বাইজেন্টাইন-উসমানীয় যুদ্ধ

ধারাবাহিক দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ

বাইজেন্টাইন-উসমানীয় যুদ্ধ দ্বারা উসমানীয় তুর্কী ও বাইজেন্টাইনদের মধ্যকার সংঘাতকে বুঝানো হয়। যেই সংঘাতের সর্বশেষ ফল ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতন এবং উসমানীয় সামাজ্যের উত্থান। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ক্রুসেডারদের দ্বারা বাইজেন্টাইন রাজধানী দখল ও পূর্ববর্তী রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করায় খ্রিস্টানদের পূর্ব-পশ্চিম ভাগের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ইতোমধ্যেই দুঃশাসনের ফলে দুর্বল এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে বিভাজিত হয়ে পড়েছিল।[১][২][৩]

বাইজেন্টাইন-উসমানীয় যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থান এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতন

দক্ষিণাবর্তে উপরের বাম হতে: কনস্টান্টিনোপলের দেয়াল, উসমানীয় জেনেসারী, বাইজেন্টাইন পতাকা, উসমানীয় ব্রোঞ্জ কামান
তারিখ১২৯৯-১৪৭৯
অবস্থান
ফলাফল

উসমানীয় সালতানাতের বিজয়

বিবাদমান পক্ষ

উসমানীয় বেলিক,
পরবর্তীতে সালতানাত
(১৩৬২ থেকে)

বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য

রুম সালতানাতের সেলজুকরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পশ্চিম আনাতোলিয়ার অঞ্চল দখল করতে শুরু করে। তবে নিকিয়ান সাম্রাজ্য সেলজুক তুর্কীদের রোমানদের অধীনে থাকা অবশিষ্ট অঞ্চলগুলো থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়।[৪] শেষপর্যন্ত ১২৬১ সালে নিকিয়ান সাম্রাজ্য লাতিন সাম্রাজ্য থেকে কনস্টান্টিনোপল দখলে নিয়ে নেয়। এপিরাস ডেসপোটেট, সার্বিয়াদ্বিতীয় বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের মত প্রতিদ্বন্দ্বী সাম্রাজ্যের কারণে ইউরোপে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অবস্থান অনিশ্চিত ছিল। এই বিষয়টির সাথেসাথে (বাইজেন্টিয়ামদের এশিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী) রুম সালতানাতের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় থ্রেসে বাইজেন্টিয়াম ক্ষমতা ধরে রাখতে আনাতোলিয়া থেকে সৈন্যদের সরিয়ে নেয়া হয়।[৫]

রুম সালতানাতের দুর্বলতা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের তেমন দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা টেনে আনেনি। কারণ গাজী নামের সরদাররা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের খরচে জমিদারী স্থাপন করা শুরু করেন। যেখানে অনেক তুকী বেরা বাইজেন্টাইন এবং সেলজুক অঞ্চলের অনেক অংশ দখল করে রেখেছিলেন। এমনই একজন বে, উসমান গাজীর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলো নিকিয়া ও কনস্টান্টিনোপলের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। উসমান গাজী উসমান বেলিক প্রতিষ্ঠার ৯০ বছরের মধ্যে বাইজেন্টাইনরা তাদের আনাতোলিয়ার সমস্ত অঞ্চল থেকে দখল হারিয়ে ফেলে।[৬] এবং ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয়রা বাইজেন্টাইনদের থেকে থ্রেসের দখলও কেড়ে নেয়। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এককালের মহান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের কাছে মোরেয়া ডেসপোটেট, অল্প কয়েকটি এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আর রাজধানীর আশেপাশে থাকা থ্রেসের একটি ভূখন্ড ব্যতীত কিছুই বাকী ছিলনা। ধ্বংসপ্রায় কনস্টান্টিনোপল ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে নিকোপোলিসের ক্রুসেড, ১৪০২ খ্রিস্টাব্দে তৈমুরের আক্রমণ এবং সর্বশেষ ১৪৪৪ খ্রিস্টাব্দে ভার্নার ক্রুসেডের পরও ১৪৫৩ সালে সমূলে পতন হবার আগপর্যন্ত কোনোমতে নিজেকে পরাজয় থেকে রক্ষা করে ছিল। যুদ্ধ পরিসমাপ্তিতে পূর্ব ভূমধ্য সাগরে উসমানীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

উসমানীয় সালতানাতের উত্থান: ১২৬৫-১৩২৮ সম্পাদনা

 
পশ্চিম ভূমধ্য সাগর ১২৬৩ খ্রিস্টাব্দ।[৭][৮] নির্দেশনা- গাঢ় সবুজ: উসমানীয় অঞ্চল ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ, বিন্দুরেখা ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিজিত অঞ্চল, বেগুনী রঙ: বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, হালকা সবুজ: রুম সালতানাত, নীল: সিলিসিয়া ও লাল/গোলাপী: লাতিন রাষ্ট্রসমূহ।

১২৬১ খ্রিস্টাব্দে মিখাইল অষ্টম প্যালিলোগোসের কনস্টান্টিনোপল পুনরায় বিজয় করার পর বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য একেবারে গুরুতর অবস্থায় চলে গিয়েছিল। লাতিন সাম্রাজ্যের কনস্টান্টিনোপল পুনরায় দখলে নেওয়া নিয়ে গ্রীক মূল ভূখন্ডের লাতিন রাষ্ট্রগুলোর অন্যান্য অঞ্চলের সাথে অনেক কথায় হয়েছিল।[৯] সেসময়ে বলকান রাজা স্টিফেন উরোস প্রথম কর্তৃক সার্বিয়ার দিকে উত্তরদিক হতে সম্প্রসারণকে মূল হুমকী হিসেবে দেখা হয়েছিল।[১০] এককালে যেই কমনেনিয়ান রাজবংশ দানিউব নদীর সীমান্তে বাইজেন্টাইনদের একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ছিল, এখন সেটি নিজেই কনস্টান্টিনোপলের জন্য হুমকী হয়ে দাড়িয়েছিল। এই সমস্যাটির সমাধান করতে মিখাইল প্যালিওলোগোস তার শাসনকে সুসংহত করার চিন্তা করেন। তিনি এই ধারায় নিকিয়ান সাম্রাজ্যের সহ-সম্রাট জন চতুর্থকে অন্ধ করে দেন এবং এর ফলে অসন্তোষের বীজ বপন হয়।[৯] }} এই সমস্যার সমাধান করতে বাইজেন্টাইন সম্রাট জার্মানাস তৃতীয়কে নতুন ইকুমেনিক্যাল প্যাট্রিয়ার্ক (খ্রিস্টান সার্বজনীন নেতা) হিসেবে নিয়োগ করে তাকে নির্দেশ করেন, লাতিন হুমকী দূর করতে তার পূর্ববর্তী প্যাট্রিয়ার্ক আর্সেনিয়স অটোরেয়ানোস কর্তৃক তৈরীকৃত তার বিরুদ্ধে এক্সকমিউনিকেশন (খ্রিস্টান ধর্মীয় গির্জা হতে বহিষ্কারাদেশ) যাতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। [৯] যেহেতু বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য লাতিন অঞ্চলে তাদের বিজয়ের ধারা জারি রাখে। তাই উসমান প্রথমের অধীনে তুর্কীরা বাইজেন্টাইন আনাতোলিয়া অঞ্চলে অভিযান শুরু করে। আর সুগুত শহর ১২৬৫ খ্রিস্টাব্দে ও এসকিসেহির শহর ১২৮৯ খ্রিস্টাব্দে দখল করে।[৫] পশ্চিমে সৈন্য স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তার কারণে মিখাইল প্যালিওলোগোস এই অবনতির সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম ছিলেন না। ১২৮২ খ্রিস্টাব্দে মিখাইল প্যালিওলোগোস মারা যান ও তার পুত্র অ্যান্ড্রোনিকস দ্বিতীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। পুরনো বাইজেন্টাইন সম্রাটের মৃত্যু খ্রিস্টসমাজে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছিল। রোমের গির্জায় তার মনোতুষ্টির আইন, অতিরিক্ত কর আর সামরিক বাহিনীর ব্যয় জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়াটা জনসাধারণের জন্য বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছিল। যখন উসমানীয় তুর্কীরা সাম্রাজ্য থেকে ভূমি দখলে নিতে শুরু করল, সাধারণ মানুষ তাদেরকে আনাতোলিয়ার মুক্তিদাতা হিসেবে দেখতে শুরু করে। তারা বাইজেন্টাইন অর্থোডক্স শক্তি ক্ষুণ্ণ করে ইসলাম ধর্মে দাখিল হতে শুরু করে। [১১] অ্যান্ড্রোনিকসের শাসনকাল অযোগ্যতা ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে ভরপুর ছিল, যেটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে দীর্ঘমেয়াদী অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্থ করে দেয়। তিনি বাইজেন্টাইন হাইপারপিরন মুদ্রার মান কমিয়ে দেন। যার ফলে বাইজেন্টাইন অর্থনীতিতে অবস্থান হ্রাস পায়। শক্তিশালীদের জন্য করের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়, যেমন- জমিদার অভিজাততন্ত্র ও তাদেরকে নাইটক্লাস “প্রনইয়া”-এর উপরে অবস্থান দেয়া। তিনি তার শাসনকে জনপ্রিয় করার চিন্তায় ১২৭৪ সালে লিয়নের দ্বিতীয় কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত অর্থোডক্স ও ক্যাথলিক গির্জার ইউনিয়নকে প্রত্যাখ্যান করেন। যার ফলে লাতিন ও বাইজেন্টাইনদের মধ্যকার শত্রুতা আরোও বৃদ্ধি পায়। [১২] অ্যান্ড্রোনিকস দ্বিতীয় বাইজেন্টিয়ামের আনাতোলীয় ভূমি রক্ষায় অনেক আগ্রহী ছিলেন। তিনি এশিয়া মাইনরে দূর্গ নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং সৈন্যবাহিনীকে কঠিন প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেন।[১২] বাইজেন্টাইন সম্রাট আনাতোলিয়ায় অভিযানপ্রস্তুতির তদারকি করতে তার দরবার সেখানে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন। তিনি তার সৈন্যাধ্যক্ষ অ্যালেক্সিওস ফিলানথ্রোপেনোসকে তুর্কীদেরকে পিছনে হটাতে আদেশ দেন। অ্যালেক্সিওসের প্রাথমিক সাফল্যগুলো তার একটি ব্যর্থ অভিযানের কারণে ম্লান হয়ে পড়ে। সেখানকার পরাজয়ের সাথে সাথে তিনি অন্ধও হয়ে পড়েন এবং তার অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। ফলস্বরূপ ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয়রা নিকিয়াও অবরোধ করে। আবার ১৩০২ খ্রিস্টাব্দেও অ্যান্ড্রোনিকসের পুত্র মিখাইল নবম ও বাইজেন্টাইন জেনারেল জর্জ মৌজালন ম্যাগনেশিয়া ও ব্যাফিয়াসে আরও একটি পরাজয়ের স্বীকার হন।[১২] এতকিছুর পরও অ্যান্ড্রোনিকস তুর্কীদের উপর একটি সিদ্ধান্তমূলক আক্রমণ করার চিন্তা করে কাতালান ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়োগ করেন। মাইকেল নবমের নির্দেশনায় রজার দে ফ্লোরের নেতৃত্বে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের বসন্ত ও গ্রীষ্মে ৬,৫০০ জন কাতালান ভাড়াটে শক্তিশালী সৈন্য তুর্কীদের পিছু হটতে বাধ্য করে। ভাড়াটেদের আক্রমণ তুর্কীদেরকে ফিলাডেলফিয়া থেকে সাইজিকসে ফিরে যেতে বাধ্য করে। এই ঘটনায় আনাতোলিয়ান ভূমিগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। আর পুনরায় এই সুফলও আভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর কারণে ব্যর্থতায় ঢাকা পড়ে। রজার দে ফ্লোরকে গুপ্ত হত্যা করা হয় এবং এর প্রতিশোধ নিতে কাতালান কোম্পানী আনাতোলিয়ার গ্রামাঞ্চলে লুটপাট ও খুনখারাবী শুরু করে। যখন তারা ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে থ্রেস আক্রমণ করার জন্য আনাতোলিয়া ছেড়ে যায়, তখন স্থানীয়রা আবার উসমানীয়দেরকে স্বাগত জানায়। উসমানীয়রা আবার এশিয়া মাইনরের মৌলিক দূর্গগুলো অবরোধ করতে শুরু করে।[১২] উসমানীয়রা তাদের বিরোধীদের মধ্যকার বিভাজনগুলোর কারণে সামরিক সাফল্যের ভিত্তি গড়ে তুলতে পেরেছিল। আবার আনাতোলিয়ান দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা উসমানীয়দের নেতৃত্বকে বাইজেন্টিয়াম নেতৃত্ব থেকে উত্তম হিসেবে গণ্য করছিল।[১১][১৩]

 
অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয়ের ক্ষমতাগ্রহণকালীন সময়ের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য[৫][১৪]

এইধরণের রাজনৈতিক পরাজয়ের পর অ্যান্ড্রোকিস পুনরায় সৈন্য পাঠানোর মত অবস্থায় ছিল না। এদিকে ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে অ্যান্ড্রোনিকস দ্বিতীয় নাতি অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয়কে তার পিতা রাজত্বের মূল উত্তরাধিকার মিখাইল নবমের মৃত্যুর অজুহাত দিয়ে উত্তরাধিকার থেকে বের করে দেয়া হয়।[১৫] পরবর্তী বছর অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয় প্রতিশোধ নিতে কনস্টান্টিপোলের দিকে সৈন্যযাত্রা করেন। তাকে থ্রেসের দায়িত্ব দিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা করা হয়। কিনউ তিনি উত্তরাধিকারের জন্য চাপ দিকে থাকেন, যার ফলে ১৩২২ সালে তাকে সহ-সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এসব ঘটনা ১৩২১-১৩২৮ খ্রিস্টাব্দের বাইজেন্টাইন গৃহযুদ্ধের সূচনা হিসেবে কাজ করে। যেখানে সার্বিয়া অ্যান্ড্রোনিকস দ্বিতীয়কে সমর্থন করেছিল আর বুলগেরীয়রা তার নাতিকে সমর্থন করেছিল। শেষপর্যন্ত ১৩২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে মে অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয় বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হন যে, তিনি বাইজেন্টিয়াম সাম্রাজ্যের পুরো দখল নিজের ক্ষমতায় নিতে সক্ষম হন। আর এদিকে উসমানীয়রা ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইনদের কাছ থেকে বুরসার দখল কেড়ে নিতে সফল হয়।[৫]

বাইজেন্টিয়াম প্রতিরোধ: ১৩২৮-১৩৪১ সম্পাদনা

 
উসমানীয় সালতানাত বিপুল সংখ্যক দক্ষ সৈন্য পরিচালনা করেছে।

অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয়ের শাসনকালকে বাইজেন্টিয়াম শেষ আদি ও পুরাতন রুমের ঐতিহ্য ফেরানোর শপথ পূর্ণভাবে পালনকারী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। ১৩২৯ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন সৈন্যদেরকে উসমানীয় সেনাদলের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়।[১৬] উসমানীয়রা ১৩০১ খ্রিস্টাব্দ থেকেই শহরটি কার্যত নিজেদের অবরোধে রেখেছিল।[৬] বাইজেন্টাইনদের পাল্টা আক্রমণ আর নিসিয়ার প্রতিরোধ উসমানীয়দের কোনো শহর দখলে হতাশ করে। কিন্তু ১০শে জুন ১৩২৯ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন ত্রাণ সৈন্যদল পেলেকানোসে পরাজিত হলে নিকিয়া পুরোপুরিভাবে উসমানীয়দের জন্য দখল করা সহজ হয়ে যায়।[৬] ১৩৩১ সালে নিকিয়া আত্মসমর্পণ করে।[৬] এই শহরটি সাম্রাজ্যের ৭০ বছরের পুর্বতন রাজধানী ছিল। তাই এই শহরের দখল ছুটে যাওয়া বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধঃপতন প্রমাণ করছিল।

আবারও বাইজেন্টিয়াম সামরিক শক্তি হ্রাস পায়। তৃতীয় অ্যান্ডোনিকস তার দাদার ন্যায় কূটনীতিতে গিয়ে এশিয়া মাইনরে বাইজেন্টাইন বসতিগুলোর নিরাপত্তার বিনিময়ে উসমানীয়দের কর দিতে বাধ্য হয়। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের জন্য দুর্ভাগ্য! ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে তারা উসমানীয়দের নিকোমিডিয়া অবরোধ করা থেকে বিরত থাকতে পারেনি। শেষপর্যন্ত ১৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে শহরটির পতন ঘটে।[৬]

এই বাধা থাকার পরও অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয় গ্রীস ও এশিয়া মাইনরে তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কয়েকটি সফলতা অর্জন করে। এপিরাস আর থেসালি নিজেদের কর্তৃত্বে আনয়ন করে।[১৬] ১৩২৯ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইনরা চিওস দখল করে এবং ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে লেসবোস সুরক্ষিত করে। যদিও এসব পৃথক দ্বীপগুলো দখল করা উসমানীয়দের সাধারণ প্রবণতার সামনে কিছুই ছিল না। আবার এসব দ্বীপগুলো প্রকৃতপক্ষে উসমানীয়দের হাতে ছিল না; কিন্তু এসবের দখল অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয়ের যে সম্ভাবনা ছিল সেটা প্রমাণ করে। অ্যান্ড্রোনিকস তৃতীয়ের নেয়া (এপিরাসে) সার্বীয় প্রসারণের অধিগ্রহণের কারণে বাইজেন্টাইন সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আরো দুর্বল হয়ে পড়ে।[১৬] শেষপর্যন্ত একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয় যার ফল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যকে উসমানীয় সামন্ত্যের কাতারে এনে দেয়।

বলকান আক্রমণ ও গৃহযুদ্ধ: ১৩৪১-১৩৭১ সম্পাদনা

বাইজেন্টাইন গৃহযুদ্ধ এবং সামন্তদশা: ১৩৭১-১৩৯৪ সম্পাদনা

ফিলাডেলফিয়ার পতন সম্পাদনা

সামন্তদশা সম্পাদনা

শত্রুতা পুনরায় শুরু:১৩৯৪-১৪২৪ সম্পাদনা

উসমানীয় বিজয়কাল: ১৪২৪-১৪৫৩ সম্পাদনা

বাইজেন্টাইন পরাজয়ের কারণসমূহ সম্পাদনা

লাতিন হস্তক্ষেপ সম্পাদনা

বাইজেন্টাইন দুর্বলতা সম্পাদনা

উসমানীয়দের শক্তিমত্তা সম্পাদনা

ফলাফল সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Phillips 2004
  2. İnalcık, Halil (1989). "Chapter VII. The Ottoman Turks and the Crusades, 1329-1451". In Zacour, N. P., and Hazard, H. W. (ed.). A History of the Crusades: Volume VI. The Impact of the Crusades on Europe. Madison: The University of Wisconsin Press. pp.175-221.
  3. İnalcık, Halil (1989). "Chapter VII. The Ottoman Turks and the Crusades, 1451-1522". In Zacour, N. P., and Hazard, H. W. (ed.). A History of the Crusades: Volume VI. The Impact of the Crusades on Europe. Madison: The University of Wisconsin Press. pp. 311-353.
  4. Andrew Peacock, "Saljuqs of Rum". Encyclopædia Iranica. Online only. Updated 2010.
  5. Parker 2005, পৃ. 70–1।
  6. Grant 2005, পৃ. 122।
  7. Madden 2005, পৃ. 162।
  8. Grant 2005, পৃ. 93।
  9. Mango 2002, পৃ. 255–57।
  10. Mango 2002, পৃ. 260।
  11. Bentley ও Ziegler 2006
  12. Mango 2002, পৃ. 260–61।
  13. Madden 2005, পৃ. 179।
  14. Mango 2002, পৃ. 41।
  15. Mango 2002, পৃ. 262।
  16. Mango 2002, পৃ. 263।