বর্ণের নাম (ইংরেজি: Colour term) বলতে এমন একটি শব্দকে বোঝায় যা কোনো নির্দিষ্ট একটি রং বা বর্ণকে নির্দেশ করে। বর্ণের নামটি মানুষের সেই বর্ণ নিয়ে ধারণাকে (যা তার দৃষ্টির উপর নির্ভর করে) প্রকাশ করতে পারে, যা আসলে মানসেল বর্ণ সিস্টেমের দ্বারা নির্ধারিত বা তার মধ্যে নিহিত কোনো বিশেষ গুণকেও নির্দেশ করতে পারে (যেমন দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য)। এছাড়াও বর্ণ নির্দেশের আরো সংখ্যাবাচক ব্যবস্থা আছে যা বর্ণ স্থান নামে পরিচিত। যদিও বর্ণ এবং আকারকে একসাথে অব্যয় দ্বারা যুক্ত করে ভাষায় ব্যবহার করা হয়, এই দুই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের শব্দের পরিভাষারূপে বর্ণ পরিভাষা এবং আকার পরিভাষাকে বুঝায়। বর্ণ না বোঝার মতো মনোবৈজ্ঞানিক অবস্থাও রয়েছে। যেমন- যারা বর্ণ আলাদা করতে পারে না (এফান্টেশিয়া) বা যারা বর্ণকে শব্দের মত অনুভব করে সিন্থেশিয়া

আর.জি.বি. কালার

প্রাকৃতিক ভাষায় সম্পাদনা

মনোলেক্সেমিক বর্ণ শব্দগুলো তৈরি হয় যেকোনো একটি শব্দ বা একক নিয়ে; যেমন- লাল, বাদামী বা জলপাই। কিন্তু জটিল শব্দগুলো তৈরি হয় বিশেষণ যুক্ত হয়ে, যেমন: হালকা-বাদামী অথবা একাধিক বর্ণের নামের সমন্বয়ে, যেমন: হলদে-সবুজ।

বর্ণমাত্রা সম্পাদনা

বর্ণের তারতম্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ- রং (লাল, কমলা, সবুজ, হলুদ, নীল বা বেগুনী বর্ণের ছায়া বা উপস্থিতি), পরিপৃক্তি (গাঢ় না হালকা) এবং উজ্জ্বলতা বা তীব্রতাই নির্ধারণ করে এইচএসআই বর্ণ স্থান। বাংলায় "প্রতিপ্রভ" শব্দের অর্থ হল এমন বর্ণ যা অতি উজ্জ্বল এবং শক্তিশালী বর্ণ পরিপৃক্তযুক্ত।"প্যাস্টেল" বোঝায় অতি উজ্জ্বল কিন্তু কম বর্ণ পরিপৃক্তযুক্ত বর্ণকে।

কিছু ঘটনা দৃষ্টিসংক্রান্ত প্রতিক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত এবং তারা বর্ণের নামের সাথে যুক্ত হতে পারে আবার নাও পারে। যেমন- চাকচিক্য (অতি চাকচিক্যযুক্ত বর্ণকে মাঝে মাঝে মেটালিক নামেও ডাকা হয়, এটা সোনালী এবং রূপালী বর্ণের একটি বৈশিষ্ট্য), বহুবর্ণিলতা বা নিওক্রমিজম (কোণভিত্তিক বর্ণ), দ্বিক্রমিজম (দুই সমতলের বর্ণ) এবং অস্বচ্ছতা (কঠিন এবং ঈষদচ্ছ)।

সাংস্কৃতিক বিভিন্নতা সম্পাদনা

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বর্ণের জন্য বিভিন্ন নাম রয়েছে এবং মানুষের বর্ণ স্থানের মধ্যে সামান্য তারতম্যের বর্ণের জন্যও একই নাম ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন চৈনিক ভাষায় (যার উচ্চারণ কিং qīng মান্দারিনে এবং আও আও জাপানিজে) নীল এবং সবুজ উভয় বর্ণকেই নির্দেশ করে, তাই এই দুই বর্ণের শেডকে "." ধরা হয়।অর্থাৎ মান্দারিনে এদেরকে বলা হয় 藍 (ইয়ান, মান্দারিনে) and 綠 (লু মান্দারিনে)। জাপানিজরাও সবুজকে দুইভাবে প্রকাশ করে একটি 緑 (মিদোরি, যা জাপানিজ বর্ণনাবাচক ক্রিয়া মিদোরু যার অর্থ "পাতায় থাকা, উন্নতি হওয়া" যা গাছকে নির্দেশ করে) এবং グリーン (গুরীন, guriin, যা ডাচ শব্দ গ্রোয়েন থেকে প্রাপ্ত "groen")। যদিও জাপানের ট্রাফিক লাইট অন্য সব দেশের মতো হলেও তাকে বলা হয় আওই, যা নীল বর্ণের বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়, কারণ তারা সবুজকে নীল বর্ণের শেড ভাবে । একইভাবে সবুজ বর্ণের কিছু ফল এবং সব্জিকে যেমন সবুজ আপেলকে সবুজ সিসো (লাল আপেলের বিপরীতে) বর্ণনা করা হবে আওই শব্দ দ্বারা।

একইভাবে, ভাষার ক্ষেত্রে বিভিন্নতা দেখা যায় যখন বিবেচনা করা হয় কোন রঙকে কোন বর্ণে বিশ্লেষণ করা হবে সেই বর্ণের গাঢ় বা হালকা হবার উপর নির্ভর করে। ইংরেজরা কিছু রঙকে বিভক্ত করে বিভিন্ন বর্ণের হালকা হওয়াকে কেন্দ্র করে যেমন লাল এবং গোলাপী, অথবা কমলা এবং বাদামী। ইংরেজি ভাষাভাষীদের কাছে এই দুই জোড়া বর্ণ, যাদের মধ্যে গাঢ় সবুজ এবং হালকা সবুজের মতো খুব বেশি পার্থক্য নেই, সম্পূর্ণ আলাদা গোত্রীয় বলে মনে হয়। একজন রাশিয়ানের কাছে সেই একই লাল/গোলাপী এবং কমলা/বাদামীর পার্থক্য ছাড়াও গাঢ় এবং হালকা নীলের মাঝেও আলাদা নাম আছে- সিনি এবং গলুবই (sinii and goluboi), যাদেরকে ইংরেজরা শুধু গাঢ় এবং হালকা নীল বলবে। এই দুটি বর্ণও রাশিয়ানদের কাছে লাল/গোলাপী এবং কমলা/বাদামীর মতোই আলাদা।[১]

অনেক বিশেষজ্ঞই ওভাহিম্বাদের বর্ণের ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ওভাহিম্বারা চারটি বর্ণের নাম ব্যবহার করে থাকেঃ যুযু মানে গাঢ় বর্ণের নীল, লাল, সবুজ এবং বেগুনী; ভাপা হল সাদা এবং কিছু হ্লদে বর্ণ ; বুরু অর্থাৎ কিছু সবুজ এং নীল গোত্রীয় বর্ণ; এবং দাম্বু হল আরো কিছু সবুজ, লাল এবং বাদামী গোত্রের বর্ণ। ধারণা করা হয় যে ওভাহিম্বাদের একই গোত্রীয় বর্ণের মধ্যে পার্থক্য করতে অন্যান্য ভাষাভাষীদের তুলনায়, যারা বর্ণকে সম্পূর্ণ আলাদা গোত্রে ভাগ করে, বেশি সময় লাগে।

হাঙ্গেরীয় এবং তুর্কীরা "লাল" বর্ণের জন্য বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে থাকেঃ পিরোস এবং ভোরোস (piros and vörös) (হাঙ্গেরীয় ভাষায় ; vörös অর্থ একধরনের গাঢ় লাল) এবং কিরমিজি, আল, এবং কিজিল (তুর্কী); কিরমিজি সব লালকে নির্দেশ করে কিন্তু প্রকৃত অর্থে ক্রিমসন লাল বুঝায়; কিজিল স্কারলেট লাল এবং কিছু কমলা ও বাদামী লাল বুঝায়। "লাল" বর্ণের জন্য দুইটি আলাদা শব্দ আইরিশ এবং স্কটিশ গেলিকেও পাওয়া যায় (ডিয়ারগ হালকা, উজ্জ্বল লালের জন্য এবং রুয়া বা রুয়াধ গাঢ়, বাদামী লালের জন্য)। তুর্কীরাও "সাদা"র জন্য দুইটি শব্দ (বেয়াজ ও আক) এবং "কালো"র জন্য দুইটি শব্দ (সিয়াহ ও কারা) ব্যবহার করে। আক এবং বেয়াজের অর্থ প্রায় এক, কিন্তু কারার অর্থ সিয়াহর থেকেও ব্যাপ্তি বেশি এবং তা গাঢ় খয়েরীকেও নির্দেশ করে। এই দুই শব্দের মধ্যে কোনটি ব্যবহার হবে তা কোন বস্তুর জন্য ব্যবহার হচ্ছে তার উপরও নির্ভর করে। একইভাবে, আইরিশরা সবুজের ক্ষেত্রে দুই শব্দ ব্যবহার করে; গ্লাস গাছের সবুজকে নির্দেশ করে কিন্তু উয়াথনি কৃত্রিম সবুজ বর্ণকে নির্দেশ করে। দুইটি বর্ণ এক হলেও শব্দ আলাদা ব্যবহার করা হয় এই দুই ক্ষেত্রে।

কমি ভাষায়, সবুজ হলুদের একটি প্রকারভেদ যাকে বলা হয় турун виж (turun vizh): "ঘাস হলুদ"।[২][২]

পিরাহা ভাষায় কোন বর্ণ সংক্রান্ত শব্দ নেই।

মৌলিক বর্ণ পরিভাষা সম্পাদনা

ব্রেন্ট বার্লিন এবং পল কে তাদের বর্ণ পরিভাষার উপরে রচিত ক্লাসিক রচনা বেসিক কালার টার্ম: দ্যায়ার ইউনিভার্সালিটি অ্যান্ড ইভূলিউশন (১৯৬৯) [২] এ বলেন যে, এই ধরনের পার্থক্যকে মৌলিক শ্রেণীতে সুসজ্জিত করা সম্ভব এবং সার্বজনীন মৌলিক বর্ণ পরিভাষা খুবই কম সংখ্যক, যেগুলো কিছু নির্দিষ্ট সংস্কৃতি নির্দিষ্ট ভাবে ব্যবহার করত। বার্লিন এবং কে তাদের পর্যালোচনাকে বিশ্বের ২০টি ভাষার সাথে তুলনা করে তৈরি করেছিলেন। মৌলিক বর্ণ পরিভাষা হিসেবে বিবেচিত হবার জন্য শব্দকে অবশ্যই হওয়া লাগবেঃ

  • এক শব্দ ("সবুজ", কিন্তু "হালকা সবুজ" অথবা "গেছো সবুজ" না),
  • অধিক প্রচলিত এবং
  • ভাষাভাষীদের দ্বারা স্বীকৃত।[২]

বার্লিন এবং কে তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে সংস্কৃতি দ্বারা বর্ণকে চেনার জন্য (I-VII) টি ধাপ রয়েছে।

ধাপ I শুধুমাত্র দুইটি বর্ণ সাদা এবং কালোকে নির্দেশ করে যেখানে তাদেরকে বিস্তারিতভাবে অন্য অনির্ধারিত বর্ণ পরিভাষার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- নিউ গিনিয়ার জেল হাইল্যান্ড গ্রুপ রক্তের বর্ণ কালো বলে ধারণা করে। এর কারণ হল ধাপ I অনুযায়ী সাদা এবং কালো বর্ণের উজ্জ্বলতার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।

আবার ধাপ II অনুযায়ী আরো একটি বর্ণ লাল পরিচিতি লাভ করে। এই ধাপে আমাদের বস্তুর উজ্জ্বলতার উপর না বরং বিভিন্ন বর্ণের পরিভাষাকে একটি বিশাল বর্ণসীমা জুড়ে বিস্তার করতে দেখা যায়। বিশেষত নীল এবং অন্যান্য গাঢ় বর্ণকে কালো, হলুদ/কমলাকে লালের মধ্যে এবং সাদার মতো সব বর্ণকে সাদা শ্রেণীতে ফেলানো হয়েছে।

