বল টেম্পারিং

অবৈধ ভাবে ক্রিকেট বলের যে কোন পরিবর্তন

ক্রিকেট খেলায় বল টেম্পারিং হচ্ছে সেই সব অবৈধ কর্মকাণ্ড যা একজন ফিল্ডার বলের অবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে করে থাকে। বল টেম্পারিং-এর পিছনে প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্রিকেট বলের বায়ুগতিবিদ্যায় হস্তক্ষেপ করা যা একজন বলারকে অবৈধ সুবিধা পেতে সাহয্য করে।

একটি অব্যবহৃত নতুন ক্রিকেট বল

সংজ্ঞা সম্পাদনা

ক্রিকেটের আইন ৪২ এর উপধারা ৩-এ বলা আছে, ক্রিকেট বলকে কৃত্রিম উপাদান ধারা পালিশ করা যাবে, তোয়ালে দ্বারা শুকানো যাবে যদি বল ভেজা থাকে এবং আম্পায়ারের পর্যবেক্ষণে বল থেকে কাঁদা অপসারণ করা যাবে; বাকি যে কোনো কর্মকাণ্ড যা বলের অবস্থা পরিবর্তন করে থাকে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। যা সাধারণত নিষিদ্ধ বলে ধরা হয় সেগুলা হল বলকে মাথায় ঘষা, নখ বা যে কোনো তীক্ষ্ণ বস্তু ধারা বলকে খোঁচানো এবং বলের দুই প্রান্তের জোড়ার পরিবর্তন ঘটানো।[১]

উদ্দেশ্য সম্পাদনা

সাধারণত বল টেম্পারিং-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বোলিং করার সময় উপকারি সুবিধা নেয়া। বল টেম্পারিং-এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ফিল্ডার যখন ঠোটের জেলি বা চুংইগাম মিশ্রিত লালা বা অন্যান্য উপাদান দিয়ে বলের একপ্রান্ত উজ্জ্বল করা যাতে বলের গতি পরিবর্তন করে অনেক বেশি সুইং পাওয়া। বিপরীতে, পায়ের জুতোর কাঁটা বা বোতলের ঢাকনা দিয়ে বলের যে কোনো এক প্রান্তকে অসমতলা করাকেও বল টেম্পারিং হিসেবে ধরা হয়।

বৈধভাবে বল পরিবর্তিত করা সম্পাদনা

মুখের লালা বা ঘামের দ্বারা বলের অবস্থা পরিবর্তন করা, বিশেষ করে সুইং বোলিং এর ক্ষেত্রে, বৈধ। ঘাম বা লালার ধারা এক প্রান্ত পালিশ করে যে আর্দ্রতা পাওয়া যায় তা বলের ঐ প্রান্তকে মসৃন করে যা বাতাসকে ঐ প্রান্তে দ্রুত পাশ কাটাতে সাহায্য করে। এর ফলে একজন বোলার বলকে বাতাসেই এক দিক থেকে অন্য দিকে সহজেই নিতে পারে। একজন বোলারের ক্ষেত্রে বলকে নিজের পোশাকে ঘষে শুকানো বা পালিশ করাকে সাধারন ঘটনা হিসেবে ধরা হয়।

শাস্তি সম্পাদনা

মাঠে আম্পায়ারের উপর দায়িত্ব থাকে বলের অবস্থার পর্যবেক্ষণ করা এবং তা অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর। যদি একজন আম্পায়ার মনে করেন যে ফিল্ডার বল টেম্পারিং-এর দোষে দোষী সাবস্থ্য হয়েছে, তখন তিনি বিপক্ষ দলকে ৫ পেনাল্টি রান উপহার দিতে পারেন এবং বল অবশ্যই পরিবর্তন করবেন। সাধারণত আম্পায়াররাই বল পরিবর্তন করেন এবং নতুন বল যতটা সম্ভব পুরাতন বলের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করেন। মাচ বা সিরিজ এর শুরুতে নির্ধারিত নিয়মাবলির উপর ভিত্তি করে, একজন ব্যাটসম্যান বিভিন্ন সময় ধরে ব্যবহৃত বলের মধ্যে থেকে বল নির্ধারণ করতে পারেন।

বল টেম্পারিং এর দোষে দোষী সাবস্থ খেলার খেলার বাকি অংশসময় জুড়ে বোল করা থেকে আদেশ পেতে পারেন। যদি একজন খেলোয়াড় একাধিকবার বল টেম্পারিং এর দোষে দোষী সাবস্থ, তা ভয়ঙ্কর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং খেলা শেষে আইন অনুযায়ী বিভিন্ন শাস্তির মুখোমুখি হবেন। উক্ত দলের অধিনায়কেও সমান শাস্তি ভোগ করতে হয় কারণ দলের অধিনায়ক হিসেবে খেলার মাঠে দলের বাদবাকি সদস্যের আচরণের দায়দায়িত্ব তার উপরই বর্তায়।

উদাহরণ সম্পাদনা

যদিও ভিন্ন কোন পদার্থ দ্বারা বল পালিশ করা অবৈধ তবুও কোন কোন ক্ষেত্রে এটা সাধারন ঘটনা হিসেবে ধরা হয় এবং কোন শাস্তির মুখমুখি হতে হয় না। এই উদ্দেশ্যে যে সব পদার্থ সধারনত ব্যবহার করা হয় তা হল হেয়ার জেল, চিনি এবং লিপ জেল।[২]

উপরন্তু, বলের প্রধান সিমের সুতা খুঁচিয়ে তোলা বা কোয়ার্টার সিমের সুতা তোলে ফেলা যা নিয়মিত বা রিভার্স সুইংয়ে সাহায্য করে তা অবৈধ বলে মনে করা হয়। বিপরীত সিমের কোয়ার্টার স্তর পরিবর্তন করা হলে তা শনাক্ত করা বা প্রমাণ করা বিশেষ করে কঠিন হতে পারে।[৩]

যাইহোক, টেলিভিশন সম্প্রচার বৃদ্ধির কারণে বল টেম্পারিং, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, খুব সহজে ধরা পরে। ২০০০ সালে একটি ম্যাচের পর ওয়াকার ইউনুস প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বল টেম্পারিংয়ের জন্য শাস্তি পান।[৪]

১৯৯৪ সালে মাইকেল আর্থারটন সম্পাদনা

"ডার্ট ইন পকেট" ঘটনা বলে পরিচিত, ১৯৯৪ সালে লর্ডসে  দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তখনকার  ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল আর্থারটন নিজের পকেট থেকে কিছু নিয়ে বলে ঘষার সময় টেলিভিশন ক্যামেরায় ধরা পরেন এবং বল টেম্পারিং এর দোষে অভিযুক্ত হন। আথারটন বল টেম্পারিং এর অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন যে, তিনি তার পকেট ময়লা রাখতেন যা তিনি তার হাত শুকাতে ব্যবহার করেন। তিনি ম্যাচ রেফারির কাছে মিথ্যে বলার দোষে অভিযুক্ত হন। আর্থারটনকে ম্যাচ রেফারির নিকট তলব করা হয় এবং ম্যাচ রেফারির কাছ থেকে পকেটে ময়লা রাখা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ২০০০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়।[৫]

২০০১ সালে শচীন টেন্ডুলকার সম্পাদনা

২০০১ সালের ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দ্বিতীয় টেস্টে, পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস ওভালে, ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনিস, শচীন টেন্ডুলকারকে বল টেম্পারিং এর অভিযোগে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করেন।[৬] টেলিভিশন ক্যামেরায় দেখা যায় যে টেন্ডুলকার বলের সিমকে খুঁচানোর সাথে জড়িত ছিলেন। যদিও তিনি আসলে শুধু ঘাসের টুকরা যা বলের সিমের স্তরে আটকে ছিল তা সরাচ্ছিলেন, এবং তার বিরুদ্ধে বল টেম্পারিং এর অভিযোগ উঠে।[৭] এই ঘটনাকে বর্ণবাদের সাথে জড়ানো হয় এবং মাইক ডেনিসকে তৃতীয় টেস্টের ভেন্যুতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। আইসিসি সেই টেস্টের স্বীকৃতি বাতিল করেছিল যেহেতু উভয় দল ম্যাচ রেফারিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অত্যধিক আবেদনের জন্য টেন্ডুলকার ও শেবাগের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ভারতীয় জনসাধারণ ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়। আইসিসি পরে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ থেকে টেন্ডুলকার নিষ্কৃতি দেয়।[৮]

আগস্ট ২০০৬ সালে পাকিস্তান সম্পাদনা

২০০৬ সালে, একটি কথিত বল টেম্পারিংয়ের বিষয়টি পাকিস্তানইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচেকে বিতর্কিত করে, যেখানে পাকিস্তান দুপুরে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্তের জন্য বিকেলের সেশনের ফিল্ডিং এর জন্য অস্বীকার করে। টেলিভিশন ক্যামেরায় আম্পায়ারদের কোয়ার্টার সিম নিয়ে আলোচনা করা ধরা পরে।[৯] পাকিস্তান প্রতিবাদ স্বরূপ চা বিরতির পর খেলায় ফিরতে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব ঘটায়, কিন্তু যখন তারা খেলতে অস্বীকার করছিল, আম্পায়াররা ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী ইংল্যান্ডকে বিজয়ী ঘোষণা করে।[১০]

বিতর্ক উঠে যখন আম্পায়াররা, ড্যারেল হেয়ার এবং বিলি ডকট্রোভ, সিদ্ধান্ত জানায় যে, পাকিস্তান দল বল টেম্পারিং এর সাথে জড়িত ছিল। তারা ইংল্যান্ডকে পাঁচটি পেনাল্টি রানে ভূষিত করেছিল এবং রিপ্লেসমেন্ট বল ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান পল কলিংউড এর দ্বারা নির্বাচিত করে খেলা হয়েছিল। খেলা, চা বিরতি পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো কোনো পাকিস্তানি প্রতিবাদ ছাড়া। চা-বিরতির পর, পাকিস্তানি দল নিজেরা আলোচনা করে নিশ্চিত হয় যে কোনো বল টেম্পারিং হয়নি এবং ঘটনার তীব্রতা বিবেচনা করে ফিল্ডিং করতে অস্বীকার করে।আম্পায়াররা তারপর মাঠ ত্যাগ করে, পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের একটি সতর্ক বার্তা দেন, ১৫ মিনিট পরে আরো একবার ফিরে আসেন। দুই মিনিট অপেক্ষা করার পর আম্পায়াররা স্ট্যাম্প থেকে বেল উঠিয়ে নেন এবং ইংল্যান্ডকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড খেলা চালিয়ে যাবার জন্য একটি চুক্তি করে, আম্পায়াররা প্রথম খেলা শুরু করার ৫৫ মিনিট পর পাকিস্তান দল ফিল্ডিং করতে নামে। আম্পায়ার হেয়ার এবং বিলি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে খেলা চালিয়ে যেতে অস্বীকার করে।

অচলাবস্থা সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।[১১] পাকিস্তান অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক দাবি করেন, ড্যারেল হেয়ার তাকে বলননি কেন বল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং হেয়ার দাবি করে যে পাকিস্তান প্রতারণা করছে।[১২] ১৯:৫০ ইউটিসিতে,অবশেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা করা হয় যে টেস্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসিবি এর বিবৃতিতে বলা হয় যে, ইংল্যান্ড আম্পায়াররা ম্যাচ ভূষিত করে এইভাবে যে পাকিস্তানকে সতর্ক করা হয়েছে আইন ২১.৩ এর অধীনে, যা মানতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের ম্যাচে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মত টেস্ট ম্যাচ এইভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।[১৩]

ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড চতুর্থ দিনের দর্শকদের টিকেট মূল্যের (একটি প্রশাসন ফি বাবদ দিয়ে) ৪০% ফেরত দেয়, এবং পঞ্চম দিনের টিকিটের ১০০% স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফেরত দেয়। পরবর্তীতে এই কাজের জন্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে £ ৮০০,০০০ দিতে বলে যা তারা দিতে অস্বীকার করে। মার্চ ২০০৭ সালে, পিসিবি ও ইসিবি একটি সমঝোতায় পৌঁছে যে পাকিস্তান ইংল্যান্ডে একটি টি-২০ ম্যাচ খেলবে এবং তাদের ফি পরিত্যাগ করবে।

এর ফলে ইনজামামকে অভিযুক্ত করা হয় যে তিনি "খেলাকে কালিমালিপ্ত করেছেন", যদিও তিনি "বলের অবস্থার পরিবর্তন" এর অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।[১৪] জানুয়ারী ২০০৮ সালে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে খেলার ফলাফল অফিসিয়াল ফল থেকে "ম্যাচ ড্র" বা "ম্যাচ পরিত্যক্ত" পরিবর্তন করার জন্য এর উপর ভিত্তি করে যে তারা বল টেম্পারিং এর অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।[১৫] জুলাই ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ম্যাচের ফল পরিবর্তন করে "ড্র" রাখে,[১৬] যদিও অক্টোবর ২০০৮ সালে ম্যারিলেবন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যে "আইসিসি কোনো ক্ষমতা নেই কোনো ম্যাচের ফল পরিবর্তন করার, যতই এটা 'অনুপযুক্ত' বা অন্যথায় মনে হোক না কেন।"[১৭] এছাড়াও এই সিদ্ধান্ত মাইকেল হোল্ডিং, যিনি সেই সময়ে আইসিসি ক্রিকেট কমিটির একজন সদস্য ছিলেন, সহ সাবেক খেলোয়াড়দের সক্ষুব্ধ করে। হোল্ডিং মনে করেন, পাকিস্তানের খেলতে না চাওয়াকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে যদিও তারা বল টেম্পারিং এর অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

"আমি এইমাত্র আইসিসির কমিটি থেকে পদত্যাগ করার জন্য চিঠি লিখেছি কারণ আমি তাদের সিদ্ধান্তের সাথে একমত নই।" হোল্ডিং, যখন ইংল্যান্ডের একটি ঘরোয়া ম্যাচে স্কাই ক্রিকেতের জন্য ধারাভাষ্য করছিলেন তখন বলেছেন। "এই খেলাটি কখনই ড্র হতে পারে না। যখন আপনি নির্দিষ্ট কাজ করেন, আপনি পরিণতি ভোগ করার জন্য বেশ খুশি হওয়া উচিত।"

১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে, আইসিসি তাদের আগের সিদ্ধান্ত ফিরে যায়, এবং ম্যাচের ফলাফলের পরিবর্তন করে ইংল্যান্ডকে বিজয়ী ঘোষণা করে।[১৮]

অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের ২০১০-এর ঘটনা সম্পাদনা

২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে, ইংল্যান্ডের বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডজেমস অ্যান্ডারসন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে তাদের জুতার কাটার সঙ্গে মাটিতে বল ঘর্ষণ দ্বারা বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ অভিযুক্ত হোন।[১৯] ব্রড দাবি করেন যে, শুধুমাত্র অলসতার কারণে এটা করেছিল, কারণ সেদিন কেপ টাউনে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।[১৯]অ্যান্ড্রু ফ্লাওয়ার বোর্ডের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন যে "স্করলাইন স্পষ্টত প্রমাণ করে যে কোন বল টেম্পারিং ছিল না।"[২০]নাসের হুসেন যিনি এন্ডারসনকে অধিনায়কত্ব করেছিলেন বলেন যে "স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসন ভুল আচরণ করেছিলেন এবং আমার কোন সন্দেহ নেই যে অন্য কোন দেশ থেকে একটি প্লেয়ার যদি একই আচরণ করে তাহলে তারা প্রতারণা করেছে বলে ধরা হবে[২১] আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অভিযোগ করা হয়নি।[২২] 

শহিদ আফ্রিদির বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা, ২০১০ সম্পাদনা

শহীদ আফ্রিদি, যখন পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন ছিলেন, জানুয়ারী ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বল টেম্পারিংয়ের জন্য দুটি টি২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিষিদ্ধ হন।[২৩][২৪][২৫][২৬] তিনি হিন্দুস্তান টাইম্‌সকে বলসেছিলেন যে তিনি বলকে শোঁকার চেষ্টা করছিলেনl[২৭] কিন্তু তিনি বল টেম্পারিংয়ের দোষ স্বীকার করেন।

অস্ট্রেলিয়া বানাম শ্রীলঙ্কা, ২০১২ সম্পাদনা

প্রথম টেস্ট ম্যাচে, শ্রীলঙ্কা অভিযোগ করে যে তাদের প্রথন ইনিংসের সময় ক্রিস ব্রডপিটার সিডল বলের সিম তোলার চেষ্টা করছিল। পিটার সিডল ৫৪ রানে ৫ উইকেট পান। আইসিসি পরে তাকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়।[২৮]

দক্ষিণ আফ্রিকা বানাম পাকিস্তান, ২০১৩ সম্পাদনা

দুবাইতে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে ফিল্ডিং করারা সময়, ক্যামেরায় ধরা পরে যে ফাফ দু প্লেসিস তার প্যান্টের জিপারের সাথে বল ঘষছিলেন। মাঠের আম্পায়াররা পাকিস্তানের টোটালে ৫ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শাস্তি দেয়।[২৯] দোষ স্বীকার করার পর ম্যাচ রেফারি তাকে ম্যাচ ফির ৫০% জরিমানা করে, যদিও দলের ম্যানেজার বলেন যে শাস্তি "কঠিন" ছিল, এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা এর বিরুদ্ধে আপিল করবে না। "দোষ" স্বীকার করার পরেও, দলের সহ-অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স বলেন যে "তারা দোষী নন" এবং দলের অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ অস্বীকার করেন যে বল টেম্পারিং করে তারা সিরিজকে কালিমযুক্ত করেছেন- দুবাই টেস্ট ইনিংস ব্যবধানে জিতে সিরিজে তারা ১-১ সমতা ফিরিয়েছিল।[৩০]

একই ম্যাচের সময়, ফুটেজে দেখা যায় যে সাউথ আফ্রিকান মিদিয়াম-পেস বোলার ভার্নন ফিল্যান্ডার বলকে নখ দ্বারা খুচিঁয়েছিলেন যা পরে তদন্তের আওয়াতায় আনা হয়। কিন্তু পরে ম্যাচ রেফারি পরে তা বল বল টেম্পারিং হিসেবে ধরেননি।

দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০১৪ সম্পাদনা

নয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দল নিজেদের বল টেম্পারিংয়ের কেলেংকারীতে আবিষ্কার করে, এইবার যখন মিডিয়াম-পেস বোলার ভার্নন ফিল্যান্ডার ২০১৪ সালের শ্রীলঙ্কার গালে টেস্টের ৩য় দিনে বল টেম্পারিং এ অভিযুক্ত হন।[৩১] ফিল্যান্ডার আইনের ৪২.১ ধারা ভঙ্গ করেছিলেন যাতে বলা আছে "নখ ও আঙুল দিয়ে বল খোঁচানো", এবং ম্যাচ ফির ৭৫% জরিমানা দিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা এই ম্যাচটি খেলে ১৫৩ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিল।

এই ঘটনার পর ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার অভিযোগ করেছিলেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে বলের অবস্থা পরিবর্তন করতেন। স্কাই স্পোর্টস এর সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডাররা বল রিটার্ন করার সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে মাটিতে জোরে বল ছুরে মারতো এবং উইকেট কিপার এবি ডি ভিলিয়ার্স এর অভ্যাস ছিল "বলের কঠিন অংশকে নিজের হাত ও গ্লাভস এর মধ্যে জোরে ঘষা।"[৩২] আইসিসির আচরণ বিধির আওয়তায় ওয়ার্নারকে এই মন্তব্য করারা জন্য ম্যাচ ফির ১৫% জরিমানা করা হয়।[৩৩]

অস্ট্রেলিয়া বানাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১৬ সম্পাদনা

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬-এ হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের পর আরেকজন দক্ষিণ আফ্রিকান বল টেম্পারিং এর অভিযোগে অভিযুক্ত হন। প্রোটিয়াস অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসিসকে টিভিতে দেখা যায় মিন্ট বা ললিপপ মিশ্রিত লালা বলে প্রয়োগ করে বলের অবস্থার পরিবর্তন করতে। আইসিসিস এই অভিযোগটি আনে যদিও অস্ট্রেলিয়া কোন অভিযোগ দাখিল করেনি।[৩৪] ২২ নভেম্বর দু প্লেসিস টেম্পারিংয়ের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং দ্বিতীয় টেস্ট তার ম্যাচ ফির পুরোটা জরিমানা করা হয়।[৩৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Law 42 (fair and unfair play) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে lords.org, 22 August 2006
  2. "Ball tamperers caught out" Sporting Life
  3. "Simon Hughes' Swing Guide" The Daily Telegraph 21 August 2006
  4. "Tougher line needed on ball tampering?" bbc.co.uk, 13 July 2000.
  5. "Atherton's Darkest Day" bbc.co.uk, 28 August 2000.
  6. "Tendulkar handed suspended ban"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০১ 
  7. "Tendulkar appears before match referee"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০১ 
  8. https://www.theguardian.com/sport/2001/nov/29/cricket2
  9. "Ball tampering row mars Oval Test" Cricinfo, 20 August 2006.
  10. "Cricket bosses bid to save test" bbc.co.uk, 20 August 2006.
  11. England v Pakistan 4th Test, from BBC, retrieved 20 August 2006
  12. "Sky Sports – Cricket – Internationals – Pakistan"Sky Sports [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. BBC
  14. Inzamam cleared of ball tampering, from Cricinfo, retrieved 28 September 2006
  15. "Pakistan seek Oval result change"BBC News। ১১ জানুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১০ 
  16. ICC change forfeited Test to draw - Cricket - Fox Sports
  17. ICC 2006 Oval Test still a forfeit for MCC - Cricinfo
  18. ICC does U-turn on 2006 Oval Test result: Cricinfo, 1 February 2009
  19. Cricinfo staff (৯ জানুয়ারি ২০১০)। "Stuart Broad 'astonished' by tampering charges"। Cricinfo। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  20. Paul Weaver (৫ জানুয়ারি ২০১০)। "South Africa raise ball tampering concerns about England"। London: guardian.co.uk। ৮ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  21. Nasser Hussain (৮ জানুয়ারি ২০১০)। "Character reference"। Sky Sports। ১৪ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  22. McGlashan, Andrew (৬ জানুয়ারি ২০১০)। "No official complaint over Broad footwork"। Cricinfo। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  23. "Australia complete one-day series sweep over Pakistan"bbc.co.uk। ৩১ জানুয়ারি ২০১০। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-৩১ 
  24. "Controversy mars Australia win"metro.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-৩১ 
  25. "Shahid Afridi in ball-tampering scandal during wild night at the WACA"theaustralian.com.au। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-৩১ 
  26. "Afridi banned for two T20s for ball-tampering"। Cricinfo। ৩১ জানুয়ারি ২০১০। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-৩১ 
  27. "I tried to smell the ball: Afridi"Hindustan Times। ২০১৩-০১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-২৪ 
  28. "Australia v Sri Lanka, 1st Test, Hobart, 5th day : No evidence of tampering by Australia, says ICC match referee | Cricket News | Australia v Sri Lanka"। ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-১৮ 
  29. "South Africa penalised for ball-tampering"ESPNcricinfo। ESPN। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  30. "Du Plessis pleads guilty, fined for ball-tampering"ESPNcricinfo। ESPN। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  31. "Philander fined for ball-tampering"ESPNcricinfo। ESPN। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  32. "Warner queries South Africa swing tactics"ESPNcricinfo। ESPN। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  33. "Warner fined for sharp-practice comments"ESPNcricinfo। ESPN। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  34. "ICC charges du Plessis over alleged ball tampering"ESPNcricinfo। ESPN। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৬ 
  35. "Du Plessis found guilty, but free to play in Adelaide"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৬