১৭দশ শতকের একটি মুঘল চিত্রলিপিতে বোরাকের কাল্পনিক প্রতিলিপি আল-বোরাক (আরবি: البُراق al-Burāq "বিদ্যুৎ") একটি চরিত্র, যাকে বেহেশতী জীব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাহন ছিলো। সপ্তম শতকের সবচেয়ে প্রচলিত গাঁথা হতে জানা যায় যে, বোরাক মুহাম্মদ (সাঃ) কে মক্কা থেকে জেরুজালেমে বহন করে নিয়ে গিয়েছিলো এবং ফিরিয়ে এনেছিলো; যা মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন-এ সুরা আল-ইসরা-তে বর্ণিত আছে মিরাজ-এর কাহিনী হিসেবে।

বর্ণনা সম্পাদনা

যদিও পারস্য বা দূর প্রাচ্য অঞ্চলে অঙ্কিত কাল্পনিক চিত্রে "বোরাক"-এর মুখমন্ডল মানুষের আকৃতিতে উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু এই বিষয়ে কোনো হাদীস বা ইসলামের প্রাথমিক যুগের নির্ভরযোগ্য প্রামান্য দলিল পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, এটা সম্ভবতঃ আরবী থেকে ফারসী ভাষায় "... সুন্দর মুখমন্ডলের জীব" -এর ভুল অনুবাদের ফলে হয়েছে, যা পরবর্তীতে ফারসী থেকে ভারতীয় অঞ্চলে এসেছে।

হাদীস গ্রন্থ সহীহ আল-বুখারী হতে অনুবাদ করা একটি হাদীসে "বোরাক" সম্পর্কে বলা হয়েছে:

"...তখন খচ্চর অপেক্ষা ছোট কিন্তু গাধা অপেক্ষা বড় একটি সাদা প্রাণী আমার কাছে আনলো।" ... প্রাণীটি এতো দ্রুত পদক্ষেপ ফেললো যা কোনো প্রাণীর চোখে দেখা সম্ভব নায়। ..."

— মোহাম্মদ আল-বুখারী, সহী আল-বুখারী[১]

অপর একটি বর্ণনায় "বোরাক":

তখন জিবরাইল আমার নিকটে বোরাক-কে আনলো, সুন্দর মুখমন্ডল ও পশমের গাধা অপেক্ষা বড় কিন্ত খচ্চর অপেক্ষা ছোট লম্বা সাদা পশু।... এর লম্বা কান ছিলো।... এর দুটি পাখা ছিলো যা এর পা বরাবর লম্বা।...[২]

ইব্রাহিমের বাহন হিসেবে সম্পাদনা

"বোরাক" ইসলাম ধর্মের অপর নবী ইব্রাহিম-এরও বাহন ছিলো; তিনি যখন মক্কায় বসবাসরত তার অপর স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাইল-এর নিকট আসা-যাওয়া করার জন্য এটি ব্যবহার করতেন। কথিত আছে, ইব্রাহিম তার এক স্ত্রী সারা-কে নিয়ে সিরিয়ায় বসবাস করতেন এবং অপর স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাইল-কে দেখতে সকালে মক্কায় আসতেন এবং সন্ধ্যায় সিরিয়ায় ফিরে যেতেন।[৩]

আধুনিক সংস্কৃতিতে প্রভাব সম্পাদনা

  • তুরস্কে ছেলে সন্তানদের নাম হিসেবে বোরাক প্রচলিত। এছাড়াও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, পোল্যান্ড এবং তুরস্কে এটি পদবী হিসেবে ব্যবহৃৎ হয়।
  • "বোরাক" নামে দুটি বিমান সংস্থা রয়েছে; একটি লিবিয়ার বোরাক এয়ার এবং অপরটি ২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ান বিমান সংস্থা বোরাক ইন্দোনেশিয়া এয়ারলাইন্স
  • গতি এবং দ্রুতগতির প্রতিক্রিয়ার জন্য "এল-বোরাক" নামটি ব্যবহৃৎ হয়। যেমনঃ রাফায়েল সাবাতানির উপন্যাস দি সী হক-এ একজন জলদস্যুর নাম ছিলো "এল-বোরাক", আবার রবার্ট ই. হাওয়ার্ড-এর বিভিন্ন ছোট গল্পের চরিত্র ছিলো এল বোরাক।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সহীহ বুখারী, ৫:৫৮:২২৭ (ইংরেজি)
  2. Muhammad al-Alawi al-Maliki, al-Anwar al Bahiyya min Isra wa l-Mi'raj Khayr al-Bariyyah
  3. Journeys in Holy Lands p. 117

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা