ভানুমতী (মহাভারত)

ভানুমতী (দেবনাগরী:भानुमती, আই.এ.এস.টি:Bhānumatī) হলেন ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চরিত্র দুর্যোধন এবং কলির অবতার এর সহধর্মিনী।

ভানুমতী
ভানুমতীর একটি চিত্রণ
অন্তর্ভুক্তি	দুর্যোধনের সহধর্মিণী, যিনি ছিলেন কলির অবতার
পরিবার	চিত্রাঙ্গদ (পিতা) , ধনুমতী (বোন)
দাম্পত্য সঙ্গী	দুর্যোধন
সন্তান	লক্ষ্মণ কুমার (পুত্র) লক্ষণা (কন্যা)
উদ্ভব	Kalinga (by birth) Hastinapur (by marriage)৭

মহাভারতে ভানুমতীর তিনবার উল্লেখ আছে। শান্তি পর্বে দুর্যোধন রাজা চিত্রাঙ্গদের কন্যাকে তার স্বয়ম্বর সভা থেকে কর্ণের সাহায্যে অপহরণ করেন। পরে স্ত্রী-পর্বে তার শ্বাশুড়ি গান্ধারী তার বিবরণ দেন।

গ্রন্থের বিবরণ

মহাভারতে ভানুমতীর সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই। শাল্য পর্বে দুর্যোধন তার পুত্র লক্ষ্মণ কুমারের মায়ের দুর্গতি নিয়ে আক্ষেপ করেন। স্ত্রী পর্বে দুর্যোধনের মা গান্ধারী তার পুত্রবধুর বিবরণ দেন। শান্তি পর্বে ঋষি নারদ দুর্যোধনের সাথে কর্ণের বন্ধুত্বের একটি গল্পের উল্লেখ করেন। যেখানে কলিঙ্গরাজ চিত্রাঙ্গদের মেয়েকে তার স্বয়ম্বর থেকে অপহরণ করতে তার বন্ধুকে সাহায্য করেন কর্ণ। যেহেতু এই মহাকাব্যের কোথাও দুর্যোধনের স্ত্রীর নামের উল্লেখ নেই, তার নামটি এসেছে বিভিন্ন লোককাহিনী থেকে।

মহাভারতের যুদ্ধ

যুদ্ধের পরে

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর গান্ধারী কৃষ্ণকে এভাবে তার পুত্রবধুর বর্ণনা দেন।

দেখো, আবার, আমার ছেলের মৃত্যুর চেয়েও বেদনাদায়ক এই দৃশ্য, নিহত বীরদের পাশে এই ফর্সা নারীরা কাঁদছে! দেখো, হে কৃষ্ণ, লক্ষ্মণার মা, সেই বৃহৎ নিতম্বের রমণী, তার পরিচ্ছদ বিক্ষিপ্ত, দুর্যোধনের সেই প্রিয় পত্নী, সোনার যজ্ঞবেদির মতো। নিঃসন্দেহে, মহান বুদ্ধিমত্তার এই মেয়েটি, তার পরাক্রমশালী সশস্ত্র স্বামী পূর্বে জীবিত থাকাকালীন, তার স্বামীর সুদর্শন বাহুর আলিঙ্গনে খেলাধুলা করত! কেন, সত্যিই, যুদ্ধে নিহত আমার ছেলে ও নাতিদের দেখে আমার এই হৃদয় শত টুকরো হয়ে যায় না? হায়, সেই নির্দোষ ভদ্রমহিলা এখন গন্ধ নিচ্ছেন তার ছেলের (মাথার) রক্তাক্ত সেই দেহ। এখন আবার সেই ফর্সা উরুর ভদ্রমহিলা তার ফর্সা হাত দিয়ে ধীরে ধীরে দুর্যোধনের শরীর বুলিয়ে দিচ্ছেন। এই সে তার স্বামীর জন্য এবং এই সে তার ছেলের জন্য শোকাচ্ছন্ন হয়। এই সে তার স্বামীর দিকে তাকায়, আরেকবার তার ছেলের দিকে। দেখ, হে মাধব, তার মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করে, সে তার বীর পতি, কুরুদের রাজার বক্ষে পতিত হয়। পদ্মের পুষ্পদণ্ডের মতো বর্ণের অধিকারিণী, তিনি এখনও পদ্মের মতো সুন্দরী দেখতে। হতভাগ্য রাজকন্যা এই তার ছেলের মুখ এবং এই তার স্বামীর মুখে হাত বুলায়।

— গান্ধারী, কিশোরী মোহন গাঙ্গুলী অনূদিত

দুর্যোধনের সাথে বিবাহ

মহাভারতের শান্তি পর্বে দুর্যোধনের বিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়। দেবঋষি নারদ রাজা চিত্রাঙ্গদের মেয়ের স্বয়ম্বরের গল্পটি বলেন। গ্রন্থে কোথাও তার নামের উল্লেখ নেই, তবে বলা হয়েছে তিনি ফর্সা এবং সুন্দরী।

দুর্যোধন কলিঙ্গরাজ চিত্রাঙ্গদের কন্যার স্বয়ম্বরে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। নিমন্ত্রণ পেয়ে দুর্যোধন তার বন্ধু কর্ণকে সাথে নিয়ে রাজাপুর নগরে যান। অন্যান্য রাজরাজরা যেমন শিশুপাল, জরাসন্ধ, ভীষ্মক, বক্র, কপটারোমন, নীল, রুক্মী, শৃঙ্গ, অশোক, শতধনবান প্রভৃতি সেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর রাজকুমারী তার সহচরী এবং দেহরক্ষীদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে হাতে মালা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। যখন তাকে অংশগ্রহণকারীদের নাম এবং তাদের বংশ সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছিল, তখন তিনি দুর্যোধনের কাছ থেকে চলে গেলেন। দুর্যোধন তার এই প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ইতোমধ্যেই রাজকন্যার দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে, তাকে এবং কর্ণকে দ্বন্দ্বে আহবান করে তার রথে তুলে নিয়ে যান। কর্ণ তার বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে সফলভাবে যুদ্ধ করেন। কর্ণ সহজেই পশ্চাদ্ধাবনকারী রাজাদের পরাজিত করেন এবং অন্যান্য রাজকীয় যোদ্ধারা কর্ণের যুদ্ধের পরাক্রম দেখে তাদের বাসনা ত্যাগ করেন। হস্তিনাপুর পৌঁছে দুর্যোধন তার এই অপহরণের বৈধতা দিতে তার প্রপিতামহ ভীষ্ম কর্তৃক তার সৎ ভাই বিচিত্রবীর্যের জন্য কাশীর তিন কন্যার অপহরণের উদাহরণ টানেন। অবশেষে ভানুমতী বিয়েতে তার মত দেন এবং দুর্যোধনের সাথে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়।

ভানুমতী, সুন্দর বর্ণের কুমারী, কে তার স্বয়ম্বর থেকে দূর্যোধন তার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু কর্ণের সাহায‍্যে তার (ভানুমতী) প্রত্যাখ্যানের উত্তেজনার বশে তাকে অপহরণ করেন। মহাকাব্যে মূলত নামহীন, দুর্যোধনের স্ত্রীর নাম পরবর্তী সংস্করণে যোগ করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

• ১৮৫৭ সালে, কালীপ্রসন্ন সিংহ, তখন ১৬ বছর বয়সে বাংলার এক পরিবেশনায় ভানুমতীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
• শুভি আহুজা টেলিভিশনে পরিবেশিত সূর্যপুত্র কর্ণ সিরিয়ালে ভানুমতীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
• ২০১৮ এর টেলিভিশন সিরিজ কর্ণ সঙ্গিনীতে ভানুমতীর চরিত্র অভিনয় করেন রাভনীত কৌর।

আরও দেখুন

• দুরুক্তি — কলি যুগে কলির সঙ্গী, যে উপায়ে ভানুমতী দ্বাপর যুগে কলির সঙ্গী ছিল।

গ্রন্থঋণ

• Sharma, Arvind (২০০৭)। Essays on the Mahābhārata (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publishe। আইএসবিএন 978-81-208-2738-7। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
• "The Mahabharata, Book 11: Stri Parva: Stri-vilapa-parva: Section 17"। www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৩। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
• Chakravarti, Bishnupada (২০০৭-১১-১৩)। Penguin Companion to the Mahabharata (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। আইএসবিএন 978-93-5214-170-8। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
• Pattanaik, Devdutt (২০১০)। Jaya: An Illustrated Retelling of the Mahabharata (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Books India। আইএসবিএন 978-0-14-310425-4। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
• Menon, Ramesh (২০০৬-০৭-২০)। The Mahabharata: A Modern Rendering (ইংরেজি ভাষায়)। iUniverse। আইএসবিএন 978-0-595-84565-1। উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)