বেলায়েত হোসেন

বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

বেলায়েত হোসেন (জন্ম: - মৃত্যু: নভেম্বর ১৪, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [১]

বেলায়েত হোসেন
জন্ম
মৃত্যুনভেম্বর ১৪, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

শহীদ বেলায়েত হোসেনের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার গাছুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মাজেদ মিয়া ও মায়ের বিবি মরিয়ম। তার স্ত্রীর নাম তফসিলা বেগম। তার এক ছেলে, এক মেয়ে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

বেলায়েত হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসের শুরু থেকে তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরে।[২]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত সালদা নদীর বেশির ভাগা এলাকা দখল করে নেন। এর আগে ১২ নভেম্বর রাতে ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ চালান। ১৪ নভেম্বর তখন বেলা একটার মতো হবে। পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্তিশালী দল সালদা নদী পুনর্দখলের জন্য মনোয়ারা গ্রামের পশ্চিম দিকে গোডাউন এলাকা হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। ওই এলাকায় বেলায়েত হোসেন ছিলেন তার দল নিয়ে। অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তিনি আক্রমণ চালান। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তারা পালাতে থাকে। তখন বেলায়েত হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ যুদ্ধে কয়েকটি দলের মধ্যে একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তুমুল যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যেতে থাকল। বেলায়েত হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করলেন। ভীতসন্ত্রস্ত সেনারা তখন পেছন ফিরে গুলি করতে করতে পিছিয়ে যেতে শুরু করল। বেলায়েত হোসেন দমে গেলেন না। তার ইচ্ছা দু-একজন শত্রু সেনাকে জীবিত ধরার। সাহস ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এগোতে থাকলেন। কিন্তু তার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলো না। শত্রু সেনাদের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগল তার মাথায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। কিছুক্ষণ পর নিভে গেল তার জীবনপ্রদীপ।

সমাধি সম্পাদনা

 
কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধে বেলায়েতের কবর (সামনে মাঝে)

গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় বেলায়েতকে কুল্লাপাথর গ্রামের এক টিলায় অন্যান্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সমাহিত করা হয়। এই সমাধিস্থল বর্তমানে কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ হিসেবে পরিচিত।[৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

 
"১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কোল্লাপাথর সমাধিস্থলে বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা" ফলকে শহীদ বেলায়েতের নাম (ক্রমিক নং ২৬)

পাদটীকা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৯-০৩-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৪৮। আইএসবিএন 9789849025375 
  3. বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরডটকম, ২৫ মার্চ ২০১৫