ফুলঝুরি খান

বাংলাদেশী গায়ক

ওস্তাদ ফুলঝুরি খান (জন্মনামঃ ইয়ার রসুল খান, ১৯২০ - ৫ মে, ১৯৮২) ছিলেন একজন বাঙালি যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী। তিনি একজন দক্ষ তবলাএসরাজ বাদক। যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।[১]

ওস্তাদ

ফুলঝুরি খান
জন্ম
ইয়ার রসুল খান

১৯২০
মৃত্যু৫ মে ১৯৮২
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়, বাংলাদেশী
পেশাযন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী
সন্তানইউসুফ খান
পিতা-মাতালতিফ রসুল খান (পিতা)
কমলা-উন-নেসা (মাতা)
আত্মীয়ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁ (মাতামহ)
ইয়াসিন খান (ভাই)
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৯)
টীকা
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁআয়েত আলী খাঁ তার মাতামহের দুই ছোট ভাই

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

ফুলঝুরি খান ১৯২০ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ইয়ার রসুল খান। তার পিতা লতিফ রসুল খান এবং মাতা কমলা-উন-নেসা ছিলেন ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কন্যা। তার মাতামহ আফতাবউদ্দিনের ছোট দুই ভাই প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁআয়েত আলী খাঁ। ফুলঝুরির ছোট ভাই ইয়াসিন খান একজন সেতার বাদক ছিলেন।[২]

ফুলঝুরির তবলায় হাতেখড়ি হয় তার মাতামহ আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট। পরে আয়েত আলীর নিকট কিছুদিন তালিম গ্রহণ করার পর তিনি মাইহার রাজ্যে চলে যান এবং সেখানে মাতামহের ছোট ভাই ও সেখানকার রাজসভার সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর নিকট তবলার তালিম নিতে। আলাউদ্দিন খাঁর নিকট তিনি আটবছর তবলার তালিম নেন। মাইহার রাজসভায় তাঁর গুরু আলাউদ্দিন খাঁর সরোদ বাজানোর সাথে তাঁর তবলা বাদন শুনে মুগ্ধ হয়ে মাইহারের রাজা তাঁকে 'ফুলঝুরি' উপাধি দেন। সেই থেকে তাঁর নাম হয়ে যায় ফুলঝুরি খান।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

ফুলঝুরি তবলা ও এসরাজ বাদনে দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি তারসানাই, সেতারপাখোয়াজ বাজানোতেও পারদর্শী ছিলেন। তিনি আলাউদ্দিন খাঁ গঠিত 'মাইহার স্ট্রিং ব্যান্ড' দলের সদস্য ছিলেন। খ্যাতনামা নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের নাচের দলের সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। তিনি কিছুদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে যন্ত্রসঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন। চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যে তাঁর এসরাজ বাজানো শুনে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হন।[১]

ফুলঝুরি পরে শিলং চলে যান এবং সেখানে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয় স্থাপন করে শিষ্যদের সঙ্গীত শিক্ষা দেন। তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা বেতারকেন্দ্রে নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বেতারে সানাই বাজাতেন।[১] তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের জন্য এসরাজ বাজান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল মুখ ও মুখোশ (১৯৫৬), আকাশ আর মাটি (১৯৫৯), রাজধানীর বুকে (১৯৬০), নতুন সুর (১৯৬২), সূর্য স্নান (১৯৬২), ও সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬)।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

তার পাঁচ পুত্রের মধ্যে মোঃ ইউনুস খান সরোদ বাদক, মোঃ জাফর খান সেতার বাদক, মোঃ ইউসুফ খান সরোদ বাদক,[৩] মোঃ ইলিয়াস খান তবলা বাদক, এবং মোঃ খায়রুল ইসলাম খান তবলা বাদক।

মৃত্যু সম্পাদনা

ফুলঝুরি খান ১৯৮২ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]

পুরস্কার ও সম্মননা সম্পাদনা

শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৪][৫][৬] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[৭] এছাড়াও তিনি সঙ্গীতে অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "খান, ওস্তাদ ফুলঝুরি"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৭ 
  2. "সেতার বাদক ইয়াসিন খান আর নেই"দৈনিক প্রথম আলো। ২২ মার্চ ২০১১। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৭ 
  3. "Strings of sarod from Bangladesh"দ্য ডেইলি স্টার। ২৫ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৭ 
  4. সানজিদা খান (জানুয়ারি ২০০৩)। "জাতীয় পুরস্কার: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার"। সিরাজুল ইসলাম[[বাংলাপিডিয়া]]ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।  ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  5. "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  6. "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  7. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা