ভূকম্পবিজ্ঞান[টীকা ১] (ইংরেজি: Seismology) হচ্ছে পৃথিবীর বা অন্যান্য গ্রহের মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত ভূমিকম্প এবং স্থিতিস্থাপক তরঙ্গের বৈজ্ঞানিক গবেষণা। ভূগর্ভস্থ ভূমিকম্পের প্রভাব যেমন সুনামি এবং বিভিন্ন ভূকম্পীয় উৎস যেমন জলবায়ু, টেকটনিক, মহাসাগরীয়, বায়ুমণ্ডলীয়, এবং কৃত্রিম বিস্ফোরণগুলির মতো প্রক্রিয়াগুলি এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পূর্ববর্তী ভূমিকম্প সম্পর্কিত বিষয় থেকে তথ্য নির্ণয় করার জন্য যে ভূতত্ত্ব ব্যবহার করা হয় এমন একটি ক্ষেত্র হল প্লেসিয়াবাদবিজ্ঞান।সময় অনুযায়ী পৃথিবীর গতি সংরক্ষণ রাখাকে বলা হয় ভূকম্পলিপি। একজন ভূতাত্ত্বিক হচ্ছেন বিজ্ঞানী যিনি ভূকম্পন গবেষণা করেন।

এটি পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর একটি দুর্যোগ কে নির্দেশ করে

ইতিহাস সম্পাদনা

ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণগুলির প্রাথমিক ধারণা মিলেতুসের থালেস (খ্রিষ্টপূর্ব: ৫৮৫), মিলেতুসের আনাক্সিমেনিস (খ্রিষ্টপূর্ব: ৫৫০), এরিস্টটল (খ্রিষ্টপূর্ব: ৩৪০) এবং চাং হেনং (খ্রিষ্টপূর্ব: ১৩২) -এর লেখাগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৩২ খ্রিষ্টাব্দে, চীনের হান রাজবংশের চাং হেনং প্রথম ভূতত্ত্বকে নকশা করেছেন।

১৬৬৪ সালে, এথানাসিয়াস কিচির যুক্তি দেন যে পৃথিবীর ভেতর আগুনের গতিপথ এবং এর গতি প্রভাবের কারণে ভূমিকম্প হয়।

১৭০৩ সালে, মার্টিন লিস্টার (১৬৩৮ থেকে ১৭২১) এবং নিকোলাস লেমরি (১৬৪৫ থেকে ১৭১৫) প্রস্তাব করেন যে ভূমিকম্প পৃথিবীতে রাসায়নিক বিস্ফোরণের দ্বারা সৃষ্ট হয়।

১৭৫৫ এর লিসবন ভূমিকম্পটি, ভূমিকম্পের আচরণ এবং এর কার্যনির্বাহীতা বোঝার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাকে তীব্রতর করে। সর্বপ্রথম এ কাজে প্রতিক্রিয়া দেখান জন বেভিস (১৭৫৭) এবং জন মাইকেল (১৭৬১) । মাইকেল নির্ধারণ করেছেন যে ভূমিকম্পটি পৃথিবীর মধ্য থেকে এবং এর গতিবিধির তরঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয় যা "ভূ-পৃষ্ঠের নিচে শিলা পাথরের নাড়াচাড়া থেকে হয়েছে"।[১]

১৮৫৭ সাল থেকে, রবার্ট মাললেট যান্ত্রিক ভূকম্পবিদ্যা পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন করেন এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করে ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি "সিসমোলজি"(ভূকম্পবিদ্যা) শব্দটি সিদ্ধ করার জন্য দায়ী।[২]

১৮৯৭ সালে, এমিল ওয়াইখার্ট এর তাত্ত্বিক গণনা অনুসারে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরিন গঠনে একটি সিলিকেটের আচ্ছাদন বা আবরণ রয়েছে যা মূল লৌহ কোর বা কেন্দ্র স্থল কে ঘিরে রয়েছে।[৩]

১৯১৬ সালে রিচার্ড ডিকসন ওল্ডহ্যাম সিসমোগ্রামের উপর পি-তরঙ্গ, এস-তরঙ্গ এবং পৃষ্ঠ তরঙ্গের আগমনের স্বরূপ শনাক্ত করেন এবং প্রথম স্পষ্ট প্রমাণ বা ধারণা দেন যে পৃথিবীর একটি কেন্দ্রীয় কেন্দ্র স্থল রয়েছে।[৪]

১৯১০ সালে, সান ফ্রান্সিসকো ভূমিকম্পের উপর অধ্যয়ন করে, হ্যারি ফিল্ডিং রিড "ইলাস্টিক রিবাউন্ড থিওরি"টি উপস্থাপন করেন যা আধুনিক টেকটোনিক গবেষণার ভিত্তি। এই থিওরি বা তত্ত্বটির উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে পূর্বের ইলাস্টিক উপকরণ এবং গণিতের উপর ভিত্তি করে।[৫]

১৯২৬ সালে ভূমিকম্প তরঙ্গের উপর গবেষণার ভিত্তিতে হ্যারল্ড জেফরিস প্রথম দাবি করেন যে, আচ্ছাদনের নিচে পৃথিবীর মূল বা কোর টি হচ্ছে তরল।[৬]

১৯৩৭ সালে, ইনজ লিহমান সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে, পৃথিবীর তরল অংশের বহিরাগত কোরের মধ্যে একটি কঠিন ভেতরের কোর রয়েছে।[৭]

১৯৬০-এর দশকে পৃথিবী বিজ্ঞান ব্যাপক তত্ত্বের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছিল যা এখন প্লেট টেকটনিকস এর সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের মধ্যে একত্রিত হয়েছে।

ভূমিকম্প তরঙ্গের প্রকার সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. অন্যান্য নাম "ভূকম্পবিদ্যা", "ভূমিকম্পবিদ্যা", "ভূমিকম্পবিজ্ঞান"

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The History and Philosophy of Earthquakes"Cambridge University Press। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-২২ 
  2. Society, The Royal (২০০৫-০১-২২)। "Robert Mallet and the 'Great Neapolitan earthquake' of 1857"Notes and Records (ইংরেজি ভাষায়)। 59 (1): 45–64। আইএসএসএন 0035-9149ডিওআই:10.1098/rsnr.2004.0076 
  3. "http://onlinelibrary.wiley.com/store/10.1029/2012EO070002/asset/eost18389.pdf?v=1&t=iqy2dgy7&s=1ed7ebdc8ea0ba775b8069cb3966a9924d01257c" (পিডিএফ)ডিওআই:10.1029/2012eo070002/asset/eost18389.pdf  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  4. "Oldham, Richard Dixon"। Complete Dictionary of Scientific Biography10Charles Scribner's Sons। ২০০৮। পৃষ্ঠা 203। 
  5. "Reid's Elastic Rebound Theory"earthquake.usgs.gov। ২০০৯-০৯-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-২২ 
  6. Jeffreys, Harold (১৯২৬-০৬-০১)। "On the Amplitudes of Bodily Seismic Waues."Geophysical Journal International (ইংরেজি ভাষায়)। 1: 334–348। আইএসএসএন 1365-246Xডিওআই:10.1111/j.1365-246X.1926.tb05381.x 
  7. Hjortenberg, Eric (ডিসেম্বর ২০০৯)। "Inge Lehmann's work materials and seismological epistolary archive"Annals of Geophysics52 (6)। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা