বার্নার্ড ম্যান্ডেভিল

বার্নার্ড ম্যান্ডেভিল (ইংরেজি: Bernard Mandeville, বা Bernard de Mandeville) (১৫ নভেম্বর, ১৬৭০২১ জানুয়ারি, ১৭৩৩), ছিলেন একজন অ্যাংলো-ডাচ দার্শনিক, রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাঙ্গ রচয়িতা। নেদারল্যান্ডের রটার্ডামে জন্মগ্রহণ করে তিনি জীবনের বেশিরভাগ অংশ ইংল্যান্ডে কাটান এবং লেখালেখিতে ইংরেজি ব্যবহার করেন। তিনি মৌমাছিদের উপাখ্যান লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন।

Bernard de Mandeville
জন্ম(১৬৭০-১১-১৫)১৫ নভেম্বর ১৬৭০
মৃত্যু২১ জানুয়ারি ১৭৩৩(1733-01-21) (বয়স ৬২)
যুগ18th-century philosophy
(Modern Philosophy)
অঞ্চলWestern Philosophers
ধারাধ্রুপদী অর্থনীতি
প্রধান আগ্রহ
Political philosophy, ethics, economics
উল্লেখযোগ্য অবদান
The unknowing co-operation of individuals, modern free market, division of labour

বার্নার্ড ম্যান্ডেভিলের জন্ম হয় হল্যান্ডে। ১৬৯১ সালে লিডেন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখানে তিনি বিয়ে করেন, স্থায়ী বাসিন্দা হন, আরো হন একজন ইংরেজ প্রজা। তার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত বিশেষ কিছু জানা নেই। তিনি লন্ডনে মারা যান ১৭৩৩ সালে।[১]

গ্রন্থকার সম্পাদনা

 
Fable of the bees, 1924

দার্শনিক ও গ্রন্থকার হিসেবে ম্যান্ডেভিল বিখ্যাত হন তার একটিমাত্র রচনার কল্যাণে। মাঝারি ধরনের ছন্দে তার গজগজ করা মৌচাক, বা সাধু বনে যাওয়া পাজি (ইংরেজি: The Grumbling Hive, or Knaves Turn'd Honest) নামে নাতিদীর্ঘ কবিতা প্রকাশিত হয় ১৭০৫ সালে। ১৭১৪ সালে ম্যান্ডেভিল একই কবিতা পুনঃপ্রকাশ করেন, সেটার সংগে জুড়ে দেন একটা দীর্ঘ প্রবন্ধ, সেটা গদ্যে। এবার সেটার নাম হয় মৌমাছিদের উপাখ্যান, বা একান্তের অনাচার_ সাধারণ্যে কল্যাণ (ইংরেজি: Fables of the Bees or Private Viace, Public benefits) এই নামে ম্যান্ডেভিলের বইখানা বিখ্যাত হয়েছে।

কিন্তু এই সংস্করণটাও মনে হয় কারও নজরে আসেনি। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় মৌমাছিদের উপাখ্যান-এর নতুন সংস্করণ; তাতে ছিলো "সমাজের স্বধর্ম অন্বেষণ" (ইংরেজি: A Search into the Nature of Society) নামে একটি জমকাল উপশিরোনাম। শুধু তার ফলেই একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় যা ম্যান্ডেভিল হয়তো আশা করেছিলেন। মিডলসেক্সের গ্র্যান্ড জুরি সিদ্ধান্ত করল বইখানা একটা 'উৎপাত', সেটা নিয়ে গরম বাকবিতণ্ডা চলল পত্রপত্রিকাগুলোতে, স্পষ্টতই খুশি হয়ে তাতে শামিল হলেন ম্যান্ডেভিল। বইখানার আরো পাঁচটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল লেখকের জীবিতাবস্থায়। মৌমাছিদের উপাখ্যানের দ্বিতীয় খণ্ড তিনি প্রকাশ করেছিলেন ১৭২৯ সালে।[১]

সাহিত্যিক মূল্য সম্পাদনা

দুই শতকের সাহিত্যে ম্যান্ডেভিল সম্পর্কে উল্লেখের একটা লম্বা ফিরিস্তি আছে অক্সফোর্ডের স্মারক সংস্করণে। তার সম্বন্ধে লিখেছেন কার্ল মার্কস আর অ্যাডাম স্মিথ, ভলতেয়ার আর মেকলে, ম্যালথাস আর কেইন্স। ইংল্যান্ডে অর্থশাস্ত্র বিকাশের উপর, বিশেষত স্মিথ আর ম্যালথাসের উপর মস্ত প্রভাব পড়েছিল ম্যান্ডেভিলের। নিজ ব্যঙ্গ-রচনায় তিনি বুর্জোয়া সমাজের তীব্র সমালোচনা করেন। এই সমাজের মূল অনাচারগুলোকে যারা সর্বপ্রথমে খুলে ধরেছিলেন তাদের একজন হলেন তিনি।[১] কার্ল মার্কস তার সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি "সৎ মানুষ, তাঁর চিন্তাধারা স্বচ্ছ"।[২]

তার লেখায় মৌচাকটা হলও মানবসমাজ, বরং বলা ভালো ম্যান্ডেভিলের কালের বুর্জোয়া ইংল্যান্ড। উপাখ্যানের প্রথমাংশটা এই সমাজের বিদ্রূপাত্মক চিত্র, যা সুইফটের কলমে সাজে। ম্যান্ডেভিলের রচনার কেন্দ্রীয় ভাব হচ্ছে ইংল্যান্ডের সেই সমাজ যাতে 'ভরা অসংখ্য অনাচার, অসংগতি এবং দুষ্ক্রিয়া'। সেই সমাজে বুর্জোয়াদের 'বাড়বাড়ন্ত' শুধু সম্ভব এই কারণে যে, লক্ষ লক্ষ মানুষের '... ভাগ্যে শুধু কাস্তে আর কোদাল, আর যতসব হাড়ভাঙা খাটুনির কাজ, আর সেখানে হতভাগারা রোজ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খেটে শরীর পাত করে খেতে পাবার জন্যে...'।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. আন্দ্রেই আনিকিন, অর্থশাস্ত্র বিকাশের ধারা, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৮২, পৃষ্ঠা, ১৪৫-১৪৮
  2. কার্ল মার্কস, পুঁজি, প্রথম খণ্ড, ১৯৭২, মস্কো, পৃষ্ঠা ৫৭

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:History of economic thought