বাগানবিলাস

সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতি

বাগানবিলাস ( ইংরেজি নাম : Bougainvillea ; বৈজ্ঞানিক নাম: Bougainvillea spectabilis ) পুষ্প, গুল্মজাতীয় বৃক্ষের গণবিশেষ। গোলাপী, লাল, হলুদ বিভিন্ন রঙের অধিকারী এ ফুল গাছটির আদি নিবাস ব্রাজিল ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। মূলতঃ, উষ্ণমণ্ডলীয় দেশসমূহসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে গৃহসজ্জ্বা কিংবা বাড়ির চারপাশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে লতাজাতীয় গুল্ম হিসেবে বাগানবিলাস জন্মানো হয়। ফরাসী আবিস্কারক লুই অটোইন ডি বোগেইনভিলিয়া'র নাম অনুসারে এ গাছের নামকরণ রাখা হয়েছে বোগেইনভিলিয়া। শীত, বসন্ত এমনকি সারা বছর বাগানে শোভা পায় ফুলটি। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নামকরণ করেন বাগানবিলাস[২]

বাগানবিলাস
Bougainvillea spectabilis
Bougainvillea spectabilis
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Caryophyllales
পরিবার: Nyctaginaceae
গোত্র: Bougainvilleeae
গণ: Bougainvillea
Comm. ex Juss.[১]
প্রজাতি: Bougainvillea spectabilis
প্রজাতি

Bougainvillea spectabilis

প্রতিশব্দ

Tricycla Cav.[১]

এ গাছটির প্রায় ১৮ প্রজাতি রয়েছে। এর অনেকগুলোই বিশ্বের সর্বত্র গরম আবহাওয়ায় ছায়াচ্ছন্ন পথ তৈরী ও বারান্দার শোভা বর্ধনে চাষাবাদ করা হয়। আবার শীতকালীন পরিবেশে গ্রীনহাউস প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও এ গাছ উৎপাদন করা যায়।

বিবরণ সম্পাদনা

বাগানবিলাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের লতাজাতীয় বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত। এর বিস্তীর্ণ প্রসারণ, বৈচিত্র্যপূর্ণ রঙিন পাতা ফুলের চারপাশে বিদ্যমান থাকে। তিনটি পত্র-মঞ্জরীর মাঝখানে ফুটন্ত ফুলগুলো ছোট এবং সমান্তরাল প্রকৃতির হয়। বো্গেইনভিলিয়া গ্ল্যাব্রা প্রজাতির বাগানবিলাসে উজ্জ্বল রঙের কাগজের ন্যায় পাতা রয়েছে যা অস্পষ্ট ফুলের চতুর্দিকে ঘিরে থাকে। এ প্রজাতির গাছগুলো ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতাবিশিষ্ট হয়। উষ্ণ আবহাওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় ফুলে সুশোভিত থাকে। এ প্রজাতির ফুলগুলো কাগজের ফুল নামে পরিচিত। পাতাগুলো বেগুনে, নীলচে, হলুদ অথবা গাঢ় লাল রঙের হয়ে থাকে। এক ইঞ্চি বা ততোধিক লম্বাকৃতির পাতা হয়। এক ধরনের বাগানবিলাস গাছ রয়েছে যারা সহায়ক গাছ কিংবা খুঁটিতে চড়ে কখনো কখনো একশত ফুট লম্বাও হতে পারে।

বো্গেইনভিলিয়া স্পেক্টাবিলিজ প্রজাতির বাগানবিলাসে অনেক ক্ষুদ্রাকৃতির পাতা থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফুলগুলোও ক্ষণস্থায়ী হয়।

কীট-পতঙ্গমুক্ত গাছ হিসেবে বাগানবিলাসের পরিচিতি রয়েছে। কখনো কখনো ক্ষতিকর পোকামাকড়, শামুক এবং গাছের উকুন হিসেবে পরিচিত এফিড কীট দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কিছু লেপিডোপটেরা বর্গের হাইপারকোম্প স্ক্রিবোনিয়া প্রজাতির লার্ভা খাদ্য যোগানদানকারী বৃক্ষ হিসেবে বাগানবিলাসকে ব্যবহার করে।

অন্যান্য টক্সিকোডেনড্রোন প্রজাতির গাছের ন্যায় বাগানবিলাস গাছের বিষাক্ত রসের সংস্পর্শে চামড়ায় ফুসকুড়ির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।

প্রজাতি সম্পাদনা

বিভিন্ন উদ্ভিদবিজ্ঞানী চার থেকে আঠারো প্রজাতির বাগাববিলাস গোত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। এ সকল প্রজাতিগুলোর সকলেই চার ঘণ্টা পরিবার হিসেবে খ্যাত নাইক্টেগিনাসিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। লতা, গুল্ম অথবা ছোট আকারের গাছ হিসেবে এটি পরিচিত। অনেকগুলো প্রজাতিই কন্টকময়। একমাত্র কাঠজাতীয় লতা প্রকৃতির বাগানবিলাস সকলের মনোযোগ আকর্ষণসহ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

  • Bougainvillea × buttiana Holttum & Standl. (B. glabra × B. peruviana)[৩]
  • Bougainvillea glabra Choisy[৩]
  • Bougainvillea peruviana
  • Bougainvillea spectabilis Willd.[৩]
  • Bougainvillea spinosa

উৎপাদন সম্পাদনা

উষ্ণ জলবায়ুপূর্ণ এলাকার অধিকারী অধিকাংশ এলাকায় বাগানবিলাস সাজসজ্জ্বায়ভূষিত গাছ হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরুবা, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইউনান, চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, গ্রীস, স্পেন, তুরস্ক, সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর, ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল, হাওয়াই প্রমূখ দেশে এ গাছের উৎপাদন সবিশেষ লক্ষণীয়।

সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো এলাকায় ভূ-মধ্যসাগরীয় শান্ত জলবায়ুর কারণে বাগানবিলাস অত্যন্ত জনপ্রিয়।

প্রতীক সম্পাদনা

অনেক প্রজাতির বাগানবিলাস রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে গুয়াম দ্বীপপুঞ্জ[৪] মাতসু দ্বীপপুঞ্জ এবং তাইওয়ানের পিংটুং কাউন্টি; মালয়েশিয়ার ইপোহ;[৫] ফিলিপাইনের তাগবিলরন; ক্যালিফোর্নিয়ার কেমারিলো, নাগুনা নিগুয়েল, স্যান ক্লিমেন্টে; চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের শেনচেন, হুইচৌ, চুহাই এবং চিয়াংমেন; ওকিনাওয়ার নাহায় প্রচলিত রয়েছে।

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Genus: Bougainvillea Comm. ex Juss."Germplasm Resources Information Network। United States Department of Agriculture। ২০১০-০৭-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১৪ 
  2. "রবীন্দ্রনাথের নাম রাখা ফুলগুলো"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৬ 
  3. "GRIN Species Records of Bougainvillea"Germplasm Resources Information Network। United States Department of Agriculture। ২০০৯-০১-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১৪ 
  4. Kobayashi, Kent D.. "Bougainvillea" (PDF). Cooperative Extension Service, University of Hawaiʻi at Mānoa.
  5. "Welcome to Ipoh - The Bougainvillea City"। Passage to Kinta District। ২০১১-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা