বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন

বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন, যা ইংরেজি ভাষায় মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), পিরামিড সেলিং,[১][২][৩][৪] নেটওয়ার্ক মার্কেটিং,[৩][৫][৬] এবং রেফারাল মার্কেটিং নামেও পরিচিত, একটি পিরামিড আকৃতির বিপণন কৌশল যেখানে তাত্ত্বিকভাবে লাভ আসে দুই দিক থেকে: ক্রেতার কাছে সরাসরি বিক্রয় এবং বিক্রয় দলের সদস্য, ডাউন লাইন নামে খ্যাত, তাদের বিক্রয়ের উপর কমিশন থেকে।[৭] সাধারণত এমএলএম বিক্রয়কর্মীরা ভোক্তাদের সাথে তাদের সম্পর্ক ও ওয়ার্ড অফ মাউথ বিপণনের ভিত্তিতে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বা সেবা পৌঁছে দিয়ে থাকে [৫]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) অনুসারে কিছু এমএলএম কোম্পানি ইতিমধ্যে বিদ্যমান আইনকে সংকীর্ণ করে এবং সংগঠনের সদস্যদের শোষণ করে অবৈধ পিরামিড পদ্ধতি গঠন করেছে।[৮][৯][১০] বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন পিরামিড পদ্ধতির একটি ধরন হিসেবে অভিহিত করে কিছু চীনের সমভূমি সহ কিছু অধিক্ষেত্রে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।[১১][১২] যেসব অধিক্ষেত্রে এমএলএমকে এখনো অবৈধ ঘোষণা করা হয় নি, সেসব স্থানে অবৈধ পিরামিড পদ্ধতির ব্যবসায় নিজেদের এমএলএম ব্যবসায় হিসেবে উপস্থাপন করছে।[১৩] কিছু উৎস এমএলএমকে পিরামিড পদ্ধতির বলে সংজ্ঞায়িত করে, এমনকি তারা এই ব্যবসায়কে আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ বলেও উল্লেখ করে না।[১৪][১৫][১৬]

যদিও আইনগত স্বাতন্ত্র্য অল্পই দৃশ্যমান, এমএলএম ব্যবসায় ও অবৈধ পিরামিক স্কিম কিছু জায়গায় স্বতন্ত্র, যেমন এমএলএম পণ্য বিক্রয়ের উপর নির্ভরশীল। যাই হোক, এমএলএম বিক্রয়কর্মীরা এই মডেলের বিক্রয় ধরন থেকে তেমন মুনাফা অর্জন করতে পারে না বরং এমএলএল কর্পোরেশনসমূহ এই বিক্রয়কর্মীদের বিক্রয় থেকে তাদের কর্পোরেশন ও শেয়ারহল্ডারদের জন্য মাল্টি মিলিয়ন ডলার মুনাফা করে। এমএলএম বিক্রয়কর্মীদের মুনাফা শুধুমাত্র অর্জিত হন নতুন বিক্রয়কর্মী নিয়োগ করতে পারলে এবং এভাবে প্রথম সাইকেলে নিয়োগপ্রাপ্তরা দ্বিতীয় সাইকেলের বিক্রয়কর্মীদের মুনাফা বৃদ্ধি করে এবং এভাবে উপরের সাইকেলসমূহ মুনাফা অর্জন করে।

এমএলএম বিক্রয়কর্মীরা এমএলএম ব্যবসায়ের কর্মচারী নয়, ফলে তারা কোন প্রকার বেতন/মজুরি পায় না এবং তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ও শ্রমের বিনিময়ে কোন প্রত্যর্পণ পায় না। তাদের মুনাফা অর্জিত হয় এমএলএম ব্যবসায়ের কাঠামো অনুযায়ী। ফলে যেহেতু যারা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নয় তারা কর্মসংস্থান আইনের বিধান অনুযায়ী তাদের অধিকার সংরক্ষিত নয়। বরং তাদের এমএলএম ব্যবসায়ে "স্বাধীন ঠিকাদার" বা "ব্যবসায়ের মালিক" হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যাই হোক, বিক্রয়কর্মীরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই ব্যবসায়ের মালিক নয় কারণ তারা কোন প্রকার স্পর্শনীয় সম্পদ বা অস্পর্শনীয় সুনামের অধিকারী নয়, যা তারা ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবে।

যেসব কোম্পানি বেতন ভাতার ক্ষেত্রে এমএলএম মডেল ব্যবহার করে তাদের প্রায়ই সমালোচনা ও আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমালোচনার বিষয়বস্তু হল অবৈধ পিরামিড স্কিমের সাথে তুলনা, অবৈধ মূল নির্ধারণ, উচ্চ বাজার প্রবেশ মূল্য, প্রকৃত বিক্রয়ের চেয়েও আরও বিক্রয়কর্মী নিয়োগ, প্রয়োজন না থাকা সত্বেও কোম্পানি পণ্য ক্রয় ও ব্যবহারের জন্য পীড়াপীড়ি করা, বিক্রয় ও নিয়োগের লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট করা, জটিল ও অতিরঞ্জিত বেতন স্কিম, কোম্পানি ও শীর্ষস্থানীয় বণ্টনকারীদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি থেকে অর্থ উপার্জন, এবং দলের সদস্যদের উৎসাহ ও অনুরক্তি বৃদ্ধির জন্য গৃহীত কাল্ট পদ্ধতি।[১৪][১৭]

সরাসরি বিক্রয় ও নেটওয়ার্ক মার্কেটিং সম্পাদনা

লেখক ডমিনিক জার্দেল নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ও মাল্টি লেভেল মার্কেটিংকে সমার্থক ও সরাসরি বিক্রয়-এর একটি কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন।[১৮] মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বুঝাতে ব্যবহৃত অন্য শব্দসমূহ হল ওয়ার্ড অফ মাউথ মার্কেটিং, ইন্টারেক্টিভ ডিস্ট্রিবিউশন, ও সম্পর্কযুক্ত বিপণন। সমালোচকেরা বলেন ভিন্ন শব্দ ও পুনরাবৃত্তিমূলক শব্দসমূহের ব্যবহার মূলত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর অবৈধ পনজি স্কিম, চেইন লেটার ও ভোক্তা প্রতারণামূলক কুৎসা থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহৃত হয়।[১৯] কিছু বইতে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংকে সরাসরি বিক্রয় না বলে সরাসরি বিক্রয়ের একটি রূপ হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করে।[২০][২১][২২]

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর উৎপত্তি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। তবে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে ব্যবসায় ১৯২০-এর দশক থেকে হয়ে আসছে।[২৩] ১৯৩০-এর দশকে ক্যালিফোর্নিয়া ভিটামিন কোম্পানি,[২৪] (পরবর্তীতে নিউট্রিলাইট নামকরণ করা হয়) বা ক্যালিফোর্নিয়া পারফিউম কোম্পানি (১৯৩৯ সালে নাম পরিবর্তন করে "অ্যাভন প্রোডাক্টস" রাখা হয়), যা এখনো প্রথম সারির মাল্টি লেভেল কোম্পানি, এই ধরনের ব্যবসায় শুরু করে বলে ধারণা করা হয়।[২৫]

প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

 
এমএলএমের বাইনারি ট্রি গঠন। নীল চিহ্নিত ব্যক্তিরা লাল চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিক্রয় থেকে কমিশন পাবে।

স্বাধীন অবৈতনিক ব্যক্তিবর্গ, বণ্টনকারী (সহযোগী, স্বাধীন ব্যবসায়ের মালিক, স্বাধীন প্রতিনিধি নামেও পরিচিত), কোম্পানির পণ্য বা সেবা বিতরণের দায়িত্বে থাকেন। তাদেরকে ক্রেতার কাছে বিক্রয়ের লাভের অংশের পাশাপাশি কমিশন প্রদান করা হয়ে থাকে, কিন্তু ডাউনলাইনরা এই লাভের অংশ বা কমিশন পান না। মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের বেতন পরিকল্পনা অনুযায়ী বণ্টনকারীরা তাদের নিজের এবং তাদের ডাউনলাইনের বিক্রয় প্রচেষ্টার ফলে বিক্রিত পণ্যের উপর লভ্যাংশ ও কমিশন পেয়ে থাকেন।

স্বাধীন বণ্টনকারীগণ তাদের নিজস্ব কর্মঠ ভোক্তা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেন, যারা সরাসরি কোম্পানির নিকট থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করেন; অথবা তারা তাদের ডাউনলাইনদের মাধ্যমে ভোক্তা নেটওয়ার্ক তৈরি করে কোম্পানির বিস্তার ও প্রসার করেন।

এই চক্রের সম্বিলিত কর্মীরা মিলে বিক্রয় বিক্রয় বাহিনী গড়ে তুলে যাকে বিক্রয়কর্মীদের ডাউনলাইনও বলা হয়। ডাউনলাইন হল এমএলএমের বেতনের একাধিক ধাপ গঠনের পিরামিড।[১৮]

ধরা যাক, নীল চিহ্নিত ব্যক্তি পাঁচজনকে তাদের কাজে নিয়োগ দিয়েছে, এবং সেই পাঁচজন তার নিজস্ব পাঁচজন বিক্রয়কর্মী। ফলে তার নিচে যত জন যুক্ত হবে সকলে নীল চিহ্নিত ব্যক্তির ডাউনলাইন এবং তাত্ত্বিকভাবে ১৪ টি চক্রে একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ (৫১৪ = ৬.১ বিলিয়ন ব্যক্তি) ডাউনলাইন হতে পারবে।

বণ্টনকারীগণ পাইকারী দামে কোম্পানি থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করে খুচরা মাধ্যমে বিক্রয় করে লাভ করতে পারে।

পিরামিডীয় গঠন সম্পাদনা

এমএলএম ব্যবসায় যুক্তি প্রদর্শন করে যে সকল ব্যবসায়েই পিরামিডীয় গঠন বিদ্যমান। সব ধরনের ব্যবসায়ে সবার উপরে একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, তার নিচে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও তার নিচে বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারী নিযুক্ত থাকে। বিভিন্ন সংস্থার এই পিরামিড গঠনপ্রণালী থেকে এমএলএম ব্যবসায়ও যুক্তি দেখায় তারাও এই গঠনপ্রণালীর বাইরে নয় এবং এমএলএমের গঠনকে বৈধ ব্যবসায়িক গঠন না বলে পিরামিড পদ্ধতির একটি ধরন বলা অযৌক্তিক।

যাই হোক, এমএলএমের পিরামিড আকৃতি পিরামিড গঠন নয়, বরং তা এমএলএমের আয়ের উৎসের পিরামিড গঠন যা নিজেই অবৈতনিক ব্যক্তিদের (অবৈতনিক এবং কর্মচারী নয়) বিক্রয় থেকে আসে। এই কারণে এমএলএমকে সাধারণ পিরামিড পদ্ধতি থেকে ভিন্ন বলে ধরা হয়, এমনকি যেসব স্থানে আইনের মাধ্যমে তা বিভাজিত করা হয় নি।

সাধারণ ব্যবসায়ে পিরামিড আকৃতি ব্যবসায়ের আয়ের পিরামিড গঠন নয়, বরং তা ঐ সংস্থার মানব সম্পদের (বৈতনিক কর্মচারীদের) পিরামিড গঠন। ব্যবসায়ের রাজস্ব ও আয় আসে স্বাধীন ক্রেতাদের কাছ থেকে, ব্যবসায়ে অবৈতনিকভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের থেকে নয়।

আয় সম্পাদনা

নির্দিষ্ট এমএলএম ব্যবসায় বা সর্বোপরি এমএলএম ব্যবসায়ের আয় সম্পর্কে কয়েকটি সূত্র বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে:

  • দ্য টাইমস: "সরকারী তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্যে দশটি বিক্রয়যোগ্য পণ্যের কমপক্ষে একটি বিক্রয় করে অ্যামওয়ের প্রতিনিধিদের মাত্র ১০% আয় করতে পেরেছে।"[২৬]
  • এরিক শেইবেলার, "এমেরাল্ড" ও অ্যামওয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা: "যুক্তরাজ্যের বিচারপতি নরিস ২০০৮ সালে এক গবেষণায় ফলাফলে বলেন ৩৩,০০০ স্বাধীন ব্যবসায় মালিকদের মধ্যে মাত্র ৯০ জন যথেষ্ট পরিমাণ আয় করতে পেরেছেন যা দিয়ে তারা তাদের ব্যবসায়ের ব্যয় বহন করতে পেরেছেন। ৯৯.৭ ভাগ বিনিয়োগকারী এখনো লোকসানে আছেন।"[২৭]
  • নিউজউইক: মোনাভায়ের ২০০৭ সালের আয় বিবরণী অনুযায়ী "১ শতাংশের কম কমিশন পাওয়ার যোগ্যতা লাভ করে এবং তাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ এক সপ্তাহে $১০০ এর উপর আয় করতে পারে।"[২৮]
  • বিজনেস স্টুডেন্টস্‌ ফোকাস অন ইথিকস্‌: "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমএলএম থেকে ৯০% এর বার্ষিক গড় আয় $৫,০০০ এর বেশি নয়, যা স্বাভাবিক জীবন ধারণের চেয়ে অনেক কম (সান লিয়ান লাইফ উইকলি ১৯৯৮)"[২৯]
  • ইউএসএ টুডেতে কয়েকটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে:
  • "যেহেতু আয়ের সম্ভাব্যতা কোম্পানি ও বিক্রয় যোগ্যতার উপর নির্ভর করে, ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশন-এর মতে সরাসরি বিক্রয় থেকে বার্ষিক মধ্যক আয় হতে পারে $২,৪০০।"[৩০]
  • ২০১০ সালের ১৫ অক্টোবরের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, এমএলএম প্রতিষ্ঠান ফরচুনের নথিপত্র থেকে জানা যায় ৩০ শতাংশ প্রতিনিধি কোন প্রকার আয় করতে পারে নি এবং ৭০ শতাংশের ৫৪ শতাংশ মাসে মাত্র $৯৩ আয় করতে পেরেছে। নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে ফরচুন টেক্সাস, কেন্টাকি, নর্থ ডাকোটা ও নর্থ ক্যারোলিনার এটর্নি জেনারেলের তদন্তের আওতায় রয়েছে এবং মিসৌরি, সাউথ ক্যারোলিনা, ইলিনয়স, ও ফ্লোরিডায় এই কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে।[৩১]
  • ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির একটি নিবন্ধে বলা হয়, "যদি অসম্ভব না হয়, বেশিরভাগ মানুষের জন্য ভোক্তার কাছে সরাসরি পণ্য বিক্রয় করে আয় করা কষ্টসাধ্য। নিয়োগকারীরা শুধু বিশাল পরিমাণ অর্থ আয়ে কথাই বলে।"[৩২]
  • "রোল্যান্ড হুইটসেল, একজন প্রাক্তন ব্যবসায় বিষয়ের অধ্যাপক যিনি মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের অসুবিধা নিয়ে ৪০ বছর ধরে গবেষণা ও শিক্ষকতা করেছেন": "ঘণ্টায় $১.৫০ আয় করে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর, মূল পণ্য হল সুযোগ। সবচেয়ে বড় প্রেরণা হল মিথ্যা আশ্বাস।"[৩২]

আইনগত বৈধতা সম্পাদনা

যুক্তরাষ্ট্র সম্পাদনা

এমএলএম ব্যবসায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে পরিচালিত হয়। এই ব্যবসায়সমূহ এফিলিয়েট মার্কেটিং বা হোম-বেজড বিজনেস ফ্রাঞ্চাইজিং নামে পরিচালিত হয়। যার মধ্যে কিছু পিরামিড পদ্ধতির ব্যবসায় নিজেদের আইনগতভাবে বৈধ বলে দাবী করে।[১৩] কিছু সূত্রে বলা হয় বৈধতা থাকলেও সকল এমএলএম পিরামিড পদ্ধতির ব্যবসায়।[১৪]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) অনুসারে: "মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের পরিকল্পনা হল নতুন বণ্টনকারী নিয়োগের জন্য কমিশন প্রদান করা। এসব প্রকৃতপক্ষে অবৈধ পিরামিড পদ্ধতি। পিরামিড পদ্ধতি বিপজ্জনক। কারণ নতুন বণ্টনকারী নিয়োগের জন্য কমিশন প্রদানের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে যখন নতুন বণ্টনকারী নিয়োগ করা যাবে না। এছাড়া এই পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে কারণ উপরের সারির কয়েক জন ছাড়া বাকি সবাইকে খালি হাতে ফিরতে হবে।"[৩৩]

২০০৪ সালে ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশনে স্টাফ এডভাইজরি পত্রে এফটিসি বলে:

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বেশ কিছু ব্যক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ ভোগের বিষয় উঠে এসেছে। এমনকি, মাল্টি লেভেল ব্যবসায়ে অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ এটি নিশ্চিত করে না যে এফটিসি পিরামিড পদ্ধতির এই পরিকল্পনাকে গ্রহণ করবে কিনা। এফটিসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সকল অংশগ্রহণকারীদের কমিশ্ন প্রদানের জন্য যে আয়ের প্রয়োজন তা কি পণ্য বা সেবা বিক্রয় থেকে আসছে নাকি সেই বিক্রয় শুরু অর্থ উপার্জনের জন্য পণ্য বা সেবার স্বত্ব হস্তান্তর।[৩৪]

ফেডারেল ট্রেড কমিশন সাবধান করে দিয়ে বলে, "সকল মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পরিকল্পনা বৈধ নয়। কিছু পিরামিড পদ্ধতির। তাই এমন কোন ব্যবসায়ের জড়ানোর উচিত নয় যেখানে অর্থ প্রকৃত ভোক্তার নিকট পণ্য বিক্রয় থেকে নয় আসে বণ্টনকারী নিয়োগ থেকে।"[৩৫]

সমালোচনা সম্পাদনা

ফেডারেল ট্রেড কমিশনের ১৯৭৯ সালের ইন রে অ্যামওয়ে কর্পোরেশন অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং অবৈধ নয়।[৩৬] তবে, অ্যামওয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ মূল্য নির্ধারণের জন্য এবং অতিরিক্ত আয়ের জন্য অভিযোগ আনা হয়।[৩৭]

এফটিসি বলে পণ্য বিক্রয়ের চেয়ে নিয়োগকারীদের ইনসেন্টিভ থেকে বেশি আয় করা বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে নজরে রাখতে হবে। এফটিসি সতর্ক করে দিয়ে বলে নতুন সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে কমিশন পাওয়ার রীতি অনেক রাজ্যে "পিরামিডিং" হিসেবে পরিচিত এবং আইন বহির্ভূত।[৩৮]

২০০৬ সালের এপ্রিলে এফটিসি একটি নতুন ব্যবসায়িক নিয়মের প্রস্তাব দেয় যেখানে এমএলএম সহ সকল ব্যবসায়ের বিক্রেতাদের তাদের সম্ভাব্য ক্রেতা/অংশগ্রহণকারীদের তথ্য দিতে বলা হয় যাতে করে সার্বিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে গড় আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাই করে নতুন ব্যবসায় গঠন করা যায় বা নতুন ব্যবসায়ে যোগ দেওয়া যায়। ২০০৮ সালের মার্চে এফটিসি "নেটওয়ার্ক মার্কেটিং" (যেমন এমএলএম) কোম্পানিসমূহকে এই ব্যবসায়িক নিয়ম থেকে বাদ দেয়, ফলে এমএলএম ব্যবসায়ের অংশগ্রহণকারীরা সেই সার্বিক তথ্যভান্ডারে তথ্য থেকে বাদ পড়ে বা এমএলএম ব্যবসায় সাফল্য ও সম্ভাবনার ফলাফল জানা থেকে বাদ পড়ে:

সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী বহুস্ততবিশিষ্ট বিপণন কোম্পানিসমূহ বা নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি যেসব অসাবধানতাবসত ২০০৬ সালের এপ্রিলের প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[৩৯]

কিছু নিয়োগকারীদের এমনভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয় যে তারা তাদের প্রতিযোগী কোম্পানির নিয়োগকারীদেরও তাদের কোম্পানিতে অংশগ্রহণ করাতে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। কিছু মানুষ এত দূর পর্যন্ত চলে গেছে যে সেরা আধুনিক এমএলএম ব্যবসায়সমূহ আইনসিদ্ধ পিরামিড পদ্ধতি থেকে কোন অংশে কম নয়।[১৪] একজন বলেন, "বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন কোম্পানিসমূহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিরামিড পদ্ধতির গ্রহণযোগ্য ও বৈধ অনুমোদিত রূপ।"[১৫] একইভাবে আরেকজন বলেন, "বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন, পিরামিড পদ্ধতির একটি রূপ, যা সব ক্ষেত্রে প্রতারণামূলক নয়।"[১৬]

ওয়াল্টার জে. কার্ল ২০০৪ সালে ওয়েস্টার্ন জার্নাল অফ কমিউনিকেশন এ এক নিবন্ধে এমএলএম প্রতিষ্ঠানসমূহকে কাল্ট (বাটারফিল্ড, ১৯৮৫),[৪০] পিরামিড পদ্ধতি (ফিট্‌জপ্যাট্রিক ও রেনল্ডস, ১৯৯৭),[৪১] বা বিভ্রান্তিকর, প্রবঞ্চনামূলক, ও অনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিক চল (কার্টার, ১৯৯৯),[৪২] যেমন ব্যবসায়ের প্রসারের জন্য যীশুর বাণী সংবলিত বক্তৃতার প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবহার (হোপফ্‌ল ও মাদ্রেল, ১৯৯৬),[৪৩] এবং অর্থনৈতিক লাভের আশায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবক্ষয় (ফিট্‌জপ্যাট্রিক ও রেনল্ডস, ১৯৯৭)[৪১][৪৪] বলে উল্লেখ করেছেন। চীনে এই পদ্ধতি থেকে জনগণকে বিরত রাখতে কাজ করছে এমন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।[৪৫]

পশ্চিমা সাংস্কৃতিক নিয়মের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশের তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারার জন্য এমএলএমের সমালোচনা করা হয়।[৪৬] অনেকে অভিযোগ করেন যে এই ব্যবসায়ে ব্রেক ইভেন পার করার সাফল্যের হার বা লাভ করা অন্যান্য ব্যবসায়ের তুলনায় একেবারেই নগণ্য:[৪৭][৪৮][৪৯] "বিশাল পরিমাণ এমএলএম ব্যবসায় এমএলএম নিয়োগ দিচ্ছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই মুনাফা অর্জনের জন্য বেশি হারে নিয়োগ অন্যদের নিয়োগ করতে হবে। কোম্পানির নিজেদের থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে, এমএলএম ব্যবসায়ে নিয়োগে ক্ষতির হার প্রায় ৯৯.৯%; অর্থাৎ অংশগ্রহণকারীদের ৯৯.৯% কোম্পানীর কাছ থেকে ক্রয়সহ যাবতীয় খরচ বাদ দেওয়ার পরও কোন অর্থ উপার্জন করতে পারে না।"[৪৭] কিছু ক্ষেত্রে, এর কারণ হল নিয়োগপ্রাপ্তদের আরও নিয়োগে উৎসাহিত করা "[তাদের] সাথে প্রতিযোগিতা করতে লোক নিয়োগ"[১৪] যার ফলে "বাজার সম্পৃক্তি" বাড়ে।[১৭] এছাড়াও বলা হয়েছে "প্রকৃতি অনুযায়ী, এমএলএম বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সম্পূর্ণরূপে বর্জিত।[৫০]

২০১০ সালের অক্টোবরে এক প্রতিবেদনে বলা হয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েক জন সরকারী এটর্নি জেনারেল বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন কোম্পানিসমূহ তদন্ত করে দেখেছেন যে প্রথম দিকে কিছু বিক্রয়কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পারশ্রমিক দেওয়া হত এবং সাম্প্রতিক সময়ের নিয়োগপ্রাপ্তরা পূর্বে যারা এই ব্যবসায়ে এসেছে তাদের তুলনায় কিছুই পাচ্ছে না।[৫১]

শিল্প সমালোচক রবার্ট এল. ফিট্‌জপ্যাট্রিক বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণনকে "দ্য মেইন স্ট্রীট বাবল" বলে উল্লেখ করেছেন যা যে কোন সময় বিস্ফোরিত হতে পারে।[৫২]

চীন সম্পাদনা

চীনে ১৯৭৮ সালের চীনের অর্থনৈতিক সংস্কার এর পর মার্কিন, তাইওয়ানীয় এবং জাপানি কোম্পানিসমূহ প্রথম বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণণ (সরলীকৃত চীনা: 传销; প্রথাগত চীনা: 傳銷; ফিনিন: chuán xiāo) নিয়ে আসে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যক্তিক ভোক্তাবাদের নতুন পট পরিবর্তনের সাথে সাথে কাকতালীয়ভাবে বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৯৮ সালে চীনা সরকার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও করারোপণ বিষয়সমূহকে সামনে রেখে চীনের সমভূমিতে বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন নিষিদ্ধ করে।[৫৩] ২০০৫ সালে প্রণয়ন করা "প্রহিবিশন অফ চুয়ানসিয়াও"র ৩ নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ডাউনলাইন থাকা অবৈধ ঘোষণা করা হয়।[১২] ও'রিগান লিখেন, "এই বিধান দ্বারা চীন একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে যে চীনের সমভূমিতে সরাসরি বিক্রয়ের অনুমতি রয়েছে, কিন্তু বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণনের নেই।"[১১]

এমএলএম কোম্পানিসমূহ চীনের প্রহিবিশনের কাছাকাছি কোন উপায় বা কোন পদ্ধতির, যেমন সরাসরি বিক্রয়, সাহায্যে খুচরা বিক্রয় কার্যক্রমের মাধ্যমে চীনে তাদের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সরাসরি বিক্রয়ের বিধান কসমেটিকস, স্বাস্থসম্মত খাদ্য, স্বাস্থসম্মত পণ্য, শরীরচর্চার উপাদান ও রান্নার সামগ্রীর ক্ষেত্রে সীমিত এবং এই বিধানে কোন চীনা বা বিদেশী কোম্পানি চীনের সমভূমিতে সরাসরি বিক্রয় ব্যবসায়ে আগ্রহী এমন হতে হয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি বিক্রয়ের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়।[৫৪] ২০১৬ সালে ৭৩ টি দেশী ও বিদেশী কোম্পানি সরাসরি বিক্রয়ের লাইসেন্স পায়।[৫৫]

২০০৫ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্য কাউন্সিল নিয়ম জারি করে যা সরাসরি বিক্রয় কার্যক্রম (১ ডিসেম্বর, ২০০৫ থেকে কার্যকর হয়) এবং প্রহিবিশন অফ চুয়ানসিয়াও বিধান (১ ডিসেম্বর, ২০০৫ থেকে কার্যকর হয়) এর সাথে সম্পর্কিত। যেহেতু সরাসরি বিক্রয় অনুমোদিত, প্রয়োজনীয় অনুমতি পেতে তাদের কার্যক্রম পিরামিড পদ্ধতি, এমএলএম, বা ফ্লাই-বাই-নাইট অপারেশনের নয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

সৌদি আরব সম্পাদনা

সৌদি আরবে এমএলএম বিপণন জাতীয়ভাবে ধর্মীয় ফতোয়া প্রয়োগের নিষিদ্ধ, এজন্যে এ্যামওয়ে, মেরি কে, ওরিফ্লেম এবং হার্বালাইফ এর মত এমএলএম কোম্পানিগুলল এমএলএম এর পরিবর্তে অনলাইন বিক্রয় পদ্ধতি দ্বারা তাদের পণ্য বিক্রি করে ।[৫৬]

বাংলাদেশ সম্পাদনা

১৯৯৬ সালে যুবক নামে এমএলএম কোম্পানি বাংলাদেশে যাত্রাশুরু করে ও সাধারণ ভোক্তাদের কোটিপতি হওয়ার লোভ দেখিয়ে মূলধন হিসেবে টাকা দাবি করে দেশব্যাপী কয়েকশত কোটি টাকা আত্মসাত করে। এরপর ২০০২ সালে একই পন্থায় ডেসটিনি-২০০০ নামক এমএলএম কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। ২০১০ সালে ডেসটিনি নিষিদ্ধ করা হলেও ভিন্ন নামে ও ভিন্ন কর্মকৌশলে অসংখ্য এমএলএম কোম্পানি দেশে লোকচক্ষুর আড়ালে গড়ে ওঠে ও কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে এসকল এমএলএম কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই ব্যবসার ধরন ‘এমএলএম না বলে তাদের ব্যাবসাকে ‘নেটওয়ার্ক মার্কেটিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সরল মানুষদের বিভ্রান্ত করে।[৫৭] ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী সকল প্রকার এমএলএম বাণিজ্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[৫৮] ২০১৭-১৮ বছরে ১২ কোম্পানি অফিস বন্ধ করে হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে পলায়ন করে। এগুলো হল নোভরা প্রোডাক্টস লিমিটেড, তিয়ানশি বাংলাদেশ লিমিটেড, কে লিংক ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ লিমিটেড, সামি ডিরেক্ট কোম্পানি লিমিটেড, ডিএক্সএন ফার্মাসিউটিক্যালস, আপনজন, ইউটুইউ, রিচ, মিঙ্গেল লিমিটেড ও গ্রেট ইন্টারন্যাশনাল। এরপরও নতুন নতুন কোম্পানি ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে। রাজধানীতেই শতাধিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কৌশলে এমএলএম ব্যবসা করে। ব্যবসা করতে এরা কৌশলে ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআইর সার্টিফিকেট নেয়। ২০১৯ এর ২৮ সেপ্টেম্বর জনকন্ঠ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, "এমএলএম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। এরা নানাভাবে মানুষকে প্রতারণা করে। এজন্য এখন এগুলো বন্ধ আছে, কাউকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না।[৫৭]

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ সম্পাদনা

ইসলাম সম্পাদনা

বহু ইসলামি আইনবিদ এমএলএম বাণিজ্যকে হারাম বলে গণ্য করেছেন, তারা যে সকল কারণকে এর পেছনে চিহ্নিত করেছেন তা হলঃ এ প্রক্রিয়ায় জড়িত- শ্রমবিহীন বিনিময় ও বিনিময়বিহীন শ্রম, এক চুক্তির পেছনে আরেক চুক্তি বা এক শর্তের উপর আরেক শর্ত, সুদের সঙ্গে সাদৃশ্য, জুয়ার সঙ্গে সাদৃশ্য, লাভ ক্ষতির ব্যাপক অনিশ্চয়তা, সবাই সমানভাবে লাভবান না হওয়া, আর্থিক প্রতারণা ও নির্যাতন, মিথ্যাচার ও অতিরঞ্জন ইত্যাদি।[৫৯][৬০]

এক্ষেত্রে সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া, যা হল: এই ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ, এবং এই লেনদেনের অভিপ্রায় হল কমিশন, পণ্য নয়; এতে কমিশনের মূল্য কয়েক হাজার হলেও হয় পণ্যটির দাম কয়েকশও ছাড়ায় না, আর এভাবে প্রতিবার যদি তাকে এ দুটি জিনিস থেকে বাছাইয়ের সুযোগ দেওয়া হয় তবে তিনি কমিশনই বেছে নেবেন। এই কারণেই এই পণ্যগুলির বিপণন ও বিজ্ঞাপনে এই সংস্থাগুলির স্বীকৃতি হল কোনও গ্রাহক এমন বড় কমিশন পেতে পারে বলে দেখানো হয় এবং পণ্যটির দাম হিসেবে অল্প পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাকে অতিমাত্রায় লাভের সাথে প্রলুব্ধ করা হয়। এই সংস্থাগুলি যে পণ্যটি বাজারজাত করে তা হল কমিশন এবং মুনাফা অর্জনের অজুহাত এবং এই লেনদেনের সত্যতা হল এটি ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ, যার কারণ হল, রিবা অর্থাৎ সুদের সঙ্গে সাদৃশ্য, লাভ ক্ষতির অনিশ্চয়তা, অন্যায়ভাবে অন্যের হক ভক্ষণ ও ব্যাবসার নামে প্রতারণা।[৬১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Clegg, Brian (২০০০)। The invisible customer: strategies for successive customer service down the wire। Kogan Page। পৃষ্ঠা 112আইএসবিএন 0-7494-3144-X 
  2. Higgs, Philip; Smith, Jane (২০০৭)। Rethinking Our World। Juta Academic। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 0-7021-7255-3 
  3. Kitching, Trevor (২০০১)। Purchasing scams and how to avoid them। Gower Publishing Company। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 0-566-08281-0 
  4. Mendelsohn, Martin (২০০৪)। The guide to franchising। Cengage Learning Business Press। পৃষ্ঠা 36। আইএসবিএন 1-84480-162-4 
  5. Vander Nat, Peter J.; Keep, William W. (২০০২)। "Marketing Fraud: An Approach for Differentiating Multilevel Marketing from Pyramid Schemes"। Journal of Public Policy & Marketing21 (1): 139–15। ডিওআই:10.1509/jppm.21.1.139.17603 
  6. Mendelsohn, Martin (২০০৪)। The guide to franchising। Cengage Learning Business Press। পৃষ্ঠা 36। আইএসবিএন 1-84480-162-4 
  7. DuBoff, Leonard D. (২০০৪)। The Law (in Plain English) for Small Business। Sphinx Pub.। পৃষ্ঠা 285–286। আইএসবিএন 978-1-57248-377-4 
  8. "The Bottom Line About Multilevel Marketing Plans and Pyramid Schemes" (পিডিএফ)। FTC। ৮ মে ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  9. "Multilevel Marketing"। FTC। ৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  10. "Multilevel Marketing"। FTC, Bureau of Consumer Protection। ২৬ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  11. O'Regan, Stephen (জুলাই ১৬, ২০১৫)। "Multi-Level Marketing: China Isn't Buying It"China Briefing। Dezan Shira & Associates। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  12. "MLM law of China 'Prohibition of Chuanxiao'"gov.cn। ২০০৫-০৯-০৩। 
  13. Debra A. Valentine (মে ১৩, ১৯৯৮)। "Pyramid Schemes"। FTC। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৪, ২০০৯ 
  14. Carroll, Robert Todd (২০০৩)। The Skeptic's Dictionary: A Collection of Strange Beliefs, Amusing Deceptions, and Dangerous Delusionsজন উইলি অ্যান্ড সন্স। পৃষ্ঠা 235–36। আইএসবিএন 0-471-27242-6 
  15. Coenen, Tracy (২০০৯)। Expert Fraud Investigation: A Step-by-Step Guide। Wiley। পৃষ্ঠা 168আইএসবিএন 0-470-38796-3 
  16. Salinger (Editor), Lawrence M. (২০০৫)। Encyclopedia of White-Collar & Corporate Crime2। Sage Publishing। পৃষ্ঠা 880। আইএসবিএন 0-7619-3004-3। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৬ 
  17. "What's Wrong With Multi-Level Marketing?"। Vandruff.com। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  18. Xardel, Dominique (১৯৯৩)। The Direct Selling Revolution. Understanding the Growth of the Amway CorporationBlackwell Publishing। পৃষ্ঠা 1–4। আইএসবিএন 978-0-631-19229-9 
  19. Charles W. King; James W. Robinson (২০০০)। The New Professionals। Prima Publishing। পৃষ্ঠা 80আইএসবিএন 0-7615-1966-1 
  20. Edwards, Paul; Edwards, Sarah; Economy, Peter (২০০৯)। Home-Based Business for Dummies (3rd সংস্করণ)। Wiley। পৃষ্ঠা 38–39। আইএসবিএন 978-0-470-53805-0 
  21. "'Person to person' sales plans... "dream" opportunity or business nightmare? [Amway Ad]"Life68 (7): 51। ফেব্রুয়ারি ২৭, ১৯৭০। 
  22. Brown Caryne (ডিসে ১৯৯২)। "Door-to-door Selling Grows Up"। Black Enterprise23 (5): 76। 
  23. Pareja, Sergio (২০০৮)। "Sales Gone Wild: Will the FTC's Business Opportunity Rule Put an End to Pyramid Marketing Schemes?"। McGeorge Law Review39 (83)। 
  24. Attri, Rekha (২০১১)। "A Study of Consumer Perceptions of the Products Sold Through Multilevel Marketing"। Management Research Journal। Prabandhan & Taqniki। 39 (83): 97–103। 
  25. "MLM History"। network-experience.net। জানুয়ারি ২৪, ২০১৪। জানুয়ারি ২৯, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  26. Brown, David (নভেম্বর ২৭, ২০০৭)। "Marketing group merely 'selling a dream'"The Times। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  27. Berkowitz, Bill (জানুয়ারি ২৮, ২০০৯)। "Republican Benefactor Launches Comeback"। Inter press service। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭  (in reference to BERR vs Amway (Case No:2651, 2652 and 2653 of 2007) in point of objectionability"c")
  28. Tony Dokoupil (আগস্ট ২, ২০০৮)। "A Drink's Purple Reign"নিউজউইক। ১১ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  29. Ryan (Editor), Leo; Wojciech, Gasparski (Editor); Georges, Enderle (Editor) (২০০০)। Business Students Focus on Ethics (Praxiology): The international Annual of Practical Philosophy and Methodology Volume 8। New Jersey: Transaction Publishers। পৃষ্ঠা 75আইএসবিএন 0-7658-0037-3 
  30. Peterecca, Laura (সেপ্টেম্বর ১৪, ২০০৯)। "What kind of business do you want to start?"USA Today। পৃষ্ঠা 4B। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  31. O'Donnell, Jayne (অক্টোবর ১৫, ২০১০)। "Fortune Hi-Tech: American dream or pyramid scheme?"USA Today। পৃষ্ঠা 6B। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  32. O'Donnell, Jayne (ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১)। "Multilevel marketing or 'pyramid?' Sales people find it hard to earn much"USA Today। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  33. "FTC Consumer Alert; Lotions and Potions: The Bottom Line About Multilevel Marketing Plans"। FTC। জানুয়ারি ২০০০। ১৮ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  34. Kohm, James A. (জানুয়ারি ১৪, ২০০৪)। "RE: Staff Advisory Opinion - Pyramid Scheme Analysis" (পিডিএফ)। Federal Trade Commission। জুলাই ৩, ২০১৭ তারিখে মূল (reprint) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭ 
  35. Facts for Consumers; The Bottom Line About Multilevel Marketing Plans and Pyramid Schemes Federal Trade Commission
  36. "In re Amway Corp. vol=93" (পিডিএফ)F.T.C.। ১৯৭৯। ২০ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  37. Richard Eisenberg (জুন ১, ১৯৮৭)। "The Mess Called Multi-Level Marketing With celebrities etting the bait, hundreds of pyramid-style sales companies are raking in millions, often taking in the gullible"। CNN। 
  38. "Multilevel Marketing Plans"। FTC Consumer Alert। নভেম্বর ১৯৯৬। ৯ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  39. "FTC Press Release"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  40. Butterfield, Stephen (১৯৮৫)। Amway, the Cult of Free Enterprise। Boston: South End Press। 
  41. FitzPatrick, Robert L.; Reynolds, Joyce K.। "False Profits: Seeking Financial and Spiritual Deliverance in Multi-Level Marketing and Pyramid Schemes (Herald Pr, 1997)"। Falseprofits.com। ৮ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  42. Carter, Ruth (১৯৯৯)। Amway Motivational Organizations: Behind the Smoke and Mirrors। Winter Park, Fla.: Backstreet Publishing। 
  43. Höpfl, H.; Maddrell, J. (১৯৯৬)। Can You Resist a Dream? Evangelical Metaphors and the Appropriation of Emotion”, Metaphor and Organizations, eds. D. Grant & C. Oswick। Thousand Oaks, Cal.:: Sage। পৃষ্ঠা 200–12। 
  44. Carl, Walter J. (Winter ২০০৪)। "The Interactional Business of Doing Business: Managing Legitimacy and Co-constructing Entrepreneurial Identities in E-Commerce Multilevel Marketing Discourse"Western Journal of Communication68 (1): 92–119। 
  45. Hu Yongqi। "Going against the slippery slope of a pyramid scheme"China Daily 
  46. Bloch, Brian (১৯৯৬)। "Multilevel marketing: what's the catch?"। Journal of Consumer Marketing13 (4): 18–26। ডিওআই:10.1108/07363769610124519 
  47. Taylor, Jon M. (২০০২)। "Comparing Recruiting MLMs with No-product Pyramid Schemes, and with Gambling"। Consumers Awareness Institute। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  48. FitzPatrick, Robert L. (আগস্ট ৪, ২০০২)। "The 10 Big Lies of Multi-Level Marketing"। Consumers Awareness Institute। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  49. Cruz, Joan Paola; Camilo, Olaya (২০০৮)। "A System Dynamics Model for Studying the Structure of Network Marketing Organizations [Peer reviewed paper that refers uses Taylor as references]" (পিডিএফ)। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  50. Sandbek PhD, Terry। "Brain Typing: The Pseudoscience of Cold Reading"। American Board of Sport Psychology। ৬ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  51. "Multilevel marketing or 'pyramid?' Sales people find it hard to earn much"USA Today। ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  52. Greenberg, Herb (জানুয়ারি ৯, ২০১৩)। "Multi-Level Marketing Critic: Beware 'Main Street Bubble'"। CNBC। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  53. Jeffery, Lyn (মার্চ ২১, ২০০১)। "Placing Practices: Transnational Network Marketing in Mainland China"। Chen, Nancy N.। China Urban: Ethnographies of Contemporary Culture। Duke University Press। পৃষ্ঠা 23–42। আইএসবিএন 9780822326403 
  54. Xu, Lehman, Lee &। "Chinese Law | China: Direct Sale"www.lehmanlaw.com। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  55. "直销企业信息披露网站"zxjg.saic.gov.cn। ২৮ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  56. Nestorović, Čedomir (২০১৬)। Islamic Marketing: Understanding the Socio-Economic, Cultural, and Politico-Legal Environment (ইংরেজি ভাষায়)। Springer। পৃষ্ঠা 242। আইএসবিএন 978-3-319-32754-9। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০২০ 
  57. শেখ, রহিম (২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "দৈনিক জনকন্ঠ || হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দুুুই বছরে লাপাত্তা ২ ডজন কোম্পানি"দৈনিক জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৩ 
  58. ফখরুল ইসলাম (১১ এপ্রিল ২০১৫)। "সব এমএলএম অবৈধ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২০ 
  59. ইসলাম, মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী মোহাম্মদ তাজুল। "ইসলামে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) এর বিধান - বাংলা - মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী"IslamHouse.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৮ 
  60. Abdul-Rahman, Muhammad Saed (২০০৪-১০-২১)। Islam: Questions and Answers - Jurisprudence and Islamic Rulings: Transactions - Part 7 (ইংরেজি ভাষায়)। MSA Publication Limited। পৃষ্ঠা 38, 39, 40, 41, 42। আইএসবিএন 978-1-86179-461-1 
  61. "فتوى اللجنة الدائمة بشأن التسويق الشبكي - إسلام ويب - مركز الفتوى"Islamweb.net। ২০ নভেম্বর ২০১৬। Archived from the original on ২০ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা