ফিলিপাইন–সিঙ্গাপুর সম্পর্ক

ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

ফিলিপাইন–সিঙ্গাপুর সম্পর্ক হল ফিলিপাইনসিঙ্গাপুরের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সিঙ্গাপুরে ফিলিপাইনের একটি দূতাবাস রয়েছে,[১] এবং একইভাবে সিঙ্গাপুরেরও ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে একটি দূতাবাস রয়েছে।[২] ১৬ই মে, ১৯৬৯ সালে সিঙ্গাপুরে ফিলিপাইনের কনস্যুলেট-জেনারেল দূতাবাসে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে এ দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক আরম্ভ হয়।[৩][৪]

ফিলিপাইন–সিঙ্গাপুর সম্পর্ক
মানচিত্র ফিলিপাইন এবং সিঙ্গাপুরের অবস্থান নির্দেশ করছে

ফিলিপাইন

সিঙ্গাপুর

সম্পর্ক সম্পাদনা

ফিলিপাইন-সিঙ্গাপুর বিজনেস কাউন্সিল নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। ১৩ই অক্টোবর, ১৯৯৪ সালে সিঙ্গাপুরে সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে। ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফিডেল পঞ্চম রামোস এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী গো চক টংয়ের উপস্থিতিতে এ সংস্থাটির উদ্বোধন হয়।[৫]

অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও, এ দুই দেশ পর্যটন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং নিরাপত্তাবিষয়ক সম্পর্কের ব্যাপারে চেষ্টা করছে। ১৯৮৬ সালের আগস্ট মাসে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি কোরাজন অ্যাকুইনো জাকার্তা ও সিঙ্গাপুরে সফর করেন। এ সফরের মাধ্যমে তিনি 'দেশের রাষ্ট্রপতি প্রথম সফরে ওয়াশিংটন যাবে' - এ প্রথা ভেঙে ফেলেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুহার্তোর সাথে অ্যাকুইনোকে তার দেশের সমাজতন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতা না করার, এবং সেইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার পরামর্শ দেন।[৬] ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি গ্লোরিয়া ম্যাকাপাগাল-অ্যারোইয়ো ২০০৭ সালে সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে দুই দেশের মধ্যকার পর্যটন ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আকাশপথে ভ্রমণের নীতির উদারিকরণ কামনা করেন। তিনি সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লংয়ের সাথে স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোওএফএ) এর অবস্থা বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সম্মতিপত্রটি ছিল জঙ্গিবাদ এবং বহুজাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে।[৭]

১৯৯৫ সালে ফ্লোর কনটেমপ্ল্যাসিয়নের ফাঁসি হবার পর সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্ধারিত সফর "যথাযথ সময়ের আগ পর্যন্ত" স্থগিত হয়ে যায়।[৮] ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ দুটি আসিয়ানভুক্ত দেশের মধ্যে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শীতল সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। দুই দেশের পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্কও বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। ফিলিপাইনে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ ৬৫ মিলিয়ন ১৯৯৪ সাল থেকে মার্কিন ডলার থেকে ১৯৯৫ সালে ৩.৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।[৯] এর পরেও একই বছরের জানুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার ফিরে আসে।[১০] ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে এ দুই দেশ হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সামিটে ফিলিপাইন-সিঙ্গাপুর অ্যাকশন নামক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করে।[১০]

 
অর্চার্ড রোডে লাকি প্লাজা মল। এখানেই সিঙ্গাপুরে কর্মরত ফিলিপাইনের কর্মকর্তাদের মধ্যে পণ্যসামগ্রি বণ্টন করে দেওয়া হয়।

২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর ফিলিপাইনের চতুর্থস্থানীয় বাণিজ্যসহযোগি হয়ে ওঠে। দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ তখন গিয়ে দাঁড়ায় ৮.২২ ডলারে। এটি ষষ্ঠ শীর্ষস্থানীয় পর্যটক উৎস, প্রতিবছর ১৭৫,০০০ এরও বেশি মানুষ এখানে ভ্রমণ করতে আসে। সিঙ্গাপুরে ফিলিপাইনের প্রায় ১৮০,০০০ জনসংখ্যার সম্প্রদায় বসবাস করে চলেছে।[১১]

সম্মতি সম্পাদনা

২০০৭ সালে ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এ স্মারকের উদ্দেশ্য ছিল গণমাধ্যমসংক্রান্ত নীতি ও তথ্য বিনিময়ে সহযোগিতা বিস্তার করা।[১২] ২০০৮ সালে ফিলিপাইন সরকার লুজনের কিছু ফার্মে ইবোলা রেস্টনের কারণে স্বেচ্ছায় সিঙ্গাপুরে ৫০,০০০ টন শূকরের মাংস পাঠানো বন্ধ করে। এটি ফিলিপাইনের প্রথম শূকর রপ্তানির ঘটনা হতে যাচ্ছিল।[১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Philippine Embassy in Singapore]"। ১২ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. "Singapore Embassy in Manila" 
  3. "Philippine envoy to S'pore"। The Straits Times। ২ এপ্রিল ১৯৭১। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৬ 
  4. "EMBASSY LEVEL TIES WITH MANILA"। The Straits Times। ১৬ মে ১৯৬৯। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৬ 
  5. "Philippines-Singapore Business Council"Makati Business Club। ২০০৬। এপ্রিল ৯, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৭ 
  6. "Philippines country studies: Relations with Asian Neighbors"। Country-studies। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৭ 
  7. "Strengthening Singapore-Philippines relations"। Singapore Institute of International Affairs। ২০০৭-০৬-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৭ 
  8. "Singapore Puts Off Prime Minister's Trip to Manila"নিউ ইয়র্ক টাইমস। ২০ মার্চ ১৯৯৫। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৬ 
  9. Lucero Gonzalez, Joaquin (১৯৯৮)। Philippine Labour Migration: Critical Dimensions of Public Policy। Institute of Southeast Asian Studies। আইএসবিএন 981-230-011-2। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৭ 
  10. Europa Publications Staff (২০০২)। Far East and Australasia 2003। Routledge। পৃষ্ঠা 1291। আইএসবিএন 1-85743-133-2। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৭ 
  11. "Singapore president makes first state visit to PH Wednesday" 
  12. "Singapore and Philippines to boost bilateral media collaboration"। ৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৬ 
  13. "Ebola halts Philippine-Singapore pork shipment"। Meat International। ২০০৮-১২-১৬। ২০১১-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৭ 

টেমপ্লেট:ফিলিপাইনের বৈদেশিক সম্পর্ক