ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা

সরীসৃপের প্রজাতি

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Naja nigricollis (Hallowell)) হলো স্পিটিং কোবরা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত একটি প্রজাতি যা মূলত: উপ-সাহারান আফ্রিকাতে পাওয়া যায়। মাঝারি দৈর্ঘ্য এবং আকৃতিবিশিষ্ট এই সর্প প্রজাতি ১.২ থেকে ২.২মিটার (৩.৯ থেকে ৭.২ফুট) পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। এদের বর্ণ এবং দেহের রেখা বিন্যাস যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা প্রধানত খাদ্য হিসাবে ক্ষুদ্র তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী যথা ইঁদুর শিকার করে। ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা প্রজাতির সাপের বিষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে খুব তৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অবশ্য একথা মন রাখতে হবে যে এদের দংশনের ফলে (চিকিৎসাহীন অবস্থায়) মৃত্যুহার তুলনামূলক ভাবে অনেক কম (৫ থেকে ১০%)। অন্যান্য স্পিটিং কোবরার ন্যায় এই প্রজাতিও ভয় পেলে আত্মরক্ষার্থে বিষদাঁত থেকে তীক্ষ্ণ ভাবে বিষ নিক্ষেপ করতে পারে। নিক্ষিপ্ত বিষের প্রভাবে চামড়ায় জ্বালা হয় এবং চোখে এই বিষ ঢুকলে চিরস্থায়ী অন্ধত্ব ঘটতে পারে।

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা
(Black-necked spitting cobra)
ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা
(Black-necked spitting cobra)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Reptilia
বর্গ: Squamata
উপবর্গ: Serpentes
পরিবার: Elapidae
গণ: Naja
প্রজাতি: N. nigricollis
দ্বিপদী নাম
Naja nigricollis
Hallowell, 1857[১][২]
The approximate range of Naja nigricollis in Africa
প্রতিশব্দ[৩]
  • Naja nigricollis atriceps
    Laurent, 1955
  • Naja nigricollis occidentalis
    Laurent, 1973
  • Naja crawshayi
    Broadley & Cotterill, 2004

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা (Naja nigricollis) এলাপিডি পরিবারভুক্ত নাজা বর্গের অন্তর্গত। এদের দুটি উপপ্রজাতি পাওয়া গিয়েছিল যাদের পরব্ররতীকালে Naja nigricincta প্রজাতির মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়-জেব্রা স্পিটিং কোবরা (Naja nigricincta nigricincta) এবং ব্ল্যাক স্পিটিং কোবরা (Naja nigricincta woodi)

শ্রেণিবিন্যাস এবং অভিযোজন সম্পাদনা

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা এলাপিডি পরিবারভুক্ত নাজা বর্গের অন্তর্গত। নরওয়ে প্রাণীবিদ জোহান রেইনহার্ডটিন ১৮৪৩ সালে প্রথম এই প্রজাতির সাপের বর্ণনা দেন। নাজা এই বর্গীয় নামটি সংস্কৃত শব্দ nāgá (नाग) অর্থাৎ কোবরার ল্যাটিনরূপ। nigricollis'-এই বিশেষ ল্যাটিন বিশেষন্টির অর্থ "black" অর্থাৎ কালো এবং collis কথাটির অর্থ হল "neck" বা ঘাড় বা গলা[৪]

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরার পূর্বে দুটি উপ-প্রজাতি পাওয়া গিয়েছিল-জেব্রা স্পিটিং কোবরা (Naja nigricincta nigricincta) এবং ব্ল্যাক স্পিটিং কোবরা (Naja nigricincta woodi)। কিন্তু পরবর্তীকালে (২০০৭) উল্ফগ্যাং উস্টার এবং অন্যান্যরা জি্নত্বত্ত বিশ্লেষনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন যে এই দুটি উপ-প্রজাতিকে একটি ভিন্ন বা আলাদা প্রজাতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যে প্রজাতির নাম হয়, Naja nigricincta[৫][৬]

নিম্নে চিত্রিত ক্ল্যাডোগ্রাম (cladogram) বা শাখা বিন্যাস্টি বিভিন্ন নাজা বর্গভুক্ত সর্পপ্রজাতির শ্রেনীবিন্যাস ও সম্প্ররককে বিশ্লেষন এবং প্রকাশ করে।[৭]

নাজা
(Naja|নাজা)

Naja (Naja) naja গোখরা

Naja (Naja) kaouthia মোনোক্লেড কোবরা

Naja (Naja) atra চাইনিজ কোবরা

Naja (Naja) mandalayensis মান্ডালায় স্পিটিং কোবরা

Naja (Naja) siamensis ইন্ডোচাইনিজ স্পিটিং কোবরা

Naja (Naja) sputatrix জাভান স্পিটিং কোবরা

(আফ্রোনাজা)

Naja (Afronaja) pallida রেড স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) nubiae নুবিয়ান স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) katiensis মালি কোবরা

Naja (Afronaja) nigricollis

Naja (Afronaja) ashei জায়েন্ট স্পিটিং কোবরা / অ্যাসেস স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) mossambica মোজাম্বিকিউ স্পিটিং কোবরা

Naja (Afronaja) nigricincta জেব্রা স্পিটিং কোবরা

(বৌলেনগেরিনা)

Naja (Boulengerina) multifasciata বরোইং কোবরা

Naja (Boulengerina) christyi কঙ্গো ওয়াটার কোবরা

Naja (Boulengerina) annulata ব্যান্ডেড ওয়াটার কোবরা

Naja (Boulengerina) melanoleuca ফরেস্ট কোবরা

(ইউরাইউস)

Naja (Uraeus) nivea কেপ কোবরা

Naja (Uraeus) senegalensis সেনেগালেস কোবরা

Naja (Uraeus) haje ইজিপ্টিয়ান কোবরা

Naja (Uraeus) arabica আরাবিয়ান কোবরা

Naja (Uraeus) annulifera স্নাউটেড কোবরা

Naja (Uraeus) anchietae অ্যানচিয়েটাস কোবরা

বর্ণনা সম্পাদনা

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা মাঝারি দৈর্ঘ্যের বিষাক্ত সাপ। এদের মাথা, ঘাড় থেকে মোটামুটি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। মাথার আকৃতি বড় মুখ্যত মাথার পাশে থাকা দুটি বৃহদাকার বিষ থলি বা বিষগ্রন্থির জন্য। জন্মস্থানের উপর নির্ভর করে এদের বর্ন ভিন্নতর হয়। এদের কিছু নমুনায় দেখা গেছে দেহের মূল বর্ন কালো বা ঈষৎ ধূসর, উদর দেশের রঙ হলদে বা লালচে, গলায় চওড়া এবং কালো বন্ধনী। কখনো কখনো এদের গলায় কমলা বা ঈষৎ গোলাপী একটি দাগ দেখা যায়। অন্যান্যগুলির হলদে-বাদামী অথবা হলদে তামাটে বর্নের হয়। গলার চারদিকে বন্ধনী চিহ্নটি থাকে না এবং উদরদেশের রঙ লালচে হয়। আবার কিছু এই প্রজাতিভুক্ত সাপ ঘন লালচে-বাদামী রঙের এবং অন্য কিছু সাপ জলপাই ও বাদামী রঙের হয়।[৮] এই প্রজাতির কিছু সদস্য এমনকি সাদা-কালো ডোরাকাটা হয়।[৯] ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা সাধারনত দৈর্ঘ্যে ১.২মিটার(৩.৭ফুট) থেকে ২.২মিটার(৭.২ফুট) হয়। ভৌগোলিক অবস্থান এবং উপ-প্রজাতির বিভাজন অনুসারে এদের আকৃতি ভিন্ন হয়।

আঁশবিন্যাস সম্পাদনা

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরার দেহের মধ্যভাগে পৃষ্ঠদেশে ২১-২৩টি আঁশ থাকে। উদরদেশের আঁশ সংখ্যা ১৮২-১৯৬টি এবং লেজের নিচের দিকে সাবক্যাডুল আঁশ[১০] ৫৪ থেকে ৬৬টি থাকে।

বিতরন এবং বাসস্থান সম্পাদনা

এই সর্প প্রজাতিটি খুব দেখা যায় এবং উপ-সাহারান আফ্রিকার অধিকাংশ জায়গায় বিস্তৃর্ন অঞ্চল জুড়ে এদের পাওয়া যায়। আফ্রিকার পশ্চিম, পূর্ব এবং মধ্যভাগে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অংশে এদের বসবাস। তবে কঙ্গো অববাহিকার রেইন ফরেস্টে এরা অনুপস্থিত। অ্যাংগোলা, বেনিন,বুরকিনা ফাসো,ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চাদ, ডেমোক্রেটিকরিপাবলিক অফ কঙ্গো (কেন্দ্রস্থল বাদ দিয়ে), কঙ্গো, ইথিওপিয়া, গাবন, ঘানা, গিনি-বিসসান, কেনিয়া,লাইবেরিয়া, মালি, নাইজেরিয়া,সেনেগাল,সিয়েরা লিওন,গাম্বিয়া, সুদান,তানজেনিয়া, সোমালিয়া, টোগো, উগান্ডা এবং জাম্বিয়াতে এই প্রজাতির সাপের অবস্থান নথিভুক্ত হয়েছে। [১১] উত্তর আফ্রিকা, বোস্তোয়ানা,জিম্বাবোয়ে,সুইজারল্যান্ড,মোজাম্বিক অথবা নাম্বিবিয়ার অধিকাংশ স্থানে প্রাপ্ত পূর্বতন তথ্য অনুযায়ী Naja mossambica অথবা Naja nigricincta এর উল্লেখ রয়েছে, যাদের পূর্বে N. nigricollisএর উপপ্রজাতি ভাবা হতো।

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা (Naja nigricollis) সাধারণত আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে (গাছ-পালা শূন্য মরুভূমি প্রান্তরে) এবং আংশিক মরু অঞ্চলে বসবাস করে। এমনকি ১৮০০মিটার(৫৯০০ফিট) উচ্চতায়ও এদের দেখা যায়। মধ্য আফ্রিকার ক্রান্তীয় এবং নাতি-ক্রান্তীয় অঞ্চলে আর্দ্র-সাভানা তৃণভূমিতে এবং সাফাই করা পূর্বতন বনভূমিতে, বিশেষত নদী ও ঝরনা নিকটবর্তী অঞ্চলেও এদের দর্শন মেলে।[১২] Naja n. nigricollis অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন সাপ এবং এদের দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়াতে দেখা যায় যেখানে এদের বাসস্থান পূর্বে ছিল রেইনফরেস্ট কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত হয়ে, মানুষের তৈরী কৃষিজমি, বাগান, শহরতলি অঞ্চল এবং কিছু খন্ডিত বনভূমি। নাইজেরিয়ার রেইনফরেস্টের এই প্রকার চরম পরিবর্তন এই প্রজাতির সাপেদের সুবিধা দিয়েছে। উভচর ও সরীসৃপবিদ Luca Luiselliর গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রজাতির সাপেরা বর্তমানে অধিকতর শুকনো ছোট ছোট বাসভূমিতে আস্তানা গড়েছে। [১৩]

ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা(Naja nigricollis)এর বাসস্থানের পরিধি বর্তমানে বিস্তৃত হয়ে নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল থেকে মধ্য আফ্রিকার অধিকতর শুষ্ক এবং মরু অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।[১০] উপকূলবর্তী শুষ্ক গাছপালা ও শুকনো তৃনভূমিতেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য কোবরা প্রজাতির ন্যায়, এই প্রজাতির সাপেরাও পরিত্যাক্ত উই ঢিপি এবং ক্ষুদ্র-তীক্ষনদন্ত প্রাণীদের যথা ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে থাকে ও শীতল হয়। এদের সর্বাধিক প্রিয় লুকানোর জায়গা হল গাছের গুঁড়ি ও কোটর। ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা চমৎকার বৃক্ষারোহঙ্কারী এবং সেই কারণে মাঝেমধ্যে এরা বৃক্ষবাসী। আফ্রিকা জুড়ে এই সর্পপ্রজাতি এতোটাই সহজপ্রাপ্য যে ছোট শহর বা গ্রামে মানুষের সংস্পর্শে এদের প্রায়শই দেখা যায়।[১০]

আচরণ সম্পাদনা

অন্যান্য সাপেদের মতো Naja nigricollis দিনের বেলায় অথবা রাত্রিকালে বিচরন করে এবং এই বিষয়টি ঋতু, ভৌগোলিক অবস্থান ও গড় দিবাকালীন তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। এই অভিযোজন ক্ষমতার কারণে এই সর্পপ্রজাতি দেহের তাপমাত্রা অনেক বেশি ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এবং খাদ্যবস্তুর সর্বাপেক্ষা প্রাচুর্যপূর্ন কোনো বিশেষ এনটি অঞ্চলে সহজেই ঘাঁটি গড়তে পারে। এদের প্রাথমিক খাদ্য ইঁদুর জাতীয় ক্ষুদ্র-তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী। তবে গিরগিটি, বিভিন্ন ডিম ও অন্যান্য সাপও এদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।[১৪]

অন্যান্য সাপেদের মত, এরা বিভিন্ন শিকারী পাখি বিশেষতঃ বিভিন্ন প্রজাতিত স্নেক-ঈগলএর শিকার হয়। উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, সেই সময় এই স্নেক-ঈগলগুলি আফ্রিকায় পরিযান করে। এই স্নেক-ঈগলদের মধ্যে একধরনের শর্ট-টোড স্নেক-ঈগল (short-toed snake eagle) (Circaetus gallicus) ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরার সবচেয়ে বড় বিপদ ও শত্রু কারণ এই বিশেষ প্রজাতির স্নেক-ঈগলটি মুখ্যত কোবরা শিকারী শঙ্খচূড়[১৫] এছাড়া অন্যান্য সাপেরাও ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরাদের শিকার করে থাকে।[১৬]

অন্যান্য স্পিটিং কোবরার মত এই সর্প-প্রজাতিও ভীষন ভাবে বিষ নিক্ষেপ করতে সক্ষম। এরা বিষ দাঁতের সাহায্যে তীক্ষ্ণভাবে তীব্রতার সাথে বিষ নিক্ষেপ করে,যা ভীষনরকম লক্ষ্যভেদী। এই বিষ দেহত্বকে ও চোখে তীব্র জ্বলন এবং অস্বস্তিকর অবস্থার কারণ ঘটায়। এই বিষ চোখে প্রবেশ করলে যে লক্ষনগুলি দেখা যায় তা হল অতিমাত্রায় জ্বলন ও ব্যাথা, সামঞ্জবস্য বিনাশ, আংশিক দৃষ্টিহীনতা ও এমনকি স্থায়ী বা চির অন্ধত্ব। ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরার একটি বিশেষ প্রবণতা হল সামান্যতম প্ররোচনা বা উত্তেজনাতেই এরা প্রানপনে বিষ নিক্ষেপ শুরু করে। তবে এদের এই অতি-আক্রমণাত্বক এবং অতি-প্রবন বিষ নিক্ষেপ বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি একথা মানতে হবে যে অন্যান্য স্পিটিং কোবরার তুলনায় এদের দংশন প্রবণতা অনেক কম।[১২][১৪]

এই প্রজাতির সাপকে যখন বন্দীদশায় লখ্য করা হয়, তখন দেখা যায় যে সদ্য ধরা সাপগুলি সাধারনত ভীরু ও আতঙ্কগ্রস্থ এবং অতিমাত্রায় বিষ নিক্ষেপ প্রবন। বন্দীদশায় থাকতে থাকতে পরে এরা অনেক বেশি বাধ্য ও শান্ত হয়ে যায় এবং উন্মত্ত ও আক্রমণাত্বক ভাব অনেক কমে আসে।[৮]

প্রজনন সম্পাদনা

অন্যান্য কোবরা প্রজাতির মত, ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরাও অন্ডজ বা ডিম্বনালীজাত।[১৭] এই প্রজাতির মিলন ঋতু ভিন্নতর হয়; শীতকালের শেষ(সেপ্টম্বর) থেকে গ্রীষ্মকালের শুরু (ডিসেম্বর) পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে বিভিন্ন সময় এদের মিলন সংঘটিত হয়। বন্য বা মুক্ত জীবনে অথবা বন্দীদশায় এদের মিলন ঋতু এবং প্রজনন কাল সাধারনত একই থাকে। স্ত্রী সাপেরা সাধারণত ১০ থেকে ১৫টি ডিম পাড়ে, তবে এরা একবারে ৮ থেকে ২২টি পর্যন্ত ডিমও পাড়তে পারে।[১৬] গর্ভধারনকাল চলে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ দিন। ডিম পাড়ার পর ফুটতে সময় লাগে ৬০-৭০ দিন। ডিম ফোটার প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা হল ২০-২৫°C(৮২.৪-৮৬°F)। জন্মের সময় বাচ্চাগুলি ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার(৭.৯ থেকে ৯.৮ইঞ্চি) দৈর্ঘের হয় এবং এরা সম্পূর্ণভাবে স্বাবলম্বী হয়।

বিষ সম্পাদনা

এলাপিডি অর্থাৎ বিষধর সর্পদের মধ্যে ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরার বিষ অনেকটাই অদ্বিতীয় বা তুলনাহীন এই জন্য যে এই বিষ প্রাথমিক ভাবে সাইটোটক্সিন দ্বারা গঠিত।[১৮] সাইটোটক্সিন ছাড়াও এই বিষের অন্যান্য উপাদান রয়েছে। এই বিষ আদ্ররশ এলাপিড নিউরোটক্সিক বৈশিষ্টাবলী বহন করে যার সাথে যুক্ত হয় উচ্চ-ক্ষমতাশালী সাইটোটক্সিন (কোষের পচন ঘটায়)[১৯] এবং কার্ডিওটক্সিন[২০] দংশনের পরবর্তী লক্ষঙ্গুলি হল অতিমাত্রায় বাহ্যিক রক্তক্ষরণ ও দংশনের স্থানের চারপাশে কোষের পচন এবং শ্বাসকষ্ট। যদিও এই প্রজাতির সর্প দংশনের পরে চিকিৎসা না করানো ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুহার কম বেশি ৫ থেকে ১০%[২১] তবে মৃত্যু যখন ঘটে, তা স্বভাবতই ঘটে মধ্যচ্ছদা (diaphragm) এর বিকলতা জনিত (asphyxiation) অর্থাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসরোধের কারণে। Naja nigricollis বিষের এলডি50 হল ২মিগ্রা/কেজি SC এবং ১.১৫মিগ্রা/কেজি IV। মিন্টন(Minton) এর সমীক্ষা অনুসারে (১৯৭৪), এই প্রজাতির দংশনে প্রতি নির্গত গড় বিষের পরিমাণ ২০০ থেকে ৩৫০মিলিগ্রাম(শুষ্ক ওজন)।[১২][২২]

স্নেক ভেনম অপথ্যালমিয়া সম্পাদনা

১৯৪৪ সালে ইংরেজ চক্ষুবিষয়ক শল্যচিকিৎসক মেজর হ্যারল্ড রিডলে FRCS RAMC নামের একজন ইংরেজ চক্ষু বিষয়ক শল্য চিকিৎসক "ব্রিটিশ জার্নাল অব অপথ্যালমোলজি" তে বিষ নিক্ষেপকারী সাপ এবং সাধারন সাপের বিষের উপাদানগত গঠন এবং ক্রিয়া বিষয়ে একটি ছোট গবেষণাধর্মী লেখা প্রকাশ করেন । যুদ্ধকালীন ঘানাতে (সেই সময় গোল্ড কোষ্ট নামে পরিচিত ছিল) থাকার সময়, তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে রিডলে একজন ৩০ বছর বয়সী শ্রমিকের চোখে সাপের বিষের প্রভাবে অপথ্যালমিয়ার লক্ষন প্রত্যক্ষ করেন এবং বর্ণনা করেন। গোগি কুমাসি নামের এই শ্রমিক যখন ঘাস কাটছিলেন, হঠাৎ একটি ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরা ঘাসের ঝোপ থেকে ফনা মেলে উঠে দাঁড়ায় এবং চার বা পাঁচ ফুট দূরত্ব থেকে লোকটির ডান চোখে তীব্রভাবে বিষ নিক্ষেপ করে। রিডলে লোকটির চিকিৎসা শুরু করেন এবং সম্পূর্ণ সেরে না ওঠা অবধি তার চিকিৎসা চালিয়ে যান। উক্ত লেখনীতে সাপের বিষের থেরাপিউটিক ব্যবহার বিষয়ে আলোচনা করার পর, পরিশেষে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে,ব্ল্যাক নেকড স্পিটিং কোবরার এই বিষের উপাদান অথবা লঘুকৃত বিষ অপথ্যালমিক শল্য চিকিৎসাতে ব্যবহার হোগ্য শক্তিশালী চেতনা-নাশক পদার্থ হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।[২৩]

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Naja melanoleuca"Encyclopedia of Life। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-২২ 
  2. "Naja melanoleuca"ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৪ 
  3. "Naja nigricollis REINHARDT, 1843"Reptile Databasehttp://reptile-database.reptarium.cz। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২  |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  4. Reinhardt, J; Andreas Johann Wagner; Franz Hermann Troschel; Wilhelm Ferdinand Erichson; Carl Ernst Siebold (১৮৪৭)। "Herpetology"। George Busk, Alfred Tulk, Alexander Henry Haliday। Reports on zoology for 1843, 1844Ray Society 
  5. Wüster, W., S. Crookes, I. Ineich, Y. Mane, C.E. Pook, J.-F. Trape & D.G.Broadley (2007) "The phylogeny of cobras inferred from mitochondrial DNA sequences: evolution of venom spitting and the phylogeography of the African spitting cobras (Serpentes: Elapidae: Naja nigricollis complex)". Molecular Phylogenetics and Evolution, 45: 437-453.
  6. Naja nigricincta at the TIGR Reptile Database. সংগ্রহের তারিখ 29 December 2008
  7. Wallach, V.; Wüster, W.; Broadley DG. (২০০৯)। "In praise of subgenera: taxonomic status of cobras of the genus Naja Laurenti (Serpentes: Elapidae)" (পিডিএফ)Zootaxa2236: 26–36। 
  8. Mastenbroek, Richard। "Black-neck Spitting Cobra" (পিডিএফ)DEVENOMIZED। www.devenomized.com। ২৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  9. "Kraits Cobras Sea Snakes and Relatives: Elapidae - Black-necked Spitting Cobra (naja Nigricollis): Species Accounts" 
  10. Abriol, Sabrina। "Spitting cobra (Naja nigricollis)" (পিডিএফ)Herpetology - Dr. Dever। University of San Francisco, California। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. "Black-neck Spitting Cobra"Reptile Database। www.reptarium.cz। 
  12. "Naja nigricollis - General Details, Taxonomy and Biology, Venom, Clinical Effects, Treatment, First Aid, Antivenoms"WCH Clinical Toxinology Resource। University of Adelaide। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  13. Luiselli, Luca (২০০১)। "The ghost of a recent invasion in the reduced feeding rates of spitting cobras during the dry season in a rainforest region of tropical Africa"। Acta Oecologica22 (5): 311–314। ডিওআই:10.1016/S1146-609X(01)01113-4 
  14. Spawls, Stephen; Branch, Bill (১৯৯৫)। Dangerous Snakes of Africa। London, UK: Blandford Press। পৃষ্ঠা 91। আইএসবিএন 0-7137-2394-7 
  15. Bauchot, Roland (২০০৬)। Snakes: A Natural History। New York, USA: Sterling; illustrated edition। পৃষ্ঠা 176। আইএসবিএন 1-4027-3181-7 
  16. FitzSimons, Vivian FM (১৯৭০)। A field guide to the snakes of Southern Africa। Canada: HarperCollins। আইএসবিএন 0-00-212146-8 
  17. Engelmann, Wolf-Eberhard (১৯৮১)। Snakes: Biology, Behavior, and Relationship to Man। Leipzig; English version NY, USA: Leipzig Publishing; English version published by Exeter Books (1982)। পৃষ্ঠা 71আইএসবিএন 0-89673-110-3 
  18. Marais, Johan (২০০৪)। A Complete Guide to the Snakes of Southern Africa। Cape Town, South Africa: Struik Nature। আইএসবিএন 1-86872-932-X 
  19. Chaim-Matyas, Adina; Ovadia, Michael (২০ এপ্রিল ১৯৮৭)। "Cytotoxic activity of various snake venoms on melanoma, B16F10 and chondrosarcoma"Life Sciences40 (16): 1601–1607। ডিওআই:10.1016/0024-3205(87)90126-3পিএমআইডি 3561167 
  20. Fryklund, Linda; Eaker, David (জুলাই ১৯৭৫)। "Complete covalent structure of a cardiotoxin from the venom of Naja nigricollis (African black-necked spitting cobra)"Biochemistry14 (13): 2865–2871। ডিওআই:10.1021/bi00684a012পিএমআইডি 1148181 
  21. Warrell, David A.। "Snake bite" (পিডিএফ)Seminar। Lancet 2010 (volume 375, issue 1)। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  22. Thomas, Sean। "LD50 for various snakes"Australian Venom and Toxin database। www.seanthomas.com। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  23. Ridley, Harold (নভেম্বর ১৯৪৪)। "SNAKE VENOM OPHTHALMIA"Br J Ophthalmol.28 (11): 568–572.। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা