁজ সম্পাদনা

 
প্রবাহ ভাঁজ: অনুবর্তী স্তরে দৃঢ় শিলার অগ্রগতি র‌্যাম্পের প্রভাব চিত্রিত। উপরে: র‌্যাম্প দ্বারা নিম্ন টান: স্তরগুলির পুরুত্বে পরিবর্তন হয় না; নিচে: উচ্চ টান: সর্বনিম্ন স্তর কুঁচিত হয়।[১৯]

শিলা স্তরের অনুবর্তিতা একে সক্ষমতার দিকে নিয়ে যায়: একটি সক্ষম স্তর বা শিলার তল ধ্বসে যাওয়া ছাড়াই একটি প্রযুক্ত ভরকে প্রতিরোধ করতে পারে এবং এটি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়, যেখানে একটি অযোগ্য স্তর তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে থাকে। যখন শিলা তরলের মতো আচরণ করে, যেমন খনিজ লবনের মতো খুব দুর্বল শিলা, বা যথেষ্ট গভীরভাবে প্রোথিত যে কোনও শিলা, তখন এটি সাধারণত প্রবাহ ভাঁজ দেখায় (একে নিষ্ক্রিয় ভাঁজ বলা হয়, কারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা সামান্য): পার্শ্ববর্তী আরো কঠিন শিলা দ্বারা যে কোনও আকৃতির ধরে নিয়ে তাদের উপর চাপ দিলে স্তরটি অবিকৃতভাবে স্থানান্তরিত হয়। স্তরটি কেবল ভাঁজের চিহ্ন হিসাবে আচরণ করে।[২০] এই জাতীয় ভাঁজ অনেক আগ্নেয় শিলার অনুপ্রবেশ এবং হিমবাহের বরফের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।[২১]

ভাঁজ প্রক্রিয়া সম্পাদনা

 
বৃহৎ আকারের ক্রেনুলেশনের উদাহরণ, তীক্ষ্ণ বা সেভরন-জাতীয় নমনীয় স্থলন ভাঁজের একটি উদাহরণ, গ্লেজারারি বেসিন ডব্লিউ.এ..

শিলার ভাঁজকে অবশ্যই শিলা পিন্ডের আয়তন রক্ষা করে স্তরগুলির বিকৃতির ভারসম্য বজায় রাখতে হবে। এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে।

নমনীয় স্থলন সম্পাদনা

নমনীয় স্থলন ভাঁজকৃত স্তরের স্তরগুলির মধ্যে স্তর-সমান্তরাল স্থলন তৈরির দ্বারা ভাঁজ গঠন সমর্থন করে যা সম্পূর্ণরূপে বিকৃতিতে পরিণত হয়। একটি ভাল উপমা হলো একটি বাঁকানো ফোনবুক, যেখানে বইয়ের পৃষ্ঠাগুলির মধ্যে স্থলন দ্বারা আয়তন রক্ষা করা হয়। সক্ষম শিলার তল সংকোচনের দ্বারা গঠিত ভাঁজটিকে "বক্রতা ভাঁজ" বলা হয়।

আবৃত করা সম্পাদনা

সাধারণত, ভাঁজগুলি পৃষ্ঠতল এবং এর সীমাবদ্ধ আয়তন আবৃতকরণের মাধ্যমে ঘটে বলে মনে করা হয়। আয়তন সংকুচিত করে সমান্তরাল স্তর দ্বারা আয়তন পরিবর্তন সমন্বয় করা হয়, যার ফলে ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়ার অধীনে ভাঁজটি সাধারণত অনুরূপ ধরনের ভাঁজ হয়, পাতলা বাহুগুলো অনুভূমিকভাবে সংক্ষিপ্ত হয় এবং কব্জাগুলি উল্লম্বভাবে ঘন হয়।

ভর স্থানচ্যুতি সম্পাদনা

যদি ভাঁজের বিকৃতি নমনীয় স্থলন বা আয়তন-পরিবর্তন সংকুচন (আবৃতকরণ) দ্বারা সামঞ্জস্যপূর্ণ করা না যায় তাহলে শিলাগুলিকে সাধারণত পীড়ন পথ থেকে সরানো হয়। প্রাকৃতিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় চাপ শিথিলীকরণ করে এটি সাধন করা হয়, যেখানে উচ্চ চাপের অঞ্চলের উপাদানগুলি দ্রবীভূত করে এবং নি্ম্ন চাপের অঞ্চলের গুলোকে পুনরায় জমা করে শিলাগুলি সংক্ষিপ্ত করা হয়। এইভাবে তৈরি করা ভাঁজগুলির উদাহরণ হলো ম্যাগমেটাইট এবং শক্তিশালী অক্ষতল ফাটলযুক্ত অঞ্চল

ভাঁজ বলবিদ্যা সম্পাদনা

শিলার মধ্যে ভাঁজের গঠন পীড়ণ ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত যেখানে শিলা নির্দেশিত এবং শিলার বিকৃতি ও প্রবাহের সাথে (রিওলজি) সম্পর্কিত অথবা যখন চাঁপ প্রয়োগ করা হয় তখন শিলার পীড়ণের প্রতিক্রিয়া সূত্রের সাথে সম্পর্কিত।

ভাঁজের ভিতর স্তরগুলোর রিওলজি ভাজের চরিত্রগত বৈশিষ্ট নির্ণয় করে যাত ক্ষেত্রের ভিতর পরিমাপ করা হয়। যেসমস্ত শিলা অনেক সহজে বিকৃত হয় সেগুলি অনেকগুলি স্বল্প-মধ্যবর্তী ব্যাবধানের, উচ্চ-বিস্তার বিশিষ্ট ভাঁজ উৎপন্ন করে। যেসমস্ত শিলা অনেক সহজে বিকৃত হয় না সেগুলি অনেকগুলি উচ্চ-মধ্যবর্তী ব্যাবধানের, কম-বিস্তার বিশিষ্ট ভাঁজ উৎপন্ন করে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • থ্রিডি ভাঁজ বিবর্তন
  • পর্বতবিদ্যা
  • পর্বত গড়ন
  • চাপ চ্যুতি

টীকা সম্পাদনা

  1. DD Pollard; RC Fletcher (২০০৫)। "Figure 3.14: Geometric attributes of folded geological surfaces"। Fundamentals of Structural Geology। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 92। আইএসবিএন 0-521-83927-0 
  2. For a discussion of fold nomenclature, see for example, Robert J. Twiss; Eldridge M. Moores (১৯৯২)। Structural geology (2nd সংস্করণ)। Macmillan। পৃষ্ঠা 220–221। আইএসবিএন 0-7167-2252-6 
  3. Sudipta Sengupta; Subir Kumar Ghosh; Kshitindramohan Naha (১৯৯৭)। Evolution of geological structures in micro- to macro-scales। Springer। পৃষ্ঠা 222। আইএসবিএন 0-412-75030-9 
  4. RG Park (২০০৪)। "Fold axis and axial plane"। Foundations of structural geology (3rd সংস্করণ)। Routledge। পৃষ্ঠা 26। আইএসবিএন 0-7487-5802-X 
  5. Lisle, Richard J (২০০৪)। "Folding"। Geological Structures and Maps: 3rd Edition। Elsevier। পৃষ্ঠা 33আইএসবিএন 0-7506-5780-4 
  6. See, for example, R. G. Park (২০০৪)। "Figure 3.12: Fold classification based upon dip diagrams"। Foundations of structural geology (3rd সংস্করণ)। Routledge। পৃষ্ঠা 31 ffআইএসবিএন 0-7487-5802-X 
  7. Neville J. Price; John W. Cosgrove (১৯৯০)। "Figure 10.14: Classification of fold profiles using dip isogon patterns"। Analysis of geological structures। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 246। আইএসবিএন 0-521-31958-7 
  8. Park, R.G. (২০০৪)। Foundation of Structural Geology (3 সংস্করণ)। Routledge। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 978-0-7487-5802-9 
  9. Ramsay, J.G.; Huber M.I. (১৯৮৭)। The techniques of modern structural geology2 (3 সংস্করণ)। Academic Press। পৃষ্ঠা 392। আইএসবিএন 978-0-12-576922-8। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০১ 
  10. Withjack, M.O.; Schlische (২০০৬)। "Geometric and experimental models of extensional fault-bend folds"। Buiter S.J.H. & Schreurs G.। Analogue and numerical modelling of crustal-scale processes। Special Publications 253। R.W.। Geological Society, London। পৃষ্ঠা 285–305। আইএসবিএন 978-1-86239-191-8। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-৩১ 
  11. Rowland, S.M.; Duebendorfer E.M.; Schieflebein I.M. (২০০৭)। Structural analysis and synthesis: a laboratory course in structural geology (3 সংস্করণ)। Wiley-Blackwell। পৃষ্ঠা 301। আইএসবিএন 978-1-4051-1652-7। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০১ 
  12. Jackson, C.A.L.; Gawthorpe R.L.; Sharp I.R. (২০০৬)। "Style and sequence of deformation during extensional fault-propagation" (পিডিএফ)Journal of Structural Geology28 (3): 519–535। ডিওআই:10.1016/j.jsg.2005.11.009বিবকোড:2006JSG....28..519J। ২০১১-০৬-১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০১ 
  13. Reicherter, K., Froitzheim, N., Jarosinki, M., Badura, J., Franzke, H.-J., Hansen, M., Hübscher, C., Müller, R., Poprawa, P., Reinecker, J., Stackebrandt, W, Voigt,T., von Eynatten, H. & Zuchiewicz, W. (২০০৮)। "19. Alpine Tectonics north of the Alps"। McCann, T.। The Geology of Central Europe। Geological Society, London। পৃষ্ঠা 1233–1285। আইএসবিএন 978-1-86239-264-9। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-৩১ 
  14. Carreras, J.; Druguet E.; Griera A. (২০০৫)। "Shear zone-related folds"Journal of Structural Geology27 (7): 1229–1251। ডিওআই:10.1016/j.jsg.2004.08.004বিবকোড:2005JSG....27.1229C। ২০১২-০৮-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-৩১ 
  15. Bradley, D.; Hanson L. (১৯৯৮)। "Paleoslope Analysis of Slump Folds in the Devonian Flysch of Maine" (পিডিএফ)Journal of Geology106: 305–318। ডিওআই:10.1086/516024বিবকোড:1998JG....106..305B। ২০১১-০৭-১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-৩১ 
  16. Nichols, G. (১৯৯৯)। "17. Sediments into rocks: post-depositional processes"। Sedimentology and stratigraphy। Wiley-Blackwell। পৃষ্ঠা 355। আইএসবিএন 978-0-632-03578-6। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-৩১ 
  17. Hyne, N.J. (২০০১)। Nontechnical guide to petroleum geology, exploration, drilling, and production। PennWell Books। পৃষ্ঠা 598। আইএসবিএন 978-0-87814-823-3। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০১ 
  18. Orchuela, I.; Lara M.E.; Suarez M. (২০০৩)। "Productive Large Scale Folding Associated with Igneous Intrusions: El Trapial Field, Neuquen Basin, Argentina" (পিডিএফ)AAPG abstracts। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-৩১ 
  19. Arvid M. Johnson; Raymond C. Fletcher (১৯৯৪)। "Figure 2.6"। Folding of viscous layers: mechanical analysis and interpretation of structures in deformed rock। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 87। আইএসবিএন 0-231-08484-6 
  20. Park, R.G. (১৯৯৭)। Foundations of structural geology (3rd সংস্করণ)। Routledge। পৃষ্ঠা 109। আইএসবিএন 0-7487-5802-X ; RJ Twiss; EM Moores (১৯৯২)। "Figure 12.8: Passive shear folding"। Structural geology (2nd সংস্করণ)। Macmillan। পৃষ্ঠা 241–242। আইএসবিএন 0-7167-2252-6 
  21. Hudleston, P.J. (১৯৭৭)। "Similar folds, recumbent folds and gravity tectonics in ice and rocks"Journal of Geology85: 113–122। জেস্টোর 30068680ডিওআই:10.1086/628272বিবকোড:1977JG.....85..113H 

সাধারণ তথ্যসূত্র সম্পাদনা