ধাপ III অনুযায়ী আরো একটি বর্ণের পরিচিতি পাওয়া যায়, যদিও এই বর্ণ হয় সবুজ (III a) বা হলুদ (III b) যেকোন একটি হতে পারে। যদিও বেশিরভাগ সংস্কৃতিই এই ধাপে সবুজের তুলনায় হলুদকে বেশি স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে দুইটি ভাষা আছে যারা সবুজকে প্রথমে স্বীকৃতি দেয়- নাইজেরিয়ান ভাষা ইবিবো এবং ফিলিপাইন ভাষা মিন্দোরো হানুনু।

ধাপ IV এ বর্ণ পরিভাষার এই সব পরিভাষাকে সংস্কৃতি স্বীকৃতি না দিলেও পঞ্চম পরিভাষারূপে দেখিয়েছে।

তাদের আলোচনা দেখিয়েছে যে যেসব সংস্কৃতিতে দুই শব্দ প্রচলিত তারা শুধু গাঢ় (কালো এবং কালচে রং এবং নীলের মত শীতল রঙ) এবং উজ্জ্বলকে (সাদা, হাল্কা বর্ণ এবং লালের মত উষ্ণ বর্ণ) নির্দেশ করে। যেসব ভাষায় তিনটি করে শব্দ প্রচলিত তারা স্ব পরিভাষায় লালকে প্রাধান্য দেয়। তাই। তিনটি মৌলিক বর্ণ হিসবে বিবেচিত হয় কালো, সাদা এবং লাল।অতিরিক্ত বর্ণ পরিভাষা যুক্ত হয় একটি নির্দিষ্ট নিয়মে যখন ভাষার পরিবর্তন ঘটেঃ প্রথমত সবুজ বা হলুদ, দ্বিতীয়ত বাকি সব হলুদ ও সবুজ এবং সবশেষে নীল। সব ভাষাতেই ছয়টি বর্ণের পরিভাষাকে চিহ্নিত করা যায়- কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ, এবং নীল। এই বর্ণগুলো চোখের রেটিনার জন্য খুবই সংবেদনশীল। যা বার্লিন এবং কে -কে এই বক্তব্যে উপনীত করে যে এই বর্ণ পরিভাষা শুধু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড না, বরং তা জীববিজ্ঞানের সাথেও সম্পর্কিত- তা হল, ভাষা তৈরি হয় উপলব্ধি থেকে । ২০১২ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী মানুষের মাঝে প্রাধান্য আসলে মানব দৃষ্টি এবং সময়ের উপর নির্ভর করে। যেভাবে এই বর্ণগুলো মানুষের ভাষায় সগযুক্ত হয়েছে তা তাই প্রমাণ করে।

যখন ভাষাগুলি উন্নতি লাভ করে, তখন তারা বাদামী বর্ণের জন্য একটি পরিভাষা সৃষ্টি করে, তারপর আসে কমলা, গোলাপী, বেগুনী এবং ছাই বর্ণ। যেকোনো ক্ষেত্রেই একটি মৌলিক বর্ণের সাথে বিশেষন যুক্ত হয়ে নতুন বর্ণের পরিভাষা তৈরি হয়। যেমন- হালকা নীল, গাঢ় নীল, অথবা ফ্যাকাশে লাল, গাঢ় লাল।

১৯৯৯ এ প্রস্তাবিত ক্রমবিকাশমান ট্রাজেক্টরি নিচে দেওয়া হল। ৮০ শতাংশ সাধারন ভাষা মধ্যম পথে পড়ে।[২]

I II III IV V
হালকা–উষ্ণ

(সাদা/হলুদ/লাল)

গাঢ়–শীতল

(কালো/নীল/সবুজ)

সাদা

লাল/হলুদ

কালো/নীল/সবুজ

সাদা

লাল

হলুদ

কালো/নীল/সবুজ

সাদা

লাল

হলুদ

সবুজ

কালো/নীল

সাদা

লাল

হলুদ

সবুজ

নীল

কালো

সাদা

লাল/হলুদ

সবুজ/নীল

কালো

সাদা

লাল

হলুদ

সবুজ/নীল

কালো

সাদা

লাল

হলুদ/সবুজ/নীল

কালো

এখন প্রতিটি ভাষাতেই মৌলিক বর্ণের জন্য দুই থেকে দশটি পরিভাষা রয়েছে। বাকি সব বর্ণ গুলো ঐ ভাষার মানুষদের কাছে ঐ বর্ণের প্রকারভেদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজদের ১১ টি মৌলিক বর্ণ পরিভাষা রয়েছেঃ কালো, লাল, সাদা, সবুজ, হলুদ, নীল, বাদামী, কমলা, গোলাপী, বেগুনি এবং ছাই। ইতালীয়, রাশিয়ান এবং হিব্রু ভাষায় আছে ১২টি নীল এবং আকাশীকে আলাদা করে। তার মানে এই না যে, ইংরেজরা দুই বর্ণের তফাৎ ধরতে পারে না। হারা আকাশীকে হালকা নীল বলে উল্লেখ করবে। যদিও গোলাপী হল মৌলিক, তা হালকা লাল বলা হয় না।

গুণবাচক এবং বর্ণনামুলক বর্ণ পরিভাষা সম্পাদনা

কোন ভাষার বর্ণবাচক শব্দগুলো আবার দুই প্রকার হতে পারে- গুণবাচক এবং বর্ণনাবাচক শব্দ, যদিও তাদের পার্থক্য খুবই কম। গুণবাচক শব্দগুলো শুধু একটা বর্ণকে নির্দেশ করবে। ইংরেজিতে সাদা, কালো, লাল, হলুদ, সবুজ, নীল, বাদামী এবং ধূসর হল গুণবাচক বর্ণ সংক্রান্ত শব্দ।এই শব্দগুলো ইংরেজি ভাষায় মৌলিক বর্ণ পরিভাষা হিসেবে পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু মেরুন কিংবা ম্যাজেন্টার মতো শব্দগুলো মৌলিক বর্ণ না হলেও গুণবাচক হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ ঐ ভাষাভাষীদের কাছে এগুলো খুব দুর্লভ, খুব নির্দিষ্ট অথবা মৌলিক বর্ণের শ্রেণিবিভাগের মধ্যে পড়ে বলে বিবেচিত হয়।

বর্ণনাবাচক শব্দগুল যদিও বর্ণের পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু প্রথমত তারা কোন বস্তুকে নির্দেশ করে- যেমন "সাল্মন", "রোজ", "স্যাফ্রন" এবং "লাইলাক" আসলে বাস্তব জগতের বিভিন্ন বস্তুর রঙের সাথে মিলিয়ে রাখা নাম- যেমন সালমন মাছের ভিতরের রং, গোলাপ ফুলের রং, লাইলাক ফুলের কলির রং ।এ শব্দগুলো কোন নির্দিষ্ট বর্ণের নির্দিষ্ট প্রকারকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।

কিছু ভাষায় বর্ণকে বর্ণনাবাচক শব্দ হিসেব ধরা হয় যেখানে একই বর্ণের জন্য অন্য ভাষায় গুণবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন- জাপানিজে গোলাপী মানে মোমোইরো (桃色, lit. "পিচ বর্ণ") এবং ধূসর মানে হয় হাইরো অথবা নেজিমোরো (灰色, 鼠色, lit. "ছাই-বর্ণ" হালকা ধূসরের জন্য এবং "ইঁদুর-বর্ণ" গাঢ় ধূসরের জন্য); এছাড়াও নতুন কিছু শব্দ ভাষায় যুক্ত হতে পারে যেমন- জাপানিজে পিংকু (ピンク) হয়েছে গোলাপী অর্থে এবং গুড়ি (グレー) হয়েছে ধূসর অর্থে ইংরেজি অনুসারে।

কিছু কিছু বর্ণের পরিভাষা গুণবাচক না বর্ণনাবাচক তা নিয়ে নানা বিতর্ক আছে।"পিংক" শব্দটি বর্ণনা বাচক যা এসেছে একটি ফুলের নাম "পিংক" থেকে(ডায়ান্থাস); যদিও এই ফুল এখন দুষ্প্রাপ্য হলেও এই বর্ণের নাম খুবই প্রচলিত। অনেক ইংরেজি ভাষী মানুষ একে গুণবাচক এবং মৌলিক বর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে । একইভাবে পার্পল এসেছে একধরনের ডাইয়ের নাম টিরিয়ান পার্পল থেকে।

"অরেঞ্জ" শব্দটি গুণবাচক না বর্ণনা বাচক তা সঠিক বোঝা সম্ভব না যেহেতু বর্ণ এবং শব্বেঅরেঞ্জ কোনটি প্রাথমিক তা বোঝা মুশকিল। বর্ণের পরিভাষা হিসেবে এটি বিংশ শতাব্দীর প্রথমে প্রকাশ পায় এবং তার আগে শিল্পীর প্যালেটে তার নাম ছিল হলদে লাল। ইংরেজিতে "orange" শব্দটি ফলের নাম হিসেবেও ব্যবহার হয়। এই শব্দটি এসেছে ফরাসি অরেঞ্জি থেকে যা এসেছে সংস্কৃত নারাং থেকে যা এসেছে দ্রাবিড়ীয় এক ভাষা থেকে। এ থেকে প্রাপ্ত শব্দ অরেঞ্জিস ১৯ শতক[২] হতে বর্ণের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় ফলের উপর ভিত্তি করে। যদিও "অরেঞ্জ" বর্ণকে বাকি সব বর্ণ যেমন লাল, হলুদ, সবুজ, নীল, গোলাপী, বেগুনী, বাদামী, ধূসর, সাদা এবং কালোর মতোই মৌলিক বর্ণের মাঝে ফেলা হয়।বর্তমানে এই শব্দের বহুল প্রচলনের কারণে বোঝা যায় না যে ফল বর্ণের উপর ভিত্তি করে নাকি বর্ণ ফলের উপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয়েছে।

ইতালীয় ভাষায় আরান্সিয়ন একটি বিশেষণ এবং তা এসেছে আরান্সিও নামক ফল হতে। পর্তুগিজ ভাষায় ফল লারাঞ্জা এর নাম এসেছে কোর ডি লারাঞ্জা নামক বর্ণের নাম হতে যার অর্থ 'কমলার বর্ণ'। একইভাবে রোজা ('রোজ') এবং কোর ডি রোজা ('গোলাপের বর্ণ'); এবং ভায়োলেটা ('ভায়োলেট') এবং কোর ডি ভায়োলেটা ('ভায়োলেটের বর্ণ')।

ভাষারূপে বর্ণের পরিভাষা সংক্রান্ত জটিলতা সম্পাদনা

বর্ণের পরিভাষা সংক্রান্ত গবেষণা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূল ভাষার প্রচলিত ব্যবহারের বা তার ভূমিকার কোন উৎস ব্যতীত পরিচালনা করা হয়। জন এ লুসি তার দ্য লিঙ্কুইস্টিক অব কালার নামক রচনায় দুইটি মূল শ্রেণিবিভাগ দেখান। একটি বিরাট অংশের জন্য কোন বর্ণের পরিভাষার ব্যবহার এবং ভাষার ব্যাকরণে বর্ণের ব্যবহার যেমন- ইংরেজিতে একটি প্রচলিত বাক্য "আই এম ফিলিং ব্লু" যেখানে ব্লু বা নীল একটি ক্রিয়া যা অন্য কোন ভাষায় ব্যবহার করা সম্ভব না।

বিভিন্ন ভাষা এবং তাদের বর্ণের পরিভাষার উপর চলা গবেষণা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে যেহেতু সাংস্কৃতিক, স্বজ্ঞা এবং প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে যে কোন একটির উপর নির্ভর করা খুব কঠিন একটি বিষয়।

প্রমিত নিয়ম সম্পাদনা

বর্ণ নামকরণের কিছু নিয়ম হল সিএনএস এবং আইএসসিসি লেক্সিকন বর্ণ পরিভাষা। এই নিয়মগুলোর অসুবিধা হল এরা শুধু মাত্র কিছু নির্দিষ্ট বর্ণের নামকরণ করে তাই এক নিয়ম হতে অন্য নিয়মে বর্ণের নাম পরিবর্তন করতে বেগ পেতে হয়। অর্থাৎ CIE XYZ এর মধ্যে কোন সরল রূপান্তর সূত্র নেই।

সাধারণত ডাক টিকেট সংগ্রহকারীরা পোস্টাল স্ট্যাম্প এর বর্ণ নির্ধারণে নাম ব্যবহার করে। এই নামগুলো বিভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে তাই যুক্তরাষ্ট্রের Scott catalog ক্যাটালগ যুক্তরাজ্যের স্ট্র্যানলি গিবন্স ক্যাটালগে আলাদা নাম ধারণ করবে।

এই আধুনিক কম্পিউটারের যুগে মৌলিক বর্ণের নাম নির্ধারিত হয় ওয়েবে বর্ণের নামানুসারে (SVG 1.0/CSS3), এইচটিএমএল বর্ণ নাম, এক্স১১ বর্ণ নাম এবং .নেট ফ্রেমওয়ার্কের বর্ণ নাম দ্বারা।

ক্রেওলা কোম্পানি ক্রেয়ন রঙের জন্য বিখ্যাত যাদের নাম বিভিন্ন সৃষ্টিশীল উপায়ে দেওয়া হয়েছে।

হেরাল্ড্রি টিংচার এর নামকে নিয়মানুসারে উল্লেখ করেছেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন উপভাগে বিভক্ত করেছেন, যেমন- বর্ণ, ধাতু এবং লোম।

বিপণনের জন্য বর্ণ নামকরণ সম্পাদনা

ফ্যাশন এবং রঙের জন্য বর্ণের নামকরণ বিভিন্নভাবে শব্দের নিজেদের মধ্যে যুক্ত হবার বিষয় এবং অনুভূতির অপপ্রয়োগ করেছে। এগুলো বেশি পরিলক্ষিত হয় রঙের চিপ বা নমুনাতে যেখানে রং বিক্রি হয়। সেখানে "পপি ইয়েলো" হয়ে যেতে পারে উত্তপ্ত এবং সক্রিয় "এম্বার রেজ", শান্ত এবং আরামদায়ক "লেট আফটারনুন সানশাইন", অথবা অর্থ-বিভবপূর্ণ "সিয়েরা গোল্ড"। জেনারেল মোটরের বিভিন্ন ভাগেও বিভিন্ন রঙের গাড়ির মডেলের জন্য বিভিন্ন বর্ণের নাম দেওয়া হয়।ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করা ছাড়াও এই নামগুলো একটি রঙের সাথে অনুভূতির সংমিশ্রন ঘটায় যা ক্রেতাকে তা ক্র্য় করতে বাধ্য করে।

নিয়ন এবং প্রতিপ্রভা সম্পাদনা

বিভিন্ন উজ্জ্বল বর্ণের নামের সাথে "নিয়ন" শব্দ জুড়ে দেওয়া হয় নিয়ন আলোর সাথে তুলনা করে। এ ধরনের রঞ্জক (dye) এবং রঙগুলো প্রতিপ্রভ (fluorescent) হয় অর্থাৎ অন্ধকারে জ্বলে। মধ্যদুপুরে এই রঙগুলি বেশি উজ্জ্বল দেখা যায় অতিবেগুনী রশ্মির জন্য। [২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Access : Seeing the blues : Nature News
  2. আপনার সূত্র

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  1. Access : Seeing the blues : Nature News
  2. Rueter, Jack M. (1996), Komia-anglisköĭ-finsköĭ
  3. The university of Tromsø : Giellatekno : Sátnegirjjit : Komi - English[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Brent Berlin and Paul Kay (1969) Basic Color Terms: Their Universality and Evolution
  5. This can be ambiguous when speakers do not agree with each other.
  6. Paul Kay and Luisa Maffi, 'Color Appearance and the Emergence and Evolution of Basic Color Lexicons', American Anthropologist, 1999 March 7.[1]
  7. Oxford English Dictionary, 'orangish'
  8. Sunshine on a Cloudy Day American Scientist Magazine